তেলাপোকাটা! পানি থেকে উঠে আসতে কতক্ষণ ধরে কত কসরতই না করছে। কিন্তু ‘হায়! কি অসহায়!’ শত চেষ্টাতেও- না পারছে সাঁতরাতে, না পারছে চেষ্টা করা ছেড়ে দিয়ে ডুব দিয়ে পটল তুলতে।
নিলু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তেলাপোকাটার দিকে। এমন না যে, তেলাপোকার প্রতি ওর আলগা দরদ আছে। বরং তেলাপোকা উড়তে দেখলেই সে লাফালাফি শুরু করে দেয়, পারলে যেন পাঙ্খা থাকলে তেলাপোকার মতোই উড়াল দেয়! সারা বাড়ি মাথায় তোলে তেলাপোকাটা মারার জন্য। আর তেলাপোকারাও যেন দ্বিগুন উৎসাহে ওর সাথে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে।
তবে, আজকের দৃশ্যপট ভিন্ন। আজ তেলাপোকা ছটফট করছে আর ও তাকিয়ে দেখছে। তেলাপোকা উড়তে দেখলে ওর যত ভয় হয়, এখন ওর তার চেয়েও বেশি মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে। বাসায় এমনিতেই পানি সংকট। আর এই মড়ার উপর খাড়ার ঘা দিয়ে বজ্জাত তেলাপোকাটা পুরো এক বালতি পানি নষ্ট করে দিয়ে দিব্যি হাপুস-হুপুস ডুব লাগাচ্ছে!
“নিলু, নিলু!” মা’র ডাক শুনে যেন ও হুশ ফিরে পেল। অতঃপর, তেলাপোকার অলিম্পিক পারফর্মেন্স দর্শন স্থগিত রেখে ও এক ছুট দিল মা’র রুমে।
– “কি হয়েছে মা? ডাকছো কেন?”
= “নিপুকে ফোন করে শোন তো কোথায় ও! এগারোটা বেজে গেল, এখনও হতচ্ছাড়ার কোন খবর নেই!”
– “নিপু সন্ধ্যায় বের হবার সময় বলে গেছে আজ ওর একটু দেরী হবে। বন্ধুদের সাথে নাকি জোছনা বিলাস করবে!”
= “এহ! সামনে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্কা আর উনি গেছেন জোছনা বিলাসে! উফ! তোদের যে কত্ত ধরনের ঢং রে বাবা। ওকে এক্ষুনি ফোন করে বল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে। বেশী রাত করলে তোর বাবা বকবে না?!”
নিলু খুব ভালো করেই জানে বাবা কিছুই বলবে না। মা এসব আজাইরা কাজ একদম পছন্দ করেন না, তবে বাবা- এই যেমন এখনও ছাদে পাটি বিছিয়ে শুয়ে একা একা গান গেয়ে জোছনা উপভোগ করছে। বেচারার তো আর গীটার-বাদক বন্ধু বা সিগারেটের একটু-আধটু অভ্যেসও নেই যে তার জোছনা বিলাসে সঙ্গ দেবে। তাই একাকী বাবার একাকী চাঁদটাই যেন বিলাসিতার সঙ্গী!
মা’র টেনশন দেখে নিলু কল করলো নিপুকে। দু’বার রিং হওয়ামাত্রই ওপার থেকে, “বুবু, আর মাত্র দশ মিনিট! আমি মুহিনের বাসায় আছি। দশ মিনিটের মধ্যেই আসছি।” বলেই নিলুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিপু খট করে রেখে দিল ফোনটা।
(কথা বলতে দিলি না ভাল কথা, পাশে যে গীটারের সাথে সাথে গানটা বাজছিল! কি যেন- ‘আমি চাঁদের আলো হয়ে……’; উহ! সেটা তো একটু শুনতে দিতেই পারতি! বাসায় আয় আগে, তারপর মজা দেখাচ্ছি!)– মনে মনে ভাবল নিলু।
“নিপু মুহিনের বাসায় আছে। আর তুমি এতো টেনশন কোরো না মা, মুহিনদের বাসা তো পাশের গলিতেই। ও বলল দশ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে।” মাকে কথাটা জানিয়ে সে ছাদে গেল বাবার খোঁজ নিতে।
ছাদে গিয়ে দেখে বাবা ছাদে মশাদের মিছিলেই জোছনানিদ্রায় মগ্ন। কাউকে ঘুমাতে দেখলে তার ভীষণ মায়া লাগে। আর তার উপর বাবার চেহারাটা জোছনায় মাখামাখি হয়ে এত্ত সুন্দর দেখাচ্ছে যে ইচ্ছে করেই বাবাকে আর না ডেকে বাবার কাছে একটা কয়েল জ্বালিয়ে দিয়ে নিলু মা’র রুমে ফিরে এলো।
দশ মিনিটের কথা বলে প্রায় আধ ঘন্টা পার করে ফেলল ছেলেটা, কিন্তু এখনও ফিরলো না। নিলু ভাবল আবার একটা কল করে দেখবে! তখনই আকাশ ফাটানো প্রচন্ড আওয়াজ হলো দুইবার। মা একলাফে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো? কি হলো?”
“দেখো, তোমার গুণধর পুত্র আর তার বন্ধুগোষ্ঠী পটকা ফোটাচ্ছে! বুঝতেই পারছো ছেলে কি মহানন্দে আছে! তাই, টেনশন করা বাদ দিয়ে শুয়ে পড়ো।” এই কথাটা বলেই মনে মনে বেশ হাসল নিলু। ভাবল- “পোলাপান যা হয়েছে না! পটকা ফোটাতে নববর্ষ/ ঈদ লাগে না আর এদের! চাঁদ তার স্বাভাবিক নিয়মে আলো দেয়, জোছনা ছড়ায়। সেটা এতো ধুমধাম করে উদযাপন করার কি আছে?!”।
মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে সে আবার ফিরে গেলো তেলাপোকাটার কাছে। এটার একটা হেস্তনেস্ত এবার করতেই হবে।
এর মাঝেই ফোনটা বেজে উঠলো নিলুর, হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে ভাসছে মুহিনের নাম।
(নিশ্চয়ি নবাবজাদার মোবাইলে ব্যালেন্স নাই। তাই মুহিনের ফোন থেকে কল করেছে- বাসায় ফিরবে না জানাতে।); ফোন ধরামাত্র ওপাশ থেকে মুহিনের ভাঙ্গা কন্ঠ, “বুবু, নিপুকে নিয়ে হস্পিটালে যাচ্ছি। ওর বুকে একটা গুলি লেগেছে আর একটা………।”
নিলু আর কিছুই শুনতে পারছিল না। কি জানি হয়তো নেটওয়ার্কের প্রব্লেম নয়তো ওর কানে তালা লেগে গেছে! কোন শব্দই যেন ওর কানে পৌঁছাচ্ছে না।
নিলুর চোখ দুটো স্থির হয়ে রইলো তেলাপোকাটার দিকে। যেন তেলাপোকাটার ছটফটানি দেখে ওর ভীষণ মায়া হলো হঠাৎ। হায়! অসহায়ত্ব!
……………দশ মিনিটের কথা বলে দশ ঘন্টা পরে অবশেষে পরদিন সকালে নিপু ঘরে ফিরলো খবরের শিরোনাম হয়ে-
“সন্ত্রাসী সন্দেহে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে কলেজছাত্র নিহত!”
মন খারাপ হলো প্রজ্ঞাপু 😳
🙁
বাইরের ভয়ঙ্কর জ্যোৎস্নায় মাখামাখি হয়ে মাত্র ফেরৎ এলাম, আর তারপরই, কেন জানি দম বন্ধ হয়ে গেলো গল্পটা পড়ে……
ভয়ঙ্কর রকমের মন খারাপ করা……
🙁
😳 ভাইয়া!
মনটা খারাপ হয়ে গেল 😳 🙁
😳
কী ভীষণ মন খারাপ করা একটা গল্প অথবা ফি-রোজ দেখা বাস্তবের বিবরণ……… 🙁
😳 জীবনের গল্পগুলো হয়তো এমনই হয়! ভীষণ মন খারাপ করা!
শুরুটা বেশি ভাল লেগেছে
এবং গল্পটাও ধাক্কা দিয়েছে 🙁
[শেষের বুননটা নিয়ে আরেকটু ভেবে দেখতে পারো ]
আমিও তাই ভাবছিলাম! শেষের ধাক্কাটা বেশি জোরালো হয়নি বোধ হয়!
এরপর থেকে খেয়াল রাখবো! :voypaisi:
বর্তমান বাস্তবতা।
নিষ্ঠুর বাস্তবতা! 🙁
নিষ্ঠুর বাস্তবতার কাছে এভাবেই প্রতিনিয়ত বলি হচ্ছে নিপুরা। কখনো ডাকাত সন্দেহে কখনো বা সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী সন্দেহে।
মানবাধিকার নিয়ে যারা প্রতিনিয়ত অনেক চিল্লাপাল্লা করেন তারা উপরের বড় কর্তার ‘চুপ’ শব্দ শুনেই ইঁদুরের মতো চুপসে গিয়ে গর্তে ঢুকে পরেন।
আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কথা বলতে গেলে মুখটাই নষ্ট হয়ে যায়। কেন জানি বিদঘুটে কিছু গালি চলে আসে!
সস্তা কয়েকটা টাকার লোভে এরা মেধাবী ছাত্রদের পরিচয়টাই পাল্টে দিচ্ছে ছিনতাইকারী আর ডাকাত বানিয়ে।
এই নির্মম বাস্তবতার কবে যে অবসান হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন।
গল্প ভালো লিখেছেন।
ধন্যবাদ আপনাকে!
এই নির্মম বাস্তবতার অবসান একদিন হবে! সেই স্বপ্নই দেখে যাই নিরন্তর!
অসাধারণ…… অদ্ভুত…… ভয়ংকর সুন্দর……
তবে…… প্রজ্ঞা দিদি …… গল্পটা পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো……
ধন্যবাদ দাদা।
মন খারাপ করে লিখেছিলাম তো! তাই হয়তো মন খারাপ করা গল্পই হয়ে গেলো!
প্রজ্ঞা মেয়েটা একটুও ভাল না দেখছি! খালি মন খারাপ করিয়ে দেয়! যতবার এইরকম ঘুটনাগুলো ভুলে যাবার চেষ্টা করি ঠিক ততবারই কেউ না কেউ এসে এইরকম গল্প বলা শুরু করে!
কী আশ্চর্য!