ডাইনিং টেবিলে চুপচাপ বসে আছে হিমালয় ওরফে হিমু। এইভাবে বসে থাকতে তার নিজেরও অস্বস্তি লাগছে কিন্তু ঠিক কি করা দরকার সেটা হিমু নিজেও বুঝতে পারছেনা। মাজেদা খালা তাকে বাসি পোলাও আর ডিম ভাজা খাওয়াবেন এই কথা বলে বসিয়ে রেখেছেন। হিমুও চুপচাপ বসে আছে ঘরের এই দিক ঐ দিক তাকিয়ে দেখছে। এই সাত সকালে এসে হাজির হওয়া তার জন্য নতুন না হলেও আজ কেমন যেন স্বস্তি পাচ্ছেনা সে। মনে হচ্ছে এত সকালে কারো বাসায় আসা মানে তাকে বিরক্ত করা ছাড়া আর কিছুই না। অন্য সময় হলে খালা তাকে বের করে দিতেন কিংবা নিজে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরতেন। আজ খালাও কেমন ব্যতিক্রম আচরন করলেন, হাসিমুখে বসতে বলে বললেন আমি তোর জন্য পোলাও আর ডিম ভাজা নিয়ে আসি- গতকাল রাতের পোলাও ফ্রীজে রেখে দিয়েছি তোর জন্য, তুইত আবার বাসী পোলাও খুব পছন্দ করিস তাই।
পোলাও এসে হাজির হল, দু লোকমা মুখে দিয়েই সে প্লেট ঠেলে দিয়ে বলল খালা গরম গরম পরোটা খাব সাথে গরুরু মাংস। খালাত পারলে চোখ কপালে তুলে ফেলেন, একি তোর পছন্দের খাবার। না, খাবনা – বাসী জিনিস খাওয়া কোন ভাল কাজ না, তুমি পারলে সব বাসী খাবার ফেলে দাও, কোন ফকিরকে আবার দিতে যেওনা, তোমরা বড়লোকরাত আবার ফকিরদের বাসী জিনিস ছাড়া কিছু দিতে পারনা । অবশ্য আজকালকার ফকিররাও হারামজাদা হয়ে গেছে- কেউ বাসী খাবার দিলে সেটা নিয়ে সোজা ডাস্টবিনে ফেলে দেয় !!
খালা অবাক হওয়ার চূড়ান্ত সীমায় পৌছে টেবিল থেকে পোলাও নিয়ে গেলেন আর কাজের মহিলাকে বলে আসলেন পরোটা বানানোর জন্য। হিমুর কাছে এসে মাথায় হাত রাখলেন ।
হিমু হঠাৎ চমকে উঠে তাকাল ।
মাজেদা খালা নিজে থেকেই বললেন না জ্বর নেই ।
ধুর খালা, তুমি যে কি সমান্য একটুতেই ঘাবড়ে যাও, আমার কিছু হয়নি ।
খালা, বাদল কে বিয়ে দিচ্ছনা কেন ?
নারে , আমি ঠিক করেছি ওকে বিয়ে দিবনা ।
কেন ?
এই যে তুই কত সুন্দর ভাল আছিস, ঘুরে বেড়াস, সব দিক দিয়েই শান্তি । ওরে বিয়ে দিয়ে আমি ঘরে অশান্তি আনতে চাইনা ।
এটা কি ধরনের কথা, আমি বাপ মা মরা ছেলে আমার বিয়ে না করলেও চলবে, তোমরা যেহেতু আছ বাদল কে বিয়ে করিয়ে দাও, ঘর সংসার করুক, জীবনে স্হির হওয়ার দরকার আছে।
তুই এসব কি বলছিস । গতবছর যখন ওর বিয়ে ঠিক করলাম তখন তোরা দুজন মিলে পালিয়ে গেলি, আর আজকে হারামজাদা তুই এসব কি বলছিস। ওকে বিয়ে করাব মানে !!! ও এখন খুব ভাল আছে।
না খালা, তোমরা ওর জীবনটা নস্ট করে দিচ্ছ, বয়স হয়ে যাচ্ছে , ওরে বিয়ে দাও, পারলে আমার জন্যও একটা মেয়ে দেখ।
হিমু !!!!
জ্বী খালা !!!
তোর কি হয়েছে, তুই এসব কি বলছিস।
আরে আমার আবার কি হবে , আচ্ছা বাদল কই ।
ওর রুমে আছে।
ঠিক আছে পরোটাটা ওর রুমেই পাঠিয়ে দিও ।
বাদলের রুমে ঢুকেই চমকে উঠল হিমু। এই সাত সকালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে সিগারেট টানছে। হিমুত আকাশ থেকে পড়ল।
তুই সিগারেট ধরলি কবে।
তোমার সাথেত অনেক দিন দেখা হয়না, তাই তুমি জাননা। অনেকদিনই হল ….
কারন কি ?
তুমি যে মজা করে সিগারেট খাও, তা দেখে আমিও ভাবতাম নিশ্চয় জটিল কোন জিনিস, না হলে হিমালয় ভাইয়া এই কাজ করতনা। আর তাই একদিন ধরে ফেললাম । আসলেই জটিল জিনিস, সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা টান দিলেই মাথা কেমন ফ্রেশ।
এটা তোর ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ করবেনা ।
হা হা হা হা, তুমি যত যাই বল আমি এটা ছাড়ছিনা , আর আমি বাচ্চা ছেলেওনা। বাবা মা দুজনই জানেন- কেউ কিছু বলে নাই, আর বাবা নিজেইত খায় ।
এই নাও খাবা নাকি, আমি অবশ্য লাইটস খাই, তোমার মত অত কড়া গোল্ডলীফ খেলে কাশি হয় ।
আমি সিগারেট খায়না ।
মানে কি ?
মানে কিছুই না, পৃথিবীটা অনেক সুন্দর, সেটা সিগারেটের কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার করে দেয়ার কোন মানে নেই, তাই ছেড়ে দিলাম।
আচ্ছা বাদ দাও, তুমি না খেলে নাই ।
শোন, সকালে এসে আমি কি তোদের বিপদে ফেলে দিয়েছি ?
মানে কি ?
এই সাত সকালে তো কোন বাসায় গেস্ট আসেনা ।
তুমি আবার গেস্ট হলা কবে, হঠাৎ ইচ্ছা মতন ইত তুমি আস যাও ।
হিমু মনে হয় একটু বিব্রত আর কস্ট পেল, তাকে ঠিক গেস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়না দেখে।
চলুক 😀
অপেক্ষায় পরের পর্বের! 😀
:):)
কি আসবে পরে……
অপেক্ষায়…………… 🙂
ধন্যবাদ।
বাদল অনেক বড় হয়ে গেছে।=)
বয়স কি আর থেমে থাকে ।