শুধুই কি কয়েক ফোঁটা রক্ত? নাকি এক মুঠো হাসি- ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া??

“আন্টি, আপনার A+ve রক্ত দরকার ছিল। আমি মিথ্যে বলেছিলাম যে, আমার রক্ত A+ve না, B+ve. রক্ত কোন ভাবে যোগাড় হওয়ার পরও আপনি মারা গেলেন… আমার খুব কান্না পায়, আন্টি.. মনে হয়, শরীরের সমস্ত রক্ত আপনার কবরে ঢেলে দিয়ে আসি… রক্ত দিতে ভয় লাগে বলে মিথ্যা কথা বলেছিলাম সেদিন… Sorry , আন্টি; কবর খুব অন্ধকার, তাইনা?”

নাম না জানা এই ভাইয়ের আজীবনের অনুতাপের দহনে পোড়া ফেইসবুক স্ট্যাটাসটা সম্পর্কে জানতে পারলাম বন্ধু হিজবু মারফত রাকিব কিশোর ভাইয়ের মাধ্যমে… নিদারুণ ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সামান্য সূচ ফোটার ভয় প্রায়ই হারিয়ে দেয় আমাদের অনেকের ভেতরের মানবিকতাকে… ফল স্বরূপ অনেককেই ভুগতে হয় এই ভাইটির মতন আজীবনের মনঃকষ্টে…

নিজেকে একটু মুমূর্ষু মানুষটির জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য হলেও চিন্তা করে কি ভয়টাকে জয় করতে পারবেন না?

আজকে বেশ কিছু দিন পর রক্ত দিলাম প্রিয় একজন শিক্ষকের মায়ের জন্য, মন খুব খুশি। তাই এমন দিনেই চাইলাম, সামান্য হলেও সচেতনতাটা ছড়িয়ে দিতে সবার মাঝে… নিজের শরীরের রক্তকণিকাগুলো এমনিতেই ৪ মাস পর পর ধ্বংস হয়ে গিয়ে নতুন কণিকাকে স্থান ছেড়ে দেয়, তাই আপনার শরীরে রক্ত জমিয়ে রেখে তার সুফল পাওয়া কতটা possible? বরং প্রতি চার মাসে যদি একটিবার রক্ত দিয়ে আরেকজন মানুষের মুখে হাসি আনতে পারেন- তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?

নিজের প্রথম রক্ত দান করার অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি- ১০ কিংবা ১৫ মিনিটের সামান্য কষ্ট কিংবা অসুবিধে সহ্য করার পর আরেকজন মানুষকে সেবা করার, মানুষ হয়ে আরেক মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারার যে বিরল সুযোগ কিংবা অভিজ্ঞতা আপনি লাভ করবেন, তার দাম লক্ষ- কোটি টাকা খরচ করেও পূরণ করবার নয়। বিশ্বাস হচ্ছে না? নিজেই পরখ করে দেখুননা অন্তত একটিবার!

আর, as an ACTIONEER, আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি- even a smile is a charity 🙂

তাই, আবার জিজ্ঞেস করছি, বলুন, পারবেন না, নিজেকে একটু মুমূর্ষু মানুষটির জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য হলেও চিন্তা করে ভয়টাকে জয় করতে? পারবেন না নিজের শরীরের কয়েক ফোঁটা রক্তের বিনিময়ে আরেকজন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে??

ভাবুন না! একবার নয়, বারবার ভাবুন!

নিলয় সম্পর্কে

"আমি জানি আমি আমার চারপাশের এই অসংখ্য মানুষ থেকে অনেক ভালো জীবন পেতে পারতাম, কিন্তু সে জীবনে আমার কোন আকর্ষণ নেই। আমি দেখেছি সেই জীবন প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন- প্রতিটি মানুষের জীবন এতো সুনির্দিষ্ট, এতো গতানুগতিক যে সেটি একটি সাজানো নাটকের মতো। আমি সেই সাজানো রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা হতে চাইনি।" [http://www.facebook.com/niloy.02]
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

14 Responses to শুধুই কি কয়েক ফোঁটা রক্ত? নাকি এক মুঠো হাসি- ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া??

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ভালো লেগেছে পোস্ট 😀

    তবে ভাইয়া তুমি যখন নিজেকে একশনিয়ার বললে তখন কিন্তু অনেকেই অনেক কিছু বুঝল না! কারণ কমিউনিটি অ্যাকশন সম্পর্কে অনেকেই জানে না!

    • নিলয় বলেছেনঃ

      ভাইয়া- এইটা অনেক আগের লেখা, World Donors’ Day তে লিখেছিলাম… maybe খুব একটা ভালো হয়নি 😳

      Community Action সম্পর্কে তো তাহলে জানানো উচিত 🙂

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    “বরং প্রতি চার মাসে যদি একটিবার রক্ত দিয়ে আরেকজন মানুষের মুখে হাসি আনতে পারেন- তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?”
    আসলেই তাই!
    খুব সুন্দর হয়েছে পোস্টটা। 🙂

  3. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    একবার রক্ত দেয়ার ভয় কেটে যাবার পর শুধু দিন গুনি, কবে আবার রক্ত দিতে যাবো। কী এক অজানা আনন্দ টেনে নিয়ে যায়, মনে হয় এ রক্ত থেকে একটা মানুষ বাঁচবে! নিজের জীবনের মানে খুঁজে পাই যেন। 🙂

    • নিলয় বলেছেনঃ

      “কী এক অজানা আনন্দ টেনে নিয়ে যায়, মনে হয় এ রক্ত থেকে একটা মানুষ বাঁচবে! নিজের জীবনের মানে খুঁজে পাই যেন”

      এই অনুভূতিটা আমারও হয়, ভাইয়া 🙂

  4. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    অভিজ্ঞতায় ১০ বা ১৫ মিনিটের কষ্ট কোথায়? আমার তো মনে হয়েছে ওই সূঁচ ফোটানোর সময় ভয় আর পিঁপড়ার কামড়। আর তো সব স্বাভাবিক! 🙂
    জনসচেতনতামূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

  5. নিস্তব্ধ অমিত বলেছেনঃ

    মরণোত্তর চক্ষু দান আর রক্ত দান এ দু’টা ব্যাপারে মানুষের আরও অনেক বেশি শছেতন হওয়া প্রয়োজন……

  6. প্রজ্ঞা বলেছেনঃ

    সত্যিই তো, কয়েক ফোটা রক্ত নাকি এক মুঠো ভালবাসাময় হাসি!?!
    আমার কখনও রক্ত দেয়া হয়নি যদিও! যতবারই দিতে যাই ততবারই বিশিষ্ট ডাক্তারগণ বলেন, “লো ওয়েট”! আমি এক ব্যাগ রক্ত দিলে নাকি আমার দুই ব্যাগ রক্ত নিতে হবে! :crying:
    তাই এই অদ্ভুত অনুভূতিটা আজও অনুভব করা হলো না! 😳

  7. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    আজকেই রক্ত দিয়ে এলাম। তাই সরবে এমন পোস্ট দেখে এত ব্যস্ত সময়ের মাঝেও না পড়ে থাকতে পারলাম না।

    শুধু এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি এত চিৎকার করেছি, তাও যদি অন্তত একটা মানুষ শুনত আর সেইভাবে কাজ করত, নিজের লেখালেখি সার্থক মনে করতাম।

    ভাল লাগল নিলয় এই পোস্ট দেখে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।