এই সময়ের ভীড়ে

কেন আমরা বড় হই আর ক্রমে… ক্রমে… ক্রমেই দূরে…দূরে… দূরে সরে যাই!

দুরত্ব এতো যোজন যোজন, মুঠোফোনে  কতটাই বা কাছে থাকি!

ভালো লাগে না।কী এমন দরকার হয় দূরে যাবার? সবকিছু কী জীবন থেকে বড়?

জানি খুব ছেলেমানুষী কথা এসব, হয়তো এমনটাই জীবন।

নিশাদ! খুব রাগ হয়েছিলো তখন তোর উপর!কী এমন দরকার পড়েছিল অন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার? একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জন থাকলে কী এমন হোত!

একসাথে শৈশব-কৈশর কাটিয়ে তোকে ছাড়া আমি চলতে শিখিনি, মনের কথাগুলো আর কাউকে বলতে শিখিনি।

কেউ এখন আমাকে সারাক্ষণ তোর মতো খোঁচায় না। আমার বিষণ্ণতাকে কেউ তোর মতো উড়িয়ে নিয়ে যায় না। চা খেতে জানি না বলে টিটকারী দেয় না। তাড়াতাড়ি খেতে পারি না বলে আমার খাবারটা কেউ খেয়ে নেয় না। ফার্স্ট সিটে বসা নিয়ে ট্টিপ্পনী কাটে না, কেউ টেনে লাস্ট বেঞ্চে নিয়ে যায় না…… আর…আর আমি এখন ক্লাসরুমে কারো সাথে চিরকুট চালাচালি করি না।

কলেজের সেই একগাদা চিরকুট আমার কাছে বোঝা হয়ে থাকে। আমি খুলে মাঝে মাঝে পড়ি সব, ইচ্ছে হয় ফেলে দিই, কিন্তু এতো ভারী বোঝা আমি নাড়াতে পারি না।

কেন এতো দূরে থাকিস তুই?

অবশ্য কী লাভই বা হোত একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।

রুম্মান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো ডিপার্টমেন্টে এসে কী যে খুশি লেগেছিল আমার!যাক, আমরা দু’জন একসাথে!  কিন্তু ক্লাস শুরু হতে না হতেই কী যে হোল। দুটো বিল্ডিং এর মাঝে দুই মিনিটের হাঁটাপথ।

তবুও কত্তো দূরে থাকো তুমি।সারাদিন ক্লাস আর ড্রয়িং করে ক্লান্ত হয়ে যাও।সার্ভেয়িং করে সপ্তাহান্তে সারাদিন ঘুমাতে হয় তোমার।আমার ড্রয়িং শুধু দুই সেমিস্টার বলে এতো ভাব দেখাও?ভীষণ আলসে হয়ে গিয়েছো। টেক্সটের রিপ্লাই পর্যন্ত ঠিকমতো দাও না। অথচ, আগে ক্লাস শেষে প্রায়ই একটা চিঠি ধরিয়ে দিতে হাতে লাজুক হেসে। সারাদিনের এতো কথা শেষে ও তোমার কথা থাকতো আরো।আমার যে কী হাসি পেত। অনেক ভালোলাগায় ভরে থাকতো মনটা।অথচ এখন…

তোমার সাধু ভাষার চিঠি গুলো মিস করি। এভাবেই মিস করে যেতে হবে হয়তো সারাটা জীবন। এখন আর কেউ সারাদিন আমার সাথে গান গেয়ে কথা বলে না। আমিও আর কবিতায় প্রত্যুত্তর দেই না। শুধু গোপনে আমার খাতাটা ভরিয়ে ফেলি।

সবকিছু কেন এভাবে বদলে যায়?

আপ্পিয়ামনি!দিনশেষে বাসায় ফিরে সারাদিনের গল্প, কতশত আবদার, জোছনা রাতে হেলান দিয়ে গল্প শোনা, সব তোমার সাথে ছিল। কী দরকার ছিল এই শহর ছাড়ার? গবেষণা না করলে জীবন যেত বুঝি।খুব বিজ্ঞানী হয়ে, একগাদা পেটেন্ট দিয়ে কী করবে তুমি?

ঘুমের আগে তোমার সাথে হাঁটি না বলে আমার এখন সহজে ঘুম আসে না। দেয়াল ঘড়ি আগেরটাই আছে এখনো। কিন্তু সেটা বড্ড জোরে টিক টিক করে এখন। আমাকে ঘুমাতে দেয় না।

আর তুমিও কেমন রোবট। এই অন্তর্জালের যুগে, মুঠোফোন আর ইমেইলের দিনে আমি ক’টা লাইন লিখে পাঠিয়ে দিলাম তোমার কাছে। কত দিন কাউকে চিঠি পাঠাই না। অপেক্ষায় ছিলাম একটা উত্তরের, ছোট্ট হলেও। অনেকদিন পর মুঠোফোনেই আমি জিজ্ঞেস করি-

–       একটা চিঠি পাঠিয়েছিলাম, কবিতা ছিল একটা, পেয়েছিলে?
–       হ্যাঁরে।
–       পড়েছো? কেমন লেগেছে? উত্তর দাওনি কেন? মেইলেও তো এটলিস্ট দিতে পারতে…

অভিমানী প্রশ্নবাণে জর্জরিত করি আমি ওকে।কিন্তু আমার কন্ঠের আর্দ্রতা টের পায় না ও। বলে-

–       সময় করতে পারিনি রে।জানিস, সেল কালচার করতে দিয়েছিলাম যে, ইনকিউবেশন টাইম……………

দোহাই পিয়ামন, তোমার ল্যাবের গল্প শুনতে আমার ভালো লাগে না………।

কেন সবাই বদলে যায়? কেন আমি বদলাই না? কেন আমি পুরানো সব স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকি? কেন আর নতুন কোন স্মৃতি জমে না আমার?

কেউ আর আমার ছাইপাশ কবিতা দেখতে চায় না। আমিও সমস্ত সংকোচ ভেঙ্গে খাতা খুলে কাউকে দেখাই না কাব্যকথন আমার। কেউ জানতে চায় না গুটুগুটু করে ডায়রীতে কি লিখি আমি।পড়ার আবদার ও করে না। আমিও আর ভাব নিয়ে বলতে পারি না—আজ আমার মন ভালো, এই নাও, পড়ো-

এই সময়ের ভীড়ে
আছো একটু দূরে।
হাত বাড়ালেই যায় না ছোঁয়া
তোমায় অচিনপুরে।
তবুও চাই এই কুয়াশা ভোরে,
ছুঁতে তোমায়
আগের মতো করে।
তেমনি করে বাঁধতে তোমায় উষ্ণ মায়ায়
আবার নতুন করে।

দূরে চলে যাওয়া প্রিয় কাছের মানুষেরা, এই উপশহরে, শত মানুষের ভীড়ে, শত কোলাহল ও ব্যস্ততায়, দিনে ও রাতে, তোমাদের ছাড়া আমার বড্ড একলা লাগে।

অনাবিল সম্পর্কে

পুরাণকাব্য আর ইচ্ছে খাতা। স্বপ্ন দেখা আর স্বপ্নে বাঁচা। স্বপ্নগুলোকে গুটিগুটি করে আঁকা। একদিন দোয়েল পাখি...............
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

22 Responses to এই সময়ের ভীড়ে

  1. বোকা মানুষ বলেছেনঃ

    এই অন্তহীন শহরের কাঠপোড়া জীবনের মাঝে
    তুমি এখনও কবিতার অক্ষর আঁক?
    একদিন বেলা করে দেখে নিও
    তুলিটার আঁচড়ে স্মৃতি খেলা করে
    কোন এক একাকী বিকেলের সুরে————-

    • অনাবিল বলেছেনঃ

      তুলিটার আঁচড়ে স্মৃতি খেলা করে
      কোন এক একাকী বিকেলের সুরে————-

      কী চমৎকার পংক্তি …
      অনেক অনেক ধন্যবাদ বোকা মানুষ, এতো সুন্দর মন্তব্য আর আমার প্রথম লেখায় প্রথম মন্তব্যের জন্য… 🙂

  2. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    এই সময়ের ভিড়ে তোমায় মনে পড়ে, শুধু তোমায় মনে পড়ে…

    কেন তোমরা এমন ছাই-পাশ লেখো, বুঝতে পারি না। কী লাভ হয় তোমাদের বলতো আমার ছোট্ট মনটাকে এমন ব্যকুলতায় ভরিয়ে দিয়ে?

  3. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    হিহি ভার্সিটি লাইফ শেষ করলেন মনে হয়?? আমি মোটে ফার্স্ট ইয়ার শেষ করতেসি, সো এখনও মজায় আছি!!! 😛 😛 😛 :penguindance: :angel_not: :yahooo: [একটু অ-সেনসিটিভ কমেন্টের জন্য স্যরি! 😛 ]

  4. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    দূরে চলে যাওয়া প্রিয় কাছের মানুষেরা, শত মানুষের ভীড়ে, শত কোলাহল ও ব্যস্ততায়, দিনে ও রাতে, তোমাদের ছাড়া আমার বড্ড একলা লাগে।

    মানুষগুলো যে কীভাবে দূরে চলে যায়।

  5. সাথী বলেছেনঃ

    মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল, চোখটাও বুঝি ভিজে গেল… কেন এমন হয়? প্রিয় মানুষ গুলো কেন দূরে চলে যায়? কেন বদলে যায় মানুষ?!

  6. সামিরা বলেছেনঃ

    কী সুন্দর হয়েছে লেখাটা আপু!
    আমারো আগে এরকম মনে হত, অভিমান হত। এখন আর হয় না তেমন। আমিও যান্ত্রিক হয়ে গেছি মনে হয়।

    আমি তোমার লেখার ফ্যান, জানো? :love:

  7. অবন্তিকা বলেছেনঃ

    “দূরে চলে যাওয়া প্রিয় কাছের মানুষেরা, এই উপশহরে, শত মানুষের ভীড়ে, শত কোলাহল ও ব্যস্ততায়, দিনে ও রাতে, তোমাদের ছাড়া আমার বড্ড একলা লাগে।” খুবই সুন্দর একটা লেখা।

  8. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    দূরে চলে যাওয়া প্রিয় কাছের মানুষেরা, এই উপশহরে, শত মানুষের ভীড়ে, শত কোলাহল ও ব্যস্ততায়, দিনে ও রাতে, তোমাদের ছাড়া আমার বড্ড একলা লাগে। নির্বোধ চোখজোড়ার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আছে…

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।