ঈশ্বর বিহীন হিমু ও মিসির আলি – (৪)

মুখোমুখি বসে আছেন মিসির আলি এবং রুপা । রুপা চোখ বড় বড় করে মিসির আলিকে দেখছে। মিসির আলি একমনে সিগারেট টেনে চলেছেন। নেশা টেশা কিছু না, কেন জানি তার টানতে ভাল লাগছে, তাই তিনি একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছেন। রুপা এই দৃশ্য আগে কখনো দেখেনি, ভীষনরকম অবাক হয়ে আছে সে, কি কারনে মিসির আলি সিগারেট ধরেছেন সেটা জানতে চাইবার সাহস ও পাচ্ছেনা। এই লোকটা তার সাথে খুব ভাল আচরন করলেও সে কেন জানি মিসির আলিকে ভয় পায়, তার কাছে মনে হয় মিসর আলি যেকোন সময় রেগে যেতে পারেন। কথা শুরু করবে কিনা রুপা বুঝতে পারছেনা, আবার মিসির আলিও বুঝতে পারছেননা এই মেয়ে তার কাছে কি চায় , আগে যে সে এসেছিল এই বিষয়ে তিনি নিশ্চিত, না হলেত আর মোবাইলে নাম সেভ করা থাকতোনা , কিন্তু আগেইবা কেন এসে ছিল তিনি মনে করতে পারলেননা। তার বাসায় এমন একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে এসেছে , অবশ্য আগেও এসেছে- এই বিষয়টাকে এলাকাবাসী ঠিক কি ভাবে দেখে তিনি এই জিনিসটি বুঝে উঠতে পারছেননা। খারাপ ভাবে দেখে বলেও মনে হলনা, কারন তাহলে তারা নিশ্চয় প্রতিবাদ করত ।

 

রুপা এখন মাথা নিচু করে বসে আছে। মিসির আলী কে কিছুটা বিরক্তই মনে হচ্ছে। মেয়েটা কেন আসছে কিছুই বলছেনা, এইদিকে তার নিত্যনতুন হোটেলে খাওয়ার মিশনে দেরী হয়ে যাচ্ছে। দুপুরের খাবার সময় প্রায় হয়ে এল বলে।

তোমার টিপটা দেখি ঠিক কপালের মাঝখানটায় , একদম যেন মেপে মেপে বসানো মিসির আলি বলে উঠলেন ।

রুপা মাথা তুলে তাকাতে তাকাতে বলল এই একটা কাজ আমি খুব যত্ন নিয়ে করি। কেন করি জানেন?

মিসির আলি না সূচক মাথা নাড়ল।

আমাদের গ্রামে প্রবাদ আছে যেসব মেয়েদের টিপ বামে কিংবা ডানে হেলে থাকে তাদের কপালে সতীন জোটে।

তোমাকে দেখেত মনে হচ্ছেনা তোমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছা আছে, তুমিত মনে হয় যেমনটি আছ সারাজীবন তেমনই থাকবে পণ করেছ। শোন মেয়ে, পাকা ফল আর যৌবন দুটাই একরকম, কখন যে টুপ করে ফল পরে যাবে আর যৌবন শেষ হয়ে যাবে সেটা কেউ টেরও পাবেনা।সময় থাকতে মনের মত কাউকে বেছে নাও। কথাটা বলে মিসির আলি আরেকবার রুপার দিকে তাকালেন । একই সাথে এমন মায়াবতি আর রুপবতী এই দুটা গুন আছে এমন আর কারো কথা তিনি মনে করতে পারছেননা।

আপনি কি আমার উপর বিরক্ত হচ্ছেন, হলেও কিছু করার নেই, আমি আপনার সাথে কিছুক্ষন গল্প করতে এসেছি, গল্প শেষ হলে চলে যাব ।

মিসির আলিকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি কিছু একটা বলবেন।

তখন রুপা বলে উঠে, ঠিক আছে আমি একটা বিশ মিনিটে আপনার এখান থেকে বের হয়ে যাব।

একটা বিশ মিনিটে কেন?

আজ আটাশে মে, এই দিন ঠিক একটা বিশ মিনিটে সূর্য তার গতিপথের মাঝ বরাবর থাকবে।মাথায় সূর্য নিয়ে বের হবার একটা মজা আছে। আমার মা সামনে থাকলে বলতেন মাথায় সূর্য নিয়ে ঘর থেকে বের হতে নেই, আর তার সাথে জেদ করে ঠিক ঐ সময়টায় আমি বের হতাম। ভালবাসার মানুষকে কস্ট দেয়া, ক্ষেপিয়ে তোলার মাঝেও একরকম আনন্দ আছে। আজ কি রান্না করেছেন ?

 

কিছুই রান্না করিনি।

আমি কি আপনার জন্য রান্না চড়িয়ে দিব।

না, এখন থেকে আমি আর বাসায় খাবনা, নতুন নতুন হোটেলে খাব। কথাটা বলেই মিসির আলি ভাবছেন, শুধু শুধু একে তার পরিকল্পনার কথা বলার দরকার কি।

আজ কোন হোটেলে খাবেন।

রাস্তায় নেমে হাঁটতে থাকব, যে হোটেলটা পছন্দ হবে সেটায় ঢুকে যাব।তুমি এখন যাও আমি বের হব।

বলেছিত একটা বিশ মিনিটে বের হয়ে যাব।মনে মনে রুপা কিছুটা অবাক হয়, যতই বিরক্ত হউননা কেন মিসির আলি কখনো মুখের উপর না বলতে পারতেননা, আজকে তিনি তাকে সরাসরি চলে যেতে বলছেন। মরার পৃথিবীর কি হয়েছে। সবাই তার নিজ নিজ খোলস ছেড়ে অন্য খোলসে ঢুকে যাচ্ছে, কেবল সেই আঁটকে আছে তার পুরনো খোলসে।

আমি ঠিক করেছি আপনার সাথে যাব, হোটেলে বসে খাব, অনেকদিন এমন রাস্তার পাশের হোটেলগুলোতে খাওয়া হয়না।

মিসির আলি বুঝলেন তিনি যতই বকাঝকা করেননা কেন এই মেয়েকে ভাগিয়ে দিতে পারবেন বলে মনে হয়না। থাক , যতক্ষন ইচ্ছা তার পাশেই থাকুক এই মেয়ে। এমন রুপবতী মেয়েকে নিয়ে পাশাপশি হাঁটতে থাকা বিষয়টাকে উপভোগ করাই শ্রেয়।

 

ঠিক একটা বিশ মিনিটে মিসির আলি আর রুপা রাস্তায় নেমে এল। গলির মুখের হোটেলের ম্যানেজার ছোকরাটা একদৃস্টে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে , অবশ্য রুপা তাকিয়ে থাকার মতনই মেয়ে। ইভ টিজিং করলে শাস্তির নানান রকম আইন আছে, তাকিয়ে থাকার জন্যত  কোন আইন নেই । তদুপরি এমন রুপবতী সামনে দিয়ে যাবার সময় তার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে না থাকাটায় বরং শাস্তিযোগ্য হউয়া উচিত। সুন্দর সবাই হয়ত ছুতে পারবেনা, ধরতে পারবেনা, তাই বলে দেখতেও পারবেনা-এটাত হতে পারেনা। রুপার মত রুপবতী নিয়ে হাঁটছেন , রাস্তার সব লোকজন তার দিকে তাকিয়ে আছে, মিসির আলি কি কিছুটা অহমিকায় ভুগছেন। এই মেয়েটিত আগেও এসেছিল, তখনও কি এমন সবাই তাকিয়ে ছিল, তিনি মনে করতে পারলেননা। একটা ফুলের দোকান ক্রস করার সময় মিসির আলির খুব ইচ্ছা হল রুপাকে একগুচ্ছ রজনীগন্ধার মালা কিনে দিতে, মালাটা খোঁপায় গুজে দিলে এই মেয়ের দিক থেকে আর চোখ ফেরানো যাবেনা, অবশ্য এখনও যে যাচ্ছে তাও না।

 

শাপলা হোটেল ‘ মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন , রুপার খারাপ লাগছেনা এটাতে বসে। কৈ মাছটায় নাকি সবচেয়ে ভাল হবে , বেয়ারার কথা অনুযায়ি তারা দুজনেই কৈ এর অর্ডাল দিল। বেশ ভাল সাইজের কৈ বলতেই হবে। রুপা কিছুটা ভয়ে আছে, কৈ মাছ খেয়েছে আর তার গলায় কাঁটা আঁটকায়নি এমন ঘটনা কখনো হয়নি। সে কাঁটা বের করার জন্য কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগতোনা, বন্ধু জুঁই কে ফোন দিয়ে বলত তোর বাবাকে বলিস আমার গলায় কৈ মাছের কাঁটা আঁটকিয়ে গেছে, তিনি যেন দোয়া পড়ে দেন। জুঁই এর বাবা নাকি কিছু দোয়া দরুদ জানেন, যেগুলো পড়লে যার নাম করে পড়া হয় তার গলায় কোন মাছের কাঁটা আঁটকালে সেটা নিজে থেকেই নেমে যাবে। তারা সব বান্ধবীই এটার সাক্ষী যে ঘটনা সত্য, কাঁটা সত্যি সত্যি নেমে যায়, তারা জুঁই এর বাবার কাছে সে দোয়া দরুদ লিখে নিতে চেয়েছিল, তিনি দেননি, বলেছেন এটা শুধু একজনকেই দেয়া যাবে, তিনি মৃত্যুর আগে ঠিক করবেন কাকে দিবেন। রুপা মোবাইল বের করে দেখে নিল জুঁই এর নাম্বারটা আছে কিনা !

 

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

10 Responses to ঈশ্বর বিহীন হিমু ও মিসির আলি – (৪)

  1. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    একটা কথা যেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত সেটা আপনাকে জানাতে ইচ্ছে হল। এখন পর্যন্ত আপনার প্রথমদিকের মৌলিক লেখাগুলোর মত আর কোনও লেখা পেলাম না সরবে। হয়ত আপনি বলবেন, এই গল্পটাই তো আপনার লেখা, অতএব এটি মৌলিক। কিন্তু হিমু, মিসির আলীর মত চরিত্রগুলোই আসলে একজন প্রথিতযশা লেখকের থেকে ধার করা। মূল চরিত্রের এই আবরণের কারণে লেখা অনেকাংশেই মৌলিকত্ব হারায়।

    সরব একটি গঠনমূলক প্ল্যাটফর্ম। এই বিষয়টাকে কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ মনে হয়। কারণ একজনের সৃষ্টিকর্মকে আরেকজনের সাহিত্যকর্মে ঢালাওভাবে দেখতে সাধারণত মানুষ পছন্দ করে না। আর সেই সৃষ্টিকর্ম যদি জনপ্রিয় হয় তবে তো কথাই নেই।

    হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন, আপনার প্রথম দুটি মৌলিক লেখার পাঠক সংখ্যা এবং মন্তব্য দুই-ই অনেক অনেক বেশি এই এখনকার সিরিজগুলো থেকে। এ থেকেই বোঝা যায়, আপনার মৌলিক সত্ত্বার গ্রহণযোগ্যতা অবশ্যই বেশি।

    আশা করি, সেই সত্ত্বাটাকে আবার ফিরিয়ে আনবেন, হারিয়ে যেতে দেবেন না।
    আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

    • শামসীর বলেছেনঃ

      আপনার অনেক সুন্দর একটি মন্তব্যে আর প্রকাশভঙ্গীর জন্য ধন্যবাদ । ।
      আসলে এই লেখাটা অনেকটা হুট করে মজা করার জন্যই লেখা, এর বেশী কিছু না !!!

      আপনার কথাগোলু মাথায় রাখব শিউর ।

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    পড়ছি ভাইয়া
    চলুক

  3. ভালো লেগেছে ভাইয়া, তবে আমারও বিশ্বাস, আপনার নিজস্ব ঢংয়ের লিখাটা বেশ লাগে, ওটাও আনুন না মাঝে মাঝে……

  4. শিশিরকণা বলেছেনঃ

    ভালো লাগলো…. :thinking:

  5. প্রথম-নাম বলেছেনঃ

    হুম!
    মনে ঈশ্বর না থাকায়, হিমু যা-তা করার লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছে।
    কবে যে হিমুর ঈশ্বর ভীতি আসবে…

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।