রাগ বায়োলজি

বলুন দেখি, রাগ কী?

মস্তিষ্কের ডর্সাল অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্স উত্তেজিত হলে আমরা রাগ অনুভব করি। এসময় হিপ্পোক্যাম্পাস, ইনসুলার সাথে সিঙ্গুলেট কর্টেক্সের সিগ্ন্যালিং অণুর আদান-প্রদান হলে, আমরা যে যার মত করে রাগ প্রকাশ করি (কেউ হাউ-কাউ করে, কেউ মারামারি করে, কেউ জিনিসপত্র ভাঙ্গে, কেউ নেশা করে- যার যেভাবে রাগ প্রকাশ করতে ভালো লাগে আরকি)।

আপনার রেগে যাবার মত কারণ থাকলেও যদি কোন কারণে ডর্সাল অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্স (Dorsal ACC) উত্তেজিত না হয়, আপনি রাগ অনুভব করবেন না।

আপনি রেগে গেলেও আপনার মগজের ভেতরে হিপ্পোক্যাম্পাস আর ইনসুলার সাথে সিঙ্গুলেট কর্টেক্সের সিগ্ন্যালিং অণুর আদান-প্রদান না হলে আপনি রাগ প্রকাশ করবেন না।

সে যাই হোক, আপাতত ওদিকে আর বেশি এগুচ্ছি না। আচ্ছা, একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন, মানুষ যখন রেগে যায় বা মেজাজ খারাপ করে বসে থাকে, তখন তার হার্ট রেইট বেড়ে যায়।

আসলে শুধু রাগ না, প্রায় সব রকম মেন্টাল স্ট্রেসেই হার্ট রেইট বেড়ে যেতে থাকে। এই হার্ট রেইট বেড়ে যাওয়াটা অনেকের ক্ষেত্রে বিপজ্জনকও হতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, মেন্টাল স্ট্রেসের সাথে হার্ট রেইটের সম্পর্ক কেমন করে এল?

ভেগাস স্নায়ু নাম মনে হয় সবারই জানা আছে। মানুষের দশম করোটিক স্নায়ু হল এই ভেগাস স্নায়ু। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অঞ্চল থেকে আমাদের স্বরযন্ত্র, বুক, ডায়াফ্রাম, অন্ত্র পর্যন্ত এই স্নায়ুর বিস্তৃতি। মস্তিষ্ক থেকে নিচের দিকে নেমে আমাদের শ্বাসনালীর পাশ দিয়ে আস্তে আস্তে সে বুকে, পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভেগাস আমাদের হার্টকেও মোটামুটিভাবে মুড়িয়েই রাখে।

এই ভেগাস স্নায়ুর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমাদের শরীরে। এর মাঝে একটা হল প্যারাসিম্প্যাথিক নার্ভাস সিস্টেম অ্যাক্টিভ করা, যা আমাদের রিলাক্সেসান রেসপন্স নিয়ন্ত্রণ করে। মানে হল, মেন্টাল স্ট্রেস (ভয়, অস্থিরতা, রাগ) ও রিলাক্সেশানের ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণে ভেগাস মশাই কাজ করেন। অনেকে বলেন, ভেগাস হল হ্যারা পয়েন্ট ও সোলার প্লেক্সাস সেন্টারের নিয়ন্ত্রক!

ভেগাস স্নায়ুকে অনেক নিউরোবায়োলজিস্ট আদর করে ডাকেন, ‘মেন্টাল রিসেট বাটন’। কারণ হল, মেন্টাল স্ট্রেসগুলো যখনই আমাদের মাঝে ভর করে, ভেগাস উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সে স্ট্রেস কন্ট্রোল করার জন্যে নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণ করতে থাকে। স্সে খুবই শান্তিপ্রিয় স্নায়ু। শান্তি রক্ষায় সে সবসময় অ্যাক্টিভ। শান্তি রক্ষার জন্যে (স্ট্রেস কনট্রোল) যা যা দরকার, তার সবকিছুই সে করার চেষ্টা করে।

কিন্তু ঝামেলা হল, আমাদের পাকস্থলি, হার্ট, লিভারের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর কাজ নিয়ন্ত্রণও করেন এই ভেগাস মশাই। স্ট্রেস কন্ট্রোলের জন্যে তিনি যখন খুবই উত্তেজিত হয়ে কাজ করতে থাকেন, তার প্রভাব গিয়ে পড়ে এই অঙ্গগুলোর কাজের উপর। এই অংগগুলো তখন ঠিকমত কাজ করতে পারে না।

স্ট্রেস কন্ট্রোলের সময় ভেগাস স্নায়ুতে তৈরি হওয়া এই উত্তেজনার প্রভাব থেকে হার্টও রেহাই পায় না। তার উপরও এর বেশ প্রভাব পড়ে এবং সে কারণেই হার্ট রেইট তখন বেড়ে যায় (অনেকের আবার ধপাশ করে হার্ট রেট কমে যেতেও দেখা যায়। কারণটা একই, তবে তাদের ক্ষেত্রে রিফ্লেক্সটা আলাদাভাবে হয়)।

এই ব্যাপারটা একটু ঝামেলার। হার্ট রেইট বেড়ে গেলে হঠাৎ বিপদ হতে পারে। তাই হার্ট রেইট নিয়ন্ত্রণ জরুরী। কার্ডিয়াক স্পেশালিস্টরা এই জন্যেই স্ট্রেস কন্ট্রোল করতে বলেন।

ছোটখাট লেভেলে হঠাৎ রাগ বা অস্থিরতার কারণে তৈরি হওয়া ঝামেলা কমানোর জন্যে একটা ভালো বুদ্ধি হতে পারে বড় বড় নিঃশ্বাস নেয়া। রেগে গেলে অনেক সময় শরীর নিজে থেকেই বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে থাকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের জন্যে। শরীরকে এই তার এই নিয়ন্ত্রণ কর্মে চাইলে একটু সাহায্য করা যায় একটু ঠাণ্ডা জল বা বরফ দিয়ে। খুব রেগে গেলে বা অস্থির লাগলে আপনি ঘাড়ের কাছে বরফ চেপে ধরতে পারেন, কিংবা বারবার ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুতে পারেন।

অনেকে অস্থিরতার কারণে ঘুমের সমস্যার জন্যেও ঘাড়ে পানি দেন এবং ব্যাপারটা আসলেই কাজের। কারণ, ভেগাস নার্ভ তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীল। ঠাণ্ডায় তার মধ্যকার উত্তেজনা একটু হলেও কমে বলে দেখা গেছে। তাই বলে ভেগাসের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে যেয়ে বা ঘুমের সমস্যা কমাতে যেয়ে ঠাণ্ডা লাগিয়ে ফেলাটা নিশ্চয়ই খুব একটা ভালো বুদ্ধি হবে না।

অনুজ সম্পর্কে

সাদা কাগজে কালো কালিতে লিখতে গেলে হয়ত লিখতে হবে - প্রথমত আমি রক্ত মাংসে গড়া এক মানুষ, দ্বিতীয়ত চিরন্তন সত্য, মৃত্যুর সাথে করি বসবাস... https://www.facebook.com/CoercedAnuj
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।