মানুষ অদ্ভুত প্রাণী। আমরা প্রত্যেকেই একে অন্যের থেকে আলাদা হতে চাই। কেউ চিন্তায় স্বতন্ত্র হতে চাই, কেউ পোশাকআশাকে, কেউ উদ্ভট কিছু দিয়ে [দীর্ঘতম নখের রেকর্ড নাকি সব হাতের মিলিয়ে ৭ মিটারের মত, ইয়াক! ]। আবার সত্যিকারভাবেই যারা আমাদের থেকে অন্যরকম তাদের আলাদাই করে রাখি। যেমন দৃষ্টি কিংবা শ্রবণ প্রতিবন্ধী। মানুষ আসলেই অদ্ভুত।
নিচের ভিডিওর শুরু একটি গনিত ক্লাসে। ক্লাসের বিষয় লিনিয়ার ও প্যারাবোলিক সমীকরণ সমাধান। ক্লাসের একটি শিশু অন্য সবার চেয়ে আলাদা, সে অবলীলায় ও দ্রুততায় সেগুলো সমাধান করে ফেলছে! অন্য শিশুদের সাথে তার পার্থক্য আরও একটি দিক থেকে- সে অটিস্টিক। সম্ভবত অটিজম-ই সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যেখানে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের চেয়ে আক্ষরিকঅর্থেই ভিন্নরকম।
যেকোনো মানুষকে সাহায্য করার জন্য এখন সবচেয়ে ভাল উপায় প্রযুক্তির ব্যবহার। অটিস্টিক শিশুদের সাহায্য করার জন্যও অনেক এপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া চমৎকার এমন ৫টি এপ্লিকেশন নিয়ে জানাবো।
১। Look in My Eyes:
অটিস্টিক শিশুরা কারো চোখের দিকে তাকাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। এমনকি কথা বলার সময় কেউ তার দিকে তাকিয়ে থাকবে- এই অস্বস্তিতে তারা অনেকে কথাও বলতে চায় না। Look in My Eyes গেমটি এই ভীতি দূর করতে সাহায্য করে। এর কাজ হচ্ছে ‘আই কন্টাক্ট’ বাড়ানো। কিছু চেহারার ছবি দেখান হয়। যত দ্রুত ‘আই কন্টাক্ট’ করা যায় তত পয়েন্ট বাড়তে থাকে। ((http://itunes.apple.com/us/app/look-in-my-eyes-dinosaur/id390587517?mt=8))
২। AutismExpress:
রাগে লাল হয়ে যাওয়া, অবাক হলে হা হয়ে তাকানো- এমন আরো অনেক অনুভূতি প্রকাশ কিংবা বুঝতে পারায় সাহায্য করার জন্য তৈরি।
৩। Model Me Going Places:
কোথায় কী করা হয় এবং কেমন আচরণ করতে হয় তা শেখানো হয়। ভার্চুয়াল খেলার মাঠ, দোকানের মত জায়গা ডিজাইন করা থাকে, সেখানে পয়েন্ট অর্জন করা যায়। ((http://www.modelmekids.com/iphone-app-autism.html))
৪। Math Master:
নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে গনিত শেখার সফটওয়্যার। গ্রাফিক্সের মাধ্যমে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ শেখানো এর কাজ। অটিস্টিক ছাড়া অন্যান্য বাচ্চাদের টুকটাক প্রাথমিক গণিত জ্ঞান দিতে পারে। ((http://www.autismcoach.com/product_p/ds-003.htm))
৫। Proloquo2go:
এবিসি নিউজের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন- http://www.youtube.com/watch?v=vomkNSluWW4
এটার কাজ আসলেই মজার- শব্দ ও ছবির উপর স্পর্শ করামাত্র স্বর শোনানো হয়। মূলত যারা কথা বলতে চায় না তারা যাতে ‘যোগাযোগ’ করতে পারে তার জন্য তৈরি। যোগাযোগের জড়তা দূর করাই এর কাজ, যাতে তারা আস্তে আস্তে নিজেরা কথা বলতে উৎসাহী হয়। ((http://www.proloquo2go.com/)) তবে যারা কথা বলতে পারেনা সেসব বাচ্চাদের জন্যও দারুন উপকারি।
আইপ্যাডের আরেকটি কাজ-
দুঃখজনক হল এসব প্রযুক্তির বেশিরভাগই তৈরি হয় আইফোনের জন্য, তাই আমাদের মত দেশে সবার ব্যবহারের উপায় নেই। এদেশে অটিস্টিক শিশুদের সাহায্য করার জন্য অটিস্টিক ওয়েলফেয়ার ফাউনডেশন কাজ করে। ((http://www.awfbd.com/)) তাদেরও প্রযুক্তিগত সাহায্য দরকার। কিন্তু তাই বলে কি এদেশের শিশুরা বিকশিত হওয়া থেকে পিছিয়ে থাকবে? থিমগুলোর উপর ভিত্তি করে সাধারণ কম্পিউটারের জন্যই তো সফটওয়্যার তৈরি করা সম্ভব! প্রত্যেক অটিস্টিক শিশুই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গড়ে তুলুক নিজের জগত- সেই আশায় থাকি।
দুর্দান্ত পোস্ট!
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে আমরা কীভাবে “শাপমুক্তি” পাচ্ছি সেই গল্প!
অটিজম নিয়ে অনেক দিন পরে অনেক দরকারী একটা লেখা পড়লাম… মানুষ আসলেই ওদের ‘আলাদা’ করে রাখতে চায়… 😳
এই পোস্টটা ছড়িয়ে দেওয়া উচিত- অনেকের কাজে লাগবে :huzur:
অটিজম শব্দটাও এখনো আমাদের সবার মাঝে ঠিকমতো পৌঁছেনি, খুব খারাপ কিছু শব্দ আমরা একটা সময় ব্যবহার করেছি এই দুর্দান্ত ক্ষমতার বাচ্চাদের বোঝাতে! অদ্ভুত ধরণের অবাক হয়েছিলাম ওদের হিসেব করার কিংবা ভিন্ন কিছু অনুভূতির মাঝে রঙ দেখবার ক্ষমতার কথা শুনে……
ভালো লাগলো তাদের জন্যও আসছে প্রযুক্তি, আসছে তাদের সাহায্যের জন্য…
জয় মানুষের! :clappinghands:
তথ্যবহুল একটা পোস্ট!
স্বপ্ন দেখি, সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল আমরাও একদিন হবো! এদেশের শিশুরাও একদিন পাবে প্রযুক্তির ছোঁয়া!
খুব সুন্দর একটা লেখা। এই অটিস্টিক শিশুদেরকে আমরা আরেকটু যত্ন নিতে পারতাম যদি! আশা করি এই যন্ত্রগুলো, এই প্রযুক্তি আমাদের শিশুদের জন্যও সহজলভ্য হবে খুব শীঘ্রই।
“প্রত্যেক অটিস্টিক শিশুই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গড়ে তুলুক নিজের জগত- সেই আশায় থাকি।”>> সহমত।
এরকম একটি দুর্দান্ত বিষয়ে পোস্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সবার এই তথ্যগুলো জানা উচিত। তাহলে অন্তত এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কিছু চেষ্টা মানুষের মাঝে জেগে উঠবে।
আমারও কাজ করার ইচ্ছা অনেক দিন ধরে!
আলসেমির জন্য শুরু করতে পারছিনা!
ছোটখাট একটা টুলস, গেমস………যেটা তাদের কোন ভালো কাজে আসবে……। ইনশাআল্লাহ্ কাজ শুরু করে দিব একদিন 🙂