ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম দিনেই ওর সাথে পরিচয়। ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে টিএসসি’র সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, ছেলেটি হাত বারিয়ে দিয়ে বলল, আমি আবির। ওর বলার ধরন দেখে আমি একটু হেসে দিলাম। সাথে ওর বাবা আর মা, আবির ওনাদের একমাত্র ছেলে। আন্টি-আংকেল, মানে, ওর বাবা মা, স্কুলের টিচার। বেশ ছিমছাম, হাশিখুশি। সেদিন সারাদিন একসাথে থাকলাম, বিকেলে আন্টি-আংকেল চলে যাচ্ছেন…বাবা, মা, ছেলে তিন জনের চোখেই পানি। আন্টি আমার হাত ধরে বললেন, বাবা, আমার ছেলেটা কখনো একা থাকেনি, ওর খোজ-খবর রেখো। আংকেল বললেন, তোমাদের একদিন অনেক বড় হতে হবে, এই দেশের হাল ধরতে হবে।
আম আর আবির একই হলে এলটমেন্ট পেলাম। পলিটিক্যাল নেতাদের কাছে এক মাস ধরনা দিয়ে হলে উঠলাম। নেতাদেরকে নিয়মিত সালাম দেয়া আর বাধ্যতামুলক ভাবে ওদের মিছিলে যাওয়া ছিলো নিয়মিত কাজ। আবির আর আমি পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। আবির ছিলো খুব লাজুক, ক্লাসের এক মেয়ে নাকি ওকে বলছিলো, আবির তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে…এরপর ছয় মাস ওই মেয়ের সামনে দিয়ে সে আসা-যাওয়া করেনি। রাতের বেলায় রাস্তায় হাটা আর ফুটপাতের চা খাওয়া ছিলো আমাদের নিত্ত রুটিন। আমরা মজা করতাম, কষ্ট ভাগ করতাম আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন আকতাম…
তার প্রায় এক বছর পর…
তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি উঠ, দেরি করলে সৃতিসৌধে গিয়ে ভালো করে দেখতে পারবো না। আরেকটু ঘুমাতে চাইলাম কিন্তু আবিরের কড়া চক্ষুদৃষ্টি উপেক্ষা করার সাহস হলো না। দুই বন্ধু মিলে গাড়িতে চেপে বসলাম সৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে। দিনটি ছিলো ১৬ ডিসেম্বর।
আবির আর আমি প্রায় সারাদিন সৃতিসৌধে কাটালাম, ক্যম্পাসে ফিরতে বিকেল হয়ে গেলো। বাস থেকে নিলক্ষেত নেমে তেহারী খেয়ে আবির টিউশনিতে চলে গেলো, আর আমি বড় আপার বাসায় চানখারপুলে। আবির বলল, তাড়াতাড়ি চলে আসিস, রাতে হাটতে বের হব।
রাত প্রায় ১০:৩০ হলে ফিরে আবিরকে না পেয়ে ওকে ফোন দিলাম, একবার না, কয়েকবার। রিসিভ করলো না। এক ঘন্টা আগেও এসএমএস দিয়ে আসার জন্য তাড়া দিচ্ছিল।
খুঁজতে খুঁজতে হল গেটে চলে আসলাম। চায়ের দোকানের সামনে জিতু আমাকে ইশারায় ডেকে বলল…কিরে, আবির রুমে আসছে? ওরে বলিস, এইটা কোন বিষয় না, এইরকম হয়…আমি কিছুই না বুঝে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর তুইতো বেচে গেলি, কই ছিলি তুই?
এতক্ষনে বিষয়টা বুঝতে পেরে আমি ঘামতে শুরু করলাম। আজ মিছিল ছিলো, সকালে। আমাদের মনে ছিলো না…যারা মিছিলে যায়নি তাদের সবাইকে রাতে পলিটিক্যাল নেতারা তলব করে, তাদের মধ্যে আবিরও ছিলো। হলের গেষ্ট রুমে প্রায় শ-খানেক স্টুডেন্টের সামনে মিছিলে না যাওয়ার কারনে আবিরকে চড় মারা হয়।
দ্রুত হাটতে শুরু করলাম, আমি জানি আবির কই থাকতে পারে…দোয়েল চত্বরের পাশে তিন নেতার মাজারের কোনার জায়গটা আবিরের খুব পছন্দ…
আবিরের পাশে বসে আছি। ওর চোখ একটু লাল, চুল এলোমেলো…দুইজনই চুপচাপ…কিছুক্ষন পর আবির বলল, দোস্ত, আমি মায়ের কাছে যাবো…আমাকে একটু নিয়ে যাবি?
🙁 কথা সত্য
পরীক্ষার আগের দিন এমন ঘটনার কথা।
অনেক ভালো লাগল লেখাটা।
আম আর আবির একই হলে > আমি*
ব্যাস্ত > ব্যস্ত
ওই মেয়ের সালনে দিয়ে সে > সামনে*
খুজতে খুজতে > খুঁজতে খুঁজতে
বেচে > বেঁচে
স্মৃতিসৌধ*
চত্বর*
হাঁটতে*
ধন্যবাদ 🙁
যা ছিল বলার আমরা বলে ফেলেছি।
আমরা একটা মুহূর্ত ছিল যখন এই নেতাদের থাপ্পড় হজম করে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে।
দোষ ছিল রাতে মিছিল না করা।
শ’ খানেক নির্বাক, প্রতিবাদহীন যুবকের সামনে।
প্রতিবাদ করলে একই পরিনতি হবে যে!
কেউ বলতে পারেনি ওর জ্বর ছিল! হায়রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!!
চিৎকার করে এইসব ভন্ডদের মুখশ খুলে দিতে ইচ্ছে করে…
চিৎকার করে এইসব ভন্ডদের মুখোশ খুলে দিতে ইচ্ছে করে…
ঠিক বুঝতে পারলাম না, লেখার শেষ অংশটা কি আমার স্লো নেট স্পিডের কারণে পড়তে পারলাম না, না-কি লেখাটা আসলে এতোটুকুই?
গল্পটার সমস্যা হল, এটা গল্প না, বাস্তব ঘটনা।
কেন যে এই ধরণের ঘটনাগুলো ঘটে!
অফটপিক-
বানানের ব্যাপারে আরেকটু সতর্ক হলে লেখার সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেত।
কয়েকটা বানান ভুল পেলাম।