দুনিয়া কাঁপানো ছবিগুলো-৩: স্বাধীনতা

একটা ছবি হাজার শব্দের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। কিছু ছবি মানুষের ইতিহাস বদলায়, কিছু ছবি  মানুষকে স্বপ্ন দেখায় আর কিছু ছবি মানুষকে করে বাকরুদ্ধ।

স্বাধীনতা। এমন একটা শব্দ, যার মর্ম বাঙালীদের চেয়ে ভালো আর কে জানে? ৩০ লক্ষ প্রাণ দিয়ে আমরা পেয়েছি এ স্বাধীনতা। সারা পৃথিবীতে নানা জাতি, নানা স্থানে তার স্বাধীনতা পেতে যে ত্যাগের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, তা নিয়েই এই পর্ব। সে স্বাধীনতা হতে পারে মত প্রকাশের, স্বপ্ন দেখার অথবা শুধুই বেঁচে থাকার।

এমনই কিছু ছবি নিয়েই ‘দুনিয়া কাঁপানো ছবিগুলো-৩’।

Vietnam napalm, Nick Ut

৮ই জুন, ১৯৭২। দক্ষিণ ভিয়েতনামে একটি গ্রামের উপর ভুলবশত নাপাম বোমা ফেলে আমেরিকান বিমানবাহিনী। সেই বোমায় পুরো শরীর ঝলসে যাওয়া Phan Thi Kim Phuc নিজের জীবনটুকু বাঁচাতে কাঁদতে কাঁদতে পালাচ্ছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্রাম থেকে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকা যে নৃশংসতা চালিয়েছিল, তার প্রতীক হয়ে আছে এই ছবিটি।

kent state shooting

কম্বোডিয়ায় আমেরিকার হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভরত কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের উপর গুলি চালায় ওহাইয়ো ন্যাশনাল গার্ড। ৪ জন মারা যায় ঘটনাস্থলে এবং ১ জন প্যারালাইজড হয়ে যায় সারাজীবনের জন্য। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র আমেরিকা। সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, হাই স্কুল বন্ধ হয়ে যায় বিক্ষোভে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধেও জনমত পড়ে তোলে এই ঘটনা।

Kyoichi Sawada, Japan

আমেরিকার বোমাবর্ষনের হাত থেকে বাঁচার জন্য, ছেলেমেয়ে নিয়ে নদী পার হয়ে এসেছেন ভিয়েতনামী মা। সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫ এর ছবি। তীব্র ভয়ের চিহ্ন তাদের চোখে।

Londonderry, Northern Ireland

আয়ারল্যান্ডের এক যুবক, ব্রিটিশদের টিয়ার গ্যাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য গ্যাস মাস্ক পরে দাঁড়িয়েছে শান্তির আহবান সম্বলিত দেয়াল লিখনের সামনে। ১৯৬৯ সালের ছবি।

Beirut, Lebanon


১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৮২। বৈরুতে, ফিলিস্তিনীদের উপর প্রতিদিনের মতই হামলা চালায় ইসরায়েলীরা। গুলি করে মারা হয় নিরীহ মানুষকে।

কোনদিন কি ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আসবে না?

The Buddhist monk, Malcolm Browne

থিক কুয়াং ডুক, একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু নিজের ধর্মচর্চার অধিকার ক্ষুন্ন হবার প্রতিবাদে নিজের গায়ে আগুন দেন। ১৯৬৩ সালের তৎকালীন ভিয়েতনামে ক্যাথলিক সরকার বৌদ্ধদের তাদের ধর্মচর্চার অধিকারে বাধা দেয়। তার প্রতিবাদেই এই ঘটনা।

Tank man of tienamen square

রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবিতে চীনের তিয়েনয়ামেন স্কয়ারে ৫ই জুন, ১৯৮৯ এর বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সৈন্যদের নামিয়ে দেয় চীন সরকার। সেনাবাহিনীর ট্যাংকের সামনে একলা দাঁড়িয়ে যায় এক যুবক। পথরোধ করে দাঁড়িয়ে থাকে যান্ত্রিক দৈত্যদের। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী এবং কখনোই তার আসল পরিচয় বা তার ভাগ্যে কী হয়েছিল, জানা যায়নি।

Boy of mass revolt of 1969

স্বাধীনতা শব্দটা বললে এই ছবিটা সব সময় আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। উনসত্তরের গণুভ্যুত্থানে এক মিছিলের নেতৃত্ব দেয়া ছেলেটিকে ছবি তোলার কিছুক্ষণ পরেই গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানীরা।

 

আগের পর্বগুলো:
দুনিয়া কাঁপানো ছবিগুলো-১

দুনিয়া কাঁপানো ছবিগুলো-২

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

22 Responses to দুনিয়া কাঁপানো ছবিগুলো-৩: স্বাধীনতা

  1. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    শেষের ছবিটাকে সিলেক্ট করার জন্য বিশেষভাবে একটা ধন্যবাদ তোকে।

    অসাধারণ সংগ্রহ দোস্ত!
    সত্যিই নানা জাতির স্বাধীনতার কাব্য এমন করে জানা হয়ে ওঠে নি কখনো।

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      ধন্যবাদ। 🙂

      শেষের ছবিটা আমার ভয়ংকর রকমের প্রিয়। কেন যেন এই ছবিটা আমাকে স্বাধীনতার কথা মনে করিয়ে দেয় বারবার।

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    দারুণ সংগ্রহ!

  3. নিস্তব্ধ অমিত বলেছেনঃ

    ছবি গুলো দেখলে একটা কথাই মনে হয়, ত্যাগই স্বাধীনতা……

  4. বোকা মানুষ বলেছেনঃ

    আজ থেকে পৃথিবীতে যুদ্ধ নিষিদ্ধ- এরকম ঘোষণা দিয়ে যদি বাস্তবায়ন করতে পারতাম!

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      পৃথিবীতে মানুষের সাথে সাথে অনেক অমানুষ বাস করে। এরা যতদিন থাকবে, যুদ্ধ থামবে না।
      অপেক্ষায় আছি, কোন একদিন পৃথিবীতে আর কোন অমানুষ থাকবে না।

  5. তোদের দেখে, তোদের কাজগুলো দেখে আমার একটা বিশ্বাস হয়েছে, এই পৃথিবী থেকে কেউ চাইলেই এই স্মৃতিগুলো মুছে যেতে দিবে না, মানুষের সংগ্রামের, কষ্টের আর স্বপ্নের উপাদান এই ছবিগুলো বেঁচে থাকবে তোর, আমার, আমাদের ভিতর……
    দুর্দান্ত একটা পর্বের জন্য ধন্যবাদ…

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      “মানুষের সংগ্রামের, কষ্টের আর স্বপ্নের উপাদান এই ছবিগুলো বেঁচে থাকবে তোর, আমার, আমাদের ভিতর……”

      এই প্রত্যাশা সবসময়ের।

      দূর্দান্ত একটা কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। 😛

  6. সামিরা বলেছেনঃ

    “আজ থেকে পৃথিবীতে যুদ্ধ নিষিদ্ধ- এরকম ঘোষণা দিয়ে যদি বাস্তবায়ন করতে পারতাম!” – সত্যি যদি পারতাম!
    এমনিই মন খারাপ ছিল, ছবিগুলি দেখে চোখে পানি চলে আসলো।
    আমরা কত সহজেই একজন মানুষ আরেকজনকে মেরে ফেলতে পারি। অবাক লাগে ভাবলে।
    তবে মানুষ থেকে অমানুষ হওয়ার প্রক্রিয়াটা হয়তো অনেক আগে থেকেই শুরু হয় এই মানুষদের জীবনে, হয়তো অনেক ছোট ছোট ব্যাপার একসাথে মিলে এমন হিংস্র বানিয়ে দেয় এদের। সেগুলো যদি বন্ধ করা যেতো!
    একদিন যাবে ইনশাআল্লাহ্‌।

  7. জনৈক বলেছেনঃ

    অসাধারণ সংগ্রহ…

  8. ইতস্তত বিপ্লবী বলেছেনঃ

    যুদ্ধ করতে ইচ্ছ করে ওসব যুদ্ধের বিরুদ্ধে…যাতে কোনোদিন যুদ্ধ না হয়…রক্তে আগুন জ্বালানো কিছু ছবি!

  9. অক্ষর বলেছেনঃ

    শেষের ছবিটা ভয়ানক ভাবে মনে দাগ কাটল। স্বাধীনতার এমন ছবি সংগ্রহ করার জন্য ভাইয়া স্যালুট :huzur:

  10. কৃষ্ণচূড়া বলেছেনঃ

    🙁
    ধন্যবাদ বন্ধু। সংগ্রহটা দারুণ

  11. তানজির বলেছেনঃ

    দারূণ, শেষের ছবিটা আমারও খুব প্রিয়। কিন্তু ছেলেটাকে যে মেরে ফেলেছিল তা জানতাম না। এ সম্বন্ধে কোন রেফেরেন্স দিতে পারবেন?

  12. Shahidul বলেছেনঃ

    শেষ ছবিটার ছেলেটাকে যে মেরে ফেলা হয়েছে, এর কোনো রেফারেন্স আছে?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।