আগন্তুক

অফিস থেকে বাসায় ফিরছি। বিকেল সোয়া পাঁচটা কি সাড়ে পাঁচটা বাজে। মহাখালি ফ্লাইওভারের উপর বিদঘুটে জ্যামে আটকা পড়ে আছি। গত কয়েক মাসে জীবনটা অনেক বদলে গেছে। বদলে গেছি আমিও। এই বদলে যাওয়ার গল্পটা সবসময় ঘুটঘুটে কালো চাদরে ঢেকে রাখি। যেন ঘুণাক্ষরেও দেখা না যায়। কিন্তু এই অদ্ভুতুরে ভাবনাগুলো প্রায়শ বেরিয়ে আসে ঐ কালো চাদরের মাঝ থেকে। আর জ্যামে বসে থেকে কোথায় একটু বিরক্ত হব! না! ধুপধাপ করে ঐ অগোছালো চিন্তাগুলো মনের আকাশটা অযাচিত দখলে নিয়ে নিল।

একটা সময় ছিল। দারুণ এক স্বপ্নের জগতে ছিলাম। সেই স্বপ্নের শুরু থেকে শেষ- পুরো যাত্রায় আমি ছিলাম আমার আমি। সেই আমি ছিলাম মুক্ত। জীবন থেকে যেন আর কোন চাওয়া-পাওয়াই ছিল না। এতটা পরিপূর্ণতার মাঝ থেকে কখন যে নাড়ির বাঁধনটা ছিঁড়ে গেল বুঝতে পারি নি! হঠাৎ করে চোখের সামনে থেকে অবাস্তবতার পর্দা উন্মোচিত হতে লাগল আর আমিও বুঝলাম আমার স্বপ্নের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। যতটা সম্ভব চাচ্ছিলাম নিজেকে আগলে রাখতে। নিজেকে যে বড্ড বেশি ভালবাসি! বুঝতে পারছিলাম এই বদলে যাওয়া আমি সহ্য করতে পারব না। কিন্তু কিছু করার ছিল না। সব কিছু খুব দ্রুত ঘটছিল। আমি অসহায়ের মত নিজেকে বাস্তবের দ্বারে সপে দিলাম। বাস্তব মহানন্দে আমাকে সম্ভাষণ জানাল। এলোমেলো, অস্থির, আনমনা একটা জীবনে আমার যাত্রা শুরু হল। প্রথমে খুব উদ্ভ্রান্তের মত ছিলাম। আশেপাশের প্রিয় মুখগুলো কেমন যেন হারিয়ে যেতে লাগল। তখন বুঝলাম এই পথ হয়তো একলাই হাঁটতে হবে। বারবার ভেঙ্গে পড়ছিলাম। কেমন যেন মুখচোরা হয়ে গিয়েছিলাম, এখনও আছি। এরপর মনে হল, আর কত! অনেক হয়েছে! আমি এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারি না। তাই শক্ত হলাম। আমাকে অনেক শক্ত হতে হবে। মাঝে অনেক মনে হত, কিবোর্ডটা টেনে নিয়ে কিছু লিখব। কয়েক লাইন লিখে আবার মুছে ফেলতাম। আবেগের থলেটা ফাঁকা পড়ে আছে। কি লিখব? এতটা বিভ্রান্ত, অনিশ্চিত সময় আগে কখনও আসেনি। নাহ! বুঝলাম আমাকে আরও শক্ত হতে হবে। ভীরু-কাপুরুষের মত বেঁচে থাকার যেমন কোন মানে হয় না, আত্মবিশ্বাসহীন জীবনও তেমনি অস্তিত্বহীন। স্রষ্টাপ্রদত্ত এই সুন্দর উপহারকে কিছু হতাশা, না পাওয়ার কষ্টে বিসর্জন না দিলেই নয়?

ফ্লাইওভারের জ্যামটা একটু একটু ছাড়তে শুরু করেছে। শুধু শুধু জ্যামে আটকে মনটা খারাপ হল। বাসায় যেতে হবে। ফ্লাইওভারের ঢাল দিয়ে যখন সি এন জি নামছে, সামনে দেখলাম অস্তনিমিত, শান্ত, মৃদু লাল রঙের সূর্য। অদ্ভুত ভাল লাগায় মনটা ভরে গেল। মাঝে মাঝে জীবন থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। একদম দূরে কোথাও। যেখানে আমি হব আগন্তুক। যেখানে আমি জীবনের পিছু পিছু আর দৌড়ব না। বরং জীবনকে আমার করে নিব। আর আমার সঙ্গী হয়ে থাকবে শেষ বিকেলের এই সূর্যটা আর উপরের খোলা আকাশটা। ঝকঝকে পরিষ্কার কিংবা ঝলমলে তারাভরা কিংবা চন্দ্রাহত রাত সাথে পেলেও মন্দ লাগবে না।

পাহাড়ি কন্যা সম্পর্কে

বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি, আমিও তার ব্যতিক্রম নই। বাস্তব ও কল্পনা আমার দৈনন্দিন জীবনের সহযাত্রী। জীবনকে ভালবাসি। অনেক স্বপ্ন দেখি, যদিও তা বাস্তব থেকে মাঝে মাঝে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। তবুও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। আমি বরাবরই রাশভারী প্রকৃতির মানুষ, স্বল্পভাষী কিন্তু হাসতে খুব ভালবাসি।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।