ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার মাঝে অন্যরকম একটা মজা আছে, কিন্তু তোমার জন্য আমরা এই আনন্দটা মিস করছি, বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর টর হয়ে গেলে সেটা তোমার জন্য মোটেও ভাল হবেনা, তবে শৈশবের বেড়ে উঠার সময় মাঝে মাঝে এই বৃষ্টিতে হারিয়ে যাওয়া মন্দ নয়, শরীরটাও সেই সাথে ঝড় বৃষ্টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে, অবশ্য তোমার মা তোমাকে এইসব পারমিট না করলে আমার কিছু করার নেই, আমি শুধু বলতে পারি মাঝে মাঝে ভিজে অভ্যস্ত হওয়া দরকার, শরীরের সহ্য ক্ষমতা বাড়বে।
একটা ব্যাপার নিয়ে আমি বেশ চিন্তিত, তোকে সাঁতার শিখানোর কোন উপায় আমি দেখছিনা, এই ঢাকা শহরে এখন কোন পুকুরইত চোখে পড়েনা। সাঁতার জানাটা খুবই কাজের জিনিস, তবে সুইমিংপুলে শেখা সাঁতার দরকারের সময় খুব একটা কাজে আসবেনা। চারদেয়ালের ঘেরা পুলে সাহসের দরকার হয়না কিন্তু বড় দীঘি কিংবা নদীতে সাঁতার কাটার জন্য সাহসটাই আগে দরকার। আমি সাঁতার শিখেছিলাম বড় দীঘিতে, আমার দাদা আর তোর দাদা আমাকে সাঁতার শিখিয়েছেন। একবার আমার দাদু আমাকে নিয়ে গেল পুকুরে গোসল করার সময়, তিনি তার গোসল সেরে উঠে গেছেন, আমি তখনও পানিতে সাঁতার প্র্যাকটিস করছি, হঠাৎ করে আমি তালগোল পাকিয়ে ডুবে যেতে নিয়ে ছিলাম, পানির উপরে শুধু হাত টা দেখা যাচ্ছে, দাদুর চোখে পড়ায় সাথে সাথে তিনি এক লাফে পানিতে নেমে আমাকে তুলে আনেন আর অল্প কিছু সময় দেরী হলেই জান চলে যেত, এই ঘটনার পর বেশকিছুদিন তোমার দাদীমা আমাকে পুকুরে যেতে দেননি। অবশ্য পরে তোমার দাদু আমাকে তার সাথে করে পুকুরে নিয়ে যেত আর সাঁতারের প্রশিক্ষন দিত, একসময় দেখা গেল আমি নিজে নিজে বেশ ভাল সাঁতার কাটতে পারছি, আর এই জিনিস তুমি একবার শিখলে জীবনে কখনোই ভুলবেনা।
এমনই আরেকটি জিনিস হল সাইকেল চালানো, যেটাতে ভাল দখল থাকলে পরবর্তীতে মোটর সাইকেল চালানো বা ড্রাইভিং এ বেশ ভাল কাজ দেয়, এটাও একবার শিখলে আর জীবনে ভোলার চান্স নেই।
একটু বড় হলে প্রতিটি শিশুর মত তোমারও পছন্দের একটা বিষয় হবে কার্টুন দেখা, এই ব্যাপারে তুমি অবশ্য অন্যদের তুলনায় নিজেকে একটু লাকি ভাবতে পার, কারন অন্য বাচ্চাদের মারা কার্টুন বাধ্য হয়ে দেখলেও, তোমার মামনি এখনও খুব আগ্রহ নিয়ে এই জিনিসটি দেখে থাকে, এতে তার কোন ক্লান্তিও নেই। তার সমবয়সীরা যেখানে নানা ধরনের সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত সেখানে সে বেশীর ভাগ সময় আমার পছন্দের চ্যানেল ডিসকোভারি বা ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফি দেখে থাকে, আর তার হাতে রিমোট থাকলে সেটার গন্তব্য হয় কার্টুন চ্যানেল!!!! অযথা সিরিয়াল দেখে সময় নস্ট করার কোন অভ্যাস নেই তোমার মামনির, তার এ ব্যাপারটি আমার খুবই ভাল লাগে, জীবনি শক্তি সিরিয়াল দেখে নস্ট করার কোন মানে নেই। কার্টুনের ক্ষেত্রে ‘টম এন্ড জেরী’ হলে দেখার সময় আমাকেও পাশে পাবা এই কথা হলফ করে বলতে পারি, যেকোন পরিস্হিতিতে হাসতে চাইলে এটার যে কোন বিকল্প নেই ।
তোর সাথে এমনও হাজার কথা হয় প্রতিদিনই, নতুন নতুন কথা নানান বিষয়ে, তবে ইদানিং একটা জিনিস খেয়াল করলাম কথা বলার সাথে সাথে আমি আমার নিজস্ব কিছু ব্যাপার তোর উপর চাপিয়ে দিচ্ছে, মানে হল কোন একটা বিষয়ে কি করতে হবে বা কি করা উচিত, কিংবা কোন ডিসিশান নেয়ার ব্যাপার হলে তুই কোনটা নিবি- আমি বলছিনা আমার ভাবনাগুলো সবই সঠিক, তোকে কোন বিষয় জোর করে চাপিয়ে দেয়ার পক্ষপাতি আমি নই, আমার ভাবনাগুলো-আমার অভিজ্ঞতাগুলো তোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে হেল্প করবে, তোকে সঠিক ডিসিশান নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবে -এমনটি হলেই আমি খুশী।
ব্যক্তিজীবনে আমি অতিমাত্রায় আউটগোয়িং, হইহুল্লোড় আড্ডা, শেয়ারিং এইসব নিয়েই কেটে যায় দিন, তোর মামনি আর আমি দুজনে একা একা পথ চলার চেয়ে সবাইকে নিয়ে আড্ডা দেয়া হইহুল্লোড় করা , ঘুরে বেড়ানোটাকেই বেশী পছন্দ করি। আবেগ উচ্ছাস চেপে রাখার কোন বিষয় থাকেনা। হস্তরেখা বা রাশিচক্র এই বিষয়গুলোর বাস্তব কোন ভিত্তি নেই যদিও তাদের কোন কোন বিষয় দেখা যাবে বাস্তবের সাথে মিলে যায় । যেমন, আমার এক বন্ধু শিবাজী আমার হাত দেখে বলল একটা জিনিস তোমার ব্যাপারে বেশ কনফিউজিং, তোমার হাত বলছে তুমি অতি মাত্রায় আত্মকেন্দ্রীক, চাপা স্বভাবের- কিন্তু বাস্তবেত তুমি তা না।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই চাপা স্বভাবটা যেন আমার মধ্য ইদানিং ভর করেছে, বিশেষ করে তোর বিষয়ে। তোর আগমনি সংবাদের শুরুতেই ঠিক করেছিলাম তোকে নিয়ে আমাদের দিনলিপি লিখে রাখব , আস্তে আস্তে তা করছিও। কিন্তু তোর মামনির সাথে এই ব্যাপারটা আমি শেয়ার করিনি তাকে সারপ্রাইজ দিব বলে। যার ফলটা হয়েছে কি তোর ব্যাপারে কোন কিছুই, কোন অনুভূতিই আমি তোর মামনির সাথে শেয়ার করছিনা, ভাবছি সবই আগে লিখে ফেলি, সে পড়বে আর অন্যরকম ভাললাগা তার মাঝেও ছড়িয়ে পড়বে।
এই ব্যাপারটা তোমার মামনি মোটেও হজম করতে পারছেনা। তোমার ব্যাপারে তার সামনে আমি কি করে এত নিস্পৃহ থাকছি সেটা কোন ভাবেই তার মাথায় ঢুকছেনা, সে কথা সে অকপটে আমাকে জানাচ্ছেও । আমি কি ভাবি, আমার কেমন লাগে, আমার কোন পরিকল্পনা……………আমার থেকে তেমন কোন সাড়া না পেয়ে সে খুব হতাশ হয় ।
অবশ্য এখানে আরেকটি বিষয়ও আছে, আমার মনে হয়কি তোমাকে নিয়ে আমি অনুভূতি বলতে গেলে সেটা আসলে যথার্ত ভাবে মনে হয় ফুটিয়ে তুলতে পারবোনা। জানিনা এইভাবে লিখেও ঠিকমত প্রকাশ করতে পারছি কিনা।
বড় হলে তুমি অবশ্য আরেকটি জিনিস আবিষ্কার করবে, বাবা মার প্রতি সন্তান কিংবা বড় হয়ে যাবার পর সন্তানের প্রতি ভালবাসার প্রকাশটা আমাদের সমাজে যথেস্ট কম, যদিও অন্তরে ভালবাসার কোন কমতি নেই। ভালবাসা প্রকাশে আমাদের বাঙ্গালী সমাজ বেশ নীরব।ভালবাসাটা বুঝতে না দেয়ার মাঝেই যেন ভালবাসার সার্থকতা।
“বাবা মার প্রতি সন্তান কিংবা বড় হয়ে যাবার পর সন্তানের প্রতি ভালবাসার প্রকাশটা আমাদের সমাজে যথেষ্ট কম, যদিও অন্তরে ভালবাসার কোন কমতি নেই। ভালবাসা প্রকাশে আমাদের বাঙ্গালী সমাজ বেশ নীরব। ভালবাসাটা বুঝতে না দেয়ার মাঝেই যেন ভালবাসার সার্থকতা।” – হুম আসলেই।
পড়ছি দারুণ এই সিরিজটা। 😀
যথেষ্ট বানানটা একটু ঠিক করবেন ভাইয়া? 🙂
আমিও একমত নয়া হয়ে পারলাম না
“বাবা মার প্রতি সন্তান কিংবা বড় হয়ে যাবার পর সন্তানের প্রতি ভালবাসার প্রকাশটা আমাদের সমাজে যথেস্ট কম, যদিও অন্তরে ভালবাসার কোন কমতি নেই। ভালবাসা প্রকাশে আমাদের বাঙ্গালী সমাজ বেশ নীরব।ভালবাসাটা বুঝতে না দেয়ার মাঝেই যেন ভালবাসার সার্থকতা”
আমি নিজেও নিজের আবেগ তেমন ভাল ভাবে প্রকাশ করতে পারি না।
অনাগত সন্তানের প্রতি অদ্ভূত মমতা যেন ফুটে উঠছে লেখার প্রতিটা শব্দে, প্রতিটা বাক্যে………। চলুক লেখাটা……
ভাইয়া, বানানগুলো একটু ঠিক করবেন।
নস্ট-নষ্ট
ঢুকছেনা- ঢুকছে না
আগমনি-আগমনী