তোর মামনির জন্য আমার আসলেই খারাপ লাগছে। সারাদিন একা একা বাসায় সময় কাটানো আসলেই টাফ কিন্তু আর কোন উপায় ও নেই আপাতত। মাঝে মাঝে নিজের স্বপ্নের জব তথা কোন ভার্সিটির সার্কুলার দেখলে সে এ্যাপ্লাই করে। তোর মামনির যদি কোন ভার্সিটিতে জব হয়ে যায় তাহলে সে যে কি খুশী হবে ব্যাপারটা তুই কল্পনাও করতে পারবিনা। এখনও কোথাও থেকে কল পায়নি, এ বিষয়টা নিয়ে সে বেশ হতাশ। তাকে আরও অনেকদিন জবের বাইরে থাকতে হলে শেষে সে নতুন করে আবার জব পাবে কিনা এই হতাশাটা মাঝে মাঝেই তোর মামনিকে বেশ গ্রাস করে। সে খুব হতাশ হয়ে পড়ে, আমার কাছে জানতে চায় সে আদৌ কোন জব পাবে কিনা। আমি আশ্বস্ত করলেও বুঝি তার মনে একটা কিন্তু সব সময় রয়েই যায়। পরক্ষনে সে নিজেই আনমনে বলে উঠে জবের চেয়ে আমার সন্তান অনেক বড়, তার প্রায়োরিটি সবার আগে।
ইফতারের সময় সবসময় অফিসের ব্যস্ততার কারনে আমি তোর মামনিকে সময় দিতে পারিনা, এটাও তার জন্য বেশ কস্টকর, কিন্তু কি আর করা – কর্মময় জীবনে আমারও অন্যথা করার উপায় নেই। এমনি করে চলতে চলতে ঈদ চলে আসে। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব । তোর মামনি সবার জন্য কেনাকাটা করে , বাচ্চাদের জিনিসপত্রের দোকানের সামনে দিয়ে যাবার সময় আমরা দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি, আর ভাবি ইনশাআল্লাহ আগামী ঈদে আমাদের তুই আমাদের সাথেই থাকবি। তোকে নিয়েই হবে আমাদের সব।
আমরা চিটাগং চলে এসেছি ঈদ করার জন্য । আসার আগে তোর মামা মামীদের সাথে , নানুর সাথে দেখা করে আসলাম, সবাই তোর মামনিকে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত বটে, তার সুস্হতা সবচেয়ে বেশী দরকারি।
তোর দাদা এখন আল্লাহর রহমতে পুরোপুরি সুস্হ আছেন। তারা সবাই ব্যস্ত তোর মামনিকে নিয়ে। তোর মামনির বিয়ের পর আমাদের বাসায় এটা প্রথম ঈদ । তোর দাদী মা তোর ফুফি সহ মার্কেটে ঘুরে ঘুরে তোর মামনির জন্য শপিং করে নিয়ে এসেছেন, নতুন বউ বলে কথা !!!! তোর মামনির যত্নআত্তি নিয়ে সবাই ব্যস্ত- সে ঠিকমত খাচ্ছে কিনা, কি খাচ্ছে, সময়মত খাচ্ছেত।
ঈদ মানেই আনন্দ- এতে কোন দ্বিমত নেই, কিন্তু তারপরও এবারের ঈদে কিছুটা শূন্যতা ছুয়ে ছিল আমাকে। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের একজন গত একযুগ ধরে আমরা নিয়মিত একসাথে ঈদের নামায পড়েছি- এবার সে চিটাগং এ আসেনি। ঈদের আগের রাতে আমরা ঘনিষ্ঠ সব বন্ধুরা চিটাগং নিউমার্কেটে এক হয়ে আড্ডা দিব, এটা গত অনেক বছরের একটা নিয়মিত রুটিন, এবারও তাই হল, আমরা সবাই উপস্হিত, একমাত্র ঐ বন্ধুটি ছাড়া। তার অনুপস্হিতি আমাদের সবাইকে ছুয়ে গেল। ঈদের নামায শেষেও আমার তার কথায় মনে হল, সবার আগে কোলাকুলিটা তার সাথেই আমার করা হত।
পারিবারিক জটিলতায় সে এবার আসেনি। তার বাবা মা আর বউ এর মাঝে সম্পর্ক ভালনা -এটার জের ধরে এমন ঘটনা। তার কাছ থেকে যতটুকু জেনেছি আর দেখে যতটুকু বুঝেছি তার বউটা মোটেই সুস্হ্য কোন মানসিকতার নয় আর এর ফলস্বরুপ এমন ঘটনা। বন্ধুটির বাচ্চা হলেও তার বাবা মা তাকে দেখতে যায়নি- এই ব্যাপারটা আমাকে মাঝে মাঝে পীড়া দেয় । পারিবারিক এই সব ঝামেলায় বলতে গেলে এক ধরনের অসুস্হ জীবন যাপন করছে আমার সব থেকে কাছের এ বন্ধুটি। কারো সাথেই তার এখন স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই।
বন্ধুটির অনুপস্হিতি আর এইসব দেখে আমার বেশ খারাপ লাগে । সুস্হ সুন্দর পারিবারিক জীবনই যদি না থাকে তাহলে এই পৃথিবীতে আর কি থাকল, কিসের জন্য এত পরিশ্রম করে পথ চলা। প্রতিদিন ফোনে তোর দাদা দাদী যখন তোর মার খবর নেয়, তাকে নানারকম উপদেশ দেয়, আমাকে বলে তার জন্য এটা ওটা করতে – দিনশেষে এইসব দেখে একটা ভাললাগা আর পূর্ণতা নিয়ে আমি ঘুমাতে যেতে পারি। তোর দাদী আর তোর মা – বলতে গেলে সব ঘটনায় তারা একে অন্যের সাথে শেয়ার করে, নানা বিষয় নিয়ে কত যে গল্প করে তারা, ঈদের দিন কি রান্না হবে, কিভাবে হবে- উফ আমি নিশ্চিত এই সব গল্প শুনলে তোর ও মাথা ধরে যাবে, কিন্তু দিন শেষে দেখবি চমৎকার একটা ভাললাগায় মনটা ভরে আছে।
সুস্হ – সুন্দর, পরষ্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল পারিবারিক জীবন আর কিছু প্রাণপ্রিয় বন্ধু থাকলে একটা জীবন পরম আনন্দে কাটিয়ে দেবার জন্য এর বাইরে অন্য অনেক অপূর্ণতা থাকলেও সেটা চলতি পথে দেখবি খুব বেশী বাঁধা হয়ে উঠতে পারবেনা, জীবন বহতা নদীর মত সুন্দর ভাবে বয়ে যাবেই।
সঙ্গী নির্বাচন জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় সবসময়। মনের মত সঙ্গী পেলে সব বাঁধাই অনায়াসে জয় করা সম্ভব। আল্লাহর রহমতে আমার বন্ধু ভাগ্য নিয়ে আমি সবসময় খুশী। চমৎকার কিছু মানুষ আমার নিত্য সঙ্গী – মনটায় ভাল হয়ে যায় অমন প্রাণখোলা প্রিয় মানুষগুলোর সান্নিধ্যে গেলে।
ইস্, কী যে সুন্দর হচ্ছে সিরিজটা!
এটা পড়ে আমি আপনার ফ্যান হয়ে গেলাম ভাইয়া। 😀
😀
দারুণ লাগছে সিরিজটা।
🙂
ভালো লাগছে খুব। চলুক।
অন্নেক শুভকামনা রইলো। 🙂
দোয়া কামনায়