পড়ন্ত একটা দুপুর, টিনের চালে গাছের পাতার সরসর শব্দ, বড়োরা ঘুমে অথবা গল্পে মশগুল, একতলা বাসাটার বইয়ের আলমারিটা খুলে একটা বই, এক হাতে পেয়ারা আর বারান্দার ঠান্ডা শান বাঁধানো মেঝে, ছেলেটা উপুড় হয়ে বই পড়ছে……
বয়স? ১২ কি ১৩…দুনিয়ার যতো হাবিজাবি “আউট” বই পড়ে পেকে যাচ্ছে~ শুরু হয়েছিলো রুশদেশের উপকথা, সঙ্গীসাথী পশুপাখি দিয়ে, সেটা এখন যেতে যেতে ঠেকেছে অনুর পাঠশালা আর কড়া নাড়ার শব্দের মতো বইয়ে, পড়ার বিরাম নেই…
নানাবাড়ির সেই স্মৃতি এখনো উদাস করে দেয়, বৃষ্টির ঝমঝমাঝম শব্দ টিনের চালে, ভিজে পায়ে ঘাসের সাথে গল্প, বিকেলবেলা ঘুড়ি ওড়ানো, ভোঁ কাট্টা……
দুপুরবেলা চুপি চুপি বাড়ি পালিয়ে অনেক দূর মাঠ পার হয়ে হারিয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে খুঁজে পাওয়া রংধনুটাকে আজলা ভরে ধরবার জন্য ছুট ছুট ছুট……
ঈদের আগের রাত্রে ইফতারি করে ছুট ছুট ছুট মাঠে, চাঁদ দেখবার জন্য গাছের মাথায় উঠে ধপাস করে আছাড় খাওয়া! রাত্রিবেলা কারেন্ট চলে গেলে গা ছমছমে হারিকেনের আলোয় বসে ভূতের গল্প শোনা, নিজের ছায়া দেখে নিজেই চমকে উঠে অযথাই দৌড় দেয়া। আরেকটু বড়ো হয়ে ক্রিকেট রোজ বিকেলে, কাদার মধ্যেই ফুটবল! (মাঠটা এখন চেয়ারম্যানের দখলে, বাসা করে ভাড়া দিয়েছে!)
দৌড়ুতে দৌড়ুতে একদিন আবিষ্কার করা হঠাৎ করে বেশি বড়ো হয়ে গেছে, এখন আর বিকেল বেলা সময় পায় না মাঠে যাবার, হঠাৎ করে নানুবাড়ি যাবার সংখ্যা কমে এলো, হঠাৎ করে একলা হয়ে এলো চারিপাশ, তখন সবাই ভীষণ ব্যস্ত, তখন এক বাসায় থেকেও সবাই যোজন যোজন দূরে, তখন একটা গল্পের মাঝে থেকেও অনেকগুলো যতিচিহ্নে সবাই অনেক দূরের মানুষ। পড়ার বইয়ের মাঝে তখনো লুকিয়ে গল্পের বই পড়া, বুকের মাঝে একটা দুটো অগুনতি স্বপ্নের নামতা পড়াকে অবজ্ঞা করে অন্য এক স্বপ্নে মাতা, যে স্বপ্নে সুখ না থাকুক, একটা বেঁচে থাকবার ইচ্ছা জিইয়ে রাখে বাকি অনুভূতিগুলোকে…
ছেলেবেলায় ইচ্ছে ছিলো বড়ো হয়ে অনেক বড় কিছু একটা হবে, এমন কিছু করবে যে সমস্ত দেশের মানুষ জানবে, বিদেশের মানুষ জানবে…
ছেলেটা এখন বড়ো হয়েছে, ইউনিভার্সিটিও পাশ দিছে, আর একটা ভয়ানক সত্যও আবিষ্কার করেছে, ওর আশেপাশের সবাই ওর মতোই বড়ো হবার মতো স্বপ্ন নিয়ে পথ চলেছে এতোটা দূর, এতো বড়দের ভীড়ে আর কত বড়ো হবে সে? তাই আর সবার মত ভেড়ার পালেই মিশে যাবার চেষ্টা এখন, অথবা হঠাৎ করে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায়?
সেই বোকা ছেলেটাকে নিয়ে লিখতে খুব ইচ্ছে করে, একটা বোকা ছেলের স্বপ্নভঙ্গের গল্প, অথবা নতুন করে বেঁচে ওঠার গল্প……
গল্পটা আমার একার না বলেই জানি, এই কন্ঠে কণ্ঠ মেলাবে আরো অনেক মানুষ, আমরা অনেক স্বপ্ন দেখে বড়ো হয়েছিলাম, স্বপ্নগুলো বুঝি এমন করেই রেখে দেবো মনের ভিতর?? অথবা কোন এক রাঙ্গা ভোরে আবার স্বপ্নঘুড়ি উড়বে, নীল আকাশে, যার প্রতীক্ষায় পার করে যাচ্ছি দাঁতে দাঁত চেপে, প্রতিটা মূহুর্ত…
এতো বড়দের ভীড়ে আর কত বড়ো হবে সে?
বাকিরা তো স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিচ্ছে!
বিষণ্ণতার সুর আসলেই সুন্দর!
তার চেয়ে বেশি সুন্দর স্বপ্নঘুড়ি উড়ানোর এই আয়োজন!
ছেলেটার ঘুড়ি উড়ুক এই শুভকামনা করি।
:multitalk:
উড়াই চলো স্বপ্ন ডানা, আকাশ ছুঁতে নেই যে মানা, আকাশ হবে মনের বাড়ি, এক মুঠো নীল করবো চুরি… :beshikhushi:
এক মুঠো নীল করবো চুরি…… :beerdrink:
লেখাটা আজ আবার পড়লাম!
ব্যাটা রেগুলার লিখিস না ক্যান?!
বয়স নাই! কলমে জোরও নাই! 🙁
এই দারুণ একটা লেখায় কেন যে কমেন্ট করি নাই!!
প্রিয়তে নিলাম বন্ধু। 🙂
ধন্যবাদ…… 😀
“উড়াই চলো স্বপ্নডানা,
আকাশ ছুঁতে নেই যে মানা…”
স্বপ্ন দেখতে দেখতেই জীবন পার করে দিতে চাই- কখনো প্রাপ্তির আনন্দে, কখনো বা হারানোর কষ্টে… তবুও স্বপ্ন সীমাহীন…
“কোন এক রাঙ্গা ভোরে আবার স্বপ্নঘুড়ি উড়বে, নীল আকাশে, যার প্রতীক্ষায় পার করে যাচ্ছি দাঁতে দাঁত চেপে, প্রতিটা মূহুর্ত…” :huzur: