গত পরশু থেকে মাথার ভেতরে প্রচন্ড একটা তাগাদায় আর থাকতে পারলাম না। লিখতে বসতে বাধ্য হলাম অনেকটা। গত ০৬ জানুয়ারী”১২ শুক্রবার রাত আটটায় এটিএন বাংলায় জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা আবুল হায়াত পরিচালিত এবং তৌকির আহমেদ ও তারিন অভিনীত নাটক “হুইলচেয়ার” প্রচারিত হচ্ছিলো। শ্রদ্ধাভাজন এক বড়ভাইয়ের কাছে জেনে নাটকটি দেখতে বসেছিলাম। ভেবেছিলাম ভালো কিছুই দেখানো হবে…কিন্তু গল্পের ভিত্তি এতো দুর্বল হবে তাও এমন একজন জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতার কাছে এমনটা প্রত্যাশা ছিলো না।
পাঠকের বুঝবার সুবিধার্থে সংক্ষিপ্তভাবে নাটকের ঘটনা বলার চেষ্টা করছি।
“বাবার মৃত্যুর পর তার হুইলচেয়ারটি বুয়াকে দান করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পরেই পুত্রবধূ প্যারালাইজড হয়ে পরলে পুত্র দানকৃত বাবার হুইলচেয়ারটি বুয়ার কাছে চাইবে বলে ঠিক করে কিন্তু পুত্রবধূ এতে বাঁধা দেয়। দানকৃত হুইলচেয়ার ফিরিয়ে আনতে তার আত্মসম্মানে লাগে। ছেলে কিছুতেই বুঝতে চায় না…তার এক কথা- “আমার জিনিষ আমি দিয়েছি, এখন আমার লাগছে বলেই ফিরিয়ে আনতে চাই। কাজের সময় নিজের জিনিষ চাইতে লজ্জা কিসের! তাছাড়া আমাদের একটি হুইলচেয়ার কেনার সামর্থ্যও তো নেই।“ নাটকের ঘটনা এই টানাপোড়েন নিয়েই এগুতে থাকে এবং পুত্র হুইলচেয়ারটি আনতে বুয়ার বস্তিতে উপস্থিত হয়ে দেখে বয়স্ক একজন মানুষ সেই হুইলচেয়ারে বসে আনন্দ করছে আর তাকে ঘিরে রয়েছে একদল বাচ্চা…”
নাটকের গল্পের মাধ্যমে পরিচালক যা বোঝাতে চেয়েছেন তা বুঝলাম। শুধু বুঝলাম না মধ্যবিত্ত পরিবারের হুইলচেয়ার কেনার সামর্থ্য নেই এই তথ্যটি তিনি কোথায় পেলেন! আমার ধারণা ছিলো নাটক বা সিনেমা তৈরি করতে গেলে নির্দেশক প্রথমে গল্পের সাথে জড়িত সমস্ত তথ্য যাচাই করেন। দেশে শুনে বুঝে অভিজ্ঞতার আলোকের দর্শকের কাছে সঠিক মেসেজটি পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। আমরা আশা করে বসে আছি দেশের মানুষকে সচেতন করে তুলতে মিডিয়া হবে সবচেয়ে বড় মাধ্যম। অথচ সেখানেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হলো।
আমার প্রথম প্রশ্নটি হলো- একটি হুইলচেয়ার দাম জানা কি খুব কঠিন ছিলো?
সর্বনিম্ন ৪২০০ (চার হাজার দুইশত) টাকা থেকে বিভিন্ন দামে ভিন্ন ভিন্ন সহায়ক ব্যবস্থাসহ হুইলচেয়ার কিনতে পাওয়া যায়। তবু আমি ধরলাম সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় একটি ভালো হুইলচেয়ার কেনা যায়।
আমার দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো- মধ্যবিত্ত পরিবারের কোন সদস্য প্রয়োজনের তাগিদে মাত্র ৪৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে একটি হুইলচেয়ার কি কিনতে পারে না?
এমনিতেই আমাদের দেশের প্রতিবন্ধী মানুষেরা স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুবিধে থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিশেষত পরিবার-অভিভাবকগণ তাঁদের বোঝা ছাড়া আর কিছুই ভাবেনা। সেক্ষেত্রে আমাদের নাটকের মাঝে সাধারণের কাছে যদি এই তথ্য পৌছুনো হয় একটি মধ্যবিত্ত পরিবার হুইলচেয়ার কেনার সামর্থ্য রাখে না তার পরিনতি কি হতে পারে সে বিচারের ভার পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম।
আমাদের মিডিয়া আসলেই আমাদের প্রতি অনেক অনেক অবিচার করে।
মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত পড়াশোনা না করেই বানাতে দ্যাখা যায় টিভি/মুভি। এতে বোঝা যায় তাদের “প্যাশন” এর গভীরতা। সচেতনতা তৈরিতে তাদের সদিচ্ছার প্রকাশ পেলে খুশি হতাম আমরা।
হতাশ লাগে, ভীষণ 🙁 🙁 🙁
🙁 কী অদ্ভুত।
মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে হতাশা ছাড়া আর কিছু পাচ্ছি না ইদানিং। মিডিয়ার ক্ষমতা আছে, মানুষের উপকার করার, পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করার। কিন্তু, তারা যেন উঠেপড়ে লেগেছে, উল্টো গাধার পিঠে উঠে পিছিয়ে যাবার……
আজকাল বিনোদনের মান খুব নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন আর আগের মত যাচাই-বাছাই করার মত সময় নষ্ট করেন না নির্মাতারা। বরং এইটুকু সময়ে কিভাবে আরও দুটো নাটকের শুটিং করা যায় সেই চিন্তা চলতে থাকে। ফলাফল কী হতে পারে তা কারো ধারণাতেই থাকে না।
নাটক টা খুব সুন্দর হতো যদি এভাবে দেখাতো, বাবাকে অন্য কেউ দিয়েছে আর তারাও গরিব। কিংবা, অন্য কারো প্রয়োজনে যার কেনার সামর্থ নেই, খোঁজ নিতে গিয়ে দেখব এমন। অনেক কিছুই হতে পারত। কিন্তু আবুল হায়াত কে আমি অন্য রকম মনে করি। অনেক সুন্দর নাটক পেয়েছি তার করা। আশা করব তিনি এর পর এই ব্যাপার গুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে।
আন্তরিক ধন্যবাদ সবাইকে মন্তব্যের জন্যে
আলাদা করে সবার মন্তব্যের জবাব দিতে পারছি না বলে দুঃখিত।
যাদের ইচ্ছে নাটকের ইউটিউব লিঙ্কটি দিলাম। দেখতে পারেন। >http://www.youtube.com/watch?v=ZZ5j2GobPr4
নাটকের শুরুটা সেদিন আমার দেখার সুযোগ হয়নি। ইউটিউব থেকে আজ যা দেখলাম — নাটকের সংলাপে তারিন বলছে, “আমরা কি কেউ ল্যাংড়া না লুলা”! আজকাল শিক্ষিত মানুষও এই ধরণের শব্দ ব্যবহার করে জানলাম। তাছাড়া হুইলচেয়ারকে অপয়া বলা হলো কেনো??? এর মানে কি?
আমার এই লেখাটার উদ্দেশ্য ছিলো সকলকে সচেতন করে তোলা।
একটা চার/পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের হুইলচেয়ার অভিজাত পরিবার ছাড়া কেনা সম্ভব না বোঝানোটাই এই নাটকের সবচেয়ে বড় ভুল। যাদের হুইলচেয়ার নেই এবং যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার তারা এখান থেকে বুঝে নেবে হুইলচেয়ার কেনা তাঁদের সামর্থ্যের বাইরে। যাদের কেনার আগ্রহ আছে তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এমনিতে আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহৃত সহায়ক উপকরণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা নেই তেমন।
মিডিয়াতে যদি এই ধরণের নাটক প্রচারিত হয় দেখানো উচিৎ একজন মানুষ প্রতিবন্ধী হলেও তার জীবন যাপনের সহায়ক উপকরণ গুলো পেলে তাঁদের জীবন ধারণ অনেক সহজ হয়ে যায়। তারাও আর দশজনের মতোই স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারে। এই ধরণের প্রচারনা আরো বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন।
তাই বলছি, নিজে সচেতন হোন। অন্যকেও সচেতন করে তুলুন প্লিজ।
ভালো থাকুন। ভালো রাখুন।