দরকষাকষির ইতিবৃত্ত-১: প্রস্তুতি ও পদ্ধতি

ইংরেজি “নেগোশিয়েশান” (negotiation) শব্দটার বাংলা বলা যায় “দর কষাকষি”, আরেকটু নিচে নামলে–“মুলামুলি”। নেগোশিয়েটর কে বলা যায় দর কষাকষি বা মুলামুলি বিশেষজ্ঞ। তবে একটু উদাহরণ দিলে আর এত শাব্দিক ঝামেলায় যেতে হয় না, ধরুন, কাওরানবাজারের মাছবাজারের নিয়মিত ক্রেতা, পাকা বাজাড়ু এক ভদ্রলোক, অথবা কোরবানির হাটের অভিজ্ঞ গরুর ব্যাপারি আর ক্রেতা একজন ভাল নেগোশিয়েটর। অর্থাৎ কিনা, তারা জিনিস চেনেন, কোনটা কোন দরে কিনলে বাজারের সবচেয়ে ভাল জিনিসটা সম্ভাব্য সর্বনিম্ন মূল্যে পাওয়া যাবে অথচ “মান” বা “কোয়ালিটি” হবে সর্বোত্তম, আর সেটা দেখে বাড়ির লোকজন দিলখুশ হয়ে যাবে, আর পাড়ার লোকজন বলবে, হ্যাঁ, সাহেব সেরকম “মুলামুলি” করতে পারেন বটে! হিংসুটেরা, আর অবশ্যই, আপনার কাছে লাভের অংশ ছেড়ে দেয়া দোকানদার বলবে, লোকটা মহা ছ্যাঁচড়া, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার বাড়ির লোক খুশি, আপনি খুশি, কি যায়-আসে?

এই দরকষাকষির বিষয়টা শুধু মাছের বা গরুর বাজারেই সীমাবদ্ধ থাকলে, এটা নিয়ে সম্ভবত লেখার দরকার হতো না। কিন্তু “নেগোশিয়েশান” বা মুলামুলি ব্যাপারটা মাছবাজার ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক কূটনীতি আর বাণিজ্যেও। এতটাই যে দক্ষ একজন নেগোশিয়েটর (মুলাবাজ বলা যায় কি?) গড়ে তোলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, অভিজ্ঞতার ব্যাপার তো আছেই। কারণ? সহজ একটা উদাহরণ দেয়া যায়, বাংলাদেশ কেন আন্তার্জাতিক চুক্তিগুলোতে সবসময় “ব্যাকফুট”-এ থাকে? কেন দেখা যায় প্রায় সবধরণের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক চুক্তিতেই আমাদের লোকসান হয়? চুক্তি সম্পাদন হয়ে যায়, কাজ শেষ হয়ে যায়, কিন্তু যখনই কোন ঝামেলা দেখা দেয়, তখন ফাঁস হয়,, মূল চুক্তির প্রায় প্রতিটি শর্তই আমাদের প্রতিকূলে করা। তখন নানারকম অজুহাতও বের হয়ে যায়, খেয়াল করা হয়নি, জানা ছিল না, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী রাষ্ট্র ইত্যাদি। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি বলুন, ট্রানজিট চুক্তি বলুন, তেল-গ্যাস রপ্তানি চুক্তি বলুন, আর হালের ব্যর্থ তিস্তা চুক্তি বলুন, প্রতিটিতেই আমাদের উপরমহলের সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অভাবএবং দরকষাকষিতে অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার অভাবকেও বড় একটা জায়গা দিতেই হবে।

তাহলে, এই দরকষাকষির জন্য কি করতে হবে? প্রথম কথাই হলো, দীর্ঘ এবং শ্রমসাপেক্ষ প্রস্তুতি, এর কোন বিকল্প নেই। এটা মনে রাখা জরুরী, যে বিশেষ করে যখন আন্তর্জাতিক কোন চুক্তি হয়, এবং সেটা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, সেটার অর্থমূল্য যেমন অকল্পনীয় হতে পারে, এর রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবও সুদূরপ্রসারী হয়, কাজেই আপনার প্রতিপক্ষ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি এবং তাদের সবচেয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়েই আসবে, যাদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ভারত এর একটা ভাল উদাহরণ, বাংলাদেশের সাথে যে কোন ধরণের চুক্তির দরকষাকষিতে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সবচয়ে ঝানু ব্যক্তিদেরই পাঠায়। উল্টোদিকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে, ভারতের সচীব পর্যায়ের ধুরন্ধর, অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত প্রতিপক্ষের ভ্রুকুন্ঞ্চন আর কৌশলের কাছে মার খেয়ে তাদের শর্ত মেনে নিয়েছেন। ভারতীয়দের “টিম ওয়ার্ক” বা দলীয় সমঝোতা অসাধারণ,কে আগে কথা বলবে, কে পরে, কার কথার পিঠে কে কি যোগ করবে, যে কোন অভিজ্ঞ নেগোশিয়েশন টিমের মতই তাদের সেটা আগেই ড্রেস রিহার্সাল করা থাকে, এবং বার্সেলোনার পাসিং ফুটবলের সামনে মোহামেডানের যে অবস্থা হতে পারে, বাংলাদেশের অবস্থা মোটামুটি তাই হয়। ভারতীয়দের দোষ দিয়ে লাভ নেই, বাজারের সেরা মাছটা কম দামে কিনে যখন আপনি বাড়ি ফেরেন, আপনার স্ত্রী নিশ্চয়ই অখুশি হন না।

এই দরকষাকষি বা নেগোশিয়েশান কে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। আমরা যেটা আলোচনা দেখি, সেটা আসলে অনেক পরের ব্যাপার। প্রস্তুতি, তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ, আলোচনা, বিডিং বা প্রস্তাব উত্থাপন, তর্ক, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, র্যাটিফিকেশন বা অনুমোদন এবং সবশেষে চুক্তি স্বাক্ষর। এর মাঝে যে কোন পর্যায়ে আলোচনা ভেঙেও যেতে পারে, সেটা অন্য ব্যাপার। প্রস্তুতি পর্ব, আগেই বলেছি, শ্রমসাধ্য, সময়সাপেক্ষ, এবং অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল হতে পারে। প্রথমেই নিজেদের এজেন্ডা এবং চাহিদাগুলো পরিষ্কারভাবে জেনে নিতে হয়, মোটামুটি ৩টি ভাগে ভাগ করে নিতে হয়– যে দাবীগুলো অবশ্যই আদায় করতে হবে, যেগুলো আদায় করতে পারলে ভাল হয়, এবং সবশেষে যেগুলো আদায় না হলেও খুব ক্ষতি নেই কিন্তু হলে একেবারে পোয়াবারো। এজেন্ডা ঠিক করে নিয়ে পরবর্তী কাজ হলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞদের নেগোশিয়েশান টিমে নিয়োগ দেয়া, যে জায়গায় আমরা বরাবরই পিছিয়ে থাকি। এখানে বেশিরভাগ দলেই জায়গা পাওয়া যায় লবিংয়ের ভিত্তিতে, এই সুযোগে বিদেশ ভ্রমণ হয়ে গেলে তো কথাই নেই। বিশেষজ্ঞদের সাথে একজন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত নেগোশিয়েটর থাকবেন পুরো ব্যাপারটা সমন্বয় করার জন্য, যিনি, যদি চুক্তির ইস্যুতেও একজন বিশেষজ্ঞ হন তবে দলনেতার ভূমিকাও পালন করতে পারেন। এ পর্যায়ে শুরু হয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের খুঁটিনাটি পর্যালোচনা, নিজেদের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা, সম্ভাব্য সমাধান, এবং আলোচনা কোন কোন দিকে মোড় নিতে পারে এবং সেক্ষেত্রে করণীয়। একইসাথে নিজেদের “রেজিস্ট্যান্স পয়েন্ট” কতটুকু, অর্থাৎ কতটা ছাড় দেয়া সম্ভব এবং কোন পর্যায়ে আলোচনা ভেঙে উঠে যাওয়াই মঙ্গলজনক, সেটাও নির্ধারণ করতে হয়। আলোচনা ভেঙে গেলে সম্ভাব্য বিকল্পগুলো কি হতে পারে, অথবা বিকল্প আরো কোন প্রস্তাব দেয়া হবে কিনা, সেটাও পূর্বনির্ধারিত থাকা জরুরী। এখানে মনে রাখা ভাল যে যার হাতে সম্ভাব্য বিকল্প যত বেশি, আলোচনার টেবিলে তার অবস্থান ততটাই শক্তিশালী, এবং আলোচনার শুরুতেই নিজেদের এই বিকল্পের ব্যাপারটা আভাসে-ইঙ্গিতে প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়াও কৌশল হিসেবে মন্দ নয়।

শুধু নিজেদের প্রস্তুতি নেয়াটা যথেষ্ট না, প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ, তাদের সম্ভাব্য দরকষাকষির কৌশল, তাদের “রেজিস্ট্যান্স পয়েন্ট”, সম্ভাব্য সামর্থ্য ও প্রস্তাব, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতিপক্ষের হয়ে কারা দরকষাকষি তে আসছেন সেসব ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রোফাইল ও আলোচনার কৌশল নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা খুবই গুরুত্ববহ। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, আমাদের আমলা বাহিনী নিজেদের এজেন্ডা নিয়েই ঠিকমত রিসার্চ বা গবেষণা করেন না, প্রতিপক্ষ তো দূরে থাক, যার ১০০ ভাগ সুযোগ নিয়ে যায় অন্যপক্ষ। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, নেগোশিয়েশানের উপর ক্লাস নিতে এসেও সিনিয়র আমলারা খেই হারিয়ে তো তো করেন, কারণ যেটা পড়াচ্ছেন সেটা একবার তারা দেখে আসারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ব্যাপারটা নিজেদের দলের আত্মবিশ্বাসকে তলানিতে নামিয়ে দেয়, আর প্রতিপক্ষ নিশ্চিত হয়ে যায় আমাদের অপ্রস্তুত অবস্থা ও নিজেদের অবস্থানের ব্যাপারে, ফলে সম্ভব-অসম্ভব সবরকম শর্ত চাপিয়ে দেয় আমাদের উপর এবং যেহেতু আমলা বাহিনীর এসব ব্যাপারে কোন ধারণা আর মাথাব্যথা কোনটাই নেই, তারা কোনমতে চুক্তিটা সই করে শপিংয়ে চলে যান, ফলাফল টের পাওয়া যায় যখন অক্সিডেন্টাল কোন গ্যাসকূপ জ্বালিয়ে দেয় বা নাইকোর চুক্তিতে আমরা ধরা খেয়ে যাই।

প্রতিপক্ষের অবস্থান ও শক্তিমত্তা বোঝার সাথে সাথেই ঠিক করে নিতে হয়, ঠিক কোন পদ্ধতি বা “অ্যাপ্রোচ” অনুসরণ করা হবে আলোচনার টেবিলে। সাধারণভাবে ২ ধরণের পদ্ধতি আছে, প্রতিপক্ষ যদি দুর্বল হয়, এবং নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী হয়, এবং সুসম্পর্কের ব্যাপারে খুব বেশি মাথাব্যথা না থাকে, সেখানে “কাড়াকাড়ি” বা “ডিস্ট্রিবিউটিভ” অ্যাপ্রোচ। এটাকে তুলনা করা যায় একটা “পাই” বা কেক এর সাথে, যার আকার নির্দিষ্ট, একজন যদি খানিকটা বেশি নেয়, তো আরেকজনের ভাগে কম পড়বে,কাজেই ছলে-বলে-কৌশলে যতটা পারো বেশি আদায় করে নাও। বাংলাদেশের সাথে আলোচনার টেবিলে বসলে ভারত বা আমেরিকার মত রাষ্ট্রগুলো এই কাজই করে থাকে। এক্ষেত্রে, শক্তিশালী কূটনীতি থাকলে (যেটা আমাদের নেই), বাংলাদেশ যে অ্যাপ্রোচটা নিতে পারে, সেটাকে বলা হয় “সহযোগী” বা “ইন্টিগ্রেটিভ” অ্যাপ্রোচ। প্রতিপক্ষ সমশক্তির হলে, বা চুক্তির বিষয়বস্তু দু’পক্ষের কাছের সমান গুরুত্বপূর্ণ হলে, অথবা সু-সম্পর্কের বিষয়টা গুরুত্ব পেলে এই পদ্ধতি নেয়া যায়। ধরে নেয়া যাক একটা কেক আছে, দু’পক্ষ মিলে ঠিক করলো কোন বিকল্প উপায়ে যদি কেক বা “পাই”টার আকার বড় করা যায়, সেখানে দু’জনই খানিকটা বেশি পেতে পারে। এখানে সমস্যাগুলো নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হয়, এবং বলের চেয়ে বন্ধুত্ব গুরুত্ব পায়। এই পদ্ধতিতে “কস্ট ট্রান্সপারেন্সি” কথাটা ব্যবসায়িক মহলে বেশ গুরুত্ব পায়। উদাহরণ দিই। ধরুন কোরবানির হাটে গরু ব্যবসায়ী তার খরিদ্দারকে জানাবে গরুটা পালতে তার কত খরচ হয়েছে, কিভাবে হয়েছে, গাবতলীর হাটে আনতে কত চাঁদা দিতে হয়েছে, খরিদ্দারও জানাবে এটা বাড়ি নিতে কত খরচ আর ঝামেলা হবে, এমন সময় গরু বিক্রেতা প্রস্তাব করতে পারে, নিখরচায় তার লোক গরুটাকে খরিদ্দারের বাড়ি পৌঁছে দেবে, খরিদ্দার যেন তার বলা দামটা একটু বিবেচনা করেন। মানে দু’পক্ষ একেবারে ভাই-ভাই। বাংলাদেশের সাথে ভূটান বা মালদ্বীপের চুক্তিগুলো সাধারণত এই ধরণের হয়ে থাকে। এ ধরণের দ্বি-পাক্ষিক ছাড় বা “কনসেশন” কাড়াকাড়ি অ্যাপ্রোচেও হয়, তবে সেখানে শক্তিশালী পক্ষ সামান্য ছাড় দিয়েই এমন ভাব করবে যেন কৃতার্থ করে ফেললো,বদলে নিজেরা বিশাল কোন “কনসেশান” আদায় করে নেবে। উদাহরণ? ভারত আমাদের কিছু পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিল, যেগুলো আসলে তাদের নিজস্ব পণ্যের বাজারে তেমন ক্ষতি করবে না, বদলে হয়তো আদায় করে নিল ট্রানজিট ফি এর উপর বড় ধরণের ছাড়, আমরাও ভাবলাম, যাক বাবা, বিশাল জিতলুম, যদি ছাড় না দিত, কি করতুম?

আলোচনা কিভাবে এগোবে সেটা ঠিক করার পর সত্যিকারের আলোচনায় বসার পালা। তবে তার আগেই নিজেদের মাঝে মহড়া দিয়ে নেয়া জরুরী। এখানে অভিজ্ঞ নেগোশিয়েটররা আগেই দু’টো দল করে নেন, একটা দল “মার্ডারার” এর ভূমিকা পালন করে, যাদের কাজ হলো নেগোশিয়েশান টিম-এর সম্ভাব্য সকল খুঁত ধরে তাদের খুন করে ফেলা, যাতে সত্যিকারের আলোচনায় তারা খুন হয়ে না যায়। কোন কোন ইস্যুগুলোতে ছাড় দেয়া যায়, কোথায় দেয়া যায় না, এর সাথেই ঠিক করে ফেলতে হয় “প্রটোকল”, অর্থাৎ কোথায় আলোচনা হবে, কতক্ষণ ধরে চলবে, বসার আয়োজন কেমন হবে, কারা অংশ নেবে, কারা কথা বলবে,, কারা সাহায্য করবে, কারা আলোচনার অগ্রগতি লিপিবদ্ধ করবে ইত্যাদি প্রতিটি খুঁটিনাটি।আবারো মনে করিয়ে দেয়া যায়, টিমওয়ার্ক এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পারস্পরিক সমঝোতা থাকলে প্রতিকূল পরিবেশকেও নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসা যায়। একইসাথে প্রস্তুত থাকা ভাল সম্ভাব্য যেকোন রকম অপ্রত্যাশিত আক্রমণের জন্য, এবং এধরণের পরিস্থিতি হলে “টাইম আউট” বা সময় নিয়ে ধীরে-সুস্থে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই ভাল। প্রতিপক্ষ সবসময়ই চাইবে এ ধরণের আচমকা আক্রমণে সুবিধা বাগিয়ে নিতে, এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে তাদের সাথে একমত হয়ে গেলে নিজের পক্ষের বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যাবার কথা। এখানেও জানতে হবে ঠিক কতটুকু ছাড় দেয়া যায়, নিজেদের সীমাটুকু জানা থাকলে, যদি সেই লক্ষ্য অর্জিত না হয়, এমনকি আলোচনা ভেস্তে গেলেও সেক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার বদলে “দুঃখিত” বলে উঠে আসাই দক্ষ নেগোশিয়েটর এর কাজ।

সবশেষে, দু’পক্ষের ছাড়-আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত শর্তগুলো ঠিক হয়ে গেলে, চুক্তি স্বাক্ষরের আগে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সেটা রাটিফাই বা অনুমোদন করবেন, এরপরই চূড়ান্ত হবে চুক্তি। তবে এখানেও মনে রাখা প্রয়োজন, যদিও নেগোশিয়েটরের হাতেই প্রায় সব ক্ষমতা থাকে আলোচনার, কিন্তু সব শর্ত চূড়ান্ত হবার মুহূর্তেও প্রতিপক্ষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত দিয়ে বসতে পারে (পরবর্তী পর্বে আলোচ্য), কাজেই যিনি রাটিফাই বা অনুমোদন করবেন, তাঁকেও বিদেশের দর্শনীয় জায়গা দেখার তাড়াহুড়োতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে না দিয়ে পুরো ব্যাপারটা শেষবার নিজেদের মাঝে আলোচনা করে অনুমোদন দেয়ার ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এবার, এমন গুরুদায়িত্ব যার কাঁধে, কেমন হবেন তিনি? তাঁর যোগ্যতা, দক্ষতা কি? আলোচনার টেবিলে তার কৌশল, আচরণ কেমন হতে পারে, বা হওয়া উচিত? প্রতিপক্ষের ঝানু অভিজ্ঞ নেগোশিয়েটর দের আক্রমণ তিনি সামাল দেবেন কিভাবে?যদি এখনো পাঠক বিরক্ত হয়ে গিয়ে না থাকেন, পরের পর্বে আলোচনার আশা রাখি।

ফারহান দাউদ সম্পর্কে

খুব সাধারণ একজন মানুষ, নানা পথে চেষ্টা করে এখন বসে থাকাই সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা ধরে নিয়ে ঝিমাচ্ছি।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

6 Responses to দরকষাকষির ইতিবৃত্ত-১: প্রস্তুতি ও পদ্ধতি

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    চমৎকার 😀

    আলোচনায় আছি।
    পরের পর্বে হয়ত শেয়ার করা যাবে 😀

    একটা প্রশ্নঃ [হয়ত পরের পর্বে আসবে]
    আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে দর কষাকষি হয়, সেখানে আমাদের আমলাদের জবাবদিহিতার জায়গা আছে?

  2. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    আমাদের অনেক বড় দূর্ভাগ্য যে, আমাদের দক্ষ নেগোসিয়েটর নেই। আর আমলা, যারা নেগোসিয়েটর হিসেবে কাজ করেন তারা এতোই ভালো (!) কাজ দেখান যে আমরা মাথা চাপড়ে কূল পাই না।

    অপেক্ষায় আছি পরের পর্বের………

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      ভাইয়া, লেখাটা সম্ভবত আগে চতুর্মাত্রিক ব্লগ ও সামহোয়ার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। পূর্বে প্রকাশিত লেখার লিংকটা নিচে দিয়ে দিলে ভালো হয়। 🙂

  3. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    মুলামুলি টোটালি আমার এরিয়া না, আমি ফিক্সড প্রাইসের দোকান পছন্দ করি 😛 😛 😛

    . . . দারুণ পোস্টের জন্য ধন্যবাদ!! 🙂

  4. যারির বলেছেনঃ

    বড় বড় দেশগুলো যেমন যুক্তরাস্ট্র, চায়না কিংবা ভারত সকলেরই কিছু মৌলিক আন্তর্জাতিক লক্ষ্য আছে। যুক্তরাস্ট্রের বেলায় সেটা বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার, চায়নার ইচ্ছা হয়তো যুক্তরাস্ট্রের সাথে জায়গা বদল আর ভারত হয়তো চায় বিশ্বকে নিজের পন্যের বাজার বানাতে। ব্যাপারগুলো ভিন্নও হতে পারে কিন্তু তাদের লক্ষ্যগুলো স্থির এবং সেগুলো বাস্তব।

    সেখানে এই বিশ্বে থেকেই বাংলাদেশের লক্ষ্য প্রতি পাঁচ বছরে একবার করে পরিবর্তন হয়, তার উপর আমাদের কোন উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক লক্ষ্য নেই। তারপরও জাতীয়ভাবে যেটা আছে সেটা হল পুরাই এ্যাবস্ট্রাক্ট, সোনার বাংলাদেশ (রুপান্তরিত নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ) গড়া।

    আমার মতে দেশ যত ছোটই হোক না কেন, আমরা করতে পারি আর নাই পারি না কেন, আমাদের সূদুরপ্রসারি একটি লক্ষ্য, সীমাহীন একটি স্বপ্ন থাকতে হবে যেটা শুধু আমাদের দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

    ইচ্ছা করছে এই পর্বগুলো দেশের জনৈক কূটনীতিবিদ্যের চোখের সামনে রাতদিন ২৪ ঘন্টা ঝুলায় রাখতে।

    এই পোষ্টাকে :multitalk: ছড়ানো উচিত।

  5. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    এমন টা করতে পারবে এমন মানুষ কি আমাদের দেশে নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু সেই সুযোগ তাকে কে দিবে! সব তো চলে খেলাচ্ছলে কিংবা ইশারায় যার যার তার তার স্বার্থের হিসাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।