এক বছর আগের কথা। সারা পৃথিবীর ১২০ জনেরও বেশী মুসলিম স্কলার মিলে ইসলামিক স্টেইটের “যোদ্ধা এবং অনুসারী”দের প্রতি এক খোলা চিঠি লেখেন । সেখানে তারা তাদের কর্মকাণ্ডকে ”অনৈসলামিক” বলে ঘোষণা করেন। চিঠিটিতে ইসলামিক স্টেইটের মতবাদ এবং এর সন্ত্রাসবাদ এর ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে যুক্তি খণ্ডন করেন তারা।
মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা স্কলারগণ এই চিঠি লেখেন। তাদের মাঝে রয়েছেন মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ শাওকি আলম এবং জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইন এর মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ আহমাদ হুসাইন। চিঠিতে মূলত আরবিতে লেখা হলেও ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, তার্কিশ, পার্সিয়ান এবং বিশ্বের আরো অনেক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
ইসলামী বিশ্বের নেতারা যারা চিঠিটির অনুমোদন দিয়েছেন, তাদের মতে এই প্রথম বারের মত ইসলামিক স্কলাররা মিলে এমন অসাধারণ কিছু করেন। তাদের মতে, চিঠিটি ইসলামিক স্টেইটের মতবাদকে সম্পূর্ণ্রুপে খণ্ডন করে। ইসলামিক স্টেইটের স্বঘোষিত নেতা আবু বকর আল বাগদাদী, এর যোদ্ধা এবং অনুসারীদের উদ্দেশ্য করে চিঠিটি লেখা হয়েছে।
কিন্তু “ইসলামিক স্টেইট” শব্দগুলো উদ্ধৃতিতে রাখা হয়েছে এবং চিঠির লেখকগণ শব্দগুলো সবাইকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে আহবান জানিয়েছেন। কারণ “ইসলামিক স্টেইট” কথাটা শুনলে মনে হতে পারে, এটা এমন একটা ইসলামিক রাষ্ট্র, যেটা মুসলিম দেশগুলোকে অমুসলিমদের থেকে নিরাপদ রাখছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক যেই খিলাফত ছিল তাকে পুন্রুদ্ধার করেছে।
তাদের চিঠির সারাংশ নীচে তুলে ধরা হল।
১) সকল প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া ফতোয়া দেয়া যাবেনা। এমতাবস্থায়, ফতোয়ার প্রয়োজন পড়লে সরাসরি ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আইনী তত্ত্ব অনুযায়ী দিতে হবে। কোন একটি বিষয়ে কুরআন এবং হাদীস এর সমস্ত অংশ না বিবেচনা করে যেকোন একটি অংশ বা আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়েও কোন ফতোয়া দেয়া যাবেনা। অর্থাৎ ফতোয়া দেয়ার ক্ষেত্রে ইসলামিক বিধিনিষেধ মানতে হবে এবং সুবিধামত কুরআন হাদীস এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে ফতোয়া দেয়া যাবেনা।
২) আরবী ভাষায় পাণ্ডিত্য ছাড়া কোন ফতোয়া জারী করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
৩) শরীয়ার আইনকে সরলীকরণ করা এবং ইসলামে প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতিকে অস্বীকার করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
৪) ইসলামের মূল বিষয়গুলো ছাড়া অন্যান্য যেকোন বিষয়ে স্কলারদের মাঝে মতানৈক্য থাকা অনুমতিসিদ্ধ।
৫) সমসাময়িক সময়ের বাস্তবতা অস্বীকার করে ফতোয়া প্রণয়ন করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
৬) নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
৭) কোন গুপ্তচর, রাষ্ট্রদূত কিংবা কূটনীতিজ্ঞকে হত্যা করা ইসলাম সম্মত নয়। সুতরাং, সাংবাদিক এবং ত্রাণকর্মীদেরকেও হত্যা করা যাবেনা।
৮) ইসলামে জিহাদ একটি প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ। সঠিক কারণ, উদ্দেশ্য কিংবা নিয়ম ছাড়া এটি নিষিদ্ধ।
৯) কেউ প্রকাশ্যে নিজেকে অবিশ্বাসী ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত তাকে ইসলামচ্যুত আখ্যা দেয়া নিষিদ্ধ।
১০) যে কোন উপায়ে কোন আহলে হাদীসগণের ক্ষতি করা বা দুর্ব্যবহার করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
১১) ইয়াযিদিগণ আহলে হাদীস এর অন্তর্ভুক্ত।
১২) সার্বজনীন সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ দাস প্রথা ইসলামে পুনঃপ্রবর্তন করা যাবেনা।
১৩) ইসলামে মানুষকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা নিষিদ্ধ।
১৪) ইসলামে নারী অধিকারকে অগ্রাহ্য করা নিষিদ্ধ।
১৫) ইসলামে শিশু অধিকারকে অগ্রাহ্য করা নিষিদ্ধ।
১৬) ইসলামে ন্যায়বিচার এবং ক্ষমাশীলতা ছাড়া সঠিক নিয়ম ব্যতীত আইনী শাস্তি (হুদুদ) বাস্তবায়ন করা নিষিদ্ধ।
১৭) ইসলামে মানুষকে যেকোন ভাবে শোষণ করা বা কষ্ট দেয়া নিষিদ্ধ।
১৮) ইসলামে মৃত দেহের অসম্মান করা নিষিদ্ধ।
১৯) আল্লাহকে কোন খারাপ কাজ বা ঘটনার জন্য দায়ী করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
২০) ইসলামে আল্লাহর নবীদের এবং তাদের সাহাবীদের সমাধি ধ্বংস করা নিষিদ্ধ।
২১) কোন রাষ্ট্রপ্রধান এর ইসলামের প্রতি সম্পূর্ণ অবিশ্বাস কিংবা মানুষকে নামাজ আদায় করতে না দেয়া এইসকল কারণ ছাড়া সশস্ত্র বিদ্রোহ ইসলামে নিষিদ্ধ।
২২) বিশ্বের সকল মুসলিমদের সম্মতি ব্যতীত ইসলামে খিলাফত জারী করা নিষিদ্ধ।
২৩) প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকতে পারবে।
২৪) রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে আর ইসলামে হিজরত করার আবশ্যিকতা নেই।
Dhaka Tribune থেকে অনূদিত
খুবই জরুরি পোস্ট!