একটা ঘরে সাধারণত আটটা জানালা দেখা যায় না, আজকাল অলিতে গলিতে বেড়ে ওঠা স্কুলে বা ভার্সিটিতেও যায় না, তবে বড় স্কুল আর ক্যাম্পাস সহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। আবার উইন্ডোজ ৮ ও ঠিক মাইক্রোসফটের আট নং ও এস নয়, বরঞ্চ উইন্ডোজ এনটি’র ৮ম পাবলিক রিলিজ হতে যাচ্ছে এটি। আগের লেখায় উইনডোজের ইতিহাস নিয়ে যাচ্ছেতাই লিখেছিলাম, এই পোস্টে উইন্ডোজ ৮ নিয়ে কিছু হাবিজাবি লেখবো, তার মাঝে ভালো কিছুই পেয়ে যেতে পারেন (গোবরে পদ্মফুল – কিংবা যেখানে দেখিবে ছাই… পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন)। তবে ১০০% গ্যারান্টি দিচ্ছি, লেখা পড়ে শেষ করলেও আপনার কোন লাভ হবে না [:P]
প্রতি ভার্সনেই উইন্ডোজে নতুন কিছু না কিছু থাকেই, বেশ অনেক কিছুই থাকে – তা নাহলে খামাখা নতুন ভার্সন বের করলেই লোকজন পয়সা দিয়ে কিনবে কেন? এইট এও আছে । ৮’র সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটা শুধু ইন্টেল এক্স৮৬ আর্কিটেকচার নয় বরং আর্ম-এও খুব ভালো ভাবেই চলবে । এক্স৮৬ সকল ডেস্কটপ ও সার্ভারে ব্যবহৃত হলেও কোন মোবাইল ডিভাইসেই এর স্থান মূলত ছিল না – কয়েকদিন আগে মাত্র মুরসটাউন প্রজেক্টের ফলে ১-২টি মোবাইল ডিভাইসে (ট্যাবলেটে) ইন্টেল স্থান পেতে যাচ্ছে, কিন্তু এমবেডেড সিসটেম, মোবাইল, ট্যাবলেট এসবকিছু এখনো আর্ম (এআরএম) প্রসেসরেরই দখলে । আর তাই মাইক্রোফট এবার উইবিকয়টাস (সর্বব্যাপী) ওএস হিসেবে উইন্ডোজের স্থান করে নিতেই আর্মেও চলে আসলো । আগে আর্মের জন্য উইনডোজ সিই (CE) ভিত্তিক উইনডোজ মোবাইল বা উইনডোজ ফোন ছিল, কিন্তু নতুন সর্বব্যাপী এই আর্কিটেকচারে একই ওএস -এই চলতে পারে আপনার ফোন, ট্যাবলেট, ডেস্কটপ, সার্ভার, টিভি, গাড়ি… সবকিছু! অপেক্ষা করছি তাই এই নতুন ওএস এর ।
উইন্ডোজ ৮’র আরেকটা বড় পরিবর্তন হলো এর গুই(GUI) তে; এখনকার বেশিরভাগ যন্ত্র (ডিভাইস) যেহেতু টাচ-ডিভাইস তাই নতুন ধরনের থিম — মেট্রো নিয়ে হাজির তারা। নতুন এই ধারনায় কিবোর্ড বা মাউস ছাড়াও টাচে ব্যবহার করা যেমন অনেক সহজ হবে তেমনি দেখতেও অনেকটাই আরামদায়ক হচ্ছে । গ্রাডিয়েন্সের বদলে সলিড কালার, বড় ও ছোট ফন্টের সুচিন্তিত সমন্বয় এসব নিয়েই মেট্রো থিম । আর এটার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে, লন্ডনের কিংস ক্রস মেট্রো স্টেশনে সাইনবোর্ডগুলোতে ব্যবহৃত থিমটি ।
মেট্রো থিম ছাড়াও, স্টার্ট মেন্যুতে যে পরিবর্তন করছে সেটাও বেশ ভালো… পুরো স্ক্রিন নিয়ে এবং বেশ সুন্দর করে সাজানো, মনে হয় তাক থেকে নামিয়ে নিচ্ছি যেন কোন একটা কিছু । এক্সপ্লোরারেও রিবন (অফিস/ওয়ার্ড এর মত) নিয়ে আসছে, উইনডোজ – এই রিবন জিনিসটা আমার খুব পছন্দ, অবশ্য অনেকেরই রিবন ভালো লাগে না, কিন্তু আমার মতে, রিবন জিনিসটা ব্যবহারোপযোগিতা বাড়ায় । উপরে যে বেশি অংশ দখল করে, সেটা নিয়ে আরো কাজ করলে মাইক্রোসফট আরো বেশি পজিটিভ রিমার্ক পাবে বলে আমার মনে হয়।
একাধিক মনিটর ব্যবহার করলেও আগে কেবল ১টি মনিটরেই টাস্ক বার পাওয়া যেত, নতুন ৮এ নাকি সবগুলাতেই পাওয়া যাবে, এইটা বেশ ভালো কথা ।
এক্সপ্লোরারের আরেকটা নতুন দিক হলো এর ফাইল ট্রান্সফারে, সেভেন ও ভিস্তাতে অনেক উন্নতি হলেও বেশ কিছু জিনিস চাওয়ার ছিলই – যেমন ফাইল ট্রান্সফার পজ করা, এক সাথে অনেক ফাইল কপি বা মুভ করতে দিলে তার কিউ তৈরি করা — এদুটি ফিচার আনছে তারা, যা আমার কাজে আসবে ভালো 🙂
পাসওয়ার্ডের জন্য তারা নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসছে, লিখে বা টিপে (টাইপ করে) পাসওয়ার্ড না দিয়ে ছবি দিয়ে টানাটানি করে কিছু আঁকিবুকি করেও পাসওয়ার্ড দেয়া যাবে – টাচভিত্তিক মোবাইল ডিভাইসে এটা বেশ ভালো দিক হলেও ডেস্কটপ ল্যাপটপে আমি টেক্সট পাসওয়ার্ড-ই বেশি পছন্দ করবো ।
ডেভেলপার প্রিভিউতে দেখলাম, মেট্রো থিমে কোন অ্যাপলিকেশন মূলত পুরো স্ক্রিন নিয়েই কাজ করে – এটা মোবাইলের জন্য ভালো; ডেস্কটপে না । আবার নতুন ধারা অ্যাপলিকেশন বা প্রসেস কখনো বন্ধ হয় না, ক্লোজ করে দিলেও তাকে কার্নেল স্লিপ মোডে নিয়ে র্যাম থেকে পেজ করে (স্টোরেজ মেমোরিতে) রাখে; পরেরবার চালালে যাতে দ্রুত আসে – সত্যি সত্যি বন্ধ করতে হলে, টাস্ক ম্যানেজারে গিয়ে বন্ধ করতে হয় (ঝামেলা আর কাকে বলে!) ।
উইনডোজ ৮, নামের সাথে মিল রেখে, ৮ সেকেন্ডেই বুট হবে – মানে সুইচ টিপার পরে দম নিয়ে ১ থেকে আট গুনলেই চালু হয়ে যাবে আপনার ডিভাইস – কি মজা! অবশ্য এতো তাড়াতাড়ি যে বুট হচ্ছে সেটা আসলে কোল্ড বুট নয় বরং ওয়ার্ম বুট – অর্থাৎ ওএস এর অনেক অংশই হার্ডডিস্কে কপি করা থাকবে, প্রতিবার চালু করলে আবারো প্রথম থেকে প্রস্তুত হবে না, অনেকটা হাইবারনেট করার মত । এতে শক্তির কোন অপচয় হবে না আবার চালুও হবে দ্রুত!
উইনডোজ ৮ প্রকৃত সার্টিফিকেশনের জন্য সিকিউর বুট (যা UEFI এর একটা ফিচার) আবশ্যক করছে – আর সিকিউর বুটে লিনাক্স বুট করতে পারে না – এজন্য অনেকেই এর সমালোচনা করছে ।
ওয়েব অ্যাপ বিশেষত এইচটিএমএল ৫ ও জাভাস্ক্রিপ্টে তৈরি অ্যাপ সরাসরি উইনডোজে চলতে সক্ষম হবে । ব্লুস্ট্যাক্স (BlueStacks) নামে একটি সিলিকন ভ্যালী কোম্পানি ব্লুস্ট্যাক্স অ্যাপ লেয়ার তৈরি করছে উইন্ডোজ ৮ এর জন্য, যাতে এন্ড্রয়েডের যেকোন অ্যাপ ও গেমই উইন্ডোজেই চলবে, আলাদা করে আর কিছু করতে হবে না। আর এই জিনিসটাই, উইনডোজ ফোনের বাজারকে অনেক শক্তিশালী করে দিতে পারে; কারন যারা অ্যান্ড্রয়েডের বিভিন্ন অ্যাপলিকেশনের জন্য উইন্ডোজ ফোন ব্যবহার করা নিয়ে চিন্তিত হতো, তাদের জন্য অ্যাপস কোন বাঁধা হবে না আর, আইফোনের প্রায় সব অ্যাপও অ্যান্ড্রয়েডে আছে; আর উইনডোজের নিজস্ব অ্যাপ তো আছেই – তাই বেশ এগিয়েই যেতে পারে উইনডোজ ফোন বাজার দখলের যুদ্ধে ।
যাহোক, পজিটিভ রিভিউ লিখতে গিয়ে মনে হয় বিজ্ঞাপন-ই লেখে ফেললাম অ্যাভেনজালিস্টদের মত :angel_not: আসলে দেখে মনে হচ্ছে ভালো কিছুই হবে, আর যেহেতু লিনাক্স বা সোলারিস ব্যবহারে আরাম পাই নি, আর নানাদিক থেকে চিন্তা করেই এই মাইক্রোসফটের দিকেই চেয়ে থাকি… ভালো ওএসের আশায় ।
জানালা দিয়ে উঁকি মারা সকালের সূর্য চোখে এসে পড়লেও লেপ টেনে ঢেকে নিয়ে শীতের সকালের ঘুম দেই, ঘুম থেকে না উঠেই অফিসে দৌড়াই বলে শীতের আলতো রোদ গায়ে ছোঁয়ানো হয় না আর, ফকফকা আকাশের পূর্ণিমার চাঁদ দেখে ঝলসানো রুটিও মনে হয় না – রোমান্টিকতা তো আরো নয়, তারপরও ওয়ার্ডপ্রেসের টেক্সটএরিয়ায় আবোল তাবোল প্রলাপ সরব হতে চায় ॥
হার্ডওয়ার রিকোয়ারমেন্ট নিয়ে তো কিছু বললেন না?
মাইক্রোসফটের উদ্দেশ্য মোটামোটি সবধরণের হার্ডওয়ার সাপোর্ট করা । তবে প্রকৃত সার্টিফিকেশনের জন্য সিকিউর বুট (যা UEFI এর একটা ফিচার) আবশ্যক করছে
আর হার্ডওয়ারের প্রকৃত রিকোয়ার্মেন্ট ফুল রিলিজের আগে নিশ্চিত বলা যায় না; তবে আশা করে যাতে XP চলে তাতেই চলবে 🙂
রিভিউটা দিয়ে ভাল করেছেন… ভাল লাগলো…
নিয়মিত টেকি আপডেট পাবো আশা রাখছি! 🙂
দেখা যাক, (ইনশাল্লাহ) কি হয়…!
টেকি জিনিসপাতির উপর কেন জানি বেশ আগ্রহ ছিলো সেই বাচ্চাবেলা থেকেই! উইন্ডোজ ৮ এর রিভিউ বেশ পজিটিভই দেখলাম বেশ কয়েকটা জায়গায়! আপনারটাও পড়ে বেশ ভালো লাগলো! নতুন আইকনের ব্যাপারটা খেয়াল করেছিলাম নকিয়ার লুমিয়া সেটগুলোতে, তবে যদি ইন্টারনেট ব্রাউজারের বাজার ধরতে হয় তাহলে মাইক্রোসফটের এখনো বহুদূর যেতে হবে! অপেক্ষায় আছি ক্রোমের ওএস এর সাথে মাইক্রোসফটের যুদ্ধ দেখবার আশায়! 😀
ক্রোম নামে গুগলের সম্ভাব্য লিনাক্স ডিস্ট্রো’র কথা বলছেন কি?
হ্যাঁ। আমার ধারণা শৈশব সেই কথাই বলছে।
আমরা কি কারনে জানি না, খালি যুদ্ধ খুঁজি; কিন্তু আসলে ব্যাপারটা সহযোগিতার । বেশ কিছু জায়গায় লিনাক্স ভালো, অনেক স্থানে উইন্ডোজ; কিন্তু কেউই পূর্ণাঙ্গ নয় ।
ক্রোমবুক কিন্তু ইতিমধ্যে বাজারে, কিন্তু তেমন সাড়া দেখছি না তো!
@শৈশব ক্রোম ওএস এর ফিউচার নাই দোস্ত!
ফিউচার আসলে ক্লাউড বেইজড (ওয়েব বেঈজড আর কি)
তখন হয়ত কিছু হতে পারে
লেখাটা চমৎকার লাগছে। আমি আসলে অনেক কিছুই জানতাম না! অন্য এপগুলা (আইওএস, এন্ড্র্য়েড )চলবে এটা মাইক্রোসফট এর জন্য দারুণ খুশির খবর।
উইন্ডোজ সেভেন পয়েন্ট ফাঈভ মোবাইল ওএস যে কারণে মাইর খাচ্ছে – সেটা হচ্ছে অ্যাপ্লিকেশন নাই!
তবে ডেস্কটপে উলটা কাহিনী!
আমি মাইক্রোসফট এর উদ্ভাবনে অবাক। আমি ভাবছিলাম টাচ ইন্টারফেস এ ওরা কিছু করতে পারবে না। কিন্তু ওরা যা দেখালো! ওদের মোবাইল ওএসেরও মারাত্মক প্রশংসা দেখা যাচ্ছে। আমার দেখতেও ভালো লাগছে।
আরও চাই এই রকম লেখা। 😀
আরেকটা জিনিস উল্লেখ করতে ভুলে গেছি, উইন্ডোজ মার্কেট নামে অ্যাপ মার্কেট ও করছে মাইক্রোসফট । তারা বাজার বেশ ভালোই ধরতে চেষ্টা করছে ।
এই ফেব্রুয়ারিতেই বেটা ভার্সন বের হবে। যার নাম তারা দিয়েছে কনজিউমার প্রিভিউ। যে কেউই ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন আশা করি।
কনজিউমার প্রিভিউ নামটা মজার…
জানা ছিলো না…
ভালো লেগেছে অনেক। এমন সহজ করে লেখা টেক পোস্ট পড়তে খুব ভালো লাগে, এমন পোস্ট আরো চাই….
🙂
সহজ হইছে নাকি! জেনে ভাল্লাগলো
অনেক বেশি চমতকার। আট জানালার কাহিনী একবারে জেনে গেলাম অনেকটাই। দারুণ রিভিউ !! অ্যাভেঞ্জালিস্টদের মতনই 🙂
:clappinghands:
আরো চাই । আরো । নিয়মিত এরকম টেকি আপডেট চাই
অ্যাভেঞ্জালিস্ট ! :nono:
উইন্ডোজ ফোনের ফিচার নিয়ে পরিষ্কার ছিলাম না-বুঝলুম।আন্ড্রয়েড এ্যাপ চলবে এইটা তো দারুন ব্যাপার!
:thinking:
আমি এখন সেভেন ই নেইনি 😛 এক্সপি দিয়ে কাজ করি 😛
বাংলায় এরকম একটা ব্লগ আছে আগে জানতামই না। পরশু দিন ব্লগার বেহিমিয়ানের মাধ্যমে জানলাম এবং রেজিস্ট্রেশন করলাম ।ভালই লাগছে এরকম একটা ব্লগের সন্ধান পেয়ে। ধন্যবাদ বেহিমিয়ান 🙂
আপনার আগের পোস্টটাও পড়লাম, অসাধারন! আমার তো এখনই সেভেন তাকে চেঞ্জ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
একটা জিনিস পরিস্কার হওয়া দরকার, ওয়ার্ম বুট কি উইন্ডোস ৭ এর sleep মুড? উইন্ডোস ৭ এর এই জিনিসটা কেন হয় বুঝিনা, এক ঘণ্টার বেশী ঘুমাতে দিলেই পিসি স্টার্ট হওয়ার সময় হ্যাং করে অষ্টম জানালায় ও কি এটা করবে?
স্লিপ অনেক আগে থেকেই ছিল, মানে ৭ এর আগেও । আমার ক্ষেত্রে সমস্যাটা হয় না; আমি সকালে অফিসে যাবার আগে বা রাতে কখনো কখনো ল্যাপটপটাকে ঘুমাতে দিয়ে ঠিকই ১২/১৮ ঘন্টা পরে চালু করতে পারি সমস্যা ছাড়া । তবে পিসির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে স্লিপ ঠিক না, কারন বিদ্যুৎ একটুক্ষণের জন্য ফ্লাকচুয়েট করলেও (আমার ধারণা) স্লিপটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে ॥
লেখা পড়ে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম ।