[ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের এক্সপার্ট ডেভিড কাল্টের লেখা থেকে অনূদিত। কাল্ট Reverb.comএর প্রতিষ্ঠাতা, শিকাগো মিউজিক এক্সচেইঞ্জের মালিক এবং অপশন্সএক্সপ্রেস নামের অনলাইন ব্রোকারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন সিইও।]
দিন দিন যেভাবে ভালো মানের কম্পিউটার প্রোগ্রামার আর প্রকৌশলীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে যে কারো এমন ধারণা হওয়াই স্বাভাবিক যে আমাদের আসলেই আরো বেশি বেশি কম্পিউটার বিজ্ঞান আর প্রকৌশলের ছাত্র দরকার। তাই না?
কিন্তু আমার কোম্পানিগুলোর টেক টীমের দিকে যখন তাকাই, খুব পরিষ্কারভাবেই দেখতে পাই যে লিবারেল আর্টস ডিগ্রিধারী মানুষগুলোই আসলে সবচাইতে তীক্ষ্ণধী আর দক্ষ সফ্টওয়্যার ডেভেলপার আর টেকনোলজি লীডার হতে পেরেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক এই টেকিদের ডিগ্রি থাকে হয় দর্শন, ইতিহাস আর সঙ্গীত – এমনকি রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও, আমার নিজের ক্ষেত্রে যেমন। গত ১০ বছর ধরে সবচাইতে ভালো প্রোগ্রামার নিয়োগ দেয়ার সময় আমি ঠিক এই উপলব্ধিটাই বার বার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে গেছি। তবে ইদানিং মনে হচ্ছে, আমার অভিজ্ঞতা আসলে পুরোপুরি ভিন্ন কিছু প্রমাণ করে।
সেটা কী রকম?
ব্যাপারটা খুবই সহজ। একটা ভালো লিবারেল আর্টস ডিগ্রি ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং-এর ভিত তৈরি করে। ক্রিটিক্যাল থিঙ্কাররা পারেন না এমন কোন কাজ নেই। তারা ফ্রেঞ্চ শিখতে পারেন, রুবি অন রেইল্স নখদর্পণে আনতে পারেন, পাইথন কিংবা ভবিষ্যতে যে ল্যাঙ্গুয়েজই আসুক না কেন – সেটায় অসম্ভব দক্ষ হতে পারেন। একজন ক্রিটিক্যাল থিঙ্কার হলেন এমন এক সেল্ফ-লার্নিং যন্ত্র যা কমান্ড কিংবা সিন্ট্যাক্স মুখস্থের গলিঘুপচিতে আটকা পড়ে না।
কোড লেখা অনেকটাই গীটার বাজানো কিংবা দাবা শেখার মত উদ্দীপনা জাগানিয়া অভিজ্ঞতা। এ কারণেই, মিউজিশিয়ানরা যেমন, ঠিক তেমনি সবচাইতে ভালো প্রোগ্রামারদের অনেকেও স্বশিক্ষিত। তারা তাদের কোডের প্রথম লাইন কোন ক্লাসরুমে বসে লিখেন নি, বরং স্টারবাক্সে বসে খেলাচ্ছলেই ল্যাপটপে রুবি শিখেছেন। বেশিরভাগ লিবারেল আর্টস ডিগ্রির সিলেবাসই বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে তৈরি, যাতে করে শিক্ষার্থীরা মানবিকের সাথে সাথে প্রোগ্রামিং-এর সাথেও পরিচিত হন। দর্শন, সাহিত্য, কলা, ইতিহাস আর ভাষা এসবের শিক্ষার্থীদেরকে ধারণা দেয়, মানুষ কেমন করে তাদের অভিজ্ঞতাকে বাক্সবন্দী করে সে বিষয়ে। শেখায়, প্রযুক্তি আমাদের মানবীয় অভিজ্ঞতার অংশমাত্র, এর প্রতিস্থাপক নয়।
এটা সত্যি যে আমরা অনেক কম্পিউটার বিজ্ঞানের গ্র্যাজুয়েটকেই অতি প্রয়োজনীয় সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি, কিন্তু অন্যান্য ডিগ্রিধারীরাই কেবল আমাদের কাজের পুরো ক্ষেত্রটা বুঝতে পেরেছে। আমাদের চীফ অপারেটিং অফিসার হলেন ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর দর্শনের গ্র্যাজুয়েট একজন মেধাবী, স্বশিক্ষিত প্রকৌশলী। তিনি মামুলি কোডিং-এর বাইরে যেয়ে বিশ্বমানের একটি টীমকে নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন। তার নিষ্ঠা আর ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং-এর দক্ষতা তাকে প্রযুক্তির শক্তির কাছে মাথা নত না করে বরং তাকে কাজে লাগানোর উপায় শিখিয়ে দিয়েছে। তার ব্যাকগ্রাউন্ড তাকে দিয়েছে মানবীয় কিছু দক্ষতা, যার কারণে তিনি গড়পড়তা সবার থেকে আলাদাভাবে চিন্তা করতে পারেন – আমাদের কাস্টোমারদেরকে বুঝতে পারেন আর সবার আগ্রহের মাঝে সমন্বয় করতে জানেন।
আমি বলতে চাইছি না যে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত, দক্ষ প্রকৌশলীদেরকে আমাদের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমার পরামর্শ – প্রযুক্তির কর্মীদের যদি প্রোগ্রামিং-এর পাশাপাশি দর্শন কিংবা ইংরেজিতেও ডিগ্রি থাকতো, তাহলে দিনের শেষে আমরা হয়তো প্রযুক্তি আর সেই সাথে জীবন চলার পথেও আরো ভালো নেতৃত্বের দেখা পেতাম।
ভাল লাগলো লেখাটা পড়ে। আমি কাল্টের সাথে একমত। কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষকে কেবল তার কর্মদক্ষতা নয়, বরং পাশাপাশি তার মানবিক গুণাবলী দিয়েও বিচার করতে হয়। নিষ্ঠা, ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং, নেতৃত্ব- এ দিকগুলোর সমন্বয় খুব জরুরি।