টিক…টক…টিক…টক…
TEDএর একটা ভিডিও দেখতে বসেছিলাম সেদিন। ষোড়শ জন্মদিনের কিছুক্ষণ আগে ঘড়ির কাঁটার শব্দ তাকে কী মনে করিয়ে দিয়েছিলো, ১৭ বছরের এক “পিচ্চি” মেয়ের মুখে সে গল্প শুনলাম।
আগে অল্পবয়সী কেউ দারুণ কিছু করে ফেলেছে শুনলে বড় বোন দুঃখ করে বলতো, ইস্ আমার চেয়ে ছোট মানুষ এত কিছু করে ফেললো, আর আমি? নিজেরও যে বয়স ভালই হল সেটা মনে পড়ে যখন একই চিন্তা আমাকেও করতে হয়। আমাল নামের মেয়েটার spoken word poetry শুনতে শুনতেও এ কথাই মনে হয়েছিল সেদিন।
কী মনে হয়েছিল আমালের? সে তখন তার ১৬ বছরের অর্জনের, পৃথিবীর বুকে এই বিশাল সময় কাটানোর পর নিজের অর্জনের হিসেব কষতে বসেছিল। ভেবে দেখে, কিছুই সে করে নি এতদিন; এত যে দামি জীবনটা, সেটা কেবল ঘুরে-ফিরে-বেড়িয়ে, ফূর্তি করে, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি আর শপিং, ফেসবুকিং আর ব্রাউজিং করতে করতেই কাটাচ্ছিল। ভাবে, ওর তো ৫টি জিনিস আসার আগে ৫টির মূল্য দেয়ার কথা ছিল – রোগের আগে স্বাস্থ্যের, বার্ধক্যের আগে সুস্থতার, ব্যস্ততার আগে অবসরের, দারিদ্র্যের আগে স্বচ্ছলতার আর সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ – মৃত্যুর আগে জীবনের।
তারপর? তারপর জীবনকে কিছুটা অর্থ দেয়ার জন্য ওরা বন্ধুরা মিলে একটা এতিমখানা দাঁড় করানোর চেষ্টা করলো। আমাল ভেবেছিলো, মৃত্যুর আগে জীবনের মূল্য দিতে জানার অর্থ বুঝি বিশাল কিছু করে ফেলা, এক ধাক্কায় বড় কোন পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলা। কিন্তু আসলেই কি তাই? উঁহু, বড় সেই প্রাপ্তির পথটা একটু যখন চিনতে শিখলো তখনই বুঝতে পারলো সে, পরিবর্তন তো এভাবে আসে না। প্রত্যেকে নিজের যতটুকু সাধ্য আছে, যে কাজটা সে সবচেয়ে ভাল পারে তাই দিয়েই যদি পৃথিবীকে ভালবেসে, পৃথিবীর মানুষের জন্য ছোট ছোট সুন্দর সব কাজ করে যায়, তবেই শান্তি আসবে। কেন, মাদার তেরেসার কথাটা মনে নেই? ঐ যে –
“In this life we cannot do great things. We can only do small things with great love.”
কী? মনে হচ্ছে যে আমি তো কোন কিছুই “অত” ভাল পারি না? খুব ভাল কিংবা অন্যদের তুলনায় ভাল তো পারার দরকার নেই, নিজের সব কাজের মধ্যে তুলনামূলকভাবে যেটা একটু ভাল পারি তাতেই চলবে; হতে পারে সেটা নাচ, গান, আবৃত্তি; অথবা বিতর্ক, লেখালেখি, কথা বলা – আমাল যেমনটা করেছে। সে কথা বলতে ভালবাসে, spoken word poet সে, সাথে চায় শান্তি। তাই মানুষকে শান্তি পাবার উপায় জানিয়ে দিতে চায় সে তার কথা দিয়ে। কত সহজ, তাই না?
ব্লগে এই ধরনের ইতিবাচক কথা বলতে গেলে আমি একটু লজ্জা পাই। নিজেই আমি সাধ্যের তুলনায় কত কম কাজ করি, আবার অন্যদের বলতে যাই কোন্ সুখে? – এমনটা মনে হয়। তারপর আবার ভাবি, আমি তো কেবল সবার জন্য লিখছি না, লিখছি নিজের জন্যও। নিজের ভাবনা কিংবা জানার কথাগুলো ছড়িয়ে দিয়েও যদি নিজেকে জাগানো যায়, ক্ষতি কী?
আমালের কথাগুলো শুনছিলাম যখন, তখন মনে পড়ে গেলো CVTVর কথা। ওকে চেনেন তো? Celebrating Victory Through Volunteerism: সেবার মাধ্যমে বিজয়ের প্রকাশ। এখন তো বিজয়ের মাস চলছে, আমাদের বিজয়ের ৪০ বছর পুরেছে, গত ২ বছরের মত এবারেও কমিউনিটি অ্যাকশন, ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভ আর BYEI আয়োজন করেছে এই উদ্যোগের, যার সাথে গতবার একাত্মতা জানিয়েছে ৭২টি সংগঠন, আর তার আগের বার ৪২টি – যেখানে রিকশাওয়ালা, চায়ের দোকানদার থেকে শুরু করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল্স, বাঁধন -এরাও ছিল। মূল কথা একটাই, বিজয়ের মাসে আমরা (নিজ উদ্যোগে কিংবা কোন সংগঠনের সাথে) দেশের জন্য একটি হলেও ভাল কাজ করবো, এ মাসে যদি সম্ভব না হয় তবে আগামী বছরের জন্য প্রতিজ্ঞা করবো, সেটাও এ মাসেই। অফলাইনে যদি না পারি তবে অনলাইনে করবো, তবু করবোই। কারণ – আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনায় বিশ্বাসী। ১৯৭১ সালে তারা তাই করেছিলেন যা সে সময় দেশের জন্য সবচেয়ে দরকারি ছিল, আজ আমরাও তাই করবো দেশ যা আমাদের কাছে চাইছে। “সময়ের প্রয়োজনে” লড়ার কথা আমাদের – মনে আছে তো?
ওহ্ আর আমালের মুখে শোনা তার মতই ছোট্ট আর দারুণ গল্পটা শেয়ার করতে ভুলে যাচ্ছিলাম আরেকটু হলেই:
এক বনে ভয়ানক আগুন লেগেছে। বনের পশুপাখিরা সব বেরিয়ে এসে পাশেই লেকের ধারে দাঁড়িয়ে মন খারাপ করে দেখছে সেটা। এমন সময় ছোট্ট যে হামিং বার্ডটা, ও উড়ে এসে লেক থেকে এক ফোঁটা পানি তুলে নিয়ে আগুনের ওপর ফেললো। আবার পানি নিতে ফিরে এলে অবাক সবাই জানতে চাইলো, এত ছোট্ট তুমি, তুমি কি আর আগুন নেভাতে পারবে? “ছোট্ট” হামিং উত্তর দিলো, আমার একলার পক্ষে যতটুকু সম্ভব, সেটুকু তো আমি করছি!
মহাত্মা গান্ধীও কিন্তু একই কথা বলে গেছেন –
“Be the change you want to see in the world.”
সাথে আছি!
আমার খুবই প্রিয় একটা ইভেন্ট
🙂
আমিও সাথে আছি। এই দেশের সবকিছু হয়তো পালটে ফেলতে পারবো না, কিন্তু, সুন্দর একটা বাংলাদেশ গড়ার জন্য কিছু তো করতে পারি।
তাই বিজয়ের প্রকাশ হবে সেবার মাধ্যমে।
সেটাই ভাইয়া।
মাইকেল মুরের একটা ফিল্ম দেখলাম সেদিন, একটা কথা ছিল, “I refuse to live in a country like this. & I am not leaving.”
এত ভাল লেগেছিল! আমরা সবাই যদি এভাবে ভাবতাম। পালিয়ে না গিয়ে বদলে দিতে চাইতাম।
দুর্দান্ত :clappinghands:
আমিও সাথে আছি 🙂
😀 😀
অসাধারণ সামিরা।
খুব ইতিবাচক লেখাটা।
ধন্যবাদ আপু! :*
লিখতে বসে আমার নিজেরও শান্তি শান্তি লাগতেছিল। 😀
আমি এত সুন্দর লিখতে পারি না কেন?! 🙁
আমিও সাথে আছি। :love:
তুমি অনেক ভাল লিখো প্রজ্ঞা! মাইর দিব। 🙂
পড়তে পড়তে কেমন যেন অদ্ভুত ভালো লাগলো। প্রতিটা কথায় “আশা” খুঁজে পাই। স্যালুট সামিরা।
থ্যাঙ্কু আপুমনি। 😀
লেখার জন্য ধন্যবাদ, বরাবরের মত ভালো হয়েছে… এই থিমের অন্য আরেকটা লেখায় ‘সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা’-র উদাহরণ ছিলো জেলীফিশের জীবন নিয়ে। ঢেউ-এর তোড়ে তীরে ভেসে এসেছে অনেক জেলীমাছ। একজন লোক একটা একটা করে মাছ নিচ্ছে আর পানিতে ছুড়ে দিচ্ছে। কেউ একজন বল্লো, ‘হাজারো মাছ, কয়টাকেই বা বাঁচাবে?’। কাজ না থামানো লোকটা উত্তর দিলো, ‘আমি এইমাত্র একটা মাছের জীবন বাঁচালাম, এই যে আরেকটা জীবন…’।
হ্যাঁ এই গল্পটাও পড়েছিলাম, অনেক প্রিয় গল্প! 🙂
পড়ার জন্যও ধন্যবাদ। 🙂