ইদানিং রাতে ঘুম আসে না। ঘুমালেও কিছুক্ষণ পরপর ঘুম ভেঙ্গে যায়। গতরাতেও ঘুম ভেঙ্গে দেখি ঘড়িতে সাড়ে তিনটা বাজে। মন খারাপের রাতগুলো অনেক দীর্ঘ হয়। মাথায় অজস্র চিন্তা উঁকিঝুঁকি দিতে থাকে। ভাবলাম, জেগে থাকলে চিন্তাগুলো অযথা জট পাকতে শুরু করবে। তাই ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু ভাবলেই কি ঘুম আসে? অথচ যখন কাজের চাপ তুঙ্গে থাকে, তখন ঘুম যেন দুচোখ ছাপিয়ে আসে। ঘুম ব্যাপারটাই অদ্ভুত! কি আর করার? ঘুম আসছে না যখন, তখন সেই অযথা মন খারাপ করা চিন্তাগুলোকে স্বাগত জানানো ছাড়া উপায় নেই। শুরু হয়ে গেল পুরনো সব দিনের স্মৃতি রোমন্থন করা। যতটা সম্ভব চেষ্টা করছিলাম ভাল স্মৃতিগুলো মনে করার। কিন্তু স্মৃতির অ্যালবাম ঘেঁটে ভাল স্মৃতি খুঁজে পেলাম না। যা পেলাম তা কেবলই স্বপ্ন ভাঙাগড়ার এক অন্তহীন যাত্রা। সেই যাত্রার শুরুটা স্বপ্নের মতই ছিল। যা চাইনি তার চেয়েও বেশি কিছু প্রাপ্তিতে জুটেছিল। কিন্তু হতাশার ধুম্রজালে আবৃত পথটা ছিল অনেক ভঙ্গুর। সেই ভঙ্গুর পথ পাড়ি দিতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি বারবার। মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়াতে হয়েছে আমাকে আপন অস্তিত্ব রক্ষার্থে। যত মানুষ চিনেছি, যত মানুষকে বন্ধু ভেবেছি সেই যাত্রার মাঝপথে এসে বুঝেছি সবই ভুল, সবই মিথ্যে মিথ্যে খেলা। এরপরও যে গুটিকয়েক মানুষ খারাপ সময়গুলোতে পাশে ছিল, তারাই আমার এই যাত্রাপথের বাহক। এই পুরোটা সময়ে জীবনকে যেভাবে দেখেছি তাতে অভিজ্ঞতার থলে যতটা ভারি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভয় জমেছে আত্মবিশ্বাসের কোঠায়। জীবন আসলে কি? জীবন আসলে চাওয়া-পাওয়া, পাওয়া-না পাওয়ার এক হালখাতা। সেই হিসেবের খাতায় অবিরাম কাটাকুটি খেলে যাই আমরা। একটা সময় শুনতাম, যেকোনো সমস্যায় পরিবার-আপনজন নাকি এগিয়ে আসে সবার আগে। সত্যি কথা বলতে, যত বড় হয়েছি, তত সমস্যাগুলো প্রকট হয়েছে। সেই প্রকট সমস্যার আলোচনা করতে গিয়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের দুশ্চিন্তার পরিধি বাড়াতে ভাল লাগে না। ফলশ্রুতিতে সেই সমস্যাগুলো একান্তই নিজের হয়ে যায়। মন খারাপের রাতগুলো তাই শিকড় ছড়াতে থাকে; শিকড় ছড়িয়ে প্রতি রাতে দুঃস্বপ্নের মত হানা দিতে থাকে। স্বপ্ন দেখতে একসময় অনেক ভালবাসতাম। এখন খুব ভয় হয়। স্বপ্ন যখন বুমেরাঙের মত আঘাত হানে সেই অভিজ্ঞতা কখনই সুখকর নয়। এর চেয়ে বরং জীবনকে সাদামাটা রাখি। জীবনকে যতটা জটিলতামুক্ত রাখতে পারব ততই কি ভাল না? এত সুবুদ্ধি উদয়ের পর যখন একটা শান্তির ঘুমের প্রতিক্ষা করতে থাকি, তখন ‘অতীত’ নামক অদৃশ্য অথচ অস্তিত্বশীল বস্তুর কাছে আমি হেরে যাই। এই যে প্রথম হেরেছি, তা কিন্তু নয়। আমাকে হারতে হয়েছে বারবার এই অতীতের কাছে। যত চাই একে সরিয়ে দিতে, যত চাই একে মন থেকে মুছে ফেলতে ততই যেন প্রগাড় রূপ ধারণ করে সে। মন খারাপের রাতগুলো তাই নির্ঘুম কেটে যায়। মন খারাপের রাতগুলো তাই ফিরে আসে প্রতি রাতে, অশরীরী ছায়ার মত।
-
আর্কাইভ
- এপ্রিল 2018
- নভেম্বর 2017
- অক্টোবর 2017
- সেপ্টেম্বর 2017
- মার্চ 2017
- ফেব্রুয়ারী 2017
- জানুয়ারী 2017
- নভেম্বর 2016
- অক্টোবর 2016
- সেপ্টেম্বর 2016
- আগস্ট 2016
- জুলাই 2016
- জুন 2016
- মে 2016
- এপ্রিল 2016
- মার্চ 2016
- ফেব্রুয়ারী 2016
- জানুয়ারী 2016
- ডিসেম্বর 2015
- নভেম্বর 2015
- অক্টোবর 2015
- সেপ্টেম্বর 2015
- আগস্ট 2015
- জুলাই 2015
- জুন 2015
- মে 2015
- এপ্রিল 2015
- মার্চ 2015
- ফেব্রুয়ারী 2015
- জানুয়ারী 2015
- ডিসেম্বর 2014
- নভেম্বর 2014
- অক্টোবর 2014
- সেপ্টেম্বর 2014
- আগস্ট 2014
- জুলাই 2014
- জুন 2014
- মে 2014
- এপ্রিল 2014
- মার্চ 2014
- ফেব্রুয়ারী 2014
- জানুয়ারী 2014
- ডিসেম্বর 2013
- নভেম্বর 2013
- অক্টোবর 2013
- সেপ্টেম্বর 2013
- আগস্ট 2013
- জুলাই 2013
- জুন 2013
- মে 2013
- এপ্রিল 2013
- মার্চ 2013
- ফেব্রুয়ারী 2013
- জানুয়ারী 2013
- ডিসেম্বর 2012
- নভেম্বর 2012
- অক্টোবর 2012
- সেপ্টেম্বর 2012
- আগস্ট 2012
- জুলাই 2012
- জুন 2012
- মে 2012
- এপ্রিল 2012
- মার্চ 2012
- ফেব্রুয়ারী 2012
- জানুয়ারী 2012
- ডিসেম্বর 2011
- নভেম্বর 2011
- অক্টোবর 2011
- সেপ্টেম্বর 2011
- আগস্ট 2011
- জুলাই 2011
-
সদর দরজা
মন খারাপের রাতগুলো খুব দীর্ঘ হয়। কিন্তু একসময় দেখবেন, এই দীর্ঘ রাতগুলোও স্মৃতি হয়ে যাবে। হয়তোবা দুঃস্মৃতি, তারপরেও। শুধুমাত্র একারণেই আজকাল আর মন খারাপকে ভয় পাইনা। কারণ জীবন এমনই। 🙁
হয়তো এক সময় সবই সয়ে যাবে, এটাই জগতের নিয়ম। কিন্তু এই কঠিন সময় অতিক্রম করতে গিয়ে যখন স্নায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়, তখন সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। এটা অনেকটা নিজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার মত আর এই যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে ও নিজেকে শেষমেশ সামলে রাখতে অনেক সাহস ও মনের জোর প্রয়োজন।
“মন খারাপের রাতগুলো তাই ফিরে আসে প্রতি রাতে, অশরীরী ছায়ার মত।”
এত সত্যি কথাগুলো এত সুন্দর করে লিখেছ!
ধন্যবাদ মৌটুসি!