ট্রানজিট কী?:
ট্রানজিট হলো এক দেশের মধ্যে দিয়ে অন্য দেশে পরিবহণ ব্যবস্থা।
সেটা স্থলপথে হতে পারে। যেমন: ইন্টারন্যাশনাল ই-রোড নেটওয়ার্ক।
জলপথে হতে পারে। যেমন: নীলনদ
এমনকি রেলপথেও হতে পারে। যেমন: ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়ে
বাংলাদেশ কী দিচ্ছে:
ট্রানজিটের প্রথম কথাই হলো, ট্রানজিট হলো এক দেশ হতে অপর দেশের উপর দিয়ে তৃতীয় কোন দেশে পরিবহণ ব্যবস্থা।
কিন্তু, ভারত বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের অন্য অংশে পণ্য পরিবহণ করছে। একে ট্রানজিট বলা যায় না।
এর নাম করিডোর।
এছাড়া বাংলাদেশ দিচ্ছে ট্রান্সশিপমেন্ট, যা একটি পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থায় মধ্যবর্তী গন্তব্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া।
কেন করিডোর:
১. বাংলাদেশের পূর্ব দিকে ভারতের ৭টি রাজ্য (সেভেন সিস্টারস) রয়েছে, যাদের সাথে ভারতের অন্য অংশের যোগাযোগ শুধুমাত্র বাংলাদেশের উত্তরের সরু শিলিগুড়ি করিডোর এর মধ্যে দিয়ে। এর ফলে অন্যান্য রাজ্য থেকে সেভেন সিস্টারসে যাওয়া এবং পণ্য পরিবহণ অনেক সময় এবং ব্যয়সাপেক্ষ ব্যপার। বাংলাদেশের উপর দিয়ে গেলে এই সময় এবং দূরত্ব অনেক কমে আসে।
২. এশিয়ার পরাশক্তি চীনের সাথে সীমান্ত থাকায়, এই সীমান্ত যথেষ্ঠ শক্তিশালী রাখা আবশ্যক ভারতের জন্য। কিন্তু, শিলিগুড়ি করিডোরের মধ্যে দিয়ে সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করা অত্যন্ত কঠিন।
৩. ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে স্বাধীনতাকামী গেরিলা গ্রুপ রয়েছে। যেমন: উলফা । যেকোন মূল্যে এদের দমন করার নীতিতে স্থির ভারত সরকারের জরুরী যেকোন সময়ে দ্রুতপথে ওই অংশে সেনাবাহিনীর রসদ পৌছানোর জন্য বাংলাদেশের করিডোর অত্যন্ত জরুরী।
করিডোর থেকে বাংলাদেশের লাভ:
ট্রানজিটের সুফল নিয়ে এডিবির সমীক্ষা অনুযায়ী, ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট চালুর প্রথম বছরেই আয় হবে না। শুরুতে প্রতিবছর ফি থেকে আয় হবে পাঁচ কোটি ডলার বা ৩৫০ কোটি টাকা। পাঁচ বছরের মধ্যে যদি পণ্য পরিবহনের উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়, তাহলে পরবর্তী বছরগুলোতে আয় হবে ৫০ কোটি ডলার বা তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদে এই আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১০০ কোটি ডলার বা প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। (সূত্র-১)
আমরা কী পাচ্ছি:
ট্রানজিটের বিনিময়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা মাশুল বা ট্যাক্স দিতে প্রস্তুত বলে জানান ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা। (সূত্র-২)
কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী জানান, “ট্রানজিট সুবিধা দিলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহণে ভারতের যে পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে, তা থেকে বাংলাদেশের ভাগ চাওয়া ঠিক হবে না।” (সূত্র-৩)
পরীক্ষামূলক ট্রানজিট শুরু:
ট্রানজিট সম্পর্কিত ভারত বাংলাদেশ চুক্তি হবার আগেই পরীক্ষামূলক নৌ-ট্রানজিট শুরু করে ভারত। (সূত্র-৪)
নিয়মিত ট্রানজিট:
এর পরপরই ১৯শে অক্টোবর বিনা মাশুলে শুরু হয় নিয়মিত ট্রানজিট। (সূত্র-৫)
ট্রানজিটের কথিত সুফল:
বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ট্রানজিট দেয়া হচ্ছে ভারতের ১৩৬ চাকা বিশিষ্ট ৩৫০ টনের ট্রেইলার। যা বাংলাদেশের রাস্তাগুলোর জন্য কোনভাবেই উপযুক্ত নয়। (সূত্র-৬)
ভারতের পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ পরিবহনের জন্য বিদ্যমান সেতু ও কালভার্টের পাশে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়। এর কারণে বর্ষার শুরুতেই আখাউড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বিভিন্ন স্থানের কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। (সূত্র-৭)
তিতাস নদীর পানি প্রবাহের জন্য নিচে কয়েকটি পাইপ দিয়ে উপরে সিমেন্টের বস্তা আর মাটি ফেলে তৈরী করা হয় বিকল্প রাস্তা! ময়লা এবং মাটিতে ওই পাইপও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিতাস এখন একটি মরা নদীর নাম।
ট্রানজিটের পথে যে সেতু বা কালভার্টগুলো পড়ে, তার ধারণক্ষমতা মাত্র ১৫ টন হওয়ায় অনেক খালেরও তিতাস নদীর মতই অবস্থা। (সূত্র-৮)
সরকারের কাছে প্রশ্ন:
১. বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের সাথে ভারতের মধ্যে দিয়ে মায়ানমার, নেপাল, ভুটান, চীন এর ট্রানজিট সম্ভব। এমনকি নেপাল এবং ভুটান ল্যান্ডলক কান্ট্রি হওয়ায় বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
যেখানে ভারত এই দেশগুলোর সাথে আমাদের ট্রানজিট হতে দিচ্ছে না, বাংলাদেশ কেন ভারতকে ট্রানজিটের নামে করিডোর দিচ্ছে?
২. কেন ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিটের মাশুল নেয়া হচ্ছে না?
৩. ভারী যানবাহন নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট চুক্তির কী শর্ত আছে?
৪. ভারী যানবাহন নেয়ার উপযুক্ত পরিবহণ কাঠামো বাংলাদেশে না থাকলেও কেন এই শর্ত(যদি থেকে থাকে) অনুমোদন করা হল? আর যদি শর্ত না থাকে, তাহলে কেন চলতে দেয়া হচ্ছে?
৫. ট্রানজিটের ফলে যে নদী বা খালগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে, এটা ট্রানজিটের কোন শর্ত!? এ নদীগুলোকে বাঁচাতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
সরকার কি আমাদের এ প্রশ্নগুলোর জবাব দেবেন?
ট্রানজিটের নামে করিডোর দেয়ার চুক্তি কী নতুন করে পর্যালোচনা করে ভুলগুলো ঠিক করবেন?
যদি সম্ভব হয়, অন্য দেশগুলোর সাথে ট্রানজিটের সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করবেন?
নাকি-
ট্রানজিটের মাধ্যমে আমাদের নদীগুলোকে যেমন চোখের সামনে মরতে দেখছি, পুরো দেশটাকেও ক্ষতিগ্রস্থ হতে দেখব?
আমরা জবাবের অপেক্ষায় আছি………
লেখাটা খুব ভালো হয়েছে। অনেক সহজ, ছবির জন্য আরো সহজ লাগছে।
ধন্যবাদ………
চমৎকার গুছিয়ে লেখা। ধন্যবাদ বন্ধু।
কী যে দুঃখ। সূত্র ৩ এর জন্য একটা ব্যাপক তাচ্ছিল্য হাসির ইমো হবে। পাগলেও নিজের ভালো বোঝে… আসলে তেনারা হয়তো শুধু নিজের ই ভালো বোঝেন, দেশের না। পারে কী করে এরা।
“আসলে তেনারা হয়তো শুধু নিজের ই ভালো বোঝেন, দেশের না। পারে কী করে এরা।”
কীভাবে যে পারে বুঝি না। 🙁
এই ব্যাপার নিয়ে কিচ্ছু জানতাম না। এত চমৎকার করে জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই লেখা ছড়িয়ে দেয়া আমাদের সবার দায়িত্ব
ধন্যবাদ।
এই প্রশ্নগুলোর জবাব জনগণকে জানানো সরকারের আরো বড় দায়িত্ব।
চমৎকারভাবে তথ্য দিয়ে সাজানো সহজ একটি পোস্ট!
সবার জানা দরকার কেন, কীভাবে এই ট্রানজিটের নাম করে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
ধন্যবাদ।
সবার জানার চেয়ে বেশি দরকার যারা জানলে এবং বুঝলে এই ক্ষতি থেকে দেশটাকে রক্ষা করতে পারবে। কবে যে সরকারের হুশ হবে……… 🙁
দারুণ!
ধন্যবাদ!
কী আর কহিব ভাই 🙁 জাতিগতভাবে নিজেদের মেরুদণ্ডহীন মনে হচ্ছে। ব্যাকবোনলেস। 🙁 🙁 🙁
🙁
ট্র্যানজিট নিয়ে এতো সহজ করে লেখা এর আগে পড়িনি।
অনেক ধন্যবাদ বিষয়টা সহজ করে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।
ধন্যবাদ। চেষ্টা করেছি সহজ করে লিখতে।
যে বিষয়টার এত সহজে খারাপ দিকগুলো বুঝে ফেলা যায়, যারা বুঝলে কাজ হবে তারা যে কেন বোঝে না! 🙁