বন্ধু,
সেই প্রথম দিনের কথা মনে আছে তোর? পাঁচ বছর আগে যেদিন আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছিলো, সেদিনের কথা?
ক্লাসে ঢুকেই নতুন সব মুখ, সবাই অচেনা। কার সাথে বসবো, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না দেখে ক্লাসে ঢুকেও কতক্ষণ বোকার মত দাঁড়িয়ে ছিলাম। স্কুল কলেজে সব সময় শেষ বেঞ্চে বসে এসেছি, ভার্সিটিতেও ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে ছিল না। শেষ বেঞ্চে বসেই ক্লাস শুরু করলাম।
কয়েকদিনের মধ্যেই তোর সাথে পরিচয়। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে শয়তানী করতে করতে পরিচয়, তারপর শুরু ক্যাফেতে আড্ডাবাজি। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার খাওয়া আর কিঞ্চিৎ পড়ালেখার চেয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত ছিলাম বাঁদরামীতে।
কিছুদিনের মধ্যেই হলে সিট পেয়েছিলাম আমরা। বন্ধুত্ব যেন ছড়িয়ে গেলো সারা দিন জুড়ে। সারারাত জেগে কার্ড খেলার পর পরদিন ক্লাসে ঘুমাচ্ছিলাম দেখে স্যার কি ঝাড়ি দিয়েছিল, মনে পড়ে?
অথবা, পলাশীর মোড়ে কিংবা ঠাটারীবাজার স্টারে গভীর রাতে কয়েকজন মিলে খেতে চলে যাওয়া? রাতের বেলা নির্জন পথ ধরে যেতে যেতে চিৎকার দিয়ে কেউ একজন গান ধরতো আর আমরা বাকীরা হেড়ে গলায় সেই গানে গলা মেলাতাম।
মাঝে মাঝে মনটা খুব খারাপ হতো। তুই আর আমি রাস্তার উপর ওভারব্রিজে উঠে চুপচাপ বসে থাকতাম। সেই দিনগুলোর কথা কি তোর মনে আছে? সেই রাতগুলোতে বুঝতে পারতাম, বন্ধুত্ব জিনিসটার উপর কতটা ভরসা করা যায়।
একবার আমার মা-র রক্তের দরকার হয়েছিল। তুই ছুটে এসেছিলি রক্ত দিতে। আগের বার রক্ত দিয়েছিস ৩ মাস হয়েছে মাত্র। সত্যি কথা বললে ডাক্তার তোকে রক্ত দিতে দিবে না। তুই মিথ্যে কথা বললি, যে চার মাস আগে রক্ত দিয়েছিস। মায়ের রক্তের ঋণের কথা কী আমি কখনো ভুলতে পারি?
একবার একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলি। আমরা সবাই তোকে নিয়ে কতইনা ফাজলামী করতাম। কিন্তু, মেয়েটার ফোন নাম্বার থেকে কথা বলার ব্যবস্থা আমাদের মধ্যে থেকেই সবাই করলো। ওই মেয়েটার সাথে এখন তোকে যখন হাসিমুখে হাঁটতে দেখি, কী যে ভালো লাগে। কিছুটা হিংসাও লাগে। ব্যাটা আমরা কেউ প্রেম করতে পারলাম না………আফসোস!
ভার্সিটির ছুটিতে বাসায় গেলে কেমন যেন হাঁসফাঁস লাগতো। মনে হতো বন্ধুরা নেই, তাই শান্তিমতো কথাও বলতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসতো। হলে ফিরেই শান্তি পেতাম আবার।
কেমন করে যেন পাঁচটা বছর চলে গেলো। আজকেই ক্লাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। কখনো ভাবিনি সময়টা এতো দ্রুত চলে যাবে। পরীক্ষাটা শেষ হলেই চাকরীতে ব্যস্ত হয়ে যাব সবাই। কতদিনে অথবা কতমাসে একবার দেখা হবে তাও জানি না। জানিনা, তোর মতো বন্ধু ছাড়া জীবন কতটা পানসে হবে।
আজকে শেষ দিনে সবার চোখ টলটল করছে। কেউ কেউ হয়তো কেঁদে দিবে। তুই কাঁদিস না, আমিও যে কাঁদতে চাই না। তোর সাথের এত ভালো ভালো স্মৃতিগুলো মনে করে, মুখে হাসি ধরে রাখবো আজ।
ভালো থাকিস বন্ধু।
[বুয়েটের CANVAS ‘06 ব্যাচকে লেখাটা উৎসর্গ করা হলো।]
ভালো থাকিস!
ভালো থাকিস!
কীভাবে যে কেটে গেলো ৫ টা বছর!
কীভাবে যেন কেটে যায় সময়গুলো!
বন্ধু, বন্ধুত্ব জয়তু তোদের!
অফটপিক-
‘কি/কি’ এর সমস্যা এখনও গেলো না! আমি দারুণ ব্যর্থ মনে হচ্ছে!
১. “সারারাত জেগে কার্ড খেলার পর পরদিন ক্লাসে ঘুমাচ্ছিলাম দেখে স্যার কি ঝাড়ি দিয়েছিল, মনে পড়ে?”
২. “মায়ের রক্তের ঋণের কথা কী আমি কখনো ভুলতে পারি?”
দুটো জায়গাতেই বানান উল্টো করে লেখা।
‘না’ এর সমস্যাও দেখলাম।
১. “কখনো ভাবিনি সময়টা এতো দ্রুত চলে যাবে।”
‘হাঁসফাঁস’ শব্দের ‘হাস’ শব্দে চন্দ্রবিন্দু হবার কথা না। কারণ এটা হাঁস মানে পাতিহাঁস, রাজহাঁস না। তারপরেও এটা আরেকবার নিশ্চিত হয়ে নিলে ভালো হয়।
সব মিলিয়ে লেখা পড়ে আর আমার ব্যর্থতা দেখে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। 🙁
না রে। তোর ব্যর্থতা নাই। আমি এই লেখাটা খুব আনমনে লিখেছি। কেন যেন খুব মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। তাইতো এত ভুল। লজ্জা পাচ্ছি এত ভুল করে। 🙁
সুন্দর হয়েছে লেখা।
আমাকেও লিখতে হবে একদিন, পড়তে পড়তে ভাবলাম।
তোমাকেও লিখতে হবে একদিন…………অনূভুতিটা খুব অদ্ভূত হবে তখন! 🙁
হাউ মাউ করে কান্না পেল। শেষ দিনটায় ভেতরে ভেতরে কী যে কান্না! কর্মক্ষেত্রে একই জায়গায় আবার ফেরত আসলেও বন্ধুরা সবাই নেই। উফ! ক্যাফেটেরিয়ার আমাদের টেবিলটা খাঁ খাঁ করে, রাস্তার পাশের চায়ের দোকানটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে… নতুন ছেলেপেলে জায়গা নিয়েছে এখন। এটাই নিয়ম, আমরা সবাই জানি, তবু কেমন জানি।
মনটা ভীষণ খারাপ করে দিলি বন্ধু। বুঝতে পারছি, তোর কেমন লাগছে। এই ট্রানসিশান পিরিওড টা খুবই খারাপ। 🙁
সুন্দর লেখা কিন্তু :clappinghands:
ধন্যবাদ।
কিন্তু, আসলেই কেমন যেন অদ্ভূত অনূভুতি! ভীষণ মন খারাপ করার মতো।
কীভাবে যেন কেটে যায় সময়গুলো! 🙁
আসলেই। কীভাবে যেন কেটে যায় সময়গুলো………
মন খারাপ হয়ে গেলো…সময়টা অনেক কষ্টের…
আর এখন, একলা লাগে ভারি………
“আর এখন, একলা লাগে ভারি”
🙁