১৯৯৫ সালের কথা। আমার বড় বোনের কাছে একটি হিন্দী মুভির নাম শুনলাম যেটা না দেখলে বলে জীবন বৃথা! কোনভাবে ভিডিও ক্যাসেট ভাড়া করে আমাদের ভিসিপিতে ছাড়া হলো মুভি :”হাম আপকে হ্যায় কৌন?”। শুরু হলো মুভি …। গাজরের হালুয়া, অন্তাক্ষরী খেলা, বিয়ের এই অনুষ্ঠান সেই অনুষ্ঠান … চলছে তো চলছেই। সিনেমা দেখছি নাকি বিয়ের ভিডিও দেখছি, কিছু বুঝতেসিলাম না। আমার বোন বললো:” এই তো! এখনই মুভির কাহিনী শুরু হবে।“ এইভাবে মুভি শেষ হয়ে গেল কিন্তু ঐ বিয়ের অনুষ্ঠান মনে হয় এখনো চলছে। মুভির নির্দেশক সুরাজ বারজাতিয়ার নামটা ভালোভাবে মাথার মধ্যে ঢুকে গেল। হালায় বারবার মুভি বানায় আর প্রতিবার মুভি দেইখা ধরা খাই।
এইবার ঠিক করসিলাম আর ধরা খামুনা। কিন্তু প্রেম রতন ধন পায়ো মুভির ট্রেলার আসার পর আমার স্ত্রী বললো:” আরে! এ মুভিতো মনে হচ্ছে The Prisoner of Zenda’র কাহিনী নিয়ে তৈরী!“
পুরুষতান্ত্রিক এ সমাজে স্বামী হিসেবে এমন একটা ভাব ধরলাম যেন Zenda –মেন্ডা সব কাহিনী এক্কেরে পইড়া উলডায় ফালাইসি। “তাই নাকি? তাহলে তো ভালোই হবে।”
আমার স্ত্রীর ধারণা সঠিক ছিল, কিন্তু বারজাতিয়ার মুভি দেখবা আর গাজরের হালুয়া খাবানা তা কী হয়? লে হালুয়া!
কাহিনী জানা যাক। প্রেম দিলওয়ালা ( এইডা আবার কারো নাম হয়?) ওরফে সালমান খান একটি রামলীলা দলের মালিকপক্ষের কেউ। ঐ রাজ্যের রাজকুমারী মৈথিলী ( সোনাম কাপুর) এর বিরাট ফ্যান নায়ক প্রেম। সোনামের সাথে বিয়া ঠিক হইসে অন্য রাজ্যের যুবরাজ চুলবুল পান্ডের সাথে। চুলবুলের বাপে ছিল এরশাদের ওস্তাদ। নিজের ২ বউ আর বউ টাইপ কয়টা কে জানে? যাই হোক মোটামুটি ২ ভাই এবং ২ বোনের রাজ পরিবারে নাম আছে এবং এদের মধ্যে বিরাট মাইরপিট অবস্থা। চুলবুল রাজা হবে কিন্তু এর মধ্যে হয় ঝামেলা। প্রেম আসে চুলবুলের জায়গায়। তারপর কে কার ধন পায়ো … খেচাখেচি হেনতেন এবং শেষে গাজরের হালুয়া।
সুরাজ বারজাতিয়ার মুভি কেউ কাহিনীর জন্য দেখেনা। সপরিবারে যাতে কিছু সময় উপভোগ করা যায় সেজন্য দেখে। বলা যায় বর্তমান হিন্দী সিরিয়াল গুলির সবগুলিরই রং ঢং সব তার থেকেই শেখা। তবুও রং তামাশা হতে হতে শেষের দিকে কিছু কাহিনী থাকে। এই মুভিটির শুরুটা মারাত্মক হইসে। আমি তো পুরাই টাশকিত। বেশ ভালোই তো লাগছে! তারপর মুভির ২য় ভাগেই শুরু হলো পেইনের উপর পেইন।
অভিনয়ের দিক দিয়ে সালমান খানকে দারুন লেগেছে। উভয় চরিত্রেই দারুন করেছে। এছাড়া সালমানের বোন চরিত্রে স্বরা ভাস্কর এবং বৈরাম খান টাইপ চরিত্রে অনুপম খের অনেক ভালো করেছেন। এছাড়া সালমানের বন্ধু চরিত্রে দীপক ডোব্রিয়ালও ভালো করেছেন।
এরপর আসে নায়িকা। কেন সোনম কাপুর? একদম অভিনয় পারে না। এছাড়া সালমানের সামনে সালমানের ভাগ্নী লাগে। পুরাই ভুয়া। এ চরিত্রে কারিনা কাপুরকে প্রয়োজন ছিল। তবে সোনম কাপুরের সাজ-গোজ বেশ প্রশংসনীয় বলতে হবে। নীল নিতিন মুকেশ এখনো কিছুই অভিনয় শিখেনাই। ওইটারে কোন মাঠের পাশে দাড় করায়ে পাশে “হোয়াইট হাউজ” লেখা সাইন বোর্ড ঝুলায় দিলে অনেক পর্যটক পাওয়া যাবে।
মুভিটির গানগুলি চরম খারাপ নয়। চলে আরকি। শুধু শুনতে বেশ খারাপ লাগতে পারে তবে সুন্দর চিত্রায়নের কারনে দেখতে তেমন খারাপ লাগে না।
মুভিটির কাহিনীতে এমন কিছু বাঁক ছিল যেগুলি সুন্দরমত বানানো যেত। মুভিটির চিত্রায়ন বলতে হবে অসাধারণ মানের। মুভিটি দেখলে ভালো প্রিন্টে দেখলে ভালো লাগবে।
মুভিটির প্রথম ভাগ যেরকম দারুন হয়েছিল দ্বিতীয়ভাগ তারচেয়েও বেশি শোচনীয়। এক সময় মনে হয় এই মুভি কেন শেষ হয় না? সব মিলিয়ে যা আশা করেছিলাম তেমনই মুভি।
রেটিং – ২.০ /৫.০