এইবার কি হবে সি এন জি মামা?

এইবার কি হবে সি এন জি মামা?

 

এটা গল্প হলেও সত্য।

একটা বিজ্ঞাপন।

 

তিনজন যুবক। কাঁধে ঝোলানো অফিস এক্সিউটিভ টাইপ ব্যাগ। হন্যে হয়ে সিএনজি ড্রাইভারকে ডাকছে, দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। দেখে বোঝা যায় বাড়ি ফিরবার ভীষণ তাড়া। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। হঠাত একজন সি এন জি চালক রাজি হয়ে গেলেন। তাও আবার মিটারে যা ভাড়া ওঠে সেই ভাড়াই চাইলেন।

যুবকেরা তাজ্জব হয়ে গেলও।

এমন ঘটনা ঘটে নাকি বাংলাদেশে!

 

না, সাধারণত ঘটে না। তাই এরকম অবিশ্বাস্য একটি চিত্র তুলে এনে একটি সেলফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপন বানানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য তাদের অফার এরকম অবিশ্বাস্য সেটা কাস্টমারকে বোঝানো।

 

এখন আর বিজ্ঞাপনটা চলে না। কিন্তু সি এন জি নামক বিড়ম্বনা থেকে অন্তত তিলোত্তমা ঢাকা নগরীর মধ্যবিত্তের মুক্তি হয়নি।

 

মিটারে না যাওয়া-

আকাশ চুম্বী ভাড়া দাবি করা-

কোন যায়গায় যেতে না চাওয়া-

কাজের সময় সি এন জি না পাওয়া-

 

এই লিস্টিটা লম্বা করার ইচ্ছে নেই। কিন্তু সবচেয়ে বিরক্তিকর লাগে অনেক সি এন জি ড্রাইভারদের জমিদারি চাল। এইটা দেখলে বরাবর কানের নিচে একটা দিতে মন চাইতো। তবু হাসিমুখ করে বলতাম-

 

“আরে ভাই চলেন না, এই যে গুলশান দুই নাম্বার। আপনি ভাই ভালো!”

জীবনে এই সি এন জি ড্রাইভারকে যে কত অনুরোধ করতে হয়েছে, এইরকম অনুরোধ নিয়ে কারো পেছনে লেগে থাকলে কয়েক গণ্ডা প্রেম হয়ে যেত। আহারে জীবন!

 

২৬ নভেম্বর ফেসবুকে অকারণের এদিক ওদিক করছি। হঠাত দেখি সি এন জি মিটার নামে একটি অ্যাপ বানানোর কথা। শেয়ার করেছেন ওমর শেহাব ( নিরাপত্তা বিশ্লেষক, যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণারত)।

অ্যাপটা সম্পর্কে পড়েই সাথে সাথেী মনে হল ঢাকা শহরে মধ্যবিত্তের প্রতি দিনের জীবনে যেসব অ্যাপ কাজে লাগে, এই নতুনটা সব সেরাগুলোর একটা অবশ্যই হবে।

 

শুধু মাত্র যোগাযোগ সহজ হলে মানুষের জীবন বদলে যায়।

 

অ্যাপটা কি কাজে লাগবে সেটা অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করছি-

 

“আপনি জানেন কি, গত ১ নভেম্বর থেকে সিএনজির নতুন ভাড়া কার্যকর কয়েছে?

সিএনজি ভাড়া প্রতি কিঃমিঃ ৭.৬৪ থেকে বাড়িয়ে ১২.০০ টাকা করা হয়েছে এবং প্রথম দুই কিঃমিঃ ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে এবং প্রত্যেক সিএনজি চালককে মিটারে যাবার আইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

 

আই রিপিট প্রত্যেক সিএনজি চালককে মিটারে যাবার আইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেকে তেনা পেচাতে পারেন, চালকদের পুষায় না তাই মিটারে যায় না। যাতে করে চালকরা না ঠকেন সেজন্য নতুন ভাড়া এবং নতুন আইন কার্যকর হইছে।

 

★ “সিএনজি মিটার” অ্যাপটিতে রয়েছে গুগল ম্যাপ (জিপিএস) ক্যালকুলেটর। সিএনজিতে চড়ে জিপিএস ক্যালকুলেটরটি “START” করে দিন। নামার সময় দেখে নিন কত কিঃমিঃ যাত্রা করেছেন এবং ভাড়া কত হয়েছে। এটি আপনার যাত্রাপথকে অসংখ্য বিন্দুর মাধ্যমে উপস্থাপন করবে এবং আপনার চলার পথকে লাইভ উপস্থাপন করবে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে যেটি Travel, Tour, Adventure বা অন্য যেকোন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন।

 

★ স্বয়ংক্রিয় এ জিপিএস ক্যালকুলেটর ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে সক্ষম। ম্যাপের মাধ্যমে দূরত্ব নির্ধারণের সময়সীমার মধ্যেও স্মার্টফোনে আপনি সকল কাজ করতে পারবেন।

 

★ যদি কোন সিএনজি চালক অসদুপায় গ্রহন করে বা মিটারে যেতে রাজি না হয়, জাস্ট একটা ক্লিকের মাধ্যমেই অভিযোগ দায়ের করুন যথাযথ কত্রিপক্ষের কাছে।

 

 

অনেক কাজের ফাঁকে তৈরি করেছি। তারপরো সর্বোচ্চ দেওয়ার ট্রাই করছি অ্যাপটিতে। আমাদের যতটুকু সম্ভব করেছি। বাকিটা আপনাদের হাতে। সবার একটু সহযোগিতা পেলে সিস্টেম সহ চেঞ্জ করা যাবে। সিএনজি চালকরা খুব বেশি হ্যাডাম হইয়া যায় নাই। সবাই যদি নিজের অধিকারটুকু বুঝে নিতে শিখি, ফালতু সিস্টেম দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হবে না।”

 

সবচেয়ে পাওয়ারফুল মন্তব্য –

 

“আফটারঅল, দেশটা তো আমাদেরই”

 

সি এন জি মিটার দেখতে ঘুরে আসতে পারেন ফেসবুক পেজে। লিঙ্ক- https://goo.gl/cX6s4X

 

ডাউনলোড করার লিঙ্ক- https://goo.gl/5i9ZZu

 

পেজে আপডেট দেখলাম ডেভুরা যেসব বাগ ছিল সেগুলো ঠিক করে ফেলেছেন। সাবাস।

 

অনেক দিন ব্লগিং করি না নানান ভয়ে। লিখতে বসে মনে হচ্ছে হাত কাঁপছে, বাঁকা হয়ে গেছে। এই লেখাটাও লিখছি নানান ফাঁকিবাজি করে।

 

কিন্তু অ্যাপটা নিয়ে একটি বলতে চাই-

 

সরকার চাইলে এই অ্যাপটি দিয়ে ঢাকায় নাগরিকদের চলাচলের অভিজ্ঞতা বদলে দিতে পারে। কিভাবে-

 

১- প্রত্যেক সি এন জি মালিককে তার ড্রাইভারের কাছে স্মার্ট ফোন দিতে হবে যেখানে এই অ্যাপটা থাকবে। বাইরের দেশগুলোতে ট্যাক্সিতে জিপিএস খুব স্বাভাবিক একটা জিনিস।

 

২- প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক পদ্ধতিতে এটা কার্যকর করা এবং পর্যায়ক্রমে এটাকে আইনে পরিণত করা। যেহেতু মিটারে না যাওয়া আইন ভঙ্গ করার শামিল, তাই এই পদ্ধতিকে আমলে নিলে আইন ভাঙা নিয়ে ঠিকঠাক এভিডেন্স পাওয়া যাবে। সি এন জি ড্রাইভার ঝামেলা করতে পারবে না, পুলিশ আজাইরা কিছু করতে পারবে না, যাত্রীও কম ভাড়া দিতে চেয়ে ক্যাচাল করতে পারবে না।

 

৩- অ্যাপটা সি এন জি মালিকরাও ব্যবহার করবে। এই ক্ষেত্রে মালিক এবং সি এন জি ড্রাইভারদের মহাভারতসিদ্ধ টাইপের যে অভিযোগ- জমা খরচ ওঠেনা, মালিকে ঝামেলা করে; এসব ধানাই পানাই বন্ধ হবে।

 

৪- সবার অভিযোগ এবং অভিজ্ঞতার আলোকে পুরো ব্যবস্থাপনা আরো উন্নততর করা যাবে।

 

যেহেতু পুরো ব্যপারটা ডিজিটাইজড হয়ে যাচ্ছে, তখন পুরো ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ পাওয়া যাবে।

 

মহান যথাযথ কতৃপক্ষ

একবার ভেবে দেখবেন কি?

 

 

 

 

 

 

 

 

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

1 Response to এইবার কি হবে সি এন জি মামা?

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    দারুণ উদ্যোগ, দারুণ অ্যাপ! সিএনজি মিটার মেনে চললে যে যাতায়াতের ঝক্কি কতটা কমে যায় সেটা দিল্লী গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম। এখন আর সিএনজি চড়ি না, কিন্তু অনেকের কষ্ট লাঘব হতে যাচ্ছে (হোপফুলি) সেটা দেখে খুব ভালো লাগলো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।