অভ্রর বয়স তখন তিন ছুই ছুই, হঠাৎ এক রোড এক্সিডেন্টে মা মারা যায় ওর, তার পর বেশ কয়েক বছর ও ওর বাবার সাথেই ছিল, কিন্তু ওর বয়স যখন ৬ তখন ওর বাবা আবার নতুন করে বিয়ে করেন, ঘরে নতুন মাকে ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না, এমন না যে নতুন মা খুব খারাপ ছিল কিন্তু অভ্র তার মাকে ছাড়া আর কাউকে মা বলে ডাকতে পারবে না । তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ওকে ওর ফুফুর বাসায় রেখে আসেন অভ্রর বাবা। অভ্র বড় হয়েছে ওর ফুফুদের কাছেই। ওর আর একজন ফুফাত ভাই আছে যিনি আমেরিকায় থাকেন, তাই বাসায় শুধু অভ্র আর ওর ফুফা-ফুফু। এই অভ্র কোনদিন ক্লাসে ২য় হয়নি, ২য় যে হত তার চেয়ে অভ্র’র নম্বর থাকত অনেক বেশি, তাই স্কুলের টিচারদের কাছে সে প্রিয় ছাত্রই ছিল, কিন্তু বিপত্তি ঘটে কলেজে এসে, কলেজের পরীক্ষায় রিহানের সাথে কিছুতেই পারছেনা সে, গ্রামের এক ছেলে, ও এসে ধাম করে তার এত বছরের ১ম স্থানটা নিয়ে নিল তা চিন্তাই করলে গা কাটা দিয়ে ওঠে অভ্রর, তারপর আবার সে টার্ম ফাইনাল এবার ৩য় হয়েছে, ২য় হয়েছে ওই ফারিহা নামের বদ মেয়েটা। ও প্রায়ই খেয়াল করেছে মেয়েটা তার দিকে তাকিয়ে থাকে, বেয়াদপ টাইপের মেয়ে, অভ্র মেয়েদের দুই চোখে দেখতে পারে না।
এদিকে ফারিহা আর রিহানের মাঝে বেশ ভাল একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, কিভাবে হল তারা নিজেরাও জানে না, তবে জানে তারা এখন খুবই ভাল বন্ধু, রিহানের কোন নোট লাগলে ফারিহা তাকে সাহায্য করে আবার রিহান ও খুবই হেল্পফুল ফারিহার জন্য, ক্লাসের ছেলে-মেয়েদের অনেকেই এই বন্ধুত্বকে অন্য নাম দিয়ে চালিয়ে দিতে চায় কিন্তু রিহান বা ফারিহা কখনই এটা স্বীকার করে না। স্বীকার করারই বা কি আছে সত্যিই তো তারা বন্ধু ছাড়া আর কিছুই নয়। ওরা বুঝে না , মানুষ এত আজব কেন হয়, একটু সম্পর্ক ভাল তা বলে কি প্রেম করতে হবে নাকি??
“ এই রিহান শোন ”, অভ্র ডাকে রিহান কে,
“হুম, অভ্র বল, কিছু লাগবে তোর?
“না , লাগবে না তেমন কিছু,উমম একটা সাহায্য চাই ,করবি?”
“ আজব তো, বল না তুই”
“মানে, মানে, তোর কাছে ফারিহার নাম্বারটা হবে?”
“ফারিহার নাম্বার!!! মানে?? এটা তুই বলসিস অভ্র!! মামা!! হুম হুম ব্যাপারটা কি??”
“আরেহ না, ফারিহা , মিজান স্যার এর কাছে পড়ে তো, তাই ওর কাছ থেকে মিজান স্যার এর কিছু নোট নিতাম”
“ও! তাই বল, নাহলে আমি ভাবলাম..”
“না, না, আমি ভাই ভালো মানুষ” ,মিষ্টি একটা হাসি দেয় অভ্র।
আজ রাতে ফারিহাকে ফোন দিবে অভ্র, ওর কাছ থেকে জেনে নিবে কিভাবে রিহান এত ভাল করে, মেয়েরা একটু বোকা টাইপের হয়,ও বুঝবেই না অভ্র কেন ওকে ফোন দিয়েছে, ভাববে যে ওকেই বোধহয় দাম দিচ্ছে! মনে মনে হাসে অভ্র।
রাত ১২টা ৩৬ মিনিট, ফারিহা ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে, রিহান আজ ওকে বলেছে অভ্র নাকি তার কাছ থেকে ওর নাম্বার নিয়েছে, ফারিহার ধারনা আজ রাতেই অভ্র ফোন দিবে, তার “ মুহিব” তাকে ফোন করবে, প্রথমবারের মত কথা বলবে! ভাবতেই ফারিহার কেমন জানি লাগে! “আচ্ছা অভ্র কেন ফোন করবে? ও কি আমাকে? নাহ ধুর ও যেই একটা আস্ত আঁতেল ! ওই টা আবার ভালবাসতে পারে নাকি?’
ভাবতে থাকে ফারিহা। এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে ওর “অভ্র” ! রিহান এর কাছ থেকে আগেই অভ্রর নাম্বার নিয়ে রেখেছিল সে, এখন তাকে এমন ভাবে কথা বলতে হবে যেন সে আসলে জানে না কে ফোন করেছে..
“হ্যালো”
“হ্যালো, ফারিহা?”
“আপনি কে বলছেন?” ফারিহার গলাটা কেপে উঠছে
“আমি অভ্র, তোমাদের কলেজেই পড়ি”
“ অভ্র! ও আচ্ছা অভ্র! ওই যে বলদ মার্কা ছেলেটা , ১ম বেঞ্চের কোনায় বসে যে সবসময়?”অনেক কষ্টে হাসি আটকিয়ে রাখে ফারিহা,
“হুম, আমি সেই কিন্তু আমি যে বলদ তা আমি জানতাম না” মৃদু হাসে অভ্র
“হুম তো এত রাতে ফোন দিয়েছ কেন?”
“ না , মানে এমনেই, মানে তুমি মিজান স্যার এর কাছে পড় না?”
“হুম পড়ি তো?”
“ না , আমার কিছু নোট দরকার ছিল”
“তা ওইটা কলেজে বলা যায় না? এত রাতে ফোন দেওয়ার মানে কি” বলেই ফারিহা বুঝতে পারল কাজটা ঠিক হল না।
“ না মানে, তাহলে রাখি, পরে কথা হবে” বলেই রেখে দিল অভ্র,
‘ ধুর আমি একটা বলদের ঘরে বলদ, এত ভাব মারার দরকার কি ছিল! এখন যদি আর কোনদিন ফোন না দেয় অভ্র, হায় হায় ধুর ছাই” নিজেকে মনে মনে বক্তে থাকে ফারিহা। এমন সময় আবার ফোন আসে , এবার রিহান,
“ হ্যালো, ফারিহা,কিরে ঘুমাস নাই?”
“না রে এখন ঘুমাব”
“হুম, তাহলে ঘুমা, তো কাল কয়টায় থাকবি কলেজে?”
“ ওই ১১ টায় ই থাকব”
“ আচ্ছা, রাখি তাহলে ভাল থাক” বলে রেখে দেয় রিহান, আজ কাল তার খুব বাজে একটা অভ্যাস হয়েছে, ফারিহাকে না বলে রাতে ঘুমাতে যেতে পারেনা সে, কেন জানি ওকে বলেই যেতে হয় রিহানের, এর অর্থ কী? রিহান জানে না, রাতে ডায়েরী লিখে ঘুমিয়ে পরে ও। (চলবে )
পর্ব (২)- http://shorob.com/?p=2975
পর্ব (১)- http://shorob.com/?p=2962
আরেকটু কম বিরতিতে দেয়া যায় না ? তাহলে ভালো হত । খুব ভালো লাগছে পরতে । চালিয়ে যান ।
এইটা একটু বেশি দেরিতে লিখেছি, আশা করি সামনের গুলো তাড়াতাড়ি লিখব, ভালো লাগছে শুনে সত্যিই অনেক খুশি হলাম, প্রথম লেখাতো তাই
:yahooo: :yahooo: :yahooo: :penguindance: :penguindance:
😛 😛
রুমান্টিক! :love:
(কমেন্ট পাবা। অপেক্ষাও ঃদ )
কী হবে, কী হবে, কী হবে…………!!! ?
ওরে, পিচ্চিগুলান সব পাকনা হইয়া গেলো রে! 😛
তারপরের কাহিনী কী? কী? কী? :love:
🙂
পরেরটার অপেক্ষায়
তাত্তাড়ি দাও না পরের পর্ব… :love: