ঢাকা শহরের পথে, ঘাটে, স্টেশন চত্বরে, কোথায় পাবেন না আপনি মল-মূত্রের দুর্গন্ধ। এভাবে কখনো হাঁটতে হাঁটতে আপনার আমার মন বলে উঠে উন্নত দেশে যাবার কথা। এখন, ভেবে দেখুন তো, লক্ষ টাকার খরচা-ঝামেলা গচ্ছা দিয়ে সেই মার্কিন প্রবাসে গিয়ে, তার রাস্তাঘাটে যদি আপনি সেই একই গন্ধ শুঁকতে বাধ্য হন, সেই মেডিক্যাল স্পিরিট আর নাইট্রোজেন সালফাইডের মিলিত গন্ধ যদি “ধুম করে” আপনার নাকে লাগে, তাহলে সৈয়দ মুজতবা আলীর কায়রো ভ্রমণের সেই “চাট্টি খেয়ে নেই”-এর বদলে যে আপনার বেশ বমি বমি ভাব হবে না, তার সম্ভাবনা খুব কম।
বলছিলাম, মার্কিন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্যান ফ্রান্সিসকো শহরের কথা। পশ্চিম উপকূলের এই সুন্দর সাজানো গোছানো জনবহুল এই শহর। এই শহরের রাস্তাঘাটে নাকি গেলেই পাওয়া যায় মূত্রের সুগন্ধ।
প্রাথমিক ভাবে এই বিশ্রী গন্ধের দোষ চাপে বেশ কয়বছর ধরে চলা খরার উপর। খরা চলছে, তাই মলমূত্র পরিষ্কার করার পানি দেওয়া যাচ্ছে না, এই টাইপ সাফাই আর কি।
কিন্তু, ভক্স ডট কমে একজন দাবী করে বসলেন যে, এটা ঠিক না। খরা তো আশেপাশের শহরেও আছে। ওগুলো তো আর
এরকম পাঁঠার মত গন্ধ ছড়ায় না। তার দাবী, “স্যান ফ্রান্সিসকো শহরে রাস্তাঘাটে “মুতে” এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী”।
ঢাকা শহর হলে কেউ তেমন গা করতো না। কিন্তু, “উন্নতি”-র শিখরধারী মার্কিন মুলুকের এক সুপরিচিত শহরের এহেন বেইজ্জতি কি করে মানুষ বিশ্বাস করবে?
যথা সন্দেহ, তথা প্রমাণ। দাবীকারী দেখালেন, নিচের “গু-চিত্র” (poop map)
ব্যাপারটা আসলে, শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে “রাস্তায় মল পাওয়া”-র ঘটনা পুলিশকে জানিয়ে যে নালিশ করা হয়েছে, তার যোগফল। এরই আবার সময়ের সাথে পরিবর্তন দেখিয়ে একটা সচল “গু-চিত্র” লিংকও দিলেন তিনি।
এবং যেহেতু, “গু-নালিশ” এর সাথে “মূত্র-বিসর্জন” আঙ্গাআঙ্গিক ভাবে জড়িত, সেহেতু, এটা প্রমাণিত হয় যে, রাস্তাঘাটে মলমূত্র ত্যাগ করে এমন লোকেদের কারণেই রাস্তায় এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি। এবং সময় প্রেক্ষিতে, এ ধরনের লোকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। (দেখুন ২০০৮ ও ২০১৫ সালের তুলনামূলক চিত্র)
নিছক মজা করার জন্যই এই “গু-চিত্র” তৈরী করেছে কেউ, এমন ভাবতেই পারেন। কিন্তু না, বরং, এই অযাচিত প্রকৃতির ডাকে সাড়া প্রদানকারীদের ব্যাপারে সচেতন করাই ছিল এই তথ্যচিত্রটুকুর কাজ।
খরার কারণে যেমন পানি কমেছে, তেমনি কমেছে লোকের আয় উপার্জন। অনেক মানুষ চাকরি হারিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে গৃহহীন হিসেবে। কিন্তু, সরকারী ব্যপস্থাপকরা উল্টো নতুন নতুন ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারী করে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। অন্যদিকে চরম পুঁজিবাদি ব্যবস্থায় পাবলিক টয়লেটের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায়, গরিব লোকগুলো বাধ্য হয়েছে, রাস্তাঘাটে এই বাজে কাজ করতে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, একবার একটা স্টেশনের লিফট বন্ধ করে দিতে হয়েছিল কেবল এর কলকব্জা মনুষ্য মলে আটকে যাবার ফলে।
তাই, রাস্তায় নামার পর দুর্গন্ধের দোষ অনেকে প্রাকৃতিক খরার উপর দিতে চাইলেও, এই সামান্য কিন্তু অসাধারণ দুটো মানচিত্র, তুলে আনতে পেরেছে খবরের পেছনের খবর। মানুষ হিসেবে এই চিত্র দেখার পর, কে বা অবিশ্বাসে থাকতে পারে,
দ্বিমুখীতা ছাড়া?