আত্মহত্যাঃ একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা

১৮ই জুন,রাত ১২ টা ছুঁই ছুঁই । সমর নিশ্ছুপ হয়ে বসে আছে পড়ার টেবিল এর সামনে । কপাল থেকে বিন্দু বিন্দু ঘাম টপ টপ করে পরছে বই এর উপরে । ভ্রুক্ষেপ নেই কোনো ওর । অনেকটা হুশহীন যেন । মাথাটা ওর ঝিম ধরে আসতেছে । মাথার প্রতিটা কোষ মনে হচ্ছে নিজেকে নিজেকে মেরে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে । এ যেন অন্যরকম ব্যাথা । অসহনীয় যন্ত্রণা । যেন কিছুক্ষন আগেই শুরু হল,প্রতিটা মুহূর্ত যেন সমর কে এটাই বুঝিয়ে যাচ্ছে যে -“তোকে মরতে হবে সমর,মরতে হবে । আত্মহত্যা ই তোর একমাত্র পথ ।” সারাজীবন সমর জেনে আসছে আত্মহত্যা মহাপাপ, কিন্তু আজ কোনমতেই নিয়তিকে ফিরিয়ে দিতে পারছে না । মনপ্রান যেন ওকে বুঝিয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যাই একমাত্র সমাধান । আর পারল না সমর । উঠে গেল তিনতালার ছাঁদে । সবাই ঘুমাচ্ছে । যন্ত্রণায় অনেকটা বিমোহিত ও । ছাদের একদম সীমানায় চলে আসলো সমর । আজ ও চায় যন্ত্রণামুক্তির আনন্দ । মরতে ওকে হবেই আজ…

সমর এর ক্ষুদ্র গল্পটা একটু পড়ে শেষ করি, ঐ ১০-১৫ মিনিট সমর এর যন্ত্রণা এর কথাগুলো আগে বলি । ঐ ক্ষণিক সময় এর যন্ত্রণাগুলো  অনেক আলাদা । অনেকটা ভিন্ন । একজন মানুষ ধরণীতে বাচার জন্য লড়াই করে , কিন্তু ঐ ক্ষণিক সময়ে সমর মৃত্যুর জন্য লড়াই করেছে । জীবনের আক্ষেপের সময় আমরা স্রষ্টার কাছে মৃত্যু প্রার্থনা করি,কিন্তু কখনো কি মৃত্যুর জন্য লড়াই করি ?ঐ ১০-১৫ মিনিট সময় মৃত্যু যেন হয়ে যায় চরম আরাধ্য । হাজারো কষ্টের মাঝে মানুষ বেচে থাকে,হাজারো কষ্ট পাবার পরও মানুষ নতুন উদ্যমে বাচতে চায় । কিন্তু আত্মহত্যার ঐ স্বল্প সময় এর অনুভুতি মানুষকে মরতে শিখায় । সমর ও ঠিক সেই কাজটি করতেই যাচ্ছিল । শেষ সময় এর ঠিক আগমুহূর্তে ওর মোবাইল এর রিংটোন বেজে উঠে,সম্বিত ফিরে পায় সমর । অনেকটা লাফ দিয়ে নিজেকে পিছনে সরিয়ে নেয় । অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে তারাভরা আকাশের দিকে । মোবাইল আর ধরা হয় না ওর । ক্ষনিকের মধ্যে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর লাগা শুরু হয় ওর কাছে । মনে করার চেষ্টা করে কি হয়েছিল, কিন্তু তৃপ্তির আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে করতে পারে না কিছু । ভোরের আলোকে দেখার জন্য বসে থাকে সমর । সারারাত নিশ্ছুপ হয়ে বসে রইল । কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল খেয়াল ছিল না ওর । চোখের উপর রাঙ্গা আলোয় ঘুম ভাঙ্গে সমরের ।

জীবনের পরবর্তী সময়ে সমর কখনই আত্মহত্যা এর কোন ঘটনায় ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করে নাই । একদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল সমর । ঠিক এইসময় জানতে পারল পাশের এলাকায় কে যেন আত্মহত্যা করেছে,মাগরিব এর সময় জানাজা । বন্ধুরা আত্মহত্যার সংবাদ শুনেই বলল,”ধুর,পুরাই মদন,লাইফ টারে এভাবে শেষ করল । বাপ মার কথা একটু ও ভাবল না ।”
সমর তখন নিশ্ছুপ মনে ভাবতে থাকে ঐ সময়কার যন্ত্রণার কথা,ঐ সময়কার সবাইকে ভুলে যাবার ক্ষণিক যন্ত্রণাময় উপলব্ধির কথা । বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল । আকাশের দিকে আর একবার তাকায় সমর । ভাবতে থাকে,মরে গেলে কি এই সুন্দর আকাশকে আমি ভালবাসতে পারতাম….

[সমর এর সাথে আমার মাঝে মাঝেই কথা হয়। অনেক খোলা মনের মানুষ ও । ওকে যদি বলি,প্লান কি তোমার? এক কথায় জবাব দেয়,প্লেন থেকে লাফ দিব । আমি বলি সর্বনাশ, কি বলে ছেলে!!!! হেসে উত্তর দেয়, আরে প্যারাসুট নিয়েই লাফ দিব,তিনতালা থেকে লাফ দিতে না হয় পারি নাই ,তাই বলে কি ১৫-২০০০০ মিটার উছু থেকে লাফ দিতে পারব না । এবার উচ্চতাকে জয় করব । ওর নির্মল হাসি দেখে মনে হয়,বেচে থাকার আলাদা আনন্দ আছে,আলাদা রোমাঞ্চ আছে……..]

[কারো জীবনের সাথে অল্প কিছু মিলে গেলেও তা অনভিপ্রেতৎ কোকিলতালমাত্র….]

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প, সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

6 Responses to আত্মহত্যাঃ একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা

  1. অরণ্য নীলিন বলেছেনঃ

    ভালো লিখছিস :beerdrink:

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    শুরু আর শেষ অসাধারণ!

    কিপিটাপ ম্যান!

    একখানা ছবি জুড়ে দিলে ভালো হত!

  3. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    আগে কখনো এরকম করে ভাবতাম না। বেশ কিছুদিন আগে একজন বললো যে কোন মানুষ যদি আত্মহত্যা করে তবে সে ঝোঁকের মাথায় মিলিত দশেকের মধ্যেই করে ফেলে, আগে-পরে প্ল্যান করে নয়। যদি ঝোঁক কাটে তো কাটে, আর নয়ত ঐ দশ মিনিটই জীবনের শেষ সিদ্ধান্ত হয়ে বেঁচে থাকে।
    তারপর থেকে সেই ঝোঁকটাকে আর অবহেলার খাতায় ফেলতে পারি না। এবারেও পারলাম না।

  4. কৃষ্ণচূড়া বলেছেনঃ

    ভয়ে ছিলাম, শেষটা বুঝি মৃত্যু দিয়েই হবে।

    কিন্তু নাহ! ভালো লেগেছে। আশার আলো ফুটল ” এবার উচ্চতাকে জয় করব ” এইটা পড়ে। :clappinghands:
    সবাই যদি এভাবে ফিরে আসতো! :littleangel:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।