সবার কথা জানি না, কিন্তু এই আমার, এতোদিন পরে এসেও স্কুল জীবনটাকে খুব বেশি মনে পড়ে। বলাই বাহুল্য, সেই সময়টায় মনে হতো কবে বড় হবো, আর সবার মতো যা খুশি তা করতে পারবো, কিন্তু এখন, এই এতগুলো দিন পেরিয়ে এসে মনে হয়, বড় ভালো ছিলাম তখন…
তখন ভাবনা থাকতো না, কাল সকালে অফিস যেতে হবে, পরশু এটার প্রেজেন্টেশন দিতে হবে, কাল যদি অফিস থেকে একটু আগে বের হতে পারি তবে এই কাজটা করে ফেলতে হবে, ব্যাংকে এই মাসের টাকাটা এখনো জমা দেয়া হলো না, কবে জানি একটা বিয়ের দাওয়াত, এখনো তো গিফটটা কেনা হলো না!
কেন জানি ভীষণ ধরণের মনে পড়ে স্কুলটাকে, শত নিয়মের বেড়াজালে পড়েও কোথায় জানি শিক্ষকদের স্নেহ মাখানো সেই শাসনগুলো খুব বেশি মনে পড়ে। অসাধারণ কিছু মানুষ, যারা আমাদের শিখিয়েছিলেন মানুষ হতে, কখনো বলতেন না বড় হয়ে কী হবি, বলতেন যাই হস বড় হয়ে, ভালো মানুষ থাকিস…
প্রতিদিন দুপুরবেলা স্কুল। ঠিক ১২টা থেকে, দুপুর ২:১০ এ টিফিনের ব্রেক! প্রথম পিরিয়ডেই শুরু করতাম টিফিন তোলার জন্য খাতা কলম নিয়ে হাঁটাহাটি! আর এই সুযোগে পড়াটা ফাঁকি দিতে পারতাম! বেশিরভাগ দিন নির্বিঘ্নেই পার হতাম, শুধু মাসে ৩/৪ দিন যেতো যেদিন স্যারের মেজাজ ভালো থাকতো না, খাইতাম রাম ধমক! ভালো মানুষের মতো নিজের ডেস্কে যেয়ে বসতাম, বুঝতাম, আজকে আর ছাড় পেলাম না! এবার পড়া ধরলে খবর আছে! টিফিন তোলার মধ্যে মজার ছিলো গোয়েন্দাগিরির অংশটা। খেয়াল রাখতাম কারা কারা পুরি কিনছে। টিফিন টাইমে তাদের উপর হামলা করা হতো! আহ! সেই ২টাকার পুরি, অমৃতের মতো ছিলো বলতে গেলে!
মজা হতো যেদিন স্কুলে বেতনের দিন থাকতো। স্যার দুইজনকে তার পাশে বেঞ্চ এনে বসাতেন, টাকা পয়সার হিসেব করার জন্য। আর প্রথম পিরিয়ডে বেতন মানে আমাদের লক্ষ্য একবারে তিনটা পিরিয়ড পার করে টিফিনের ব্রেক পর্যন্ত টেনে নেয়া! তার জন্য হেন কাজ নেই যা করি নাই! কতবার বেতনের টাকা থেকে সরিয়ে পকেটে টাকা রেখে দিয়েছি! “স্যার, হিসেব মিলছে না!” ঘন্টা পার হয়ে গেলো, আমরা হিসেব করেও মিলাতে পারছি না! পরে প্রায় টিফিনের আগ মুহুর্তে… “স্যার! এই যে বেঞ্চে নীচে পড়ে ছিলো ১০ টাকা!” একবার তো টাকা লুকিয়ে রেখে আর খুঁজে পাইনা! কী যে ভয়ানক বিপদ, পরে স্যার নিজেই দিয়ে দিয়েছিলেন সেবারের কম টাকাটা! তারপর কানে ধরেছিলাম আর কখনো এমন বদমায়েশি করবো না! কিন্তু কিসের কী! পরের বেতনের দিনেই আবার গোলমাল! এবার ৫০ টাকার! 😛
বাংলা স্যারকে খুব ভালো লাগতো, আমার জীবনে যে কজন শিক্ষকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ থাকবো আজীবন, উনি তার মধ্যে একজন। কোন এক বিচিত্র কারণে আমার মতো মিচকা শয়তানকে উনি একটু ভালো চোখে দেখতেন। ক্লাসে এসে পড়া ধরতেন সবার, ডায়রীতে হয় পাঁচ দিতেন, অথবা শূন্য! এর মাঝামাঝি কোন কিছু নেই! যেদিন ক্লাসে পড়া ধরতেন সেদিন শুনশান নীরবতা! আমরা তো ভয়ে শেষ! মনে হতো স্যার পড়া ধরার অংশটা বাদ দিয়ে শুধু ক্লাসে পড়াতেন, কতোই না ভালো হতো! সাধারণত আমরা ঐ সময়টায় ডাইরী বেঞ্চের নীচে আটকে রাখতাম…..সহজ স্বীকারোক্তি, “স্যার ডাইরী আনি নাই!” যাই হোক, পড়া ধরছেন, হঠাৎ আমার দিক ঘুরে উনি বললেন, “চারটা আরবি শব্দ বলো তো!” আমি তো মহা খুশি, বুক ফুলিয়ে ধাম ধাম করে দুইটা বলে দিলাম, “স্যার, জান্নাত, জাহান্নাম!” স্যার বললেন আর দুইটা? আমিও ততোধিক জোরে উত্তর দিয়ে দিলাম, “স্যার, বেহেশত, দোযখ!!” স্যার বললেন, “এইটা কি হলো!” আমিও বুঝলাম প্যাঁচ লাগায়ে দিছি! ব্যাজার মুখে ডাইরীতে একটা তিন পেয়ে বসে থাকলাম! কপাল ফাটা হইলে এমনই হয়!
স্কুল ছুটি হতো ৫:১৫ তে…
আমরা ক’জনা, যেদিন রিকশার বিশাল ধরণের চাহিদা থাকতো, পদব্রজে রওনা দিতাম…
হেঁটে হেঁটে কলোনীর মধ্যে দিয়ে বাড়ী ফেরা! আর যেদিন বৃষ্টি, সেদিন কোন কথাই নেই। ভিজবোই ভিজবো! রাস্তা ভর্তি মানুষ ছাতা মাথায় হেঁটে যেতে যেতে অবাক হয়ে দেখতো, কিছু ছন্নছাড়া স্কুলফেরৎ বালক ডিভাইডারের উপর দিয়ে বৃষ্টিতে চুপচুপে হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে! দুইপাশে পানি জমে গেছে, আমরা তার মাঝ দিয়ে ভেজা জুতো পায়ে হেঁটে যাচ্ছি! জুতোর মধ্য পানি ঢুকে চপাশ চপাশ শব্দ! কেমন জানি পাগল করা এক একটা অনুভূতি। স্কুলের মাঠে বৃষ্টিতে পানি উঠে ছোট ছোট দ্বীপের মতো হয়ে যেতো, আমরা দো’তলার বারান্দা থেকে দ্বীপ কেনাবেচা করতাম, ঐটা আমার দ্বীপ, ঠিক আছে ঐটা তুই নে, কিন্তু এই পাশেরটা আমার! বৃষ্টির মধ্যে একটা পানির বোতল নিয়ে মাঠে নেমে যেতাম, ফুট-বোতল খেলার জন্য!
কেউ কখনো বলে দেয়নি, তবে বুঝতে পারি কিছু একটা রেখে এসেছি সেই স্কুলের ক্লাসরুমে, ডেস্কের সেই ছোট ছোট খোপ গুলোয় অসংখ্য স্মৃতি……
কেউ বলে দেয়নি, তবু বুঝি, ফেলে রেখে এসেছি অসাধারণ কিছু মুহুর্ত……
কেউ বলেছিলো, এখন টের পাই প্রতিটা শব্দ……
“বড়ো হয়ে যাওয়াটা এক ধরণের অভিশাপ”
স্কুল স্কুল স্কুল, আহ্!
স্কুলজীবনের মত মিস জীবনের আর কোন সময়কে করি না। অথচ তখন ভাবতেই পারতাম না কত দারুণ সময় পার করছি।
আপনার স্মৃতিচারণ অসাধারণ হয়েছে ভাইয়া। আমিও করবো দেখি। 🙂
ধন্যবাদ আপু……
খুব মনে পড়ে স্কুলের কথা…
অসম্ভব হেসেছি, কষ্টও পেয়েছি খুব।
সত্যি ‘বড় হয়ে যাওয়াটা একটা অভিশাপের মতই’
অফটপিক-
‘বানান, বানান’!! 🙁
ধরায়ে দিয়েন ভুলগুলো, চেষ্টা করছি ঠিক করার…
পরের বেতনের দীনেই আবার গোলমাল>> দিনেই (দিন= দিবা, দীন=দরিদ্র)
ডায়েরী, কলোনী>> ডায়রি, কলোনি (বিদেশি শন্দে সাধারণত হ্রস স্বর ব্যবহৃত হয়, দীর্ঘ ও তৎসম শন্দ এড়িয়ে চলা হয়)
কেউ বলে দেয়নি>> দেয় নি (না-বোধক শব্দ পৃথক শন্দ হিসেবে বসে)
বড়ো হয়ে যাওয়াটা এক ধরণের অভিশাপ>> বড়
দীর্ঘশ্বাস কি দীর্ঘনিঃশ্বাস হবে না?
বিজ্ঞানের ভাষায় হিসাব করলে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাপারগুলো আলাদা। কিন্তু এমনিতে সাহিত্যের দিক থেকে ‘দীর্ঘশ্বাস’ ঠিকই আছে।
বন্ধু… খুব সুন্দর… চোখের সামনে পুরনো দিনগুলো ফিরিয়ে আনলি…হারামি
খুব মনে পড়ে আজকাল। কী জানি, বুড়ো হয়ে যাবার লক্ষণ কি না…
Mone ache Shoishob. Sai bikal belar cricket khela. Konodin karo basar glass vangaa, tarpor voo dour. Khokhono kono betar matha fatano, khokhono kono barir vator ball duka. Protidin kono na kono ghotona. Abar khokono tumar nana bari sob friend ra mile berate jai , othoba pura barir sobai mile picnic.. Khub miss kori toder re. Uncle aunty kao khub miss kori re. Amar dekha duniar sobchaya valo manus. Ar pichhi cute tonmoy.. Or cute cute dustumi vora kothagulo khub khub miss kori. Asolaoo Soishob, chottobelar oi dinguli koto sundor chilo, fire jete echhe hoi, oi harano dingulote..
কিছুই এখনো ভুলি নাই, শেষ বেলায় এসে অনেক কিছু কেন জানি আবার নতুন করে মনে পড়ে গেলো…
কিছু ছন্নছাড়া স্কুলফেরৎ বালক ডিভাইডারের উপর দিয়ে বৃষ্টিতে চুপচুপে হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে! দুইপাশে পানি জমে গেছে, আমরা তার মাঝ দিয়ে ভেজা জুতো পায়ে হেঁটে যাচ্ছি! জুতোর মধ্য পানি ঢুকে চপাশ চপাশ শব্দ! -কমন পড়ে গেল!=)-স্কুলের কথাগুলো ভোলা যায় না!
আসলেই, যত দূরেই যাই, স্কুলের স্মৃতিগুলোই সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়ে যায়…
Time, You Old Gypsy Man
Will you not stay,
Put up your caravan
Just for one day?
🙁
:'(
দারুণ লাগলো কথাগুলো, ভয়ংকর সত্যি…
আহারে ছোটবেলা! 🙁
আসলেই…
সেই দিন গুলো!
টেনিসনের মতো বলতে ইচ্ছে করছে-টাইম মার্চেস অন/মেমোরিস স্টে… টর্চারিং সাইলেন্টলি/ দ্য রেস্ট অভ ইয়োর ডেইজ…
সত্যি কথা…… 🙁
খুব ইচ্ছে হয় ফিরে আবার স্কুলের দিনগুলোতে……
তোর স্কুলের দিনগুলোর কথা পড়ে মনে হল, সবার স্কুলবেলাটা বুঝি একই রকম……
আসলেই বড় হয়ে যাওয়াটা অভিশাপ।
তখন বুঝি নাই, সবাই যখন বলতো, স্কুল জীবনটা সবচেয়ে বেশি মজার……
পরের বেতনের দীনেই আবার গোলমাল! এবার ৫০ টাকার!
দিনেই বানান ভুল! :p
এই লেখাটা আমার লেখার কথা ছিলো!
ঈশ লিখে ফেললি!
প্রিয়তে নিলাম
ঘোরের মধ্যে ছিলাম বুঝি যখন লিখাটা আসছিলো! 😛
তবে ঠিক করে নিয়েছি! অনেক ধন্যবাদ!
ইশ ভাইয়া কি লিখছিলা এইটা ? এইটা পড়ে হঠাত করে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম , সেই কত কথা, কত কান্না ,হাসি, নাহ আবার ছোট হয়ে যাবো, স্যারের বকা, পড়া না শিখে আসা, এগুলা ছাড়া হয় নাকি জীবন 🙁
সেটাই! ডাইরীতে মিছিমিছি লিখতাম, শিখেছি করেছি অথবা শিখেছি ছিল না! কিন্তু কিসের কি! কিচ্ছু পড়তাম না! 😀
বেতনের দিন তোমরাও এইটা করতা! হিহি। নস্টালজিক লেখা!
করবো না আবার! ধরেন পরের পিরিয়ডে একটা পরীক্ষা আছে, কেউ পড়ে আসি নাই! লাগাও গণ্ডগোল! 😀
হিহিহিহি…
আমার লেখার ৮০% বিষয়বস্তু ছোটবেলা!
ছোটবেলার যত ঘটনা মনে আছে, সব একবার লেখা শুরু করেছিলাম!
সেটা এখন মাঝে মাঝে পারি, নতুন কিছু মনে পড়লে যোগ করি!
একদিন কোনভাবে বিখ্যাত হয়ে গেলে সেটা জীবনী হিসেবে চালিয়ে দিবো! 8)
শুভকামনা রইলো! আমিও তাহলে বলতে পারবো এই বিখ্যাত মানুষটা একদিন আমাদের সাথে চা খেয়েছিলো! 😀
লেখাটা পড়ে অনেক ভাল লাগলো ।আমার টাইম মেশিনে অনেক দিন পর fuel পড়ল। 🙂
আসলেই , “বড়ো হয়ে যাওয়াটা এক ধরণের অভিশাপ” 🙁