মুভির দুনিয়ায় সবচাইতে খারাপ বস্তুটি হচ্ছে ‘প্রত্যাশা’। যে মুভির প্রতি কোন প্রত্যাশা থাকে না সে মুভিটি মোটামুটি হলেই মানুষ খুশি। যে মুভিতে চরম প্রত্যাশা, সেটি সামান্য খারাপ হলেই হইসে কাম। আমার দেখা সর্বাধিক প্রত্যাশার চাপ নেয়া সেই মুভিটি অবশেষে মুক্তি পেল। দুই বছর ধরে প্রতীক্ষার পর বোঝা যাচ্ছিল হয়তো তেমন ভাল হবে না। তাই হতাশাটা একটু বেশি।
তবুও প্রত্যাশা শুণ্য হলেও মুভিটিকে কি ভালো বলা যাবে? ভয়ংকর এই কঠিন এক প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা আকাঙক্ষিত এক মুভি “Batman v Superman: Dawn of Justice” নিয়ে।
স্পয়লার না দিয়ে কাহিনী জানা যাক। মুভি শুরু হয় ম্যান অব স্টিল এর ধুমধাড়াক্কা সেই মারামারির শেষ দৃশ্য থেকে। তবে এবার ব্রুস ওয়েন ( বেন এফলেক) ওরফে ব্যাটম্যানের চোখ দিয়ে। বিরক্তিকর সেই দৃশ্যটি সত্যিকার অর্থে অনেকের জীবনে এনে দিয়েছে মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিকাশ। এদিকে সুপারম্যানকে (হেনরি ক্যাভিল) নিয়ে জনমানব খুব একটা খুশিও না। বুঝেনই তো! মানুষরে বসতে দিলে শুইতে চায়। সুপারম্যান যেখানেই কিছু সাহায্য করতে যায় , কেউ না কেউ মাইন্ড খায়।
এদিকে সুপারম্যানের বিরুদ্ধে গবেষণায় ব্যস্ত ব্যবসায়ী লেক্স লুথর ( জেসি আইজেনবার্গ)। ব্রুস সেই গবেষণাটা কী সেটা জানতে ঝাপায় পড়ে। পাশাপাশি চলছে তার সুপারম্যানকে সাইজ করার অনুশীলন। অবশেষে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। মানবজাতিকে এই ভিন্ন গ্রহের প্রাণী সুপারম্যান হতে বাঁচাতে হলে , ব্যাটম্যানকে আত্মাহূতির এই পথই বেছে নিতে হবে।
মুভিটি কী দেখবেন? অবশ্যইইইইইই …..
মুভির শুধুমাত্র প্রথম ৫ মিনিট দেখলেই পুরা পয়সা উসুল। সুপারম্যান ও জডের মারামারির দৃশ্যটি ব্রুস ওয়েনের চোখ দিয়ে যে অসাধারণভাবে দেখানো হয়েছে যে কী বলবো। মুখ হা করেছিলাম।
মুভিটির ৯০ ভাগ দৃশ্যকেই বলবো দারুন এবং চমৎকার। মুভিটির অভিনেতাগুলিও শুটিংয়ের সময় মনে করবেন “দারুন কিছুর অংশ হতে চলছি”। তাহলে সমস্যাটা কী? আছে সমস্যা … মেগা সমস্যা। কারণ মুভিটি একটা চরম ভুয়া মুভি।
ধরুন ১০ জনের একটি দলকে বলা হলো একটি পুতুল বানাতে। ৮ জন বিভিন্ন অংগপ্রত্যাঙ্গ বানালো । সবশেষে ১জন সেগুলি জোড়া দিল এবং ১ জন রং করলো। এখন হাতের জায়গায় যদি পা বসানো হয় এবং দুপায়ের মাঝখানে যদি কয়েকটি আংগুল বসায়ে পুরা জিনিসটাকে বেগুনি রং করে দেয়া হয় তাহলে সেটি কোন পুতুল হলো না।
ব্যাটম্যান ভি সুপারম্যানের ঠিক একই সমস্যা। একটি অসাধারণ মুভি হওয়ার থেকে বঞ্চিত করার জন্য নির্দেশক জ্যাক স্নাইডারকে গালি দিবো নাকি লেখক-সম্পাদকদেরকে, ঠিক বুঝতে পারলাম না। এখনই এই দৃশ্য থেকে ঐ দৃশ্য। কই থেকে কই গেল কিছুই বোঝা যায়না। এছাড়া শেষ দৃশ্য নিয়ে ম্যান অব স্টিলে তারা যে ভুলটা করেছিল, এবার একই ভুল পুনরায় করেছে যেটা ক্ষমার অযোগ্য।
অভিনয় নিয়ে কিছু বলি। প্রথম থেকেই বেন এফলেককে ব্যাটম্যান হিসেবে নেয়া নিয়ে প্রচুর নাটক হয়েছিল। আমারও খুব একটা পছন্দ ছিল না। তবে সবার মুখে ছাই দিয়ে বেন এফলেক আসলেই দেখিয়ে দিয়েছেন। দারুণ লেগেছে বেন এফলেক কে। তবে ব্যাটম্যানের চেয়ে তার ব্রুস ওয়েনের অংশটিই বেশি ভালো লেগেছে। ব্যাটম্যান হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে তার ব্যাটসুট, ব্যাট-মোবিল গুলি বেশি পছন্দ হয়নি। তবে সুপারম্যানের সাথে মারামারির সুটটি ভালো ছিল। মুভিতে ব্রুস ওয়েনকে একজন দুঃখী মানুষ হিসেবে দেখানো হয়েছে যেটা আগে নোলান দেখাননি।
সবাই বেন এফলেক নিয়ে কথা বললেও সুপারম্যান হিসেবে হেনরী ক্যাভিল নিয়ে কিছু বলছেন না। আমার মতে দুর্দান্ত লেগেছে ক্যাভিলকে। পুরা মুভিতে সুপারম্যান হওয়ার ভেজালের জন্য তার উপর মায়া জন্মায়। একবার মনে হয় কী দরকার ছিল ব্যাটম্যানকে আনার? সুপারম্যান নিয়েই শুধু মুভিটি হতো!
ওয়ান্ডার ওমেন আমার অন্যতম প্রিয় চরিত্র। কমিক্সে তাকে কিছুটা অশ্লীল এবং অবাস্তবভাবে পরিবেশন করা হয় বলে মুভিতে আনাটা হয়ে ওঠেনি। গ্যাল গ্যাডটকে প্রিন্সেস ডায়ানা হিসেবে মোটামুটি মনে হলেও মুভির শেষে ওয়ান্ডার ওমেনের বেশভূষায় পুরাই চরম লাগসে। মুগ্ধতায় পুরাই কাইত হইয়া গেলাম।
কথা বলা যাক লেক্স লুথর চরিত্রে জেসি আইজেনবার্গ নিয়ে। ভারতীয় মুভি রিভিউয়ার সানীল গোসাভির মতে তাকে শাহরুখ খানের মত লেগেছে। কথাটা শুনে মজা পেলেও মুভিতে দেখি … আরে তাই তো !!!!
পুরো মনে হইসে জ্যাক স্নাইডার আইসা কইসে: “শোন ! নো চিন্তা! এই লও শাহরুখ খানের হিট মুভি ‘ডার’ … এইটা মুখস্ত করো আর “কি কি … কিরণের জায়গায় বলবা কা কা কা … ক্লার্ক” ।
আমি ব্যক্তিগতভাবে শাহরুখ খানের ভক্ত হবার কারণে চরিত্রটিকে খুব একটা খারাপ লাগেনি। কিছু কিছু দৃশ্য বেশ ভালোই করেছেন। তবে লেক্স লুথরের চরিত্রটি এমন নয়। এছাড়া লেক্সের সাথে সুপারম্যানের শত্রুতাটি কোথা থেকে আসলো সেটা বোঝা যায় না।
এবার কথা বলা যাক ব্যাটম্যান ও সুপারম্যানের মারামারি নিয়ে। অনেকের কাছে অনেক ভালো লাগলেও আমি কিছুটা হতাশ। হাড্ডাহাড্ডি তেমন কোন লড়াই ছিল না। যখনই কেউ বাড়ি দিতেসিল অপরজনের পুরাই কাইত অবস্থা। এছাড়া দুজনই প্রিয় ব্যক্তি হলে তাদের মারামারি দেখতে তেমন ভালো লাগে না। মাহমুদুল্লাহ এবং মুশফিক যদি মারামারি করে তাহলে কি দেখতে ভালো লাগবে?
মুভিটির আরেকটি খারাপ দিখ হলো মুভিটি বেশ অন্ধকার। সব সময় যেন সন্ধ্যাবেলা। শেষ দৃশ্যটি পুরাই যাচ্ছে তাই। ডুমস ডে নামক জন্তুর সাথে মারামারির সময় চোখ বন্ধ করলেও আলোর ঝলকানিতে সবই দেখা যাবে।
ম্যান অব স্টিল এর চাইতে ভালো মুভি ছিল। সামনের জাস্টিল লীগ কিংবা ব্যাটম্যান মুভির ভিত্তি হিসেবে মুভিটি চলনসই।
এক কথায় মুভিটি হলো পুরান ঢাকার দিল্লী সুইটমিটসের সেই লাড্ডু। খাইলেও পস্তাবেন … না খাইলেও পস্তাবেন।
রেটিং : ২.৫ / ৫.০