মুভিটির ট্রেলারে একটি কথা ছিল:”সেই কাহিনী আরেকবার …”। তখনই বুঝছি নির্দেশক সব গোবেচারা দর্শকদেরকে জাহাজে চড়াবে। তারপর কক্সবাজারের পাড় ঘেঁষে যাবে আর বলবে:”ঐ যে কলাতলী পয়েন্ট … ঐযে লাবণী পয়েন্ট … ঐযে …”। তখন সবাই একসাথে হাই তুলতে তুলতে বলবে “শৈবাল …” আর মনে মনে মুভিটিকে “শৈ” বাদ দিয়ে বিশেষণ দিবে।
কিন্তু ঠিক তখনই জাহাজটি যদি একটি সাবমেরিন হয়ে যায় এবং গভীর সমুদ্রের ঝাঁপ দিয়ে বিরল সব দৃশ্য দেখায় তখন বলতেই হবে জাহাজের কাপ্তানের জবাব নেই। সেরকমই বলতে হয় “তামাশা” মুভির নির্দেশক ইমতিয়াজ আলী সম্পর্কে।
কাহিনী জানা যাক। মুভির নায়ক “বেদ” (রণবীর কাপুর) এবং নায়িকা “তারা” (দীপিকা পাডুকোন) । ঘুরতে আসে ফ্রান্সের দ্বীপ কর্সিকাতে। দুজনের দেখা হওয়ার সাথে সাথে তারা ঠিক করে একে অপরকে নিজেদের সম্পর্কে কিছুই বলবে না এবং ঘুরাঘুরি শেষ হতেই নিজনিজ ঠিকানায় ফেরত। কেউ কখনও আর অপরের সাথে দেখা করবে না। যেইভাবা সেইকাজ। ঐ ঘটনার ৪ বছর পরেও তারার মনে বেদের জন্য অন্যরকম আকর্ষণ। সে খুঁজে বের করে বেদকে । কিন্তু দেখে এই ছেলে তো সেই কর্সিকার ছেলেটি নয়। হতেই পারে না …। সে কী নাটক করছে? কোন তামাশা?
ইমতিয়াজ আলীর চিন্তা-ভাবনা দেখে পুরাই টাশকি খাইসি। মুভিটি রোমান্টিক হতে হতে পুরাই অন্য মুভি হয়ে গেল। “এ পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে সবাই আমরা অভিনেতা”- এই ব্যাপারটি খুবই সূক্ষভাবে, বলা যায় শুধুমাত্র নির্মাণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মুভিটির অনেক দৃশ্যই তালি পাওয়ার যোগ্য। উদাহরণস্বরুপ তুম সাথ হো গানটির দৃশ্যায়ন এতটাই মারাত্মক যে গানটি শুধুমাত্র গান থাকে না হয়ে যায় মুভির সেরা দৃশ্য।
মুভিটির সবচেয়ে সেরা দিক হলো যে পর্দায় বলতে গেলে শুধু রণবীর এবং দীপিকাকেই দেখা যায়। দারুন এক জুটি। উত্তম-সুচিত্রা, অমিতাভ-রেখা, অনিল-মাধুরী, শাহরুখ-কাজল, … এই সকল দিগ্বজ জুটিদের তালিকায় তাদের নাম আসা সময়ের ব্যাপার। ফাটাফাটি অভিনয় দুজনের। পুরাই মাতায় দিসে। নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও একসাথে কাজ করে ফাটায় ফেলানো বাড়ীর কাছের কথা না।
দীপিকা ইতিমধ্যে বলিউডের সেরা অভিনেত্রী। দীপিকার চরিত্রটি প্রথমদিকে প্রধান চরিত্র মনে হলেও পরেরদিকে রণবীরের চরিত্রটিই প্রাধান্য পায়। কিন্তু রণবীরের কষ্ট দেখে তার যে মনের কষ্টটি দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে দীপিকা।
রণবীর কাপুরের এটি সেরা অভিনয়। খুবই কঠিন একটি চরিত্র। কীভাবে যে করেছে চিন্তা করাটাই কঠিন। অনেক দৃশ্যে তেমন কোন সংলাপ নেই। তবুও শুধুমাত্র অভিনয়ের জোরেই পুরাই তাক লাগায় দিসে। রণবীর কাপুরকে হয়তো বলিউডের সেরা নায়ক বলা যাবে না তবে নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা অভিনেতা বলতেই হবে।
এছাড়া সহ অভিনেতাদের মধ্যে রণবীরের ছোটবেলার চরিত্রে শিশু-শিল্পী দারুণ করেছে ( নাম খুঁজে পাইনি)। মুভিটির গানগুলি বেশ ভালো তবে “তুম সাথ হো” গানটি ফাটাফাটি লেভেলের।
মুভিটির খারাপ দিক হিসেবে বলতে হবে যে প্রথম দিকের কিছু দৃশ্য পুরাই পাগলা কিসিমের। আজকাল কার হিন্দী মুভির মতো মাথা না খাটিয়ে এটি দেখা যাবে না। যারা মনে করেন মুভি মানে আইটেম সং এবং রান্না মানে ঘুটা দেওয়া তাদের জন্য এই মুভি দেখা নিষেধ।
মুভিটি বেশ ভালো হওয়া সত্ত্বেও মানুষের প্রশংসার চেয়ে নিন্দাই বেশি পাচ্ছে ইমতিয়াজ আলীর তামাশা। সবার একই অভিযোগ:”বোরিং”। আমার মতে পরিচালক আসলে বোকা। মাঝে মাঝে সানি লিওনের সিন কাইটা দিয়া দিলেই হইতো। মুভিটির ব্যবসার শুরু দারুন হলেও কতদুর যাবে বলা মুশকিল।
এক কথায় আমার কাছে দারুন লেগেছে। তবে অনেকের কাছেই বোরিং লাগতে পারে।
রেটিং – ৪ / ৫
খাইসে! আপনার রিভিউ পইড়া তো বিপদে পড়লাম। একটা গান এর জন্য মুভিটা দেখার প্ল্যান ছিল। ইমতিয়াজ আলির ফিল্ম তো ভাল হয় ৬৬% সাকসেস রেইট।
দেইখা আপনার রিভিউ এর সাথে মিলাইতে হবে।