এই রকম বিষণ্ণ যেইসব দিন, এরা খুব বেশি আসে না; আর কালেভদ্রে যাও বা আসে, তারাও কতই না আলাদা একে অন্যের থেকে। ওপরের খোলসটাই এক কেবল, ওটা এড়িয়ে ভেতরটায় উঁকি দিলে, নিত্যনতুন চেহারা সবার।
এমন বিষণ্ণ দিনে তার ঘরে ফিরতে ইচ্ছে করে না, হাঁটতে হাঁটতে হয় সে হারায়, না হয় হারানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায়, কিংবা ঝাপসা হয়ে আসা রাস্তায় চোখ রেখে মনে হয়, চলন্ত বাসটা অনন্তকাল ধরে যদি শুধু চলতেই থাকতো, চলতেই থাকতো।
এই দিনগুলি যখন আসে, তখন ভাবতে ভাবতে তার মাথায় ঘুরপাক খায় যে সে আসলে দুঃখবিলাসী কিনা, পরক্ষণেই ভুল ভাঙে, না না, দুঃখবিলাস না, এর নাম তো বিষণ্ণতা। কেমন শান্ত অথচ দম-বন্ধ-করা, ধীরপায়ে-কাছে-আসা গলার-কাছে-আটকে-থাকা সবকিছু-মাটি-করে-দিয়ে-যাওয়া সর্বগ্রাসী বিষণ্ণতা।
এমন বিষণ্ণ কোনো দিনে, তার শহরের রাস্তাঘাট যখন দাবড়ে বেড়ায় যন্ত্রদানবের দল, তখন তাদের চাকা আর পীচ-ঢালা পথের মিতালিতে সোৎসাহে আগুনের যে ফুলকিরা ছোটে, তারাও তার সুরে সুর মিলিয়ে উঠতে গিয়েও আবার সাথে সাথেই বিষণ্ণ হয়ে ঝরে পড়ে।
আবার সেই দিনের সকালে গায়ে রোদ মেখে হালকা খয়েরি প্রজাপতিটা, আর পাশের সাদাটাও, পাখায় কেমন বিষণ্ণ এক ছন্দ তুলে ঘাসের ওপর উড়ে বেড়ায়। ওরাও তার ছন্দে ছন্দ মেলায়, আর তার তখন মনে পড়ে, রক্তের মতো লাল রঙ্গনেও আরেকদিন এমনি করেই উড়তে দেখেছিলো প্রজাপতিদের, কিন্তু আজকের মতো বিষণ্ণ তো লাগে নি!
এইসব বিষণ্ণ দিনে, তার কারো ওপর রাগ হয় না, এক পলক দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় অন্যদিকে, শান্তভাবে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গেলেও কোথাকার কোন্ বিষণ্ণতার মেঘ এসে ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ডটাকে বিগড়ে দেয়, আর তার ইচ্ছে হয় কোথাও লুকিয়ে পড়তে।
এরকম দিনগুলোর পুরোটা জুড়েই তার কেবলই লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কারণ অকারণেই একটু পর পর চোখ দুটো টনটন করে ওঠে আর ভেজা চোখ নিয়ে তার কেবলই লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কান্নাটা গিলে ফেলতে চাইলেও আবার, বারবারই জলে ভরে ওঠে চোখজোড়া।
অন্যদিনের মতো এই দিনে সবার সাথে হাসিঠাট্টায় গলা ছেড়ে হেসে ওঠা হয় না আর, অনেক জোর করেও এতটুকু হাসিও ফোটাতে পারে না ঠোঁটে আর অনেক ভিড়ের মাঝেও থেকে থেকে শুধু মন কেমন করে। মন কেমন করে?
এমন বিষণ্ণ দিন আসে আর যায়, স্মৃতিতে হারায় আবার হারায়ও না, মন খারাপ হয় আবার সে মন খারাপ করতে ভালোও লাগে তার। তারপর এই বিষণ্ণ দিন শেষে যখন বিষণ্ণ রাত নামে, তখন তার চোখের জলে ভেজা ভালোবাসায় ভরা একটা মায়ার সুতো চুপিচুপি বেরিয়ে যায় ঘর ছেড়ে, জানালা বেয়ে নিচে নেমে সেই বহুদিনের চেনা আবার কেমন যেন অচেনা রাস্তাটা ধরে ছুটে চলে, ছুটতে ছুটতে হঠাৎ এক বাড়ির গেটের ফাঁক দিয়ে গলে সন্তর্পণে জানালা বেয়ে সেই ঘরটাতে ঢুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলে তার মতোই আরেকজনকে।
তখন তারা দুজন একই স্বপ্ন দেখে। আর বিষণ্ণ দিনের শেষে নেমে আসা সেই বিষণ্ণ রাতের আঁধারে মোড়া বিষণ্ণতা কেটে যেয়ে তাদের ঘুমন্ত মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
এমন কোন এক বিষণ্ণ দিনে, আমরাও একসাথে বিষণ্ণ হবো।
লেখার ভাষাটা ভালো লেগেছে……
ধন্যবাদ!
তোমার এই জাতীয় লেখা আমার বরাবর ভালো লাগে। এইটাও!
ধন্যবাদ বোহেমিয়ান!
তরল বর্ণনা :guiter: … চমৎকার!
থ্যাঙ্কু। 🙂
“এমন কোন এক বিষণ্ণ দিনে, আমরাও একসাথে বিষণ্ণ হবো।”
🙁
বিষন্ন মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা……
হুম…
অনেক দিন পর আসা, তোমার লেখাটা পড়ে-ই।
মনেহয় আজ সেই বিষণ্ন দিন, কিংবা এমন দিন চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই……
হুম। অনেকদিন পর এই লেখাটা দেখতে এসে দেখলাম মন্তব্যগুলির উত্তর দেয়া হয় নি। এখন ভাবছি অনেক দিন পরও আমার কবে বিষণ্ন লেগেছিল সেটা জানতে তো বেশ লাগে!
🙁
🙁
বিষণ্ন দিনের বিষণ্ন ভালবাসা- তোর জন্য।
তোমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য তো এখন থেকে বেশি বেশি বিষণ্ন হতে হবে! 🙂
বিষণ্ন করা!
🙁
উম। 🙁
স্বাভাবিক… সাধারণ… সাদর…
🙂