সন্তান হচ্ছে মায়ের নাড়ি ছেড়া ধন । সন্তানের সাথে নাড়ি দিয়ে সরাসরি মায়ের দেহের সংযোগ, ধারন করার ব্যাপারটাত আছেই । আর তাই সন্তানের সব কিছুই যেন মা ই আগে টের পান। সন্তানের আগমনী , সন্তানের প্রথম নড়াচড়া এই পরমানন্দের বিষয়গুলোতে পিতার কোন ভূমিকাই নেই, মায়ের মুখে শুনে শুনে সে শুধু কেবল আহ্লাদিতই হতে পারে, এর বেশী কিছু নয় ।
সন্তান ধারনের প্রাথমিক কস্টকর অধ্যায়টুকু পার করার পর যেন শুরু হয় মায়ের জন্য নিত্য চমকের আর অবিভূত হবার মুহুর্তগুলোর আগমন। প্রতি পদে পদে যেন সন্তান মাকে জানিয়ে দেয় তার আগমনী, মায়ের উৎকন্ঠার সাথে সাথে ভাল লাগাও বাড়তে থাকে, মমতার নিবিড় বন্ধন আরো দৃঢ় হতে থাকে।
এমনি করে একদিন তোর মামনি ভীষন এক্সাইটেড হয়ে আমাকে ফোন করে জানাল তুই নাকি প্রথম নড়েচড়ে উঠেছিস!!!!! ফোনে শুনে আমার বোধ টা ও হল অন্যরকম, তবে সেটা হচ্ছে তোর মা যে অনুভূতিটা টের পাচ্ছে সেটা কেমন তা জানার আগ্রহ। তোর মামনির উজ্জল মুখখানা আমি অফিসে বসেই যেন দেখতে পেলাম, আমি নিশ্চিত সে এখন তার পেটের উপর একটা হাত আলতো করে ছুয়ে রেখেছে, তাকে দেখলে মনে হবে সে যেন সত্যি সত্যিই তোর গায়ের উপরে হাত রেখেছে, মাঝে মাঝে হাতটা পুরো পেটের উপরও একবার ঘুড়িয়ে আনবে ।
না এই অনভূতি উপলব্ধী করার কোন ক্ষমতা আমার নেই, পৃথিবীর কোন পিতারই নেই । তিলে তিলে কস্ট করে যে মা সন্তান ধারন করেন, সন্তানকে নিয়ে সব চরম অনুভূতিগুলোও তারাই পেয়ে থাকেন, সে জন্য বাবারা তার সন্তানের মাকে হিংসা করার কথা থাকলেও আদতে তারা তা করেনা, মা হওয়া যে এক বিশাল সাধনা, নিত্য নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে পাশ করে এই সৌভাগ্য অর্জন করতে হয়, পিতারা তথা পুরুষরা মনে হয়না এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারত !!!
তোর অস্তিত্ব আমি টের পাই আরো বেশ পরে, যখন তুই আরেকটু বেড়ে উঠেছিস, তোর পাগুলো আগের তুলনায় আরো বেশী সুগঠিত, হার্ট টা আরো শক্তিশালী, মাথাটাও ধীরে ধীরে পরিপূর্ণতার দিকে আগাচ্ছে, তখন।
একদিন অফিস থেকে ফেরার পর তো মামনি আমার হাতটা নিয়ে তার পেটের উপরে রাখল । বলল শক্ত কিছু কি টের পাচ্ছ । প্রথমে বুঝতে না পারলেও আস্ত আস্তে আমি টের পাচ্ছিলাম শক্ত কিছু একটার উপস্হিতি। আমাদের তোকে এই প্রথম আমি আরো বেশী ফিল করতে পারলাম, এইত তোকে ছুয়ে আছি আমি। জানিনা তুই টের পেয়েছিস কিনা আমার এই ছুয়ে দেখা ।
এরও কিছুদিন পর আমি তোর নড়াচড়াও টের পেলাম, আলতো করে টোকা দেয়ার মত করে ধাক্কা ! এই অনুভূতিটা তোকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়, নতুন ভাবে যেন নিজের অস্তিত্ব আবিষ্কার করা।
তোর মামনির কথা অনুযায়ি ধীরে ধীরে তোর লাফালাফির পরিমান এবং গতি দুটাই বাড়ছে, সে সেটা বেশ ভালভাবেই টের পাচ্ছে, মাঝে মাঝে তুই বেশ জোরে ধাক্কা দিচ্ছিস সেটাও জানা গেল। এরমাঝে তোর দাদীমার সাথে কথা বলে সে আবিষ্কার করেছে শৈশবে আমি নাকি অনেক দুষ্টামি করতাম, লাফালাফির কোন সীমা ছিলনা- সুতরাং তুই নাকি মায়ের পেটে থেকেই বাবাকে ফলো করা শুরু করেছিস, বাবার মত লাফালাফি করছিস !!!!
অবশ্য আমি তার এই কথার সাথে মোটেও একমত নই, কারন লাফালাফিতে তোর মামনি কোন অংশেই আমার থেকে কম না, আমি তীব্র আপত্তি জানালাম, বললাম উহু, টেম্বা তার মাকেই ফলো করছে, মায়ের মতই লম্ফঝম্ফ করা শিখে গেছে ।
সংসার জীবন আসলেই একটা কঠিন বাঁধন !!! কথাটা যেন আমি একটু একটু করে বুঝতে শুরু করলাম। বদলে যাওয়া পৃথিবীটাতে মানিয়ে নিতে সময়ের প্রয়োজন বৈকি, সেই সাথে দরকার বদলে যাওয়াটাকে আত্মস্হ করা। নিত্য ছুটে বেড়ানো, সুযোগ পেলেই এদিক ওদিক হারিয়ে যাওয়ার রুটিন বাদ দিয়েছি অনেক দিন হল। অনেক পরিবর্তনের মাঝেও এটা মেনে নিতে আমার কেমন জানি হাশফাশ করছিল, ইচ্ছা করছিল কোথাও থেকে লাগাম ছাড়া কিছু সময় কাটিয়ে আসতে পারলে মনে হয় আমার জন্যও ভাল হত।
তোর মামনিকে তোর নানীর কাছে রেখে আমি আমার বন্ধুদের সাথে বেড়িয়ে পড়লাম শ্রীমঙ্গলের হামহাম নামক নতুন আবিষ্কার হওয়া একটা ঝর্ণা দেখতে । খুব যে নিশ্চিন্ত মনে গিয়েছি সেকথা বলা যাবেনা, মাথায় সারাক্ষনই তুই আর তোর মামনি, যদিও বন্ধুদের সাথে থাকা মানে মোটামুটি বাকি দুনিয়ার কোন খোজ না রাখা যেটা ছিল আগেকার সময়ের নিয়ম।
আমাদের পরিকল্পনাছিল দুদিন ঘোরার, প্রথম দিন হামহাম ঝর্ণা আর দ্বিতীয়দিন বাইক্কার বিল নামক একটা হাওড় অঞ্চল। পরিকল্পনামাফিক প্রথমদিন আমরা হামহাম ঘুরে আসলাম, রাতে হোটেলে থাকার কথা, কিন্তু কেন জানি আমার আর ভাল লাগছিলনা। দুজনের ঐদিনই ফেরত আসার কথা আর আমরা বাকিরা পরদিন ঘুরে তারপর ফিরব! ঘোষনা দিলাম আমি আর থাকবোনা, চলে যাব, আমার আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা , অথচ একটা সময় এই আমি যতবেশী পার ঘুরে নাও এই নীতির সমর্থক ছিলাম। ঐ ট্যুরটা ঐদিনই শেষ হয়ে গেল, আমরা সবাই ফিরে আসলাম ঢাকায়, এমনটা এর আগে কখনো ঘটেনি।
ফেরার সময় বাসে বসে বসে আমি জগত সংসার নিয়ে অন্যরকম একটা সত্য যেন নতুন করে আবিষ্কার করলাম। তোমার মামনি আর তোমাকে রেখে একদিনের বেশী বাহিরে থাকতে পারলামনা , নিজের সবচেয়ে পছন্দের কাজ ঘোরাঘুরি স্হগিত করে ফিরে আসতে আমার একটুও খারাপতো লাগেইনি বরং ফিরে আসার জন্যই আমি উদগ্রীব ছিলাম।
অনেক সময় বিবাহিত বন্ধু কলিগদের ক্ষ্যাপাতাম তারা কেন পরিবার পরিজন ছেড়ে আমারমত লাগাম ছাড়া ঘুরতে বের হয়না, সেই কেনর উত্তর যেন আমি হাতে নাতে পেয়ে গেলাম । আসলে ঐভাবে একা গিয়ে ঘুরতে তাদের ভাল লাগবেনা বলেই তারা যায়না, কিংবা বলা যায় সংসার এমনই মায়ার বাঁধন চাইলেও সহজেই এর থেকে মুক্তি মেলা সম্ভব না । তবে সবসময় না পারলেও মাঝে মাঝে একটু মুক্তি নিলে মনে হয় ব্যাপারটা খারাপ হবেনা, আপনজনদেরকে আরো গভীর ভাবে উপলব্ধী করতে এটা অনেক বেশী সহায় হবে। তোর দাদা দাদী আমি কোথাও ঘুরতে গেলে কেন এত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ত সেটাও বেশ বুঝতে পারছিলাম এইবার ঘুরতে বের হয়ে ।
ইদানিং আমি আর তোর মামনি প্রায়ই ভাবি, কবে যে তুই একটু বড় হয়ে এই কঠিন পৃথিবীর আলো বাতাসের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিবি, কবে যে তোকে নিয়ে আমরা ইচ্ছে হল তো চল ঘুরে আসি- এই বলে বেরিয়ে পড়তে পারব। ঘোরাঘুরির কোন বিকল্প এই জীবনে নেই। নিজেকে জানার জন্য, মানুষকে জানার জন্য এটাই একমাত্র পন্হা । নিজের চারপাশ, নিজের দেশ টাকে আগে দেখে নিতে হবে । ক্লান্তি দূর করে নিজেকে রিফ্রেশ করে নেবার সব চেয়ে কার্যকর উপায় এই ঘুরে বেড়ানো।
তোর মামনি অলরেডী আমাকে জানিয়ে রেখেছে তোর বয়স আল্লাহর রহমতে দুই মাস হলেই তোকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে দূরে কোথাও । কোথায় যাওয়া যায় সেটাই ভাবছি । ।
আমাদের তুই এখন এই পৃথিবীতে .এইখানে ছবি যোগ করতে পারছিনা
http://www.somewhereinblog.net/blog/shamseerblog/29529271
আলহামদুলিল্লাহ্! বাবু চলে এসেছে 😀
ছবি দিতে পারছেন না কেন ভাইয়া? কী সমস্যা হচ্ছে?
অনেক অনেক অভিনন্দন ভাইয়া 😀
ফেবুতে দেখেছিলাম
বাবুর জন্য আদর… 🙂