শৃঙ্খলিত অপরাজেয় বাংলা…

১।
২০০৫ সাল। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়তাম।
প্রিয় ইকনোমিষ্ট জন ন্যাশ বলেছিলেন, class will destroy your authentic creativity! ক্লাস ফাকি দেয়ার অভ্যাস ছিলো, তার জীবনীমূলক সিনেমা A beautiful mind দেখে আরো বেশি ক্লাস মিস করতাম আর পরীক্ষা আসলেই মাথা আউলা হয়ে যেতো…অনিচ্ছা সত্ত্বেও বইয়ের কালো অক্ষর গুলোর দিকে তাকায়ে থাকতে হয়…

সেদিন লাইব্রেরিতে ছিলাম, হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলেকে কলার ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে…ছেলেটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও ওদের ১০/১২ জনের সাথে পারলো না…অনুসরন করতে চেষ্টা করলাম…ততক্ষণে লাইব্রেরির মধ্যেই ওরা ছেলেটাকে গণপিটুনি দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলেছে..ওরা ছিলো সরকারী দলের।

তার কিছুদিন পরের কথা। ইয়ার ফাইনাল চলছে। ৫ টা কোর্সের ২য়টার পরীক্ষা দিয়ে লাইব্রেরির সামনে চা খাচ্ছিলাম। ক্ষমতাসীন দলের এক পাতি নেতাকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। কোন ভুমিকা ছাড়াই সে শুরু করলো…শুনো, তোমার সিটটা আমার পছন্দ, আমি ঐখানে উঠছি, তোমার জিনিসপত্র সব রুমের সামনে রাখা আছে, তুমি এখন থেকে গণরুমে (গনরুমে ৮ জনের জায়গায় ২৫-৩০ জন থাকে) থাকবা। হাতের অর্ধেক চা শেষ করতে পারলাম না, হতভম্ভ হয়ে গেলাম…

অপরাজেও বাংলার সামনে দিয়ে হাটতে হাটতে ভাবতেছিলাম কি করা যায়। ভাবলাম হল এডমিনিস্ট্রেশনের কাছে যাই। আমার ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্যরের সাথে দেখা করে ঘটনা জানাতেই উনি বললেন উনার কিছু করার নেই…পরদিন প্রভোষ্ট স্যরের সাথে দেখা করতে চাইলাম…স্যার বলল, উনার এখন কিছু শুনার সময় নাই, যা করার ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্যার করবেন।

২।
২০১১ সালের মাঝামাঝি বিদেশের একটা ইউনিভারসিটিতে পড়তে আসি। ডরমিটরিতে আমার প্রথম দিন, তিন তলার একটি রুমে আমাকে এলটমেন্ট দেয়া হলো। সাথে দুইটা সুটকেস, একটা ব্যাগপ্যাক নিয়ে যখন সিড়ির গোরায় দাড়িয়ে কিভাবে উঠবো ভাবছিলাম তখন সাধারন পোশাকের এক মধ্যবয়স্ক লোক, ভাবলাম হবে হয়তো কর্মচারী টাইপের কেঊ, এসে বলল, তোমাকে সাহায্য করতে পারি? আমি মাথা নাড়লাম, উনি আমার হাত থেকে একটি স্যুটকেস নিয়ে তিনতলায় রুমে পৌঁছে দিলেন।

পরদিন ওনার সাথে দেখা, রুমে বেশ কিছু সমস্যা ছিল, উনি নিজে সব ঠিক করার ব্যবস্থা করে দিলেন…

৩।

কিছুদিন পরে ডরমিটরি অফিসে ওই লোকটাকে দেখতে পেলাম, আমাকে জিজ্ঞেস করলেন সব ঠিক আছে কিনা। বের হয়ে আসার সময় আমার বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করলো, উনি কে জানো? উনি আমাদের প্রিন্সিপ্যাল (যাকে আমরা বাংলাদেশে প্রভোষ্ট বলি!)।

ওনার সাথে এখন আমার প্রায়ই দেখা হয়, হাত বারিয়ে হ্যন্ডশেক করেন, জিজ্ঞেস করেন কোনো সমস্যা আছে কিনা, পড়াশুনা ঠিকমত হচ্ছে কিনা…ভালো রেজাল্ট করার জন্য উৎসাহ দেন…

ওনাকে দেখলে আমি একটু থমকে যাই, আড়ষ্ট হই, স্মৃতি তাড়িত হই…

আহমেদ সাবিত সম্পর্কে

অর্থনীতির ছাত্র। স্বপ্নের সাথে কথা বলি...হেঁটে বেড়াই... স্বপ্নের খোঁজে...
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

16 Responses to শৃঙ্খলিত অপরাজেয় বাংলা…

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    চমৎকার লাগল।
    ছোট্ট অথচ অনেক কিছু বলা!

    :welcome:

  2. অবন্তিকা বলেছেনঃ

    “কিছু সময় অনেক কথা কিছু শব্দেই বলা যায়, বেশি কথার দরকার হয় না।” ভালো লাগছে..।

  3. ফেরারী পথিক বলেছেনঃ

    ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ! 🙂

  4. সামিরা বলেছেনঃ

    বেশ ভাল লেগেছে। 🙂
    :welcome:
    নিয়মিত লিখবেন কিন্তু!

  5. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    কি সুন্দর করে দেখিয়ে দিলেন আমাদের শিকলটা! :clappinghands:

    সরবে স্বাগতম :welcome:

  6. ফেরারী পথিক বলেছেনঃ

    ব্যপারগুলো মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয়, অনেক কষ্ট 🙁

    ধন্যবাদ আপনাকে!

  7. বোকা মানুষ বলেছেনঃ

    এখানে স্বপ্নেরা অপরাজেয়। বাঁচতে শেখার গল্প।
    সরবে স্বাগতম! অর্থনীতির গল্প চাই।

  8. ফেরারী পথিক বলেছেনঃ

    একমত, স্বপ্নেরা অপরাজেয়।

    হা হা, অর্থনীতির গল্প…চেষ্টা করবো 🙂

  9. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    বেশ গুছানো লেখা। লেখা চালু রাখবেন আশা করি। 🙂

    :welcome:

    *বানান* নিয়েও একটু সতেচন থাকলে একেবারে দুর্দান্ত হবে পরবর্তী লেখাগুলো। 🙂

  10. ফেরারী পথিক বলেছেনঃ

    ধন্যবাদ, চেষ্টা করবো অবশ্যই 🙂

  11. প্রজ্ঞা বলেছেনঃ

    পার্থ্যকটা যেন গল্পচ্ছলে চোখে আঙ্গুল দিয়েই দেখিয়ে দিলেন!

    :welcome:

    আর, এদেশে শেয়ার মার্কেটের যা অবস্থা! অর্থনীতির গল্প, অর্থনৈতিক গল্প আসলেও দরকার!

  12. শিশিরকণা বলেছেনঃ

    :welcome:

ফেরারী পথিক শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।