“The only way to keep your health is to eat what you don’t want, drink what you don’t like, and do what you’d rather not.”
~মার্ক টোয়েন~
বড় হতে আপত্তি আমাদের অনেকেরই না থাকতে পারে, কিন্তু বুড়িয়ে যেতে চায় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তার ওপর সেই বুড়িয়ে যাওয়া যদি নানান অসুখ-বিসুখ সাথে করে নিয়ে আসে, তাহলে তো কথাই নেই। অনেকে ভাবতে পারেন বয়স বাড়লে অসুখে তো ধরবেই যদি কপালে থাকে, এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এমনটা মনে হলেও আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়।
বয়সের সাথে তাল রেখে রোগ-বালাই বেড়ে যাওয়ার একটা কারণ, আমাদের ক্রোমোজোমে টেলোমেয়ারের দৈর্ঘ্য দিনকে দিন কমে যাওয়া। তবে এটাকে রোধ করারও বেশ কিছু উপায় আছে, বিজ্ঞানীদের তাই মত। ভাল কিছু অভ্যাস ধরে রাখতে পারলে, সেই সাথে খাওয়া-দাওয়া আর নিয়মিত ব্যায়ামের দিকে নজর দিতে পারলে শরীরে এমন একটা এনজাইম তৈরি হয়, যেটা টেলোমেয়ারকে রক্ষা করবে। একই সাথে শরীরটাকেও।
- সচেতনতা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ সুস্থ আর দীর্ঘায়ু হবার জন্য। খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর দিকে নজর দেন যারা, আর ভাল অভ্যাসগুলো ধরে রাখতে জানেন, তাদের যে কেবল স্বাস্থ্য নিয়ে কম সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় তেমন নয়, ক্যারিয়ারে সাফল্য কিংবা কাছের মানুষদের সাথে দারুণ সম্পর্ক গড়তেও তারা এগিয়ে।
- অনেক অনেক বন্ধু-বান্ধব যাদের, তাদের জন্য সুখবর! অস্ট্রেলিয়ায় কিছু মানুষের ওপর ১০ বছর ধরে চালানো এক গবেষণা থেকে জানা গেছে – অনেকের সাথে সামাজিকতা রক্ষা করে চলেন এমন মানুষেরা তুলনামূলকভাবে বেশিদিন বাঁচেন। ১৪৮টা কেইস স্টাডি নিয়ে করা আরেকটা রিসার্চের ফলাফলও ঐ গবেষণাকে সমর্থন করে।
- আমাদের বন্ধুদের অভ্যাসগুলোও আমাদের নিজেদের সুস্থতার ওপর অনেকখানি প্রভাব ফেলে। বন্ধুদের কেউ অতিরিক্ত মুটিয়ে গেলে, আমাদেরও সে সম্ভাবনা ৫৭% বেড়ে যায়! ধূমপানের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। আবার স্বাস্থ্যসচেতন বন্ধু থাকলে নিজের সুস্থতার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
- সিগারেট ছেড়ে দিলে আয়ু বাড়ে – এ তথ্যটা নতুন না হলেও ঠিক কতখানি বাড়ে সেটা খানিকটা অবাক-করাই বলা যায়। ৫০ বছর ধরে চালানো ব্রিটিশ এক গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গেছে, ৩০ বছর বয়সে ধূমপান ছেড়ে দিলে বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যায় আরো ১০ বছর! ৪০-এ এসে ছাড়লে ৯ বছর, ৫০-এ ৬ আর ৬০ বছরে ধূমপান ছাড়তে পারলে আয়ু অন্ততপক্ষে আরো ৩ বছর বেড়ে যায়।
- দুপুরে খাওয়ার পর ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ২৪০০০ মানুষের ওপর চালানো এক জরিপ থেকে দেখা গেছে, নিয়মিত দুপুরে ঘুমান যারা, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চাইতে ৩৭% কম। এই ঘুম স্ট্রেস হরমোনকে দমিয়ে রাখে।
- নিরোগ থাকার আরেক উপায় হচ্ছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের মতো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। মোট আধ মিলিয়ন মানুষের ওপর চালানো ৫০টা গবেষণা থেকে জানা গেছে এমনটা। ফল, সবজি, শস্যদানা, অলিভ অয়েল, মাছ – এসব তাদের খাবারের মেন্যু। অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া, রক্তে স্যুগার কিংবা রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া – হৃদরোগ আর ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী এমন কিছু সমস্যা দূর করে এ ধরনের খাবার।
- জাপানের ওকিনাওয়া অঞ্চলের মানুষের আয়ু পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ছিল একসময়। তাদের খাবারের মেন্যুতে অল্প ক্যালরি আর শাকসব্জির উপস্থিতি এর একটা কারণ। তবে ওখানকার মানুষদের খাদ্যাভ্যাস আস্তে আস্তে পালটে যাওয়ায়, তাদের আয়ুও এখন কমে গেছে আগের চাইতে।
- বিয়ে মানুষের আয়ু বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত মানুষেরা অবিবাহিতদের চাইতে তুলনামূলকভাবে বেশিদিন বাঁচেন। বিয়ে যে সামাজিক আর অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দেয়, সেটা এর পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। বিধবা কিংবা বিপত্নীকদের আয়ু বিবাহিতদের মতো অত না হলেও, যারা একেবারেই বিয়ে করেন নি কখনো, তাদের চাইতে বেশি।
- অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে হৃদরোগ আর ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কমে, আর সেই সাথে বাড়ে আয়ু। বিশেষ করে পেটে মেদ জমে গেলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হিসপানিক আর আফ্রিকান-আমেরিকানদের ওপর চালানো ৫ বছরব্যাপী একটা গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি আঁশযুক্ত খাবার আর ব্যায়াম চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

- নিয়মিত যারা ব্যায়াম করেন, তারা আয়ু গড়পড়তা থেকে বেশি হয়, এমনটাই। নিয়মিত ব্যায়াম বলতে সপ্তাহে ২.৫ ঘণ্টার মতোই যথেষ্ট, টানা ১০ মিনিট হতে পারে এক দফায়। ব্যায়াম হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, কিছু ক্যান্সার আর বিষণ্নতা কমায়; সেই সাথে বুড়ো বয়সে মানসিক তীক্ষ্ণতাও টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
- একদমই ড্রিঙ্ক করেন না, এমন মানুষদের তুলনায় যারা এক-আধটু ড্রিঙ্ক করেন তাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা কম থাকে কিছুটা। তবে ড্রিঙ্ক করলে মেদ বাড়ে, সাথে রক্তচাপ আর আরো নানান সমস্যা। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন নারীদের জন্য দিনে একবার আর পুরুষদের জন্য এক থেকে দু’বারের বেশি ড্রিঙ্ক না করার পরামর্শ দিয়েছে।
- ধার্মিক মানুষদের আয়ু কিছুটা বেশি হয়। ৬৫-ঊর্ধ্ব বয়সের কিছু মানুষের ওপর ১২ বছর ধরে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে যারা এক-দুবার প্রার্থনায় যান তাদের শরীরে একেবারেই প্রার্থনা করেন না এমন মানুষদের চাইতে রোগ প্রতিরোধী একরকম প্রোটিনের মাত্রা বেশি। গবেষণার সময়কালে এমন মানুষদের মৃত্যুহারও ছিল তুলনামূলকভাবে কম। নিয়মিত প্রার্থনায় গেলে যে সামাজিকতা বৃদ্ধি পায়, এটা স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- ক্ষমা শুধু মহৎ গুণই নয়, সুস্থ থাকতেও অবদান আছে এর। মনে ক্ষোভ পুষে না রাখলে উৎকণ্ঠা কমে, রক্তচাপ নেমে আসে, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে। আর বয়স বাড়ার সাথে এ উপকারিতাগুলোও বাড়তে থাকে। অন্যদিকে রাগ, ক্রোধ এসব থেকে হৃদরোগ, স্ট্রোকের সম্ভাবনা তো বাড়েই, সাথে ফুসফুসের কার্যকারিতাও কমে যায়।
- মোটর বাইকে হেলমেট আর গাড়িতে সীটবেল্ট ব্যবহার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে ৫০%! ১-২৪ বছর বয়সীদের মৃত্যুর এক নম্বর কারণ, আর আমেরিকায় মৃত্যুর সবচেয়ে মামুলি কারণগুলোর মধ্যে ৫ নম্বরে আছে এটা। বাইক দুর্ঘটনায় বেশির ভাগ মৃত্যু ঘটে মাথায় আঘাতের কারণে, তাই হেলমেট ব্যবহারটা দারুণ জরুরি।
- পর্যাপ্ত ঘুম সুস্থ থাকার জন্য খুবই দরকারি। ঘুম কম হলে মুটিয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, খিটখিটে মেজাজ এমন সব সমস্যা দেখা দেয়। ঠিকমত ঘুম হলে অসুখ থেকে সেরেও ওঠা যায় দ্রুত। প্রতি রাতে ৫ ঘণ্টার কম ঘুম অল্পবয়সেই মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
- দুশ্চিন্তা কমলে হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমে আসে। ইয়োগা, মেডিটেশন, ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস চালানো – খুব বেশি না হলেও দিনে কয়েক মিনিট এগুলো করাটাও এ ক্ষেত্রে অনেক কাজে দেবে। পুরোপুরি দুশ্চিন্তামুক্ত থাকাটা অসম্ভব হলেও, এটা কমানো একেবারে অসম্ভব না।

- জীবনের নির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্য থাকলে, সখ কিংবা অর্থপূর্ণ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে সুস্থতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। জাপানের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, এতে স্ট্রোক আর হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। সেই সাথে Alzheimer’s diseaseএর সম্ভাবনাও, রুশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের মতে।
নিরোগ থাকাটা খুব কঠিন কিছু নয়, বুঝতেই পারছেন। নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত খাওয়া আর টুকটাক সহজ কিছু নিয়মের সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিতে পারলে শরীর তো ভাল থাকবেই, সেই সাথে মনটাও! “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল” – ছোটবেলায় পড়া অন্য সব নীতিকথার মতো এটাকেও যদিও পাত্তা দেই নি কখনো, তবু কথাটা যে কতটা সত্যি অসুখ হলেই সেটা সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারা যায়!
তথ্যসূত্র: ((www.medicinenet.com))
ভীষণ সুন্দর, গোছানো আর উপযোগী পোস্ট- আনেক কিছু নতুন শিখলাম, জানলাম 🙂
keep it up, আপু 🙂 :clappinghands:
থ্যাঙ্কু নিলয়। 🙂 লেখাটা মূলত অনুবাদই বলা যায়, একটু আধটু নিজের কথা লিখেছি শুধু।
শিখলে, জানলে, এখন মানতে শুরু করে দাও! 😀
নিশ্চয়ই 😀
ছোট্ট এই লেখাটা আসলে অনেক কিছু বলে দিলো!
এর মধ্যে বিয়ে বিষয়ক টিপস মনে ধরছে!! 😛
ভাল তো! 😛
হুমম!
লেখা ভালো লেগেছে। আমার জন্য একেবারে পারফেক্ট 😛
সুস্থ থাকতে চাই, সুস্থ থাকতে চাই।
আমার জন্যও। 😛
সুন্দর ও গোছানো পোস্ট। ভালো লেগেছে। :happy:
আমার স্বাস্থ্যের যেই অবস্থা তাতে পোস্টটা আমার জন্য পারফেক্ট। দেখি মেনে চলতে পারি কিনা! :thinking:
আমার জন্যও। 😀
“বিয়ে মানুষের আয়ু বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত মানুষেরা অবিবাহিতদের চাইতে তুলনামূলকভাবে বেশিদিন বাঁচেন।” লেখাটা আম্মারে পড়ালাম। কিন্তু মহিলা বিশ্বাস করেনা। আমার বাঁচা মরা এখন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় দুলছে :crying:
হাহা 😛
আহা বেচারা!
বোহেমিয়ান আমারও ঐ টা ……
পোস্টে হিট বাড়ানোর কৌশল একটু একটু বুঝতে পারছি বলে মনে হচ্ছে! :babymonkey:
অনেক কিছু শিখলাম, কিন্তু, কমই তো মানি! 🙁
মানার চেষ্টা করবো। জীবনের মায়া অনেক…… :dhisya:
হুম…
প্রত্যক রাতেই রাতজাগার কৈফিয়ত দিয়ে আব্বুকে কথা দিই- “কাল থেকে ঠিক রুটিন মাফিক চলবো! খাওয়া, ঘুম- সব ঠিকমতো মেনে চলবো।”
কিন্তু সেই ‘কাল’ আর এলো না!
দরকারী পোস্ট! :beerdrink:
পড়েছিলাম অনেক আগেই, কমেন্ট করতে এট্টু দেরী হয়ে গেল আপু! 🙁
হুম, আমিও প্রতিদিনই ভাবি। কিন্তু সেই কাল আর আসে না। 🙁
বিয়ে করলে আয়ু বাড়ে ভাল কথা, কিন্তু বিয়ের পর অশান্তি হলে কি রিভার্স হয় না? 😛
তাই তো হওয়ার কথা। 😛 কারো না হোক!
সামাজিকতা রক্ষা ছাড়া তো আর কোন কাজই করি না রে! আল্লাহই জানে কপালে কি আছে! কোনদিন যে যাইগা! 😛
তবে চেষ্টা করবো কাল থেকে……কালটা তাড়াতাড়ি এলেই ভালো! 😀
হাহা, তাত্তাড়ি বিবাহ করে ফেলেন, তাহলে আরেকটা বাড়বে + আমরা দাওয়াতও পাবো! 😛