পরী

মাধবপুর গ্রাম। মোটামুটি শান্ত, নিরিবিলি, বাংলাদেশের আর দশটা গ্রামের মতই এই গ্রামটি। এই গ্রামের এক ছোট্ট মেয়ে থাকে বয়স ১০ কি ১১। মেয়েটার মনে খুব কষ্ট তার দেশে নাকি মুক্তিযুদ্ধ চলছে, আর তার প্রাণের ভাইটি সে নাকি মুক্তিযোদ্ধা, দেশকে স্বাধীন করতে পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়েছে। কিন্তু তাতে পরীর মনে এজন্য অনেক রাগ,কেন ভাইটির যুদ্ধ করতে হবে কেন? এখানে যে পরী একা একা থাকে ভাইটি কী তা বোঝে না? আম্মা সারাদিন এই আসলো, এই তো এসে পড়ল বলে বলে মেয়েকে থামায় কিন্তু ছোট্ট পরী কি তা আর মানে!

দিনটি ছিল অনেক সুন্দর, পরী খেলছিল ওদের উঠানে, এমন সময় হঠাৎ দলবল নিয়ে হাসান বাড়িতে ঢুকে। ” ভাই ” , বলে চিৎকার করে দৌড়ে যায় পরী, আর ভাইটিও যেন ই সময়ের অপেক্ষায়ই ছিল, বোনকে কোলে তুলে নিয়ে পাগলের মত আদর করতে থাকে সে, এতক্ষণে মা ও বের হয়ে এসেছে, ছেলেকে এতদিন পরে দেখে মা ও হাউ মাঊ করে কাঁদতে থাকে সে, হাসান বলে ” মা, ওই মা, থাম ,মা, তুই কি লোক জড় করবি নাকি মা? চুপ কর মা, ঘরে চল ” বলে নিজেও কান্না থামায় হাসান।

হাসানদের আজ অনেক বড় একটা অপারেশন, এক প্লাটুন পাকিস্তানি আর্মি অফিসার এসেছে মাধবপুরে,ওদের উপর হামলা করতে হবে, যাওয়ার পথে বাড়ি পরে তাই এইখানে এসেছে একটু খাওয়া দাওয়া করতে, অনেক দিন ভালো কিছু খায় না ছেলেগুলা  ! যুদ্ধের ময়দানে খাওয়ার চিন্তা করা যায়, ওরা এসেছে ৪ জন, হাসান, মনু, আজিজ আর জাকির, জাকির এই অপারেশনের কমান্ডার।

মা কিছুক্ষণের মাঝেই গরম ভাত, ডাল, মুরিঘন্ট নিয়ে হাজির, হাসানের খুব প্রিয় খাবার এই মুরিঘন্ট,
” ভাই, ও ভাই, এইডা কি?? ” পরী জিজ্ঞাস করে। ” ওইটা কিছু না, রাখ পরী, নাইলে মাইর খাবি”, হাসান বলে।
” ক না ভাই? আমি এইডা নেই? ”

” উফফ, তুই খুব বেশি করস, এইডা হইল গ্রেনেড”

” এইডা দিয়া কি করে ভাই? ”

” এইডা দিয়া ওই পাকিস্তানি মারি আমরা”

” ক্যামনে? কও না ভাই? ”

” তুই কিন্তু বেশি করস পরী , খাইতে দে”
” আরেহ বল না ” জাকির বলে উঠে, ” পরী এই যে এই খানের একটা পিন দেখতেস না, এইটারে টান দিয়ে খুলে ছুইড়া মারলেই গ্রেনেড তা ফুটে আর মানুষগুলা মারা যায়, বুঝছ?”

” হ , ভাইজান বুঝছি, আমিও পাকিস্তানি পাকিস্তানি মারব, ওই দিন ওরা বাবারে খুব মারছে, আমার খুব কষ্ট লাগছে” , বলেই চুপ করে যায় পরী।

হাসানদের খাওয়া প্রায় শেষ এমন সময় করিম মাঝি দৌড়াতে দৌড়াতে আসে, ” হাসান ভাই মিলিটারি, কবির ব্যাটায় মিলিটারিরে জানাইছে ওরা আইয়া পড়ল, পালাও! ” বলেই আবার চলে যায় সে।

হাসানরা মিলিটারিদের আসার আগেই বেড়িয়ে পড়ে, মিলিটারি আসছে, ওরা ৪ জন পুলের দিকে দৌরাচ্ছে, এমন সময় ওরা ডাক শুনল, ” ভাই, ওই ভাই”
হাসান থমকে দাঁড়ায়, “পরী না! পরী বাসাত যা”

” ভাই গ্রেনেডটা ফালায় গেসস, নিয়া যা,”

” লাগব না , তুই যা” হাসান রা পুলের ওই পাড়ে চলে যায়।

পরী ও প্রায় পুলের কাছাকাছি চলে আসছে, এমন সময় হঠাত মিলিটারির দল চলে আসে, হাসান চিৎকার করে ” পরী পুলে উইঠা , তাড়াতাড়ি আয়, পরী তাড়াতাড়ি”

পরী দৌড় দেয় , মিলিটারির দল গুলি শুরু করে , পুলের মাঝদিকে পরীর বুকে গুলি লাগে, হাসান তখন প্রায় ব্যাক আপ নিয়ে নিয়েছে, এমন সময় দেখল তার প্রাণের বোনটি পুলের মাঝে চিৎ হয়ে পড়ে  তার দিকে তাকিয়ে আছে, ” ভাই ” পরীর ছোট্ট চিৎকারটা হাসান শুনতে পায়, “পালা”
হটাৎ করে পরীর পাশে একটা গ্রেনেড বিকট শব্দে ফুটে যায়, দেহটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় তার, সাথে সাথে পুলটাও ভেঙ্গে পড়ে।

ওই দিন হাসানরা মাত্র ৪ জন ছিল অস্ত্রও ছিল না তেমন, মিলিটারির দল ছিল অনেক বড়, ওদের সাথে পেড়ে উঠত না এই ছোট্ট দলটি, কিন্তু পরীর জন্য ওই দিন ওরা বেচে গিয়েছিল, পরীই তার কাছে থাকা গ্রেনেডটির পিন খুলে দেয়, নিজে মরে বাচিয়ে যায় , ভাইকে , তার দেশ মাকে।

( এটা শুধুই একটা গল্প, জানিনা এমন কিছু কোনদিন হয়েছিল কিনা, তবে এমন অনেক পরীর বলীদানই যে আজকের এই বাংলাদেশের সূচনা করেছে তা তো সবারই জানা, এই গল্পটা লিখেছিলাম ৭ম শ্রেণিতে একটা গল্প প্রতিযোগিতার জন্য কিন্তু কখনই জমা দেওয়া হয় নি, আমার লেখা প্রথম গল্প ছিল এটা, কিন্তু এর মূল লেখাটা আরও বড় ছিল, হারিয়ে ফেলেছি, এমন ভাবে আমদের স্বাধীনতার ইতিহাসও হয়ত আমরা হারিয়ে ফেলছি, এগুলোকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না, ভোলা যাবে না এই আত্মত্যাগের ইতিহাস। )

( এই গল্পটা লেখার প্রেরণা পেয়েছিলাম একটা গান থেকে , যার শুরুটা ছিল,
” এক গায়ে এক মেয়ে ছিল পরী বানূ নাম<
ছোট্ট মাটির ঘরে, থাকত আলো করে,
দুষ্টামিতে করত সে যে উথাল পাতাল গ্রাম”  )

অক্ষর সম্পর্কে

স্বপ্নবাজ মানুষ একজন। আশাবাদ আর নিরাশার দোলাচালে আশাকেই শেষ পর্যন্ত সঙ্গী করতে চাই। আর স্বপ্ন দেখি একদিন দেশের জন্য কিছু করার, স্বপ্ন দেখি ছোট্ট করে হলেও কিছু একটা করার যা একটা প্রজন্মের গতিপথ পরিবর্তন করবে এবং অবশ্যই সেটা যেন হয় ইতিবাচক কোন পরিবর্তন। এখন পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। গণনা যন্ত্রের উপর পড়াশোনা করছি ঠিকই কিন্তু যন্ত্র শব্দটাই আমার কাছে বিরক্তিকর। ফেসবুক লিঙ্ক- www.facebook.com/akkhar21
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে অনুপ্রেরণা, পাগলামি, বিবিধ, হাবিজাবি-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

11 Responses to পরী

  1. যারির বলেছেনঃ

    তুই তো দিনদিন একদম লেখক হয়ে যাচ্ছিস, ব্যাপার সুবিধার না। 😛
    গল্পের কনসেপ্ট ভাল, কিন্তু নতুন করে যখন লিখলি তখন আরেকটু বিস্তারিত করতে পারতি।

    তবে একটা টেকনিক্যাল মিস্তেইক আসে, ধরে নিলাম ভাইয়ের বয়স ২০ এর বেশি, তাই বলে সে কি ১১ বছরের বোনকে কোলে তুলে নিবে?:thinking:

  2. গল্প বলে মানতে ইচ্ছে করলো না, আমি জানি, ঠিক এভাবে না হলেও, হাজার পরী বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছে, শুধু যেন এই দেশটা স্বাধীন হয়…শুধু যেন……

  3. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    শেষের দিকটা একটু দুর্বল ছিলো

    তবে অনেক ভালো হয়েছে। সেই সময়ে কী চমৎকার চিন্তা করতে!
    আমার জীবনের প্রথম গল্প লিখি, সিক্সে থাকতে। বিষয় ছিলো মুক্তিযুদ্ধ!

    • অক্ষর বলেছেনঃ

      আমি আসলে অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি, নাহলে লেখাটা আরও বড় হয়ে যেত, তাই হয়ত ভালো হয়নি খুব একটা, আর মাত্র দেখলাম বানান ভুলের ছড়াছড়ি, বড়ই লজ্জিত, তা 🙁 ড়াহুড়ার ফসল

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    ছোটবেলার চিন্তাধারা দেখে মুগ্ধ হলাম!

    এইসব পরীরা যুগে যুগে জন্ম নিক এই মাটির ‘পরে।

  5. প্রজ্ঞা বলেছেনঃ

    ক্লাস সেভেনে লেখা?! শেষে উল্লেখ না করলে এটা বুঝতেই পারতাম না যে এতো কম বয়সে এতো সুন্দর লিখেছো! তোমার লেখার হাত এতোটা ম্যাচিউর ভাইয়া?! নিয়মিত লিখো না কেন?

  6. তোমার আমি বলেছেনঃ

    তোমার ছিন্তা ধারা দেখে আসলেই মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। যেহেতু অনেক ভাল চিন্তা শক্তি তোমার সেই ছোট কাল থেকে তাই এই প্রতিভাকে কাজে লাগাও জীবনে অনেক বর হতে পারবে। তোমার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল……… :happy: :huzur: :angel_not: :babymonkey: :love:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।