কলকাতা বাংলা সিনেমার শুরুতেই এক পর্যায়ে স্ক্রিনে লিখা থাকে, “ধূমপান কর্কট রোগ বা ক্যান্সারের কারণ”। সিগারেটের প্যাকেটে লিখা থাকে “ধূমপান স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর”। যারা লিখে, সিনেমাতে প্রদর্শন করে, বিক্রি করে, তারা নিজেরাও জানে যে, এটা স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু তারপরও প্রদর্শন বা বিক্রি করছে। আর যারা ধূমপান করছে, তারা ও জানে এটা একই সাথে তাদের অর্থ, সময় এবং স্বাস্থ্য- তিনটাই কেড়ে নিচ্ছে। আর আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্কুল-কলেজে পড়া অবস্থায় ধূমপান করাটা বখাটের ক্যাটাগরিতে পড়লেও, একটু প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেলে সেটাকে অন্যরা স্বাভাবিক চোখেই দেখে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে অধূমপায়ীরা ধীরে ধীরে ধূমপায়ীতে পরিনত হন। এর পিছনে কোন উল্লেখযোগ্য কারণ থাকে না। তবে, অনেককেই শুনবেই বন্ধুদের বা ছেড়ে চলে যাওয়া প্রেমিকাকে দায়ী করতে। যা মোটেও কোন কারণ হতে পারে না। তবে জীবনের ধূমপায়ীরা নিজেরা এর ক্ষতিকারক দিকটা মাঝে মাঝে উপলব্ধি করেন। চিন্তা করেন যে, ধূমপান করা কমাবেন বা ছেড়ে দিবেন। অনেক ধরনের প্রতিজ্ঞা ও করতে শুনবেন। বলে রাখি, কিছু ঘটার আগে বিশ্বাস করবেন না। ধরুন, এক বন্ধু সকাল বেলা কসম কাটল, সে ধূমপান করা ছেড়ে দিবে। সন্ধ্যায় তাকে দেখলেন আবার ধূমপান করতেছে।
-দোস্ত, তুই না সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিসিলি বললি!
-ছেড়ে দিসিলাম সকালে, এখন আবার ধরলাম!
হাসির না, ব্যাপারটা এমনই হয়। জিনিসটা খারাপ, কিন্তু ছাড়তে পারে না। তবে অনেক ধূমপায়ীরা এর অনেক উপকারিতা বলে থাকেন। যেমনঃ ধূমপান করলে টেনশন কমে, অনেক সহজেই অন্য কোন ধূমপায়ীর বন্ধু হওয়া যায় ব্লা ব্লা!
ধূমপান নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে আমি এবার আসল টপিকে আসতে চাইঃ ফেসবুকিং। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে গত ৫ বছরে ফেসবুক ব্যাবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে সকল ধরনের গানিতিক সূত্র ভঙ্গ করে। ধীরে ধীরে ফেসবুকে মানুষ বেশি সময় দেয়া শুরু করেছে। অনেক ক্ষেত্রে যা স্বাভাবিক কাজঃ অফিস, পড়ালেখা, ঘুম, খাওয়ার সময় থেকে ও সময় বের করে নিচ্ছে। সামাজিক বিজ্ঞানিদের মতে, ফেসবুকিং একটা সামাজিক অসুখে রূপ নিয়েছে। কারণ, আমরা আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনকে পাবলিক করে ফেলছি, কাছে বন্ধু ছেড়ে অনলাইনে পরিচিত বন্ধুদের নিয়ে মেতে আছি, পরিবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, নিজেকে প্রচারে ব্যাস্ত হয়ে পড়ছি ইত্যাদি। মনে পড়ে কি, “ধূমপান কর্কট রোগ বা ক্যান্সারের কারণ”? হুম। সকল ফেসবুক ব্যাবহারকারীরাই জানে, সামাজিক বিজ্ঞানিরা প্রচার করছে- কিন্তু তারপর ও এসব নিয়ে আলোচনা বা এসব খবর শেয়ার করা হচ্ছে ফেসবুকে। ধুম্পানের মতো স্কুলে পড়া বাচ্চারা ফেসবুক ব্যাবহার করলে, এটা পাকামি হিসেবে দেখা হলেও, একটা বয়সে এসে সবাই ফেসবুক ব্যাবহার করবে, না ব্যাবহার করাটাই অস্বাভাবিক চোখে দেখা হয়। আর ধূমপায়ীদের মতো ফেসবুক ব্যাবহারকারীরা তাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিবাহিত জীবনে কোন একটা সময় আসক্ত থাকে। ফেসবুক ব্যাবহারকারীরা বিভিন্ন সময় এর খারাপ দিকটা উপলব্ধি করতে পারে, ডিসিশন নেয়, ব্যাবহার করা কমিয়ে দিবে বা ছেড়ে দিবে। আসল জীবনে ফিরে আসবে, স্বাভাবিক জীবনে। এই মানুষদের জন্য ফেসবুকে একটা অপশন আছেঃ “ডি-অ্যাকটিভেট”। কিন্তু, মজার ব্যাপার হল, ডি-অ্যাকটিভেট করার পর আপনি যে কোন সময় আবার “লগ ইন” করেই ফিরে আসতে পারবেন। অনেক বন্ধুকে দেখলাম, পরীক্ষায় খারাপ করে, অনলাইনে গড়া প্রেম – অনলাইনেই ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার পর ইত্যাদি কারনে ফেসবুক ডি-অ্যাকটিভেট করে দেয়। আপনার ও মন খারাপ, বন্ধুকে আর ফেসবুকে পাবো না। আচমকা রাতের বেলা দেখবেন আপনার বন্ধু স্ট্যাটাস আপডেট দিচ্ছে।
-দোস্ত, তুই না ফেসবুক ডি-অ্যাকটিভেট করছিলি দুপুরে?
-হুম, দুপুরে ডি-অ্যাকটিভেট করে ছিলাম, এখন আবার অ্যাকটিভেট করছি।
এই পর্যায়ে এসে ধূমপায়ীদের সাথে ফেসবুক ব্যাবহারকারীদের কি কোন মিল খুজে পাচ্ছেন?
পেতে পারেন। এতে কিছু যায় আসে না। এমন অনেক লেখা আপনারা প্রায়ই ফেসবুক থেকে পেয়ে থাকেন। হয়তো আমার লেখার লিঙ্ক ও ফেসবুক থেকেই পেয়েছেন।
কয়েক বছর আগে এমন একটা ইউটিউব ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ সেই হারে ভিডিওটা দেখে, অনুভব করে, ফেসবুকে শেয়ার করে এবং অতঃপর ফেসবুক ব্যাবহার নিজের মতই চালিয়ে যায়।
হ্যাপি ফেসবুকিং!
সব কিছুকে ফেসবুকের সাথে লিঙ্ক করার ব্যাপারটা আমাদেরকে আর ও বেশি ফেসবুকের দিকে আবদ্ধ করে ফেলছে। ইমেইল এর সাথে লিঙ্ক করলে ক্ষতিটা কোথায় আজও আমার বোধগম্য হয় না।