[২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে TED পুরস্কার পাবার পর Karen Armstrong এই Charter for Compassion, অর্থাৎ সহানুভূতির সনদ তৈরি আর এর প্রসারের প্রতিজ্ঞা করেন। সহানুভূতি নিয়ে দেড় লাখ মানুষের মত একসাথে করে ২০০৯এর নভেম্বরে পৃথিবীর সামনে উন্মোচন করা হয় এ সনদ। Golden Rule বলে পরিচিত এই সনদ এমন এক আদর্শের কথা বলে যা কোন ধর্ম কিংবা নৈতিক মাপকাঠির সাথে সাংঘর্ষিক তো নয়ই; বরং সুন্দর এক পৃথিবী গড়তে মানুষে মানুষে সহমর্মিতা কতটা প্রয়োজন আর তা কেমন হওয়া উচিত তা-ই এই সনদের মূলকথা।]
পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম, নীতি কিংবা আধ্যাত্মিক আদর্শ খুঁজে পাওয়া যাবে না যাতে সহানুভূতির শিক্ষা দেয়া হয় নি। সহানুভূতিশীল হওয়ার অর্থ – আমি আরেকজন মানুষের সাথে ঠিক তেমন আচরণই করবো যেমনটা আমি তার কাছ থেকে পেতে চাই। চারপাশের সবার দুঃখকষ্ট কমাতে অনবরত কাজ করে যেতে শেখায় আমাদেরকে এই বোধ। সেই সাথে, নিজের ভাবনাচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু থেকে নিজেকে সরিয়ে সেখানে অন্যদেরকে স্থান দিতে শেখায় আমাদেরকে সহানুভূতি। আরও জানায়, আমরা যেন যে কোন ভিন্নতা নির্বিশেষে প্রতিটা মানুষকে ন্যায়, সাম্য আর শ্রদ্ধার দিক থেকে সমান চোখে দেখি আর যার যার স্বকীয়তার প্রতি সম্মান জানাই।
সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত আর সামাজিক জীবনে অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাটাও জরুরি। উগ্র কথা বলে কিংবা সহিংস কাজ করে মানুষের প্রতি ঘৃণা, অন্ধ স্বজাত্যবোধ কিংবা অহঙ্কারের প্রকাশ করাটা মনুষ্যত্বকে অস্বীকার করারই নামান্তর। আবার মানুষের সহায়-সম্বল কেড়ে নিয়ে, তাকে শোষণ করে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা; আরেকজনকে হেয় প্রতিপন্ন করে মানুষে মানুষে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়াও (মানুষগুলো আমাদের শত্রু হোক কি মিত্র) ঠিক তাই। তবে দুঃখজনক হলেও এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে – মানুষ হিসেবে আমরা যে কেবল সহানুভূতিশীল হতে ব্যর্থ তাই নয়, বরং আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ধর্মের নাম করে মানুষের দুর্দশার মাত্রা দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি আজ তাই আমাদের আহ্বান ~ আমরা যেন নৈতিকতা আর ধর্মের মূলে সহানুভূতিকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসি ~ উগ্রতা, ঘৃণা কিংবা অবজ্ঞাকে সমর্থন দিয়ে করা ধর্মের যে কোন অপব্যাখ্যাকে অস্বীকার করি ~ অন্যান্য ধর্ম, আচার আর সংস্কৃতি সম্পর্কে তরুণদের কাছে নির্ভুল আর সশ্রদ্ধ তথ্য পৌঁছে দেই ~ সাংস্কৃতিক আর ধর্মীয় ভিন্নতাকে ইতিবাচকভাবে দেখতে মানুষকে উৎসাহিত করি ~ শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সব মানুষের দুঃখকষ্ট সম্পর্কে জানি আর সে ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হওয়ার চেষ্টা করি।
আমাদের এই বিভক্ত পৃথিবীতে সহানুভূতির শক্তিকে স্পষ্ট, আলোকিত আর গতিশীল করাটা আজ সময়ের দাবি। এই বোধের জন্ম স্বার্থপরতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থেকে; যা যে কোন রাজনীতি, মতবাদ, আদর্শ কিংবা ধর্মের তৈরি সীমারেখাকে ভেঙে ফেলতে পারে। মানুষে মানুষে সম্পর্ক জোরদার করতে আর মানবতাবোধকে পূর্ণতা দিতে সহানুভূতির কোন জুড়ি নেই – যেহেতু এই অনুভূতির উৎসই হচ্ছে আমাদের একে অন্যের মধ্যকার পরম নির্ভরতা থেকে। আজ আলোকিত হবার পথে আমাদের এই যাত্রাই কেবল পৃথিবীকে একটা ন্যায্য অর্থনীতি আর শান্তিপূর্ণ মানবসমাজ উপহার দিতে পারে।
সহানুভূতি সনদের ওয়েবসাইট ((http://charterforcompassion.org/site/))
হুম……।আম্রাআমা আআআম্র
আমরা যদি অন্যের জুতায় পা রাখতে পারি আর উইন উইন চিন্তা করতে পারি………তাহলে সহানুভুতির পথে অনেক দূর সহজেই এগিয়ে জেতে পারি।
হুম আসলেই। 🙂 ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
জেগে উঠুক মানবতা, গড়ে উঠুক সহানুভূতি……
সহমত। 🙂
দারুণ একটা কাজ!
অসাধারণ সনদ!
😀
ধন্যবাদ একটি সুন্দর অনুবাদের জন্য! 🙂
তোমাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য! 🙂
চমৎকার একটা সনদের চমৎকার একটা অনুবাদ!!
:huzur: :huzur:
সেখানে চমৎকার একটা আপুর কমেন্ট! 😀 😀
জেগে উঠুক মানবতা, গড়ে উঠুক সহানুভূতি……
আমরা আরো বেশি করে ‘মানুষ’ হই!
সনদ টা চমৎকার, আশা জাগানিয়া…
আর অনুবাদের কথা? নাই-বা বলি… 🙂
আপু 😀
দারুণ অনুবাদ সামিরা।
সহজবোধ্য, ইনফরমেটিভ।
থ্যাঙ্কু ফিনিক্সপু, তুমি সাহায্য করছো সে জন্য। 🙂 প্রথমবার যেই পচা হইছিল!
অসাধারণ একটা সনদ
আর তোমার অনুবাদ তো সবসময়ই দারুণ :love:
আসলেই অসাধারণ। 🙂
এই রকম সাম্প্রদায়িক সময়ে এই জাতীয় পোস্ট এবং চিন্তা ছড়ানো উচিৎ
সহমত। যদিও ‘ফরমাল’ ভাষার কারণে বেশি ছড়াচ্ছে না মনে হয়।
এই ভদ্রমহিলা গত বছর সেপ্টেম্বর ১১ উপলক্ষে আয়োজিত মুসলিমদের কনভেনশন এ এসেছিলেন। ওখানে তিনি শুরুই করেন আল্লাহর নাম ‘আর- রাহমান’ অর্থাৎ ‘The Compassionate’ উল্লেখ করে। সেই উদ্যোগে দালাই লামা, তারিক রামাদান সহ আরও অনেকে আছেন। উনারা নাকি ‘সিসিমপুর’ কার্টুন এও একটা Compassionate চরিত্র ঢোকানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কী ভালই না লাগে এসব শুনলে! মনে হয় আমি কবে ঐ লেভেলে কাজ করতে পারব!
কী চমৎকার! আমরা শুধু বিভক্তির কারণ খুঁজে না বের করে, নিজেদের মিলগুলো এভাবে একসাথে করে ভাবতে পারলে কত অসাধারণ ব্যাপার হবে!
ব্যক্তিগত আর সামাজিক জীবনে অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে প্রতিনিয়ত সহানুভূতির সাথে নিজেকে বিরত রাখাটাও জরুরি– এই বাক্যটি খুব নাড়া দিল। সব সময় এই চেস্টায় থাকি। দোয়া করবেন যেন সফল হই। 🙂
সফল হবে ইনশাআল্লাহ্। আমরা সবাই যেন হই।
সামিরা, তোমাকে ধন্যবাদ এমন একটা লেখা দেয়ার জন্য। আজকে টেড টক এ উনার টকগুলা দেখলাম। এইবার বল কী করা যায়। উনার ফিলসফি খুব সহজ, চেষ্টা করলেই ছড়ায় দেয়া সম্ভব। তুমি কি আরেকটু ঘাঁটাঘাটি করে আমাদের কে জানাবা, উনার লেখায় বা ওয়েবসাইট এ কীভাবে শুরু করতে হবে এ ব্যাপারে কিছু বলা আছে কিনা?
আচ্ছা আপু আমি আরেকটু পড়ে দেখছি। 🙂
দারুন একটা বিষয়ের দারুন অনুবাদ!
*দারুণ* 😀
ধন্যবাদ!
বানান ভুল! :wallbash:
থেঙ্কু থেঙ্কু! 😀
ফেবুতে রিকুটা এক্সেপ্ট কইরো আপু। মেসেজও দেয়া যায় না তোমারে।
অনুবাদ সফল, যারা আপনার লেখাটা পড়ছি তারাও হয়ত বুঝতে পারছি আসলে কতটা ভালো কথা বলেছে এই সনদ কিন্তু বাকীদের বোঝাবে কে? রামু ঘটনার পর কিইবা বলার আছে আমাদের? কাদা ছোড়াছুড়ির খেলা যেখানে নিত্যদিনের ঘটনা সেখানে সহানূভুতিশীল মানুষ পাবো কোথায় ? কে আছে একবারের জন্য একটু আত্মত্যাগ করবে ?
হতাশ হতাশ লাগে প্রায় যখন দেখি আমরা কোন দিকে এগুচ্ছি কিন্তু তারপরও আশা ছাড়ছি না। ভোর আসবেই।
আমরা যারা বুঝি তাদেরই বোধহয় বোঝাতে হবে বাকিদের। সেটা কীভাবে হবে চিন্তা করি না হয় সবাই মিলে।
সামিরা, মনে হয় সব সহানুভূতি গুলোকে একসাথে করা দরকার। তাহলে যদি জাতির কাজে আসে।
সেটাই।