কনফারেন্স
ড. হংওয়ে গুও
পিএইচডিতে আমার প্রথম কনফারেন্স। আর সৌভাগ্যক্রমে এই বার কনফারেন্সের ভ্যানু আমাদের ক্যাম্পাসে। কনফারেন্সে আমার সুপারভাইজর একটা সিম্পজিয়াম আয়োজন করেন। সেখানে সর্বমোট ৫ জন অতিথি সায়েন্টিস্ট আসবে। আমার দায়িত্ব পড়ে তাদের মধ্যে একজনকে দেখা শোনা করার। মানে তাকে হোটেল থেকে নিয়ে আসা, ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখানো, উনি যেখানে যান সেখানে উনার সাথে যাওয়া-এই সব আর কি। উনি আসার কিছু দিন আগেই আমার সুপারভাইজর আমাকে উনার তিন দিনের কর্মসূচি ধরায় দিছে। আর সাথে সাথে উনার পূর্বের সকল পেপার পড়া। আমি জান-জীবন দিয়ে পড়তে থাকলাম। কিন্তু, উনার ২০-২৫ বছরের কাজ আমি মাত্র কয়েক দিনে পড়ে ফেলব, এটা ভাবা খুবই বোকামি।
কনফারেন্সের আগের দিন উনি এসে পৌঁছান। উনি পিসিপি (Plant Cell and Physiology) জার্নালের এডিটর এবং সেই এডিটরিয়াল মিটিং এ যোগ দিবেন। আমি উনাকে নিয়ে আসতে যাওয়ার আগে আমার সুপারভাইজরের রুমে গেলাম।
– স্যার, আমি ড. হংকে নিয়ে আসতে যাচ্ছি।
– ওকে। বাট, লুক অ্যাট ইউ ম্যান। ইউ শুড চেঞ্জ ইউর ড্রেস।
-স্যার, অন দ্যা ওয়ে টু হিজ হোটেল, আই উইল চেঞ্জ।
আমি দ্রুত বাসায় গিয়ে জিন্স প্যান্ট খুজতে থাকলাম। কিন্তু, খুজে পাচ্ছিলাম না। পরে অন্য একটা প্যান্ট পড়েই রউনা দিলাম। হোটেল লবিতে বসে উনার ছবি বের করে দেখছিলাম, যাতে কোন ভুল না করি। ঠিক সময়েই উনি নীচে নামলেন। পরিচয় পর্ব শেষে আমি উনাকে বললাম যে আমরা ট্যাক্সি নিবো। ট্যাক্সির কাছাকাছি গিয়ে উনি বলতেছিলেনঃ
-তুমি কিভাবে আসছ?
-হেটে।
-তাহলে আমিও হেটে যাবো তোমার সাথে।
-ওকে।
দুজনেই হাটা শুরু করলাম ইউনিভার্সিটির দিকে। আমাদের শহরটা ছোট, কিন্তু দেখতে খুবই সুন্দর। যে কোন পথ দিয়ে হেটে গেলেই নদী এবং পাহাড় দেখা যায়। ব্রিজ দিয়ে হেটে আসার সময় পাহাড় নিয়ে কথা হচ্ছিলো।
-আরিফ, এই পাহাড়টার নাম কি?
-ইওয়াতে।
–আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, একবার এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দূরে একটা পাহাড় দেখলাম। আমি আর আমার কাজিন খুব আনন্দের সাথে পাহাড়ের দিকে দৌড়াতে থাকলাম। যদিও এটা খুব কাছেই মনে হচ্ছিলো, আমরা যখন পাহাড়ের কাছে গেলাম, তখন প্রায় দিন শেষ হয়ে আসছে। আমাদের লাইফে আমরা অনেক টার্গেট সেট করি, যা আপাত দৃষ্টিতে দেখতে খুব কাছে মনে হয়। কিন্তু, যখন আমরা ঐ গন্তব্যকে তাড়া করি, তখন কেবল বুঝতে পারি যে, এটা আসলে এতো কাছে না। কিন্তু, তার চেয়ে বড় মুশকিল হল, আমরা যখন পাহাড় দেখে বাড়ি ফিরতে গেলাম। যখন পাহাড়ের দিকে যাচ্ছিলাম, আমাদের একটা নিশানা ছিল। পাহাড়। কিন্তু, ফিরার পথে এমন কোন নিশানা নাই। বিপদে পড়ে গেলাম। তুমি লাইফে এমন অনেক প্রবলেম পাবে। যেখানে কোন এক ডিরেকশনে যাওয়ার পর, যখন আবার ফিরে আসতে বলা হবে, তা খুবই কঠিন। আমাদের এক্সপেরিমেন্টেও একই সমস্যা। উল্টা দিক থেকে যখন কিছু প্রমান করা লাগে, তা কিন্তু বেশ কষ্টসাধ্য। তাই কোন ডিরেকশনে যাওয়ার সময় কিছু মার্ক রেখে যাওয়া ভালো, যা তোমাকে ফিরে আসতে সাহায্য করবে।
আমি কখনো এভাবে ভাবি না। তার এই ফিলোসফি আমি তারপর থেকে সব সময় মাথায় রাখি। এটাই মনে হয় ভালো সায়েন্টিস্টদের বৈশিষ্ট্য। তারা এমন কিছু সাধারন বিষয় লাইফে ফলো করে যা, তাদেরকে অসাধারণ কাজ পাবলিশ করায় সাহায্য করে।
পথে আসতে আসতে উনার সাথে আমার ব্যাক্তিগত লাইফ নিয়ে অনেক কথা হল। আমি কি নিয়ে কাজ করতেছি তা আমি এক্সপ্লেইন করতে থাকলাম। উনি আমার উৎসাহ দেখে খুবই খুশি হলেন। বললেন যে, উনি আমাকে যে কোন ধরনের সাহায্য করতে চান। আর আমার পোস্টার দেখার অপেক্ষায় আছেন। উনাকে ইউনিভার্সিটি ঘুরিয়ে দেখালাম। আমাদের ল্যাবে নিয়ে আসলাম। এর মাঝে তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কথা হল।
-তোমার ওয়াইফও কি রিসার্চ করে?
-নাহ। আমার ওয়াইফ ব্যাংকার।
-তোমার ছেলে মেয়ে?
-আমার দুইটা মেয়ে। ৭ আর ১১ বছর বয়স।
-তোমার মেয়েরা তোমাকে দেখে সায়েন্সে আসতে অনুপ্রাণিত হবে।
-তোমার তাই মনে হয়?
-আমি যদি তোমার দ্বারা অনুপ্রাণিত হই, তাহলে তোমার বাচ্চারা কেন হবে না।
-আমার তো মনে হয়, ওরা আমাকে দেখে সায়েন্স থেকে দূরে সরে যাবে। হা হা হা
সে আমেরিকাতে ছিল প্রায় ২০ বছর। যাদের ল্যাবে কাজ করেছে তারা সবাই প্ল্যান্ট সায়েন্সে বিগ বস। আমি যে সব ল্যাব ফলো করি, ঐ সকল ল্যাবের সুপারভাইজর অনেকেই ওর ল্যাবমেট আর বড় ভাই টাইপের। সুতরাং, তাদের ব্যাপারে অনেকে জানা অজানা জিনিস শুনলাম।
নোটঃ
কনফারেন্সের এতো এতো গল্প যে, এক পর্বে লিখে শেষ করা কঠিন। তাই কয়েক পর্বে লিখবো। পরের কয়েক পর্বও কনফারেন্সের উপরেই লিখে যাবো।
বাকিগুলাও তাড়াতাড়ি আসুক।
ধন্যবাদ লেখার জন্য।
অতি শীঘ্রই লিখবো বলে আশা করছি।
ধন্যবাদ।