হঠাৎ কান্নার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল মৌ এর। চোখ কচলাতে কচলাতে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে মা বিছানায় শুয়ে আছে আর নানু, বড় খালা, এলিন আপু আর ছোট মামা পাশে বসে চিৎকার করে করে কাঁদছে। কি হয়েছে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। বরং খানিকটা অবাক হলো বটে। কারণ ঘুমাতে যাওয়া আগে বাসায় এতো মানুষ তো ছিল না! শুধু মা আর নানু ছিল। তার চেয়েও অবাক করা বিষয় হলো মা’র পাশে বসে সবাই এতো জোরে কাঁদছে যে ও পাশের ঘর থেকে উঠে এসেছে। অথচ, মা দিব্যি ঘুমোচ্ছে!?!
——
প্রায় বাইশ বছর হতে চলেছে মা চলে গেছেন। মৌ বাবার চেহারা ঠিক মনে করতে পারে না। বাবা যখন ওকে আর ওর মাকে রেখে নেদারল্যান্ড চলে যায় তখন ওর বয়স সবে সাড়ে চার বছর। আর এখন তো ওর দু’বছরের একটা মেয়ে আছে। স্বভাবতই, মনে থাকার কথাও নয়। তার উপর মা মারা যাবার পর নানু বাবার কথা তেমন বলতও না কখনও! তাই সামনের লোকটাকে তার একদমই পরিচিত ঠেকছে না। এবং খুব অস্বস্তিও লাগছে। সেই কখন থেকে লোকটা ওর সামনে বসে অপলক তাকিয়ে আছে, কিন্তু কিছুই বলছে না। মৌ একবার ভাবলো নীরবতা ভেঙ্গে বলেই ফেলবে নাকি, “দেখুন, আমার অস্বস্তি লাগছে। ওভাবে তাকাবেন না আমার দিকে।”
তবে ও কিছু বলার আগে, সামনের মানুষটাই বলে উঠলো, “তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো মামণি।” কথাটা কেমন যেন একটু কাঁপা কাঁপা শোনাচ্ছে। মৌ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না আর। তাই মুখ নিচু করেই রইল।
লোকটা আরও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিজে থেকেই বলে উঠল, “আসার পর থেকে তোমার মুখে একটা কথাও শুনিনি। আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না বুঝি? আমি জানি, আমি তোমাদের অপরাধী। তোমার মায়ের খবরটা শুনেছিলাম কিন্তু তোমার মাকে শেষবারের মত দেখতে আসতে পারিনি। আসলে কোন সাহসে আসতাম বল? তুমিও নিশ্চয় তোমার মায়ের আত্মহত্যার জন্য আমাকেই দোষ দাও!?!”
“এসব কথা তোলা থাক। আপনার শরীর দেখে তো মনে হচ্ছে না একা চলা ফেরা করতে পারেন। আপনি কি একা এসেছেন নাকি কেউ দিয়ে গেছে?” অবশেষে মৌ মুখ খুলল।
‘না, তোমার ছোট ভাই নামিয়ে দিয়ে টিকিট করতে গেছে। এক ঘন্টা পর আবার নিতে আসবে। এরপর আমায় উত্তরায় তোমার দাদা বাসায় নামিয়ে দিয়ে আজ রাতের ফ্লাইটেই ও নেদারল্যান্ড যাবে। ওখানে তোমার মা আবার একা আছে তো!’
মৌ এর মেজাজ প্রচন্ড বিগড়ে গেল। প্রথমত, এই ভদ্রলোক তার স্ত্রীর জায়গায় অন্য এক নারীকে খুব সহজেই আসন দিয়ে দিয়েছে। তার উপর এখন জোড় খাটিয়ে, সেই নারীকে তার ‘মা’ এর স্থানে বসাচ্ছে। এখন আর মৌ রাগ আটকাতে পারল না। প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়েই বলল, “দেখুন, আমার কোন ছোটভাই-টাই নেই। এবং সে মহিলা আপনার স্ত্রী হতে পারে কিন্তু আমার মা নন! আমার মায়ের স্থান তাকে দেয়ার অধিকার আপনাকে কে দিল? আজকে, এতোদিন পরে কি নিতে এসেছেন তাই বলুন?!”
লোকটা যেন এরকম একটা প্রশ্নই আশা করছিল। তাই একটুও বিচলিত না হয়ে, ঠান্ডা সুরেই উত্তর দিল, “তোমার কাছে তো লুকোনোর কিছু নেই মা। আমার ক্যান্সার লাস্ট স্টেজ। কেমোর উপর বেঁচে আছি। জীবনের শেষ ক’টা দিন তাই তোমাদের সাথে, তোমাদের মাঝে…” কথাটা শেষ হওয়ার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো! মৌ উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়া মাত্র এক সুদর্শন ছেলে ঘরের ভেতর ঢুকল। এরপর সোফায় বসা ভদ্রলোকের পাশে গিয়ে বসে কি যেন বলতে লাগল, মৌ দরজায় দাঁড়িয়ে শুনতে পারছিলো না। ও ভেতরে গিয়ে বসামাত্র ছেলেটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলে উঠল, “আমি ওনাকে নিতে এসেছি।” এ কথা বলেই ছেলেটা সোফার পাশে রাখা হুইল চেয়ারটাতে লোকটাকে ধরে বসাচ্ছে।
মৌ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। মা মারা যাবার পর ও ভীষণ একা হয়ে পড়েছিল তা সত্যি! তবে এত বছর পরে আজ যেন সেই একাকীত্বে আবারও প্রবল কড়া নেড়ে দিল এই লোকটা। এতোদিন তার জীবনে যে মানুষটার কোন অস্তিত্ব ছিল না। এতদিন পরে হঠাৎ সেই লোকটা মনের মধ্যে কেমন যেন একটা ঝড় তুলে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
কিন্তু, মৌয়ের ইচ্ছে করছে না লোকটাকে যেতে দিতে।
‘মানুষটাকে ক্ষমা করে দিলে মা কি খুব বেশি কষ্ট পাবে?’
ওর ভীষণ ইচ্ছে করছে- আজ সজ্ঞানে প্রথমবারের মতো ‘বাবা’ শব্দটা উচ্চারণ করতে, ইচ্ছে করছে- দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে, তাকে জিজ্ঞেস করতে, “এতদিন কেন তোমার কাছ থেকে আমায় এত দূরে রেখেছিলে?” আপ্রাণ চেষ্টা করেও মৌ চোখের জল আটকাতে পারছে না। অস্ফুট স্বরে আপন মনেই বলে উঠলো, “বাবা!”
“আমার রাত জাগা তারা, তোমার আকাশ ছোঁয়া বাড়ি; আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়, আমার একলা লাগে ভারী!”
গানটার মত গল্পটাও ছুঁয়ে গেলো ভিতরটায়…একটা মন খারাপের বিষণ্ণ সুর…
আপু, মন খারাপের এই বিষণ্ন সুরেই তো বেজে ওঠে জীবনের এমন কঠিন গল্পগুলো! 🙁
মাশাআল্লাহ প্রজ্ঞা! এত চমৎকার গল্প!
শুরু শেষ ২ টাই!
পুরাই গুল্লি! :fire:
আআআআআ! মানি না, মানবো না! গুল্লি দেওয়ার ইমো আছে কিন্তু খাওয়ার ইমো নাই কেন?! :pureevil:
ধন্যবাদ ভাইয়া! :huzur:
খুব ভাল্লাগলো 🙂
ধন্যবাদ ভাইয়া! 😀
অসাধারণ….তোমার কথাকেই আবার বললাম :
মন খারাপের এই বিষণ্ন সুরেই তো বেজে ওঠে জীবনের এমন কঠিন গল্পগুলো!
অনেক অনেক ভালো লাগলো….
পুরাই গুল্লি! :dhisya:
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া! :babymonkey:
আমার একলা লাগে ভারি……
আমার পরিচিতি মহলে আমার সুনাম আছে আমি নাকি ইচ্ছা করে কষ্ট পাই! কিন্তু তোমার গল্পটা পড়ে কেন জানি খুব বেশি মন খারাপ হয়ে গেলো……
অদ্ভুত লিখা……অদ্ভুত…
এখন কি তবে আমার ইচ্ছা করে কষ্ট দেয়ার দুর্নাম হয়ে যাচ্ছে নাকি? :voypaisi:
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। :huzur:
খুব্বি ভাল লাগলো। অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। মাশাআল্লাহ্! 😀
এবেলায় আগ্রহটুকু কতখানি রক্ষা হলো জানি না, তবে চেষ্টা করবো ভবিষ্যতে যেন আপনাকে নিরাশ হতে না হয়! :ninja:
ধন্যবাদ আপু। :virgo:
অনেক আবেগময় একটা লেখা…
আবেগ দিয়ে লিখতে চেষ্টা করেছি তো!
ধন্যবাদ ভাইয়া! 🙂
মনের কষ্টগুলো খুব নাড়া দিয় যায় মাঝ মাঝে…………আমার একলা লাগ ভারী
চমৎকার লেখা :dhisya:
সেই কষ্টগুলোকেই কলমের আঁচড়ে আনার স্পর্ধা করলাম।
ধন্যবাদ ভাইয়া! 🙂
বাহ! দারুন তো! :clappinghands:
আমি গল্প লিখতে পারি না!
চেষ্টা যে করিনি তা না! গল্প লিখতে গেলে রূপকথা টাইপ কিছু একটা হয়ে যায় :mathagorom:
রূপকথা দিয়েই শুরু করেন না! ধীরে ধীরে বাস্তবে চলে আসবেন! :babymonkey:
ধন্যবাদ ভাইয়া! 😀
গল্পটা খুব সুন্দর। কিন্তু প্রশ্নটা উঠেই আসে- ক্ষমা কি এত সহজ?
ক্ষমা সহজ না যদিও, তবে অবাস্তব কি?
এতো সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু! 🙂
:yahooo: :yahooo: :yahooo: :yahooo: দারুন হয়েছে !
ধন্যবাদ ভাইয়া! :penguindance:
মাথা তো নষ্ট হয়ে গেলো………
জিবোনের শেষ দিন হোলেও সে তার ভুল বুজতে পেরেছে সেই টাই বোরো কথা :wallbash: