একটা গল্প বলি। এক দেশে একজনের কাছে একটি আলাদিনের চেরাগ ছিল। চেরাগ ঘষে দৈত্য বের হতেই বলে: “ তুমি কী চাও ? টাকা পয়সা চাও? তোমাকে কি সিনেমার নায়িকা বানায় দিব? নাকি পায়খানা বানায় দিবো?”
তার তিনটি ইচ্ছা:” ১ম ইচ্ছা, আমাকে সিনেমার পরিচালক বানায় দাও। ২য় ইচ্ছা সেই সিনেমার নায়ক-প্রযোজক শাহরুখ খানকে বানায় দাও এবং ৩য় ইচ্ছা শাহরুখের সব ভক্তের টাকা পয়সা আমার পকেটে ঢুকায় দাও।“
পরে সেই দৈত্য তাকে সিনেমার পায়খানা বানায় দিসে। যেই মুভিই বানায় সেটাতেই পাদের গন্ধ পাওয়া যায়। সেই সব মুভির সর্বশেষ সংস্করণ রোহিত শেঠীর Dilwale।
এই মুভিরও কাহিনী বলতে হবে? উফফ। মাথা ধইরা গেল। মুভির প্রধান নায়ক বরুন ধাওয়ান এর সাথে প্রধান নায়িকা কৃতি শ্যাননের লটর পটর চলতাসে। বিয়ের জন্য মুরুব্বি ধরতে হবে। নায়কের বড় ভাই অতিথি শিল্পী শাহরুখ খান এবং নায়িকার বোন সহঅভিনেত্রী কাজল। দুজনের আবার আগের প্রেম কাহিনী আছে। শুরু হয় ফ্ল্যাশব্যাক। ফ্ল্যাশব্যাকে ভুল বুঝাবুঝি। তারপর বর্তমানে সবঠিক ।
আরে!এত তাড়াতাড়ি মুভি শেষ করলে তো হবে না। একটু মারামারি দেখাতে হবে। ঢিসুম ঢিসুম। সমাপ্তি।
২০০৩ সালে শাহরুখ খান অভিনীত “কাল হো না হো” আমার সবচাইতে প্রিয় মুভি। কিন্তু শাহরুখ খান এই মুভিতেই প্রথমবার ছ্যাবলা হিসেবে পরিচিতি পায়। তারপর হাল্কাপাতলা যা শুরু হইসে তারপর এখন থামার নাম নাই। আগে তাও কিছু হাসি থাকতো এখন তাও থাকেনা। বুঝলাম হিন্দী মুভি গ্রামের মেলার মত। রং-তামাশা দেখানোটাই মুখ্য। কিন্তু রং তামাশা যদি অত্যাচার হয়ে যায় তাহলে সেটাকে হরর মুভি বলতে হয়।
শাহরুখের হইসে কী? ভক্তরা তার কী ক্ষতি করসে? এই দিলওয়ালে মুভি দেখার চেয়ে দিল কাইট্টা ঢিল মারলে কম ব্যাথা পেতাম।
রোহিত শেঠীকে আমি খুব বেশি খারাপ নির্দেশক বলতাম না। কিন্তু এখন বলতেই হবে চরম ওভার রেটেড একজন নির্দেশক। চিত্রায়ন সে ভালো মতই জানে কিন্তু অহেতুক অন্য জায়গা থেকে চুরি চামারি করে নিজের মুভিতে ঢুকিয়ে দেয়। সিংহাম এবং গোলমাল আমার অন্যতম প্রিয় মুভি হলেও এই দিলওয়ালে নামের কী বানাইলো?
আপনি হয়তো বলতে পারেন:”ধুর মিয়া। আপনি মজার মুভিতে যুক্তি খুঁজেন কেন?”। আমিও যুক্তি খুঁজি নাই। খুঁজসি হাসি। এক লাইনও হাসি নাই। যেই মুভিতে শাহরুখ, বরূন এবং জনি লিভার থাকে সেই মুভিতে হাসি নাই। খুঁজসি একশান। আসে হালকা পাতলা। কিন্তু শাহরুখকে একশানে মানায় না। খুঁজসি রোমান্স। একটা গেরুয়া গান দিয়েই পুরা মুভি রোমান্টিক হয়ে যায় না। অন্ততঃ রোহিত শেঠীর মুভি কিছু গাড়িতো উড়তে দেখুম? গাড়ি উড়সে সর্বসাকুল্যে ৩টা। তালি তালি।
মুভির একটাই ভালো দিক। সেটা সংগীত। গেরুয়া এবং জনম জনম বেশ ভালো। গেরুয়ার ভিডিও দেখে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম পুরাই কার্টুন ভিডিও। ফালতু গ্রাফিক্স দিয়ে বানানো সব সেট। শাহরুখ-কাজলের জায়গায় টম এন্ড জেরি থাকলে আরো নস্টালজিক হয়ে যেতাম।
মুভিটিতে কারো অভিনয় নৈপুণ্য নিয়ে কিছু বলা আসলে অন্যায় হবে। সবাই মেধাবী কিন্তু এই মুভিতে পুরাই অপচয়। শাহরুখ-কাজলকে কিছু কিছু দৃশ্যে ভালো লাগলেও লাভটা কী? দুজনের চরিত্রই জঘন্য। এদের ভালবাসা দেখলে কেউ নিজের বিছানার বালিশকেও ভালবাসবে না। বরুন পুরাই অতি অভিনয় করেছে। কৃতি শ্যানন ভালো করলেও বরুন ধাওয়ানের পাশে একেবারেই মানায়নি। জনি লিভারের অভিনয় দেখে খুবই হতাশ হয়েছি।
ট্রেলার দেখে ভেবেছিলাম, এই মুভি কীভাবে খারাপ হবে ? কিন্তু সেই অসম্ভবও সম্ভব হলো। হ্যাপি নিউ ইয়ার দেখে যে রকম পেইন খাইসিলাম সেইরকমই পেইন খাইসি। মুভির যে জায়গাতে কিছু দৃশ্য থাকা উচিত ছিল সেখানে নাই। আবার যেখানে মুভি শেষই হয়েগেছে তারপরও চলছে তো চলছেই। এ মুভিতে আমি রেকর্ড সংখ্যকবার কিছু শব্দ ব্যবহার করেছি:”আল্লাহ রহম করো, বাঁচাও, আর কতক্ষণ ?”।
ফালতু মুভির কিছু রেটিং দেই যদি মুভিতে দেখার কিছু থাকে। এমুভিতে দেখার মত হলো শুধু গেরুয়া গানটি। কিন্তু পুরো গানটিই ইন্টারনেটে আগেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। একটুও বাদ রাখেনি। ভাবতে পারেন? মার্কেটিং টিম কী গাঞ্জা খায়?
এক কথায় এই মুভি দেখার চেয়ে গরু সাথে ঘাস খাওয়া বেশি আনন্দদায়ক।
রেটিং – ০ / ৫
পুরাই হাহাপগে অবস্থা! ভাবছিলাম এইটা দেখব। হিন্দি মুভি খুব কম দেখা হয়। শাহরুখ কাজল মিস করতে চাই নাই!
তাই বলে জিরো! হাহা। এইটা কি আপনার লোয়েস্ট?!
শাহরুখের আগের টাও (Happy New Year) জিরো পাইসিলো