কী পড়ছি? কেন পড়ছি?

দৃশ্য ১: বিজ্ঞাপন: “অমুক” ইংলিশ কোচিং হোম। মাত্র ৩ মাসেই এইচ,এস,সি, ইংলিশ কোর্স শেষ + এ প্লাসের নিশ্চয়তা।

দৃশ্য ২: [ইংলিশ কোচিং সেন্টার]

শিক্ষক: এই নাও সাজেসন। “দি কাউ” রচনাটা ১০০% “কমন” পড়বে। তাই ভাল করে পড়বা। “সিনের” জন্য চ্যাপ্টার ৫,৭,৮,১২ এইটুকু পড়লেই হবে।

দৃশ্য ৩: [এইচ,এস,সি পরীক্ষা হল]

পরীক্ষার্থী: ধুর! পড়লাম “দি কাউ” আর আসছে “এ ডমেসটিক এনিমাল”। আচ্ছা, “ডমেসটিক” মানে কি? এই শালার “অমুক” ভাই/স্যার একটা ফাউল লোক। কোন সাজেশনই মেলে নাই।

 

দৃশ্য ৪: [এইচ,এস,সি পরীক্ষার ফল প্রকাশ]

সংবাদ: বরাবরের মত এবারও পাসের হার গতবারের তুলনায় বেশী। তবে ছাত্র-ছাত্রীরা ইংরেজী ও গণিতে ভাল করতে পারছে না………

 

থচ, এস,এস,সি এবং এইচ,এস,সি লেভেলের ইংরেজী বইদুটি অত্যন্ত আধুনিক, তথ্যবহুল এবং পদ্ধতিগতভাবে অনেক উন্নত। তারপরেও ইংরেজীর ভয় আমাদের সবার। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে তো কথাই নেই (আমি শহরের ভাল ভাল স্কুল-কলেজের গুটিকয় ছেলেমেয়েদের কথা বলছি না যাদের কাছে ইংরেজী কঠিন লাগে না, বলছি এদেশের ৯০% শিক্ষার্থীর কথা)। এত আধুনিক পদ্ধতির ইংরেজী বই থাকতেও কেন সবার ইংরেজীতেই ভয়?

কারণ, এই পদ্ধতিটি কি, সটা কিভাবে পড়াতে হবে এমনকি সেখান থেকে কিভাবে, কেমন করে প্রশ্ন তৈরি করতে হবে সেটাই যে আমরা এবং আমাদের শিক্ষকেরা জানেন না।

সবচেয়ে দুঃখজনক সত্য হল, আমরা আমাদের ইংরেজী বইটি কেমন তাই বলতে পারব না। কারণ, আমাদের আছে পরম বন্ধু “গাইড বই” এবং “অমুক স্যারের সাজেশন”। যার কারণে আমরা কখনও মূল ইংরেজী বইটি খুলে দেখি না। শুধুমাত্র “ইম্পর্টেন্ট প্যাসেজ” গুলো যেগুলো পরীক্ষায় আসতে পারে সেগুলো পড়ি। আমরা নিজেরাই নিজেদের জানার পরিধি কমিয়ে ফেলছি।

মাত্র ৩ মাসে ইংরেজীর কোর্স শেষ করা সম্ভব, তা দিয়ে পরীক্ষায় পাস করাও সম্ভব কিন্তু তাতে ইংরেজীর “ই” জানাও সম্ভব না।

আমরা যদি মুল ইংরেজী বইটি খুলে দেখি, তাহলে দেখব যে সেখানে অনেক ধরণের কাজ দেওয়া আছে, যেমন, ছবি দেখে শব্দ মেলানো, শূন্যস্খান পূরণ, প্যারাগ্রাফ থেকে প্যারাগ্রাফ বানানো, বাক্স মেলানো ইত্যাদি। এগুলো দেখতে এবং এখন শুনতে “পোলাপাইন্যা” মনে হলেও আসলে এগুলো খেলাচ্ছলে আমাদের শেখানোর চেষ্টা করে যাতে পড়শোনা আমাদরে কাছে চাপ মনে না হয়। শেখানোর এই পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত এবং মজার। কিন্তু, আমরা এগুলো ছুঁয়েও দেখি না। পড়াশোনা তো আর মজার কোন বিষয় নয়, সিরিয়াস বিষয়। তাই চলো যাই “কোচিং” এবং করি “গরু” রচনা মুখস্থ।

মজার কথা হল, এই মূল বইটির সবকিছু যদি কেউ নিজে নিজে পড়ে এবং এর সবকটি এক্সারসাইজ বুঝে করে তাহলে তার কোন প্রাইভেট, কোচিং, সাজেশন, গাইড কিছু দরকার পড়বে না, একথা নিশ্চিভাবে বলা যায়।

অনেকে বলেন, ইংরেজী বইয়ে নাকি তেমন কোন তথ্য নাই। তাদের জন্য একটাই উদাহরণ যথেষ্ট, এস,এস,সি লেভেলের বইতে দুটি বিখ্যাত কবিতা আছে যা আমরা বোঝা তো দূরে থাক কোনদিন পড়েও দেখিনি। কবিতা দুটো হল “The Solitary Reaper” আর “The Sands of Dee”. অথচ, আমরা কেবল পড়েছি, ফিরোজা নামের একটা মেয়ে কেমন করে নিজের দারিদ্র দূর করে সচ্ছল হয় সেই কাহিনী। কারণ, ওটা যে পরীক্ষায় “সিন” আসবে। কবিতার “ভাবের কথা” বোঝার টাইম আছে? তাহলে তো আর “প্লাস” পাব না। আশাকরি এবার ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়েছে।

নীতিকথা: সুতরাং, আমাদের সবার কোচিং সেন্টারে গিয়ে পড়ে “প্লাস” নিশ্চিত করা উচিত। তারপর টাইম পেলে “ভাবের কথা” পড়া উচিত 😛 😛

এখানে শুধুমাত্র ইংরেজী বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। একই কথা অন্য সব বিষয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ইস্ক্রা সম্পর্কে

লেনিনের "ইস্ক্রা" পত্রিকা থেকে আমার কবি বড় মামা আমার নাম রেখেছিলেন ইস্ক্রা (Iskra>Isckra) যার অর্থ আগুনের ফুলকি (Spark)। আমার সঙ্গে পরিচিত হতে গিয়ে সবারই আমার নাম সম্পর্কে একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আমার নামের উৎপত্তি হল এই পত্রিকাঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Iskra ব্যক্তিগত জীবনে আমি আগুনের ফুলকির মত মোটেও উজ্জ্বল হতে পারিনি, তবে উজ্জ্বল হবার চেষ্টা করছি। আগুনের যেমন সবদিকে ছড়িয়ে পড়ার মনোভাব, তেমনি আমারও। তবে ক্ষণজন্মা ফুলকি হতে চাই না, হতে চাই সর্বগমনকারী আগুনের মত উদ্দীপ্ত আর পুড়িয়ে দিতে চাই যত অনিষ্টের মূল। যেকোন ধরণের সৃষ্টিশীল কাজ করতে আমার ভাল লাগে, যেমনঃ সংগীত, লেখালেখি, আঁকাআঁকি, বিতর্ক, কম্পিউটার সম্পর্কিত বিষয়াদি বা অন্য যেকোন কিছু। আর, আমি সকল সৃষ্টিশীল মানুষদের পছন্দ করি ও শ্রদ্ধা করি।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা, পাগলামি, সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।