একটি শ্বাসরুদ্ধকর ভৌতিক গল্প

ইহা আমার জীবনে ঘটিয়া যাওয়া প্রথম এবং সর্বশেষ সত্য অলৌকিক ঘটনা। ইহার পরে শত চেষ্টা করিয়াও আমি অলৌকিক কোন ঘটনা দেখিতে পাই নাই, সে আমার ব্যর্থতা স্বীকার করিয়াই নিম্নের চটি গল্প খানা নিবেদন করিতেছি।

সে প্রায় অষ্ট বৎসর পূর্বের এক সন্ধ্যায়, প্রাকৃতিক ক্রিয়াদি সুচারুরূপে সম্পন্ন করিয়া ইজারখানা উর্ধ্ধপানে তুলিয়া অস্থির দ্রুতিতে টাট্টিখানা ত্যাগ করিতে উদ্যত হইলাম। কারন, কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই নিজ কৃতকর্মের সুঘ্রাণ ঘন ঘন আমার নাকে বাঁশি বাজাইতেছিল। উহা আমার আশেপাশের সকলের নাকেও বাঁশি বাজাইয়া থাকে বিধায় সকলে পূর্বেই আমার এহেন কর্ম সম্পাদনের আভাস পাইয়া নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলিয়া গিয়াছিল।

যাহা হউক, আমি অত্যন্ত বীরদর্পে টাট্টিখানার কবাটকাষ্ঠ অতিক্রম করিয়া কোনমতে টাট্টিখানায় ব্যবহৃত চটিজোড়া রাখিয়া ছুটিয়া গিয়া বিছানায় উঠিয়া দূরদর্শনে কার্টুনচিত্র দর্শনে মনোযোগী হইলাম। তখন আমার মনে এক অজানা ভয় কাজ করিত, যেন বিছানার অন্ধকার তল হইতে কোন প্রকাণ্ড, রক্তস্নাত হস্ত বাহিয় হইয়া আসিয়া আমার পদ ধরিয়া টানিয়া লইয়া যাইবে। সেই ভয় হইতেই দ্রুত পদ সঞ্চালনপূর্বক বিছানায় অধিষ্ঠ হইবার প্রয়াস।

আমি বেশ মনোযোগের সহিত কার্টুনচিত্র দেখিতেছিলাম। আর, তখনই ঘটিল সেই ভয়ানক, শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা। আমি যেন হঠাৎ লক্ষ করিলাম, আমার এইমাত্র ছাড়িয়া আসা চটিজোড়ার একপাটি যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নড়িয়া উঠিল! যদিও সে নড়ন লোহিত অপসারণের ন্যায় ক্ষীণ ছিল, তথাপি তাহা আমার দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হইয়াছিল। আমি আরও একটু মনোযোগের সহিত তাকাইলাম। কিন্তু, বেশ কিছুক্ষণ সেটি আর কোন প্রকার ক্রিয়া প্রদর্শন করিল না। আমি দৃষ্টিভ্রম ভাবিয়া আবার পুরোনো কার্যে মনোনিবেশ করিলাম। একটুপর যেন সেই পাটিটিই আবার ঈষৎ নড়িয়া উঠিল!! আমি আশ্চর্য হইয়া আবার তাকাইলাম এবং সবিস্ময়ে আবিষ্কার করিলাম, ইহা সত্যই স্বয়ংক্রিয়বাবে নড়িতেছে এবং কোথায় যেন যাইতে উদ্যত হইয়াছে!!! আমি বিস্ময়ে এবং ভয়ে বাকরুদ্ধ হইয়া পড়িলাম কারন, ইতোমধ্যেই তাহা বেশ নড়ন-চড়ন প্রদর্শন করিতে আরম্ভ করিয়াছে। সেই একপাটি চটি যেন কোথাও যাইতে উদ্যত হইয়াছে!!

ঠিক সেই মূহুর্তে আমার মস্তিষ্কে যেন কিঞ্চিত অনুরণন ঘটিল। আমি ভাবিলাম, কেন একটিমাত্র পাটিই নড়িতেছে? অপর পাটিটি নড়িতেছে না কেন? এইরূপ ভাবনা আমাকে কিছুটা সাহস যোগাইলো। আমার ভয় কিছুটা কমিয়া আসিল। তবুও সহসা তাহার কাছে এগুতে সাহস পাইলাম না। কিন্তু, একটুপর চটিখানা যেন স্থির হইল। এইবার কাছে যাইবার মত সাহস অর্জন করিলাম। অতঃপর উহার কাছে গিয়া চটিখানা হাত দিয়া উল্টাইয়া ছুড়িয়া ফেলিতেই দেখি দিশেহারা, নিতান্তই নির্দোষ একখানা আরশোলা আমাকে দেখিয়াই কিনা জানিনা, উর্ধ্ধশ্বাসে ছুটিয়া কোথাও পালাইয়া গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় পুরো ব্যাপারটা বুঝতে আমার কয়েক সেকেণ্ড সময় লেগেছিল বটে, তবে পাঠকেরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে প্রকৃত ঘটনা বুঝিয়া গিয়াছেন?

ইস্ক্রা সম্পর্কে

লেনিনের "ইস্ক্রা" পত্রিকা থেকে আমার কবি বড় মামা আমার নাম রেখেছিলেন ইস্ক্রা (Iskra>Isckra) যার অর্থ আগুনের ফুলকি (Spark)। আমার সঙ্গে পরিচিত হতে গিয়ে সবারই আমার নাম সম্পর্কে একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আমার নামের উৎপত্তি হল এই পত্রিকাঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Iskra ব্যক্তিগত জীবনে আমি আগুনের ফুলকির মত মোটেও উজ্জ্বল হতে পারিনি, তবে উজ্জ্বল হবার চেষ্টা করছি। আগুনের যেমন সবদিকে ছড়িয়ে পড়ার মনোভাব, তেমনি আমারও। তবে ক্ষণজন্মা ফুলকি হতে চাই না, হতে চাই সর্বগমনকারী আগুনের মত উদ্দীপ্ত আর পুড়িয়ে দিতে চাই যত অনিষ্টের মূল। যেকোন ধরণের সৃষ্টিশীল কাজ করতে আমার ভাল লাগে, যেমনঃ সংগীত, লেখালেখি, আঁকাআঁকি, বিতর্ক, কম্পিউটার সম্পর্কিত বিষয়াদি বা অন্য যেকোন কিছু। আর, আমি সকল সৃষ্টিশীল মানুষদের পছন্দ করি ও শ্রদ্ধা করি।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to একটি শ্বাসরুদ্ধকর ভৌতিক গল্প

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    হাহা। আমি তো ভাবলাম অন্য কিছু হবে

    চমৎকার সাধু ভাষা! 😀

  2. অক্ষর বলেছেনঃ

    :voypaisi: 🙄

  3. ইয়াদ বলেছেনঃ

    ভূতের গল্প ভালা পাই!

    এখানে এসে ধোঁকা খেলাম 😳

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।