অনেকদিন ধরেই ভাবছি লিখবো, লেখা হয়ে উঠছে না; আসলে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আকাশপানে চেয়ে অনেক কিছুই ভাবা যায়, ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি মারা রোদে মন আনচান হয় ঠিকই কিন্তু বাসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে পকেটের উইন্ডোজ মোবাইলটাও পানসে লাগে, বাসের জানালাকেও শুধুই ধুলার উৎস মনে হয়। ঘরে এসে তাও এই চারকোনা বাক্স আর অনেক তারের ভিড়েও জানালাগুলো খুলে বসি কখনো গান শুনতে, কখনো সিনেমা দেখতে, কখনো ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ভাসতে আর কখনোবা কোড করতে। চারিদিকে অনেক জানালা, জানালাস, উইন্ডোজ…উইন্ডোজ, মাইক্রোসফটের ঝান্ডাবাহী জাহাজ – মূল পণ্য, এসময়ের সবচেয়ে সফল অপারেটিং সিস্টেম । যদিও কোন অপারেটিং সিসটেম (ওএস) ই পূর্ণাঙ্গ বা সে অর্থে সার্থক হয়ে গড়ে উঠে নাই, তারপরও উইন্ডোজেই অনেক ব্যবহারকারীর আস্থা । ঠিক এ কারনে নয় যে এটাই একমাত্র ওএস বা এটা একাই খুব ব্যবহার উপযোগি, বরং আরও কিছু ওএস-ও একইরকম সহজ; লিনাক্স, সোলারিস, ম্যাক কেউই সাধারন কাজকর্মের জন্য কঠিন কিছু নয়। আবার এটা খুব সস্তাও নয় উল্টা লিনাক্স আর সোলারিস তো বিনামূল্যেই পাওয়া যায় । বেশ ভাবের অ্যাপল ম্যাক ও আছে । যদিও প্রথম দিকে মাইক্রোসফটের ডস আর উইন্ডোজের সাফল্যের ১টি কারন ছিল এটি তুলনামূলক সস্তা ও কাজ চলে যাবার মত । পাশাপাশি, উইন্ডোজের জন্য অ্যাপলিকেশন বা সফটওয়ার বানানো (ডেভেলপমেন্ট) টা বেশ সহজ – আসলে উইনডোজের সাফল্যের বড় চাবিকাঠি এটা যে, তার জন্য অনেকরকম সফটওয়ার, গেম, টুলস পাওয়া যায় – সাথে অবশ্য ভাইরাস, ম্যালওয়ার এসবও এসে ভিড় করতে থাকে; যদিও ভিস্তা ও উইনডোজ সেভেনে এসে এগুলোর হার বেশ কমাতে পেরেছে ।
আজকের লেখার মূল বিষয় হবার কথা ছিল উইন্ডোজ ৮, কিন্তু উইনডোজ নিয়ে ভূমিকাই বেশ বড় হয়ে গেলো । যাইহোক ছোট করে একটু ইতিহাস টা মনে করে নেইঃ আইবিএম এর পরীক্ষামূলক পি.সি. প্রজেক্টে ছোট্ট কম্পিউটারের (তখন আইবিএম দৈত্যাকৃতির মেইনফ্রেম বানাতো) জন্য বিল গেটস, পল অ্যালানের মাইক্রোসফট কে ওএস তৈরি করতে বলা হলে তারা কিউডস কে ভিত্তি করে এমএস ডস তৈরি করে । পিসির সাফল্য ও এমএস ডসের ব্যবহারোপযোগিতার জন্যই আইবিএম, মাইক্রোসফট ও ইন্টেলের হাত ধরে শুরু হয় উইনটেল যুগের। এমএস ডস ভিত্তিক উইন্ডোজ থাকলেও আরো বেশি ব্যবহার যোগ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি ওএস বানানোর জন্যই মাইক্রোসফট ১৯৮৮ তে শুরু করে উইনডোজ এনটি প্রজেক্টের যার হাত ধরে প্রথম সফল এনটি ওএস হিসেবে আসে উইন্ডোজ এক্সপি। এ সময় থেকেই পুরনো ডস ভিত্তিক উইনডোজের ডেভেলপমেনট বাদ দিয়ে শুধু উইনডোজ এনটি নিয়েই আগাতে থাকে মাইক্রোসফট।
উইন্ডোজ এক্সপি বাজারে এসেই ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ক্ষেত্রে অনেকটা একছত্র রাজত্ব করা শুরু করে ও অনেকদিন ধরেই সার্বজনীন ওএস হিসেবে পরিচয় পেতে থাকে । এইটিই মাইক্রোসফটকে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দী করে তোলে। কিন্তু এক্সপির ও অনেক সমস্যা ছিল, এখনো আছে। আবার, কার্নেল (ওএস এর মূল অংশ – যেটি মেশিনকে সফটওয়ারের জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তোলে) হিসেবে এনটি বেশ আস্থাভাজন হয়ে উঠে – যদিও, এক্সপিতে ব্যবহৃত এনটি ৫ কে ঠিক পূর্ণাঙ্গ বলা চলে না । তাই বেশ অনেকদিন ধরেই কার্নেলের উন্নতি ঘটিয়ে ভিসতা (৬.০) নিয়ে আসে মাইক্রোসফট; কার্নেলে অনেক উন্নতি ঘটালেও ভিসতা বেশ ভারী, ধীর আর বাগে ভরপুর বলেই প্রতীয়মান হয়, মাইক্রোসফটের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলা যায় এই ভিসতাকে । এসব ভুল দূর করতেই, প্রায় পুরো উইন্ডোজকেই আবার ঢেলে সাজানো হয় উইন্ডোজ সেভেন-এ — .নেট কে ওএস এর সাথে আরো বেশি ইনটিগ্রেটেড করা হয়, অনেক নেটিভ অ্যাপলিকেশন (যা ওএসের সাথেই ইন্সটল হয়) .নেট এ লেখা হয়; একই সাথে ডাব্লুপিএফ (উইন্ডোজ প্রেজেন্টেশন ফাউন্ডেশন) দিয়ে বাহ্যিক চেহরা (গুই বা জি.উই.আই.) অনেক ভালো করা সম্ভব হয় । লোকজন সহজেই এক্সপি থেকে ভিস্তায় সুইচ না করলেও বেশ সহজেই সেভেন ব্যবহার করা শুরু করে, বিশেষত ইনটেলের নতুন হার্ডওয়ার ও নতুন নতুন বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য এক্সপিতে বসে থাকা আর সম্ভবও হচ্ছিল না, উপরন্তু একই মেশিনে সেভেন আরো বেশি ফিচার নিয়েই প্রায় এক্সপির মতো (কখনো বেশি) দ্রুততায় চলতে সক্ষম হয় । বিশেষত যেখানে প্রসেসিং অনেক বেশি ও ইনটেনসিভ সেখানে সেভেন-ই সবচেয়ে ভালো কাজের বলেই অনেক বেঞ্চমার্কিং এ দেখা যায় ।
কালে কালে অনেক পরিবর্তনই হলো জানালায়, কাঠের পরিবর্তে কখনো থাই গ্লাস, কখনো নতুন ধরনের পর্দা নিয়ে বাড়ির জানালা আসে, সেরকমই মাইক্রোসফটের উইনডোজেই নানা নতুন নতুন দিক আমাদের নজর কাড়ে সময়ে সময়ে। ভিস্তা ও সেভেনে নেটওয়ার্কিং জিনিসটা বেশ ভালো হয়ে উঠে । আগেই উল্লেখ করা ডাব্লুপিএফ সহ গুই তে বেশ উন্নতি চোখে পড়ে, পাশাপাশি প্রসেসিং সহ নানাদিকে উইন্ডোজের উন্নতির ধারা বজায় আছে উইন্ডোজ এইটেও । উইন্ডোজ এইটের বেশ কিছু দিক নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম, তা ইতিহাস বর্ণনাই অনেক হয়ে গেল; লেখা আর বড় করবো না – পরের পর্বেই তাহলে আট নং জানালা নিয়ে কথা বলবো 🙂
ধন্যবাদ একটি তথ্যবহুল লেখার জন্য! আমি এখনও XP ব্যবহার করি, আমার পিসি প্রাগৈতিহাসিক!! 😛 . . . একটি ছোট্ট জিনিস, “এমএস ডস” বা “ডাব্লুপিএফ” ইত্যাদিকে সরাসরি MS DOS বা WPF লিখলে বোধহয় পড়তে আরাম হবে. . .
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম, আবারও ধন্যবাদ! :beshikhushi: :beshikhushi: :clappinghands:
এটা ১টা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়, আমি একদিকে রোমান হরফে বাংলা পড়ে আরাম পাই না, আবার বাংলা বর্ণের মাঝে রোমার থাকলে রোমান শব্দগুলো বেশি চোখে পড়ে – এটা ভালো লাগে না।
তারচেয়েও বড় কথা, বাঙালি যদি রোমান হরফে বাংলা পড়তে পারে, বাংলা বর্ণেও ইংরেজি পড়তে পারবে; অনভ্যাসে একটু সমস্যা হোক, তবু তো প্রাণের বর্ণমালা – তার জন্য মাঝে মাঝে আরাম কিছুটা নাহয় ত্যাগই করলাম ।
লেখার হেডিং এ বানান ভুল। ঠিক করে দিলে ভাল হত।
লেখার গোড়ায় গলদ হলে পড়তে ইচ্ছে করে না। 🙁
ঠিক! :haturi: 🙁
দুঃখিত, প্রুফ পড়ার জন্য কাউকে পাই নি, আর নিজের টাইপো চোখে পড়ে না; ইংরেজিতে অটো প্রুফরিডার থাকায় সমস্যা হয় না – বাংলায় এখনো নাই; একটা বানানো দরকার।
উইন্ডোস ট্যাবলেট পিসি আর মোবাইলের বাজারে কি কি নতুন চমক আনছে সেগুলো জানার অপেক্ষায় থাকলাম!
আমার বেশ লাগলো! বাংলা ভাষায় খালি সংবাদ আসে, পেছনের কথা কিংবা ইতিহাসটা আসে না। কেন, কেমনে কি এই গুলাও না। এইটা আলাদা রকমের একটা পোস্ট।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ম্যাক একটা ফ্যান ফলোইং করতে পারছে, উইন্ডোজ পারে নাই- কেন মনে হয়?
মাইক্রোসফটের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলা যায় এই ভিসতাকে – একমত। ভিসটা সবচেয়ে বড় বাঁশটা দিছে ওদের। তবুও ওরা যেভাবে সেভেন দিয়ে পার পেয়ে গেলো!!
এত বড় মানি মেকার দুনিয়ায় কমই ছিলো! [আইপ্যাড আর উইফোন অবশ্য সেসব ভেঙে দিবে মনে হচ্ছে! এপল এর রিসেন্ট কোয়ার্টার দেখছো?]
(তবে একদম আমজনতার জন্য কিন্তু পোস্টতা একটু কঠিনই বটে! বেঞ্চমার্কিং ব্লা ব্লা 😛 😛 )
গিকি আলোচনা জমে উঠুক!
সময় পেলে আমার এই পোস্টটা একটু দেখতে পারো
http://shorob.com/?p=1173
গিকি আলোচনা জমে উঠুক! :happy: :happy:
“একদম আমজনতার জন্য কিন্তু পোস্টতা একটু কঠিনই বটে” — সত্য; এটা নিয়ে সেইদিনও একটা লেখা পড়ছিলাম লাইফহ্যাকার না কই জানিঃ “আমজনতার সাথে কথা বলা” । সব জিনিস কখনোই সর্বজনবোধ্য হবে না, আর করতে গেলে দৈনিক উটপাখির টেকসং-বাদ হয়ে যেতে পারে 😛
ভালো লেগেছে…।
এমন আরো লেখা পড়তে চাই…।
🙂