কয়েকদিন আগে এক ছোট ভাই আমাকে একটা কৌতুক শোনালঃ
ছেলে বাবার কাছে গিয়ে বলল, ‘‘ আব্বা আজ আমার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে। একটু দুয়া করে দেন।’’ বাবা কিছুটা ক্ষিপ্ত গলায় বলল, ‘‘এর আগে দুই দুইবার ফেল করলি।আমি তো আর লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না পাড়াতে।এবার আবার যদি ফেল করিস তাহলে তুই আমাকে আর বাবা বলে ডাকবি না।আল্লার কাছে দুয়া করি যেন আল্লা তোকে এবার পাশ করে দেয়।’’ যাহোক ছেলে গেলো পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে। সন্ধ্যার পর মাথা হেট করে পা টিপে টিপে বাড়ির ভিতর ঢুকল।বাবা জিজ্ঞাসা করলো, ‘‘কি রে রেজাল্টের কি খবর?’’ ছেলে অত্যন্ত ব্যথিত কণ্ঠে জানালো, ‘‘না জামিল ভাই, এবারও পাশ করতে পারলাম না।’’
পাঠকবৃন্দ নিশ্চয় ছেলের ডাকের এ ধরণের পরিবর্তনে হেসে ফেলেছেন।আমি কৌতুকটি শুনে অনেকক্ষণ হেসেছি।
প্রথম আলোর স্লোগান-বদলে যাও বদলে দাও। অনেকেই এই স্লোগানের বিপক্ষে অনেক কথা বলেছেন।আমি এই স্লোগানের পক্ষেই।ক্লাশ সেভেন বা এইটে যখন পড়ি তখন থেকেই প্রথম আলো’র সাথে আমার সম্পর্ক।অর্থাৎ বলা চলে এর যন্ম লগ্ন থেকেই আমি এর বেড়ে ওঠার সাক্ষী।প্রথম আলো বহুবার বদলেছে আর বহু লোককেও বদলে দিয়েছে।আমার রুচি,চিন্তাধারা সর্বপরি মানস গঠনে প্রথম আলো বিশাল ভূমিকা রেখেছে।যা কিছু খারাপ তা বদলে দিয়ে ভালো কিছু আনতে পারলে এই স্লোগান সার্থক।কিন্তু এর বিপরীতটা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়।অনেকদিন ধরে বাবাকে তো বাবা বলে ডাকলাম আজ থেকে না হয় তাঐ বলে ডাকবো-এরকম বদল আমি মুখেও আনতে চাই না।
আমি একটা বিষয় ভালো করে দেখছি সংবাদকে বা তথ্যকে পণ্য বানাতে প্রথম আলো ওস্তাদ।বর্তমানে এই ধারাটি খুবই জনপ্রিয় এবং এই ধারার এ দেশে প্রবর্তক হল প্রথম আলো।এ বিষয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ধারে কাছে কেউ নেই। আর ধর্মীয় ইস্যুগুলোতে বিশেষ নাক উচু মানসিকতার পরিচয় দিয়ে এসেছে বরাবর।আমি আলেম-উলামা টাইপ কোন বিশাল বুজুর্গ ব্যক্তি নই।ফলশ্রুতিতে হাদিসে বা কোরানে এর কি ব্যাখ্যা আছে তা বলতে পারবো না; এর শাস্তি কি তাও বলতে পারবো না।আমি জানি ধর্ম একটা ভালো বিষয়- তা মানুষের নৈতিকতা গঠনে ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় খুবই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান।আমার বক্তব্য এটি নয়।আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হল সংবাদ পরিবেশন করার রীতি প্রসঙ্গে।
গত বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ প্রসঙ্গে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম হলঃ ‘‘এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের গড় হার শতকরা ৭৪ দশমিক ২৮’’
এসেসসি’র ফল প্রকাশের সময় লেখে,‘‘পাশের হার ৭৯.৯৮, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮২,৯৬১’’
২০০৯-এ ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার দুইদিন পর এসএসসি ফল প্রকাশের সময় ভিকারুন্নেসার এক ঝাক হাসিমাখা মেয়ের মুখসহ খবর করে প্রথম আলোঃ জিপিএ-৫ এর নতুন নজির।
এবং ২০০৯-এ এইচএসসি’র সময় খবরঃ পাশের হার কমেছে,কারণ এইংরেজি শেখার নতুন পদ্ধতি।
আজ প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে যে সংবাদটি করেছে তার শিরো নাম হলঃ ‘‘পাশ প্রাথমিকে ৯৭.২৬%, ইবতেদায়িতে ৯১.২৮%’’।
খোলা চোখে দেখলে মনে হবে সব ঠিকই তো আছে যা ফ্যাক্ট তায় তো বলেছে; এতে আবার দোষের কি দেখলে?
দোষের আছে অনেক কিছু। এখানে সুক্ষভাবে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে হেয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখানোর প্রয়াস চালানো হয়েছে।আমি মাদরাসায় কখনও পড়িনি, আমার কোন নিকট আত্মীয় পড়ে বলেও আমার জানা নাই। আমি যা জানি তা হল এদেশ তথা পুরো ভারত উপমহাদেশে পিছিয়ে পড়া মুসলমানকে এগিয়ে নিতে যে মাদরাসা ব্যবস্থার প্রচলন হয় তা মোটেও কমগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নয়।মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আজকের নয়।এখান থেকে বের হয়েছে মহান মহান অনেক নেতা,কবি-সাহিত্যিক,আইনজীবীসহ দেশদরদি বহু ব্যক্তি।
পত্রিকা প্রভাব সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই।প্রথম আলোর লক্ষাধিক পাঠক।বিজাতীয় এবং ভিন্ন সংস্কৃতির লোকের চমকপ্রদ খবর প্রদান করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি প্রথম আলো পত্রিকাকে।কাটতি বাড়াবার জন্য আর সুচতুরভাবে নিজ সঙ্গস্কৃতির বিরুদ্ধে মোটিভেট করার মানসে নিউজ করার ধারা থেকে বের না হলে-দায়িত্ববোধের পরিচয় কে দেবে?
মেয়েদের বিয়ের দরকার নেয়, পরকীয়া একটি সাধারণ ব্যপার- এই ধরণের নিউজ না করায় ভালো।কয়েকদিন আগে এই ধরনের কয়েকটি খবর পড়লাম প্রথম আলোয়।আমাদের সমাজে এই খবর মোটেই পজিটিভ নয়।ইউরোপ-আমেরিকাতে যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য বিয়ে সামাজিক ও আইনানুগ ভাবে বাধ্যতামূলক নয়।সেখানে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।আমাদের দেশে বিয়ে বাদে যৌন চাহিদা মেটানো অসম্ভব প্রায়-ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে।কেবল মেয়েদের ক্ষেত্রেই নয় ছেলেদের ক্ষেত্রেও কথাটি চরমভাবে সত্য।সেক্ষেত্রে এই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে উসকানি দেওয়ার কোন ভালো মানে নায়।
ইভটিজিং নিয়ে পত্রিকাটি অনেক লেখে।কিন্তু কে না জানে এক্ষেত্রে সংযমই সর্বাপেক্ষা সুষ্ঠু সমাধান; ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।কিন্তু প্রথম আলোর নকশাতে যা দেখানো হয় তার অনেক কিছুই রীতিও সংস্কৃতি বিরুদ্ধ। মাস দুয়েক আগে দেখলাম একটি আট-দশ বছরের বাচ্চা মেয়ের রগরগে পোজের ছবি ছেপেছে তারা।লেডি গাগা এমন পোজ দিতে পারবে কি না সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে।এসব দেখলে আমাদের বচ্চা ছেলে-মেয়েরা তো প্রলুব্ধ হবেই।
কৈশোর থেকে এ পর্যন্ত প্রথম আলো পত্রিকার সাথে আমার যে ভালোবাসার সম্পর্ক সেই দাবি থেকেই বলছি-আরো বেশি দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে, আরও বেশি যত্নবান হতে হবে প্রথম আলো কে । শুধু বদলের স্লোগান দিলেই হবে না বা বদলে খারাপের দিকে গেলে হবে না।কুসংস্কার,দুর্নীতি,অন্ধবিশ্বাস আর ভন্ডামোকে বদলে নিজ সংস্কৃতির সত্য ও সুন্দর দিকটি তুলে ধরতে হবে।আলোর পথের নেতৃত্ব দিতে হবে প্রথম আলোকে।ভিন্ন সংস্কৃতির অনুকরণ নয় বরং নিজ সংস্কৃতির সৃজনশীল প্রকাশ ও প্রসার প্রয়োজন।
হুমম।
এত্ত বিশাল লেখক পরিচিতি! 😀
:welcome:
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার নামটাও যে কিঞ্চিত বড়।যা হোক ছেটে দিলাম খানিকটা।
আজ প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে যে সংবাদটি করেছে তার শিরো নাম হলঃ ‘‘পাশ প্রাথমিকে ৯৭.২৬%, ইবতেদায়িতে ৯১.২৮%’’।
খোলা চোখে দেখলে মনে হবে সব ঠিকই তো আছে যা ফ্যাক্ট তায় তো বলেছে; এতে আবার দোষের কি দেখলে?
দোষের আছে অনেক কিছু। এখানে সুক্ষভাবে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে হেয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখানোর প্রয়াস চালানো হয়েছে।
এই জায়গাটা একটু খোলাসা করেন তো ভাই। ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় রেজাল্ট ভালো করা যায় না।এখানে ভালো রেজাল্ট ভালো হয় না…ইত্যাদি।এর আগে এক বার মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড সর্বোচ্চ ফলাফল করলো কিন্তু সেবার তো প্রধান শিরোনামে স্থান পেলো না। বরং কি কি কারণে সেখানে ভালো নম্বর হয় তার একটা লম্বা ফিরিস্তি প্রকাশ করলো প্রথম আলো এবং তাতে বলা হল মাদ্রাসাবোর্ড বেশি বেশি নম্বর দিয়ে ভালো ফল করানো হয়েছে। এই সব দেখেই আমি বিরক্ত হয়েই তাদেরকে বিষয়টি জানাতে চেয়েছিলাম।মাদ্রাসা শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে করনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তো কয় কোনদিন রিপোর্ট করতে দেখলাম না।
ব্লগে স্বাগতম 🙂 আপনার লেখাটা ভাল লাগল। কিছু কিছু পয়েন্ট আমার নিজের চিন্তার সাথে মিল আছে।
অন্য প্রসঙ্গে, কিছু শব্দের শেষে ই এর জায়গায় য় লেখা হয়েছে। হয়ত টাইপিং।