পরিচয়

-আমি আর্কিটেকচার বিল্ডিঙের সামনে, আপনি?

-আমি কাছাকাছি। আসছি।

-(কিঞ্চিৎ বিরক্ত কণ্ঠে) আপনি কোথায়?

-আমি পাঁচ মিনিটের ভেতরেই আসছি। একটু অপেক্ষা করুন।

রাস্তা পার হয়ে ব্যাংকের গেটের সামনে আসতেই তাকে আবারও ফোন দিলাম। সে ক্যাম্পাসে প্রথম এসেছে। তাই সব বিল্ডিং, সব গেট ঠিকমত চেনে না।

-আপনি কোথায় আছেন এখন?

-আপনি কোথায় আছেন সেটা বলুন। আমিই আসছি।

-ব্যাংকের গেটের সামনে।

-আপনি ওখানেই থাকুন। আমি আসছি।

দূর থেকে দেখছি তাকে। খুব সিরিয়াস একটা লুক, চোখে মোটা কাল ফ্রেমের চশমা। কাছাকাছি আসতেই আমি তাকে হাত নেড়ে বত্রিশ দাঁত বের করে আমার সিগনেচার স্মাইল দিলাম। সেও হালকা হাসি দিয়ে হাত নাড়ল।

তার সাথে প্রথম দেখা। আমার হাতে বাদামের প্যাকেট দিয়ে বলল, “আপনার জন্য।” আমি একটু অবাক হলাম। তার মত ছেলেরা বাদাম খায় তাহলে?

-দেখা হয়েই গেল শেষ পর্যন্ত তাহলে!

-হ্যাঁ, সেরকমটাই তো কথা ছিল।

আমাদের ক্যাম্পাসের প্রিয় জায়গাগুলো তাকে ঘুরিয়ে দেখালাম। আমি হাঁটছি। পাশে সে।

-চলেন, আপনাকে ঐ ছাদটায় নিয়ে যাই।

-আমাকে ওখানে যেতে দিবে?

-কেন যেতে দিবে না? আমি আপনাকে নিয়ে যাব।

ছাদের রেলিং-এ বসে আছি। ক্যাম্পাসের বেশ খানিকটা অংশ দেখা যায় ওখান থেকে। শেষ বিকেলের মিষ্টি আলোয় আমরা কিছুটা দূরত্বে বসে আছি। এই দূরত্ব কিছুটা অস্বস্তির। তবুও একদম অচেনা দুজন মানুষের জন্য এই দূরত্ব বজায় রাখাটা খুব বাঞ্ছনীয়।

-আমাকে দেখে আপনার কেমন মনে হল?

-(বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে) সারাজীবন অনেক পড়াশুনা করেছেন…আর অনেক লক্ষ্মী একটা মেয়ে।

-আচ্ছা। আর আপনার ক্লাসমেটদের তুলনায় অনেক খ্যাত। তাই না?

-হা হা…না। আপনি খ্যাত না। ক্ল্যাসিক বলা যায়।

-আমাকে খুশি করার জন্য বলছেন না তো?

-আমি কাউকে খুশি করার জন্য কিছু বলি না।

তারপর ‘খ্যাত’ এর সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যাসহ তার বিশাল লেকচার শুনলাম। বুঝলাম সে লেকচার দিতে পছন্দ করে।

-বুঝলেন এবার?

-হুম, বেশ বুঝলাম।

-এবার আপনার কথা বলেন।

আমি বললাম আমার কথা, স্টুডেন্ট লাইফ, ক্যারিয়ার, বন্ধুবান্ধব, কলিগদের কথা। সেও প্রসঙ্গক্রমে তার স্টুডেন্ট লাইফ, টিউশনি, ক্যারিয়ার, স্বপ্ন এসব নিয়ে বলল। বুঝলাম, তার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন আর ক্যারিয়ারই তার জীবনের সব।

-আপনি হাসলে আপনাকে সুন্দর লাগে।

-(কি বলব বুঝতে পারছিলাম না) তাই?

-হুম। কিন্তু আপনি বেশিরভাগ সময় গম্ভীর থাকেন। হাসেন খুব কম।

-ধন্যবাদ।

কথা বলতে বলতে কখন যেন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। গাছের পাতার ফাঁকে চাঁদটাকে দেখা যাচ্ছে। সে কথা বলছে। সে কথা বলতে বেশ পছন্দ করে। আর আমি পুরো সময় ধরে মন দিয়ে তার কথা শুনছি। একেই কি মুগ্ধতা বলে?

-(হঠাৎ তার ফোন এল। ফোন রাখতেই…) কয়টা বাজে দেখেছেন?

-কয়টা বাজে?

-আপনি না বললেন সন্ধ্যার পর বেশিক্ষণ বাসার বাইরে থাকলে আপনার সমস্যা?

-আরো কিছুক্ষণ থাকি?

-(আলতো হেসে) আপনি থাকতে চাইলে আমার কোন সমস্যা নেই।

কেন জানি উঠতে ইচ্ছে করছিল না। মনে হচ্ছিল, সময় যদি এখানেই থেমে যায়। আর আমাদের কথোপকথন চলতেই থাকুক।

কিছুক্ষণ পর আমার বাসা থেকেই ফোন আসল। আসলেই একটু রাত হয়ে যাচ্ছে। বাসায় কি ফেরা উচিত?

-আপনার আসলেই বাসায় ফেরা উচিত। আমি বুঝতে পারছি, আপনার আরও কিছুক্ষণ কথা বললে ভাল লাগত। আর সেটা সম্ভব হলে আমারও ভাল লাগত। কিন্তু আমাদের এখন উঠা উচিত।

মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে হালকা নিয়ন আলোয় তার চোখের দিকে তাকালাম। কি অসম্ভব ভাল লাগায় মনটা ভরে গেল! কখনও কাউকে এতটা ভাল লেগেছে কি?

রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে তাকে হালকা হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালাম। সেও। কেন জানি মনে হল, সে যেন হারিয়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও। দৃষ্টির সীমানার মাঝে যতক্ষণ ছিল, ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। যেন পাথর হয়ে গেছি।

সত্যি কি আবারও দেখা হবে তার সাথে? আবারও কি পড়ন্ত বিকেলের মৃদু বাতাসে তাকে পাশে রেখে হাঁটতে পারব এই প্রিয় পথটা ধরে? আবারও কি ভর সন্ধ্যায় অবাক বিস্ময়ে তার কথায় বিভোর হতে পারব? যদি অনন্তকাল রিং বেজে যাওয়ার পরও ঐ প্রান্ত থেকে কোন উত্তর না আসে? যদি আর শুনতে না পাই সেই প্রিয় কণ্ঠস্বর? যদি সে সত্যিই হারিয়ে যায়?

পাহাড়ি কন্যা সম্পর্কে

বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি, আমিও তার ব্যতিক্রম নই। বাস্তব ও কল্পনা আমার দৈনন্দিন জীবনের সহযাত্রী। জীবনকে ভালবাসি। অনেক স্বপ্ন দেখি, যদিও তা বাস্তব থেকে মাঝে মাঝে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। তবুও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। আমি বরাবরই রাশভারী প্রকৃতির মানুষ, স্বল্পভাষী কিন্তু হাসতে খুব ভালবাসি।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে স্মৃতিচারণ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।