আজ সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর থেকেই দেখি আমার মায়ের মেজাজ দারুণ চাঙ্গা! অন্যান্য দিনের চেয়ে একেবারেই আলাদা। বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই সকালে ঘুম থেকে উঠেই- “এখন তোমার সকাল হল?” জাতীয় ঝাড়ি খেয়ে দিন শুরু হয় আমার! কিন্তু অবাক করা বিষয় হল অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে আমি এতো দেরী করে ঘুম থেকে উঠার পরও আম্মু একবারও বকলো না।
কিন্তু আমার আবার আরেক সমস্যা। সকালে ঘুম থেকে উঠে আম্মুর টনিক না পেলে আমার কেমন যেন শূণ্য শূন্য লাগে। তাই সেই শূণ্যতা পূরণ করতে প্রবল আগ্রহে আম্মুকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম, “কি ব্যাপার আম্মু? তোমাকে আজকে খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে?! কাহিনী কি?”
আম্মু প্রত্যুত্তরে, “হ্যাঁ আমার মনটা আজকে সকাল থেকেই অনেক বেশি ভাল!”।
প্রশ্ন করার পর হঠাৎ মনে পড়ল আজকে আব্বু-আম্মুর বিবাহ বার্ষিকী। আর আমি তাদের এতোটাই অপদার্থ কন্যা যে এই কথাটা ভুল করে ভুলেই গেলাম। শুধু তাই না- তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন আমার এমনকি মোবাইলের রিমাইন্ডারের রিমাইন্ডিংয়েও মনে পড়ে না যে আজকে একটা বিশেষ দিন 🙁 ।
ভাবোদয় হওয়ার পর মনে মনে বুঝে নিলাম নিশ্চয় আব্বু বা বোনেদের মধ্যে কেউ একজন কোন একটা বিশেষ কোন উপহার দিয়েছে যে কারণে আম্মুর মন এতো ভাল! তবুও, আসল কারণ জানার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলাম, “ও বুঝতে পারছি! আজকে তোমার ম্যারেজ ডে জন্য এতো খুশি তুমি! না?”
কিন্তু একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আম্মুর উত্তর শুনে – “না, আমি আজকে সকালে একটা ভাল কাজ করছি জন্য এতো ভাল লাগতেছে”।
আমার আর তর সচ্ছে না… কি এমন ভাল কাজের কথা যে বলতে চাচ্ছে আম্মু! ভাল জামা কিনেছে? নাকি ভাল কিছু রেধেছে?
এবং সে বলেই চলল, “আজকে সকালে বাসে উঠেই দেখি প্রথম সারির মহিলা সিটে একটা মেয়ের সাথে একটা ছেলে বসে আছে”।
আমি মনে মনে বুঝেই নিলাম ঘটনা কি! আহারে বেচারা ছেলেটা! মহিলা সিটে বসার জন্য আমার মহান মা-জননীর কাছে কতোটাই না রামধমক খেয়েছে নিশ্চয়! 😳
কিন্তু আমার আক্কেল গুড়ুম আম্মুর এরপরের বর্ণনা শুনে- “যেহেতু একটা সিট ফাঁকা ছিল আর আমি ছাড়া আর কেউ দাঁড়ায় ছিল না, তাই আমি ঐ ছেলেটার পাশেই বসলাম”।
(যাক! আলহামদুলিল্লাহ! এর মানে ছেলেটা এই যাত্রায় রক্ষা পেয়েই গেল! কিন্তু আসল ঘটনা কি তাহলে? :voypaisi: )
আমি- “তুমি সকাল বেলা একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে বাসে দেখেই এতো খুশি? তোমার তিন মেয়েকে তো প্রতিদিনই দেখো। কই এতো খুশি তো হতে দেখি না! ঐ ছেলেটা আর মেয়েটা কি তোমার চেনা কেউ ছিল?”
মা- “না!”
আমি-“তাহলে? ওদের দেখে এতো খুশি হওয়ার কি আছে?”
মা- “পুরো ঘটনাটা শেষ করতে তো দিবা নাকি?”
আমি- “আচ্ছা! বলো!”
অতঃপর আম্মু বর্ণনা করেই গেল, “বাসে ওদের পাশে বসেই আসলাম। এসে আমি যে জায়গায় নামলাম ওরাও সেখানে নামলো। বাস থেকে নেমেই ছেলেটা আর মেয়েটা আশেপাশের মানুষগুলার কাছে রিকোয়েস্ট করতে শুরু করলো ‘আমাদের কেউ রাস্তা পার করে দেবেন প্লীজ’! রাস্তার সব মানুষ শুনেও চলে যাচ্ছিল, কেউ আগায় আসলো না। আমি কি করব বুঝতেছিলাম না। তাড়ার মধ্যে ছিলাম! আবার ওদের ফেলেও চলে আসতে পারতেছিলাম না। তাই কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম”।
আমি- “তারপর?”
মা- “যখন দেখলাম কেউই আগাচ্ছিল না, আমিই আগায় গেলাম। আমি নিজেও ভালভাবে রাস্তা পার হইতে পারি না যদিও। তবুও কিছুটা চেষ্টা করে ওদের হাত ধরে ব্যস্ত রাস্তাটা পার করে দিয়ে আসলাম”।
আমি- “ওদের বয়স কেমন ছিল? মানে অনেক বেশি ছোট ছিল? রাস্তা পার হইতে পারতেছিল না যে?”
মা- “আরে বোকা! ওরা অন্ধ ছিল!”
ইশ! আম্মুটা! কত ছোট্ট একটা হেল্প! শুধু রাস্তাটা পার করে দেয়া! এটা করেই আম্মু কি যে খুশি!
তাহলে কমিউনিটি অ্যাকশনের অ্যাকশনিয়ার হওয়া কতটা আনন্দের তাই ভাবি! সত্যি বলতে, অবাক হই! অ্যাকশনিয়ার আপু-ভাইয়াদের যে কত প্যাশন! দেশটাকে আরও সুন্দর করতে, দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জীবনের ন্যূনতম অধিকার রক্ষা করতে কতই না নিরন্তর পরিশ্রম করছে! অন্য কথায় বলতে গেলে, সেবাযুদ্ধ করছে!
আসলে ভাল কাজ করতেই বুঝি এতটা ভাল লাগে! সেই কাজটা যতটা তুচ্ছ, যতটা কম মূল্যেরই হোক না কেন! তাই ভীষণ আশায় স্বপ্ন বুনি- এই ছোট ছোট ভাল কাজগুলো থেকেই বড় কিছু একদিন নিশ্চয়ই হবে।
তাই আসুন না ভাল থাকার মূলমন্ত্রটা খুঁজে নেই। আপনি আর আমিও অন্যদের ভাল রাখতে কিছু করি, আর নিজেরাও ভাল থাকি।
বিজয়ের মাসে, বিজয় দিবসে- দেশের জন্য কিছু করি, দেশের মানুষের জন্য কিছু করি। সেটা যৎসামান্যই হোক না কেন! এবারের বিজয়টা না হয় অন্যের সেবার মাধ্যমেই প্রকাশ করি।
“সেবার মাধ্যমে বিজয়ের প্রকাশ” শ্লোগানে ৪০টি অর্গানাইজেশন কাজ করেছিল ২০০৯-এ,
২০১০-এ কাজ করেছিল ৭০-এরও বেশি প্রতিষ্ঠান!
২০১১= ?? (আসুন তবে সেবাযুদ্ধে নামি শূণ্যস্থানগুলো পূরণে!)
সবাইকে বিজয়ের মাসের, বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
দেখা হবে তবে সেবাযুদ্ধের বিজয়োল্লাসে!
আমারও আন্টির মত একই ফিলিংস হয়, ঠিক সেই প্রথম বারের মতই যত বারই সামান্য কিছু করতে পারি তখন আমার আনন্দ দেখে কে!! মনে হয় কত কিছুই না করে ফেলসি। আর তাই মনে হয় যদি আরও কিছু করতে পারতাম 🙁
আসলেও তো কত কিছুই না করছো! আরও করবে আশা করি! আর দোয়া করি ইনশাল্লাহ আরও কিছু করতে পারবে! :happy:
খুব ভালো একটা লেখা হয়েছে প্রজ্ঞা। আর চমকও ছিল, আন্টির কাহিনীর শেষটা আন্দাজ করতে অনেক সময় লাগছে।
বিজয়ের প্রকাশ সেবার মাধ্যমেই হোক! 🙂
ধন্যবাদ আপু!
বিজয়ের প্রকাশ তবে সেবার মাধ্যমেই হোক!
:love:
আন্টির জন্য একটা বিশাল ধরণের অভিনন্দন! আর আন্টির মেয়েটার জন্য আরেকটা, এতো গুছিয়ে লিখাটা লিখবার জন্য, খুব সত্যি একটা কথা, একটা ভালো কাজ করলে কেন জানি মনে হয় একটা বিশাল কিছু করে ফেলেছি……
দুর্দান্ত কিছু… 8)
আর অ্যাকশনিয়ার মানেই অন্যরকম কেউ……ওদের নিয়ে আর কি বলবো……
দিনে একটা ভালো কাজ, বছরে ৩৬৫ টা!! :clappinghands:
ধন্যবাদ ভাইয়া! :happy:
দিনে একটা ভাল কাজ, বছরে ৩৬৫ টা!! আর প্রত্যেক বাঙ্গালির দিনে একটা ভাল কাজ মানে একদিনেই ১৬কোটি ভাল কাজ!! :happy:
আমার ও আপনার মত সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আম্মুর বকা না শুনলে ভাললাগেনা! 😛
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা :happy:
বিজয়ের শুভেচ্ছা আপনাকেও! :love:
সেবাযুদ্ধ, আসলেই।।
শ্রদ্ধা জানাই এই ছেলেমেয়েগুলোকে যারা কাজগুলো করছে। আসলেই একটা দিন সুন্দর হতে কী ই বা লাগে!
“দেখা হবে তবে সেবাযুদ্ধের বিজয়োল্লাসে!” মনটা ভরে গেল কথাটা শুনে। :clappinghands:
দারুণ লেখা বস!
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা
“দেখা হবে তবে সেবাযুদ্ধের বিজয়োল্লাসে!”…………নিশ্চয়ই।
ভালো কাজে একসাথে আছি সবসময়।
লেখাটা ভালো লেগেছে।
ইশ, এতো ভালো একটা লেখা এতোদিন পরে পড়লাম! নিজেকে রামথাবড়া মারতে ইচ্ছা করতেছে। :slap:
অফটপিক-
বানান! বানান!! 🙁