মাতৃত্ব বিশাল এক সাধনার নাম বলা চলে। যে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মেয়েরা মা হয়ে উঠে তা পুরুষদের পক্ষে উপলব্ধি করা কঠিন না, আসলে সম্ভবই না, তাই মাতৃত্ব কে নারীর অহংকার ও বলা যায়, আল্লাহর পরম উপহার নির্দ্বিধায়।
তোর মামনি যেন প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে বদলে নিচ্ছে, নিজের পৃথিবীটাকে নতুন করে সাজাচ্ছে, এই পৃথিবীর সবটুকু শুধুই তোকে নিয়ে, অন্য কোন কিছুর কোন অস্তিত্ব নেই এখানে। যা কিছু আছে সবই তোর প্রয়োজনেই । তার ভাবনা, চিন্তা, চেতনা সব কিছু জুড়ে শুধু তুই ।
অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি তোর মামনি খুব মনোযোগ দিয়ে মোবাইলে কি যেন পড়ছে, আমার দিকে চোখাচোখি হতে সে কাছে যেতে বলল। ইদানিং তোর মামনির জীবনটা একটু আরামদায়ক হয়েছে, তোর মামনিকে কাজ কর্মে সাহায্য করার জন্য তোর মামীর ড্রাইভার হান্নান মামা, যে নিজে খুবই চমৎকার একটা মানুষ- তোর মামনিকে এবং আমাকে অসম্ভব পছন্দ করে, শ্রদ্ধা করে, যা তার আচার আচরনে খুব ভাল ভাবে প্রকাশ পায়, সে তার বাড়ির এক প্রতিবেশী বোনকে নিয়ে এসেছে। বয়ষ্ক হলেও মহিলা মোটামুটি সব কাজই করতে পারেন, যা তোর মামনির জন্য বিশাল রিলিফ, তার জন্য বিশ্রামটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহিলা হাসি খুশী এবং খুব সহজেই আমাদের ঘরের একজন হয়ে গেছে সে। ঈদানিং রান্নাটাও সে ভালই করছে, এটা সবচেয়ে বড় শান্তি, তোর মামনির দেখিয়ে দেয়াটা সে খুব ভাল ভাবে আয়ত্ব করে নিয়েছে।
তোর মামনির শান্তিটা এই না যে বুয়া ভাল রান্না করছে, বরং আমাকে রান্না করতে হচ্ছেনা এটাই মূল কারন। গর্ভধারনের প্রথম তিনটা মাস এত বেশী কস্টকর, ব্যাপারটা আমারই সহ্য হচ্ছিলনা। মাঝে মাঝে তোর মামনি বিছানা থেকেই উঠতে পারছিলনা, রান্না করাতো অনেক পরের কথা, তদুপরি বার বার বমি করার কারনে সে অনেক বেশী দুর্বল হয়ে পড়ছিল । তোর উপর কি এই সময় আমার রাগ উঠেচিল !!! হ্যাঁ উঠেছিল বৈকি, না উঠার কোন কারন নেই, তোর মামনির কস্টটা যে আমাকেও কাঁদিয়ে দিচ্ছিল , কিন্তু পরম ভালবাসার কিছু পেতে হলে কস্ট হবেই সেটা ভেবে নিলাম এই আর কি ।
তোর মামনির কাছে যাওয়ার পর সে আমার হাতে মোবাইলটা তুলে দিয়ে বলল পড় । আমি ভেবেছিলাম তার কোন বান্ধবী হয়ত জীবনের কঠিন কোন বিষয় নিয়ে তার সাজেশন চাইছে বা অমন কিছু, কারন এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে, হয়ত বিয়ের জন্য কোন বান্ধবীর মা যে পাত্রকে পছন্দ করেছে বান্ধবীর সে পাত্রকে পছন্দনা, এখন এই ব্যাপারটা কি করে ঠেকানো যায় তা নিয়ে তোমার মামনির পরামর্শ দরকার, হা হা হা। মজার ব্যাপার হচ্ছে তোর মামনি এবং আমি , আমরা দুজনে প্রায়ই এই ধরনের কনসালটেন্সি করি, বন্ধু মহল এই জাতীয় নানা সমস্যায় আমাদের মূল্যবান মতামত চেয়ে আমাদেরকে বাধিত করে, আমরাও আগ্রহ ভরে চেস্টা করি সেরাটা দেয়ার !!!!
যাই হউক মোবাইলের স্ক্রীনে লেখা দেখে আমি একটু অবাকই হলাম। তুই যে তোর মামনির কতটা জুড়ে আছিস, কতটা সে তোকে ধারন করেছে তা আরো একবার টের পেলাম।
বেবীসেন্টার নামক একটা ওয়েব সাইটে সে গর্ভকালীন সময়ে শিশুর বৃদ্ধী নিয়ে পড়ছিল , আমিও পেজটি পড়া শুরু করলাম, তখন তোর মামনি পাশ থেকে বলা শুরু করল তুই এখন সাড়ে চার ইঞ্চি লম্বা হয়েছিস, ওজন সাড়ে তিন আউন্স , পা টা অনেকটাই ডেভেলপ হয়ে গেছে- আমি পড়া বাদ দিয়ে তোর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, তার চোখে মুখে অন্যরকম একটা দীপ্তি দেখতে পেলাম যেটা এখন লিখে তোকে বোঝানো যাবেনা।
অনলাইনে বাবুদের নিয়ে নানা লেখা পড়ে সে সময় কাটায় । তোর মামনির আগ্রহের কারনে আমি নেট থেকে ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফির কিছু ভিডিও নিয়ে আসলাম, ইনসাইড দা ওম্ব নামের এই ডকুমেন্টারি,যেগুলোতে বিভিন্ন সময়ের ভ্রুনের অবস্হা নিয়ে বিশদ বর্ণনা দেয়া আছে, আগ্রহভরে তা দেখা হল আমাদের, অবাক করা এই সৃষ্টি প্রক্রিয়া। অফিস থেকে ফিরে আমি আর তোর মামনি একসাথে বসে টিভি দেখি, সিনেমা দেখি, এভাবেই কেটে যেতে থাকে সময়।
প্রতিদিনই তোর মামনি খুব আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করে আমার মুখ থেকে তোকে নিয়ে কিছু শোনার জন্য। সে প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমার কেমন লাগছে, তোকে নিয়ে আমি কি কি ভাবি, কি ভাবতে ভাল লাগে। সাথে সাথে সে তোকে নিয়ে তার নানান অনুভূতি গুলোও বলে যায়। মা না হওয়া ছাড়া আসলে এইভাবে ফীল করা সম্ভবনা, একমাত্র মাদের পক্ষেই সম্ভব। তবে তোর কপালে সামান্য দুঃখ আছে, কচলাকচলি ব্যাপারটা যদি সহ্য করতে না পারিস তবে। কারন তোর মামনি তোর মামাত ভাই বোনদেরকে নিয়ে যে পরিমান কচলাকচলি করে তাতে বাচ্চা গুলার খবর হয়ে যায়, অবশ্য তারা তোর মামনির ভয়ংকর ভক্ত, তোর মামনিই পারে তাদেরকে ঠিকমত সামলাতে।
তোমার মামনি প্রায়ই বলে বসে, আমার না টেম্বাটাকে (টেম্বা – আপাতত আমরা কিন্তু তোমাকে এই নামেই ডাকছি, কিভাবে এটার উদ্ভব তা মনে করতে পারছিনা, কিন্তু এটা হয়ে গেছে ) নিয়ে কচলাকচলি করতে ইচ্ছে করছে, সাথে সাথে সে আমাকে সতর্ক করে দেয় এই বলে, সে কচলাকচলি করার সময় আমি যেন বকা না দিই !!!!
সেই প্রথম দিন থেকে প্রতিটি দিনই কিন্তু তোর সাথে অনেকটা সময় কথা বলে কেটে যায় আমার, নানা রকম কথা, নানান পরিকল্পনা তোর সাথে শেয়ার করা আজকাল আমার নিত্য অভ্যাস হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই এটা শুরু হয়, শুধু কথা না, আগামীতে তুই কি কি করবি সেসব ভাবনাও আজকাল মাথায় এসে ঘুরে ফিরে যায়। হাঁটতে শুরু করার পর নিশ্ছয় সকালে অফিসে যাবার সময় প্রতিদিনই তোর বাইরে বেরোনোর আব্দার থাকবে, আমার অতি প্রিয় ক্যামেরাটা নিশ্চয় তোমার ভয়ে এখনকার মত যেখানে সেখানে ফেলে রাখা যাবেনা, ড্রইংরুমে সাজানো বই কিংবা ফুলদানী, কি ভয় পেয়ে যাচ্ছিস, উঁহু ভয়ের কিছু নেই, আমার ক্যামেরা বাদে বাকি যে কোন কিছুই তুই ইচ্ছা হলে ভেঙ্গে ফেলিস , আমি অন্তত কিছু বলবোনা, তবে তোমার মামনির শখের ফুলদানী যদি ভেঙ্গে ফেল সেটার কি প্রতিক্রিয়া হবে এখনই ঠিক বলা যাচ্ছেনা , হয়ত কিছুই হবেনা, কারন তোমার মামনি মাঝে মাঝে যেসব ঘোষনা দেন তাতে আমার অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। সে অলরেডী ঘোষনা করে দিয়েছে লেখা পড়ার জন্য হলেও সে তোমাকে দূরে পাঠাতে রাজী নয়, আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসি, এই নিয়ে কথা বলা বা ভাবনার সময় এখনও অনেক দেরী ।
অফিসে যাবার সময় রিক্সায় বসে বসে প্রতিদিন তোর সাথে নানান কথা হয়, যাবার পথে মাঠে কাঁদা দেখে আমি মনে মনে পরিকল্পনা করি তুই একটু বড় হলেই তোকে নিয়ে এই কাদামাটিতে ফুটবল খেলতে হবে, মাটির মানুষ আগেত মাটিকে চিনতে হবে, না হলে যে মানুষকে চেনা পুরোপুরি হয়ে উঠবেনা। আমরা সবাই এই একই মাটির মানুষ, জীবনে মানুষ হয়ে উঠার জন্য যে এই উপলদ্ধী একান্ত জরুরী। শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত জীবনে চলার পথে নানান রকমের মানুষ, নানান শ্রেনীর মানুষের সংস্পর্শ আমি পেয়েছি, তাদের কেউ সমাজের একদম নিন্মস্তরের, কেউ বা অতি উচ্চ সামাজিক অবস্হানের, মানুষ হয়ে উঠার জন্য সবশ্রেনীর মানুষের সম্পর্কে জানা প্রয়োজন । মানুষ হবার জন্য সর্বাগ্রে দরকার মানুষকে জানা, বোঝা, মানুষের কাছাকাছি থাকা। প্রতিটা পরিচয়ই তোমাকে নতুন নতুন উপলদ্ধী এনে দিবে, সবার কাছ থেকেই তুমি কিছু না কিছু শিখবেই, সেটা ভাল হউক মন্দ হউক, বেছে নেবার দায়িত্ব তোমার, শিক্ষাটা এই ক্ষেত্রে তোমাকে এই বেছে নেবার জন্য সবচেয়ে বেশী সাহায্য করবে।
😀 বাবুকে এখন মাঝে মাঝে তুমিও ডাকছেন দেখি ভাইয়া।
কচলাকচলির কথা পড়ে হাসলাম খুব। 😛 বাবুটার জন্য অনেক দোয়া।
আর মাটির কাছাকাছি থাকার কথাটা আমার দাদুও বলতেন। আমরা শহরের মানুষরা তো মাটিতে পা-ই ছোঁয়াই না। 🙁
বড় হচ্ছেত, এখন একটু তুমি টুমি ও বলতে হবেত :):)
শেষ কবে যে মাটিতে পা দিয়েছি !!!
আপনার এই সিরিজটাকে হিংসা করি ভীষণ! কিন্তু বাবুটার জন্য অন্নেক অন্নেক আদর আর দোয়া! :beshikhushi:
শুভকামনা রইল
এত সুন্দর অনুভূতি গুলো মাত্র সেই বুঝবে সঠিক যে বাবা-মা হবে। আমি এখন বুঝতে না পারলেও আপনার লেখা পড়ে অনুমান করতে চেষ্টা করছি 🙂 বাবুটার জন্য অনেক দোয়া। তবে ভাইয়া আদর করে হলেও সুন্দর কোন নাম দিয়ে ডাকুন বাবুকে 🙂
এইত ইনশাআল্লাহ আর কিছু দিন পরেই একটা নাম দিয়ে দিব :):)
শুভকামনা টেম্বা, আর ওর মা-বাবার জন্য :love:
:):)
টেম্বা! 😛
দারুণ লাগছে। তুই থেকে তুমি হলো কেন? 😀
*কষ্ট* বানানটা দেইখেন ভাইয়া
টেম্বা!!! 😛
বাবুদের কচলাকচলি করার মজাই আলাদা। 😀
মাটির কাছে পৌছে যাক শিশুরা আবার………
ভাইয়া, তৃতীয় পর্বটা খুঁজে পেলাম না…… :thinking: