গল্প ১: আমি একদিন অটোরিকশায় করে যাচ্ছি। সেখানে দুজন ভদ্রলোক উঠলেন। তারা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়েই গল্প করছিলেন। কথা প্রসঙ্গে, ছেলেমেয়ের পড়াশোনার কথা এলো। একজন বললেন তিনি তার বাচ্চাকে কোচিং এ দিয়েছেন। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম তার বাচ্চাটি ক্লাশ টুতে পড়ে। তিনি তার বাচ্চাকে কোচিং এ দিয়ে অত্যন্ত খুশী এই কারনে যে, তারা নাকি সেই বাচ্চাকে বিকাল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আটকে রাখে। ফলে বাচ্চাটি শুধু খেলতে বা টিভি দেখতে পারে না। জানতে পারলাম, তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকুরিজীবি। কাজেই তাদের নাকি খুবই আরাম হয়েছে। বাচ্চাটি নাকি কোচিং থেকে এসেই হোমওয়ার্ক করতে বসে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। ফলে তাদের নাকি কোনো চিন্তাই নেই! আমি তাকে কোচিং এর নানাবিধ সুবিধার কথা বলতে শুনলাম এবং অপর ব্যক্তিকটিকেও তার ছেলেকে কোচিং এ পাঠাবার পরামর্শ দিলেন।
গল্প ২: রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল দুজন কলেজছাত্র। তারা একজন আর একজনকে বলছে, আমি কলেজে যাই না আজ দু’মাস হয়ে গেল। আর অপরজন বলছে, মাত্র দুইমাস? আমি তো ভর্তির পর মাত্র একদিন গেছি। কলেজ টাইমে আমার “ক” স্যারের কাছে প্রাইভেট থাকে। আর একজন বলল, আমারো “খ” কোচিং এ একজাম থাকে।
গল্প ৩: বিবর্ণ, জনশুন্য শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণ, খেলার মাঠ। মাঠে আছে শুধুমাত্র কয়েকটি কাক। মাঠের পাশেই রাস্তা, শিশু একাডেমির পাশেই রাস্তা। বিকাল চারটা। বহু ছেলেমেয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে সেই রাস্তা ধরে যাচ্ছে কোচিং সেন্টারে। শিশু বাচ্চা থেকে ধেড়ে খোকারা সবাই ছুটছে কোচিঙে। কেউ মায়ের হাত ধরে, কেউ সাইকেলে আবার কেউবা সারাদিনের ক্লান্তি মুখে নিয়ে মলিন স্কুলড্রেসেই ছুটছে। তাদের গন্তব্য ঐ জ্ঞানী তৈরির কারখানা, কোচিং সেন্টার।
গল্প ৪: কলেজের শিক্ষক। দুপুর ১২ টা। তিনি এসেছেন শহরের এক নামকরা কোচিং সেন্টারে জ্ঞান বিতরণ করতে। ঐদিকে অবশ্য তার কলেজে একটা ক্লাশ ছিল। তাতে কি? জ্ঞান তো জ্ঞানই! যেখানে খুশী বিতরণ করলেই হলো।
গল্প ৫: বিকালবেলা বন্ধুর জন্মদিনে যাবার অনুমতি দেয়নি মা। কারন, তাহলে কোচিং এ পরীক্ষা মিস যাবে। তাতে কী হয়েছে! কোচিং এর নাম করে বের হল ছেলে/মেয়ে। চলে গেল বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে। যাবার সময় উল্টোপাল্টা বুঝ দিয়ে কোচিং এর ফী হেসেবে ৫০০ টাকাও নিয়ে গেল মায়ের কাছ থেকে। ওদিকে তিন ঘণ্টা রেস্টুরেন্টে বসে বন্ধুরা মিলে জন্মদিন সেলিব্রেট করে সময়ত ঘরে ফিরে এলো লক্ষী ছেলে/মেয়ে।
গল্প ৬: দুই বাচ্চার মায়ের মধ্যে কথা হচ্ছে। তারা খুবই খুশী যে তাদের বাচ্চা কোচিং এ গিয়ে ভালো রেজাল্ট করছে। কিন্তু, স্কুলের পরীক্ষার পরে দেখা গেল তাদের দুইজনের বাচ্চাই খারাপ রেজাল্ট করেছে। এর কারন কী? ভালো করে বোঝায় পর জানা গেল, তাদের বাচ্চা আসলে সত্যিকার অর্থে কিছুই শেখেনি। তারা অন্যের দেখে দেখে পরীক্ষা দিত। এবং, প্রতিদিন পরীক্ষার চাপ থাকায় তারা ভালোমত না বুঝেই পরীক্ষা দিত। ফলে, তাদের যা আয়ত্ত হত, তা মনে থাকত সাময়িক সময়ের জন্য। অতঃপর তারা ভালো রেজাল্ট করতে পারত না।
গল্প ৭: কলেজের/স্কুলের নামকরা এক শিক্ষকের বাড়ি। আশা করা যায় সেই বাড়িটা হবে ছিমছাম, শান্ত এবং বইপত্রে পূর্ণ। কিন্তু একি! বাড়ির ভেতর থেকে আসছে হৈচৈ, তুমুল হট্টোগোল। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল রীতিমত ”ইস্কুল খুইলাছে রে মওলা! ইস্কুল খুইলাছে!” জ্বী! উনার বাড়িতে গিজগিজ করছে ছানাপোনার দল। তারা এসেছে গুরুমশাইয়ের কাছে জ্ঞান অর্জন করতে। কিন্তু, সেখানে যতটা না জ্ঞান অর্জন হচ্ছে তারচে বেশী হচ্ছে গল্প। এবং, সেইসব গল্পের বিষয়বস্তু হল কোন টিচারের কোন দিকটা খারাপ। সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ঘটনা হল, সেই আলোচনার মধ্যমনি স্বয়ং সেই গুরুমশাই! বাইরেই অদূরে জিভে শান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরবর্তী ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।
আপাত চকচকে মোড়কে মোড়া এইসব কোচিং সেন্টারগুলো আদতে বাচ্চাদের জন্য কী এক ভয়ংকর জিনিস তা যদি তাদের অভিভাবকদের ভর্তি করিয়ে দেওয়া যেত তবেই তারা বুঝতে পারতেন। আমি খেয়াল করে দেখেছি, আমাদের অভিভাবকদের বেশীরভাগেরই কোচিং সেন্টারের উপর প্রবল আস্থা। সেখানে দিতে পারলেই তারা মনে করেন যে, বিশাল বাঁচা বেঁচে গেছেন। অনেকে তো আবার কারও বাচ্চা কোচিং এ যায় না শুনলে হার্টফেল হবার যেগাড় করেন এবং সেই বাচ্চার অভিভাবককে কোচিং এর হাজারো সুবিধাদীর কথা বারংবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে পবিত্র কর্তর্ব্য পালন করে যান। তাদের মতে, কোচিং হল পোলাপান মানুষ করার সর্বত্তোম জায়গা। আর স্কুল হল সার্টিফেকেট অর্জনের মাধ্যম। নিতান্তই স্কুলে/কলেজে নাম না লেখালে সার্টিফিকেটখানা মিলবে না জন্যই স্কুলে/কলেজে রাখা। নয়তো, পারলে ওটাও কবেই ছাড়িয়ে দিতেন। শুধু অভিভাবকদেরই নয়। আজকাল ছাত্রদের মধ্যেও একই প্রবণতা দেখা দেয়।
তাই, শুধুমাত্র যদি শিক্ষকদের দোষ দিলে খুবই অন্যায় হয়ে যাবে। আমাদের দেশের বহু দুর্নীতির মত এখানেও শিক্ষকদের অবৈধ অর্থ উপার্জনের এই মদদ অনেকক্ষেত্রে আমাদের জনগণই যুগিয়ে থাকে। দেখা যায়, শিক্ষক হয়তো প্রাইভেট পড়াবেনই না। কিন্তু, ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকের দলই শিক্ষককে অফার করেন প্রাইভেট পড়াতে। এর পেছনে থাকে এক বিরাট অসৎ উদ্দেশ্যে। স্কুল/কলেজের শিক্ষকের কাছে পড়লে হয়তো পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যাবে এটাই থাকে মুখ্য উদ্দেশ্য। লেখাপড়াটি এক্ষেত্রে কখনোই মুখ্য উদ্দেশ্য হয় না। সুতরাং, এভাবে কাঁচা পয়সা হাতে পেলেই শিক্ষকদের মাঝেও দেখা দেয় অর্থলোভ। আর কয়েক ব্যাচ পড়ালেই সেই লোভ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তিনি বুঝে যান প্রয়োজনীয় লাইনঘাট আর শুরু করে দেন প্রাইভেট নামক বানিজ্য।
এতো গেল প্রাইভেটে পড়ানোর কথা। এবার আসি কোচিং এ। আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন নামবিশিষ্ট কোচিং সেন্টার অতি নিষ্ঠার সাথে স্কুল/কলেজের বিকল্প জ্ঞানকেন্দ্র হিসেবে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর, এগুলোতে পোনামাছের ঝাঁকের মত হুহু করে আসছে অগণিত ছাত্র-ছাত্রীর দল। ছানাপোনাদের ক্লাশ থেকে ধেড়ে খোকাদের ক্লাশে ফার্স্ট হবার পড়া। মাঝে থাকে বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা, বৃত্তি পরীক্ষা, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা, এস,এস,সি পরীক্ষা, এইচ,এস,সি পরীক্ষা এবং সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ইত্যাদির উপর অব্যর্থ চালেঞ্জযুক্ত ইস্পিশাল কোচিং প্যাকেজ। যেন আইনস্টাইন বানানোর কারিগর এক একটি কোচিং সেন্টার। এসব কোচিং এ বহু “ভাইয়া-আপুদের” তত্বাবধানে অত্যন্ত চাপের সাথে পড়া গেলানো (মুখস্থ করানো) এবং উগড়ানো হয় (পরীক্ষা নেওয়া)।
আমাদের অভিভাবকবৃ্ন্দও এই গেলানো ও উগড়ানো প্রক্রিয়া দেখে অত্যন্ত পুলকিত হয়ে ওঠেন এই ভেবে যে, তাদের সন্তানটি এইবেলা মানুষের মত মানুষ হবার মোক্ষম কলের ভিতর প্রবেশ করেছে। এইসব কোচিং এর সেইসব মহৎ আপু-ভাইয়াগণ হলেন আমাদের দেশের বিভিন্ন নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মেধাবী মুখ। এরা বিভিন্ন বিষয়ে এতটাই পটু হয়ে গেছেন যে, তারা চোখ বুজেও সেইসব বিষয়ের অতি জটিল সমস্যার সমাধান চোখের নিমেষে বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা তাই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের লেখাপড়ার সমস্যা সমাধানের অদ্ভুত সব নিয়মকানুন দেখে স্বভাবতই খুশী হয়। কিন্তু, বাস্তবতা যে, তারা বছরের পর বছর একই জিনিস বার বার বুঝিয়ে যাচ্ছেন, ফলে তাদের কাছে সবই আয়ত্তে চলে এসেছে জন্য তাদের আর কষ্ট হয় না – এই চরম সত্যটি বুঝতে ব্যর্থ হয়। তারা মনে করে, লেখাপড়ার ব্যাপারটি বুঝি এদের কাছে আসলেই এমন সহজ হয়ে যাবে। ফলে তারা ব্যাপক ছোটাছুটি করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যারা ভালো ছাত্র-ছাত্রী, তারা যথানিয়মে একই অবস্থা ধরে রাখে এবং যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল তারা পূর্বের অবস্থাতেই থেকে যায়। কারন, সবল ও দুর্বলদের মাঝে যে স্বাভাবিক দূরত্ব তা সমান হারে বেড়ে যায়। ফলে, সাধারণ অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না। তবে, যে নিজ দায়িত্বে পড়ে সে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে যায়। সুতরাং, একথা তো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ঐসব কোচিং সেন্টার কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। বরং, নিজে পড়তে পারলেই পড়া এগিয়ে যায়। কিন্তু, সেই সময় কই?
এখন বলা যাক, কোচিং সেন্টারের সবচেয়ে ভয়ংকর খারাপ দিকটির কথা। এইসব কোচিং সেন্টারে শিক্ষক হিসেবে সাধারণত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আসে। তারা বিভিন্ন সাবজেক্টে পড়াশোনা করে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এদের একাডেমিক রেজাল্ট ভালো থাকে। এরা কোচিংগুলোতে কাজ করে পার্ট-টাইম জব হিসেবে। এদের সবারই পড়াশোনা আছে, থিসিস আছে, গবেষণা আছে, প্র্যাকটিক্যাল আছে। কিন্তু, এই পার্ট টাইম জব তখন অর্থলোভে ফুল টাইম জবে পরিণত হয়। ফরে অবহেলা করা হয় ক্লাশ, প্র্যাকটিক্যাল ইত্যাদি। যাদের এমনটি হয় তারা প্রচন্ড অর্থলোভে পড়াশোনা ছেড়ে-ছুড়ে দিয়ে কোচিং সেন্টারে পড়াতে শুরু করে। এটা যে দেশ ও জাতির জন্য কতবড় ক্ষতি তা প্রত্যক্ষভাবে বোঝার উপায় নেই। তারা না পড়াশোনাটা ঠিকমত করেই না বরং, হঠাৎ করে বিপুল অর্থ উপার্জন করে ফেলে তার অপব্যয় করে এবং সেইসাথে বিসর্জন দেয় নিজের ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা এবং সততা। অর্থলোভে মত্ত এইসব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টরা আর দেশের কোনো কাজেই লাগতে পারে না।
আবার, যারা পার্ট-টাইম জব হিসেবে কোচিঙে পড়ানোর কাজটি করে তারা সেই কাজটির প্রতি যত্নবান হয় না। ফলে, ক্ষতি হয়ে যায় কোচিং এর ছাত্র-ছাত্রীদের। কারন, তারা ততদিনে কোচিং এর উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখন, কোচিং থেকে যখন ভালো সার্ভিস পায় না তখন পিছিয়ে পড়ে যায়। যা তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে দেয়।
আবার, কোচিং সেন্টারগুলো কৃত্রিম কম্পিটিশর তৈরিতেও ভূমিকা রাখে। প্রচুর পরিমাণ স্টুডেন্টদের মাঝে কৃত্রিম প্রতিযোগিতা তৈরি করে এইসব কোচিং সেন্টারগুলো পড়াশোনার ব্যাপারটি অত্যন্ত জটিল করে ফেলে। তখন সেইসব জটিলতা বর্জন করার জন্য তারাই আবার পড়াশোনার সিলেবাসকে একটা ছকে বেঁধে ফেলে, যাকে বলা হয় সাজেশন। এই সাজেশনে থাকে মুষ্টিমেয় কিছু প্রশ্ন। সেইসব নির্দিষ্ট প্রশ্নগুলোই ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ে পরীক্ষায় উতরে যায়। তারপর ভর্তি পরীক্ষার পরে আবার তড়িঘড়ি করে সেইসব বাদ দেয়া বিষয়গুলোই আবার ছাত্র-ছাত্রীদের মহজে ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়। সেই প্রক্রিয়াটি যে কতটা জটিল তা শুধুমাত্র সেইসব ছাত্র-ছাত্রীরাই বুঝতে পারে।
এরপরেও আমি জানি, তোমরা সবাই কোচিং এ যাবে। কারন, আমরা খুবই হুজুগে জাতি। আমরা স্রোতের বিপরীতে গা ভাসাতে ভয় পাই। আমরা সবই মানি, তবু তালগাছটা নিজের কাছেই রেখে দিতে চাই।
দারুণ একটা লেখা।
তবে এত গুলো পয়েন্ট না এনে অল্প কিছু এনেই শুরু করা যেত।
তাহলে কারণগুলো কী কী?
*রেজাল্ট নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা?
* যেহেতু রেজাল্ট নির্ভর তাই অভিভাবকরা অন্যভাবে চিন্তা করেন?
* অভিভাবকরা বিশ্রীভাবে চিন্তা করেন তাই কোচিং/ কিংবা অন্যান্য মাধ্যমও সুযোগ পায়?
কী করা দরকার এই সমস্যা সমাধানে?
অনেক ধন্যবাদ ইস্ক্রা এইরকম একটা ব্যাপার তুলে ধরার জন্য।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন দরকার।
আমার মনে হয়, সবার আগে বদলাতে হবে নিজেদের মানসিকতা।
একটা বাচ্চাকে দেশের সবথেকে ভালো স্কুলে ভর্তি করাতেই হবে, সেটা যেভাবেই হোক না কেন, পারলে দুই-তিন বছর নষ্ট হবে, তবু নামকরা স্কুলেই ভর্তি হতে হবে তাকে। অভিভাবকদের এই গোড়ার মানসিকতাই একটা বাচ্চার ভেতরে নির্ভরশীলতার জন্ম দেয়, একটি শিশু নিজেকে স্বাবলম্বী ভাবতে ব্যর্থ হয়।
তারপর ১০-১২ বছর এই পরনির্ভরশীল মানসিকতা বাড়ে বৈ কমে না।
আমার মনে হয়, সবার অন্তত একবার নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, কী রেখে যাচ্ছি আমরা এই পৃথিবীতে আমার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য? বেঁচে থাকার জন্য তাদেরকে পরিপূর্ণ করে গড়ে তুলতে পারছি কি? ভবিষ্যত পৃথিবীতে তারা লড়াই করে যুদ্ধে জয়ী হবার ক্ষমতাটুকু নিজেদের ভেতরে রাখবে তো?
আপুর সাথে একমাত। 🙂
লেখার বষয়বস্তু চমৎকার। 🙂
গল্প বলা হলেও এগুলো গল্প নয়। সত্য ঘটনা। আমার ফেবুর স্ট্যাটাসটাই দিই এখানে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটাই এমন যে, এখানে কিছু মেধাবী স্বার্থপর ছাড়া আর কিছু তৈরি হয় না। আর স্বার্থপর তৈরির প্রক্রিয়াটা শুরু হয় একদম শৈশব থেকে। শিশুরা বড় হচ্ছে, অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। যে প্রতিযোগিতা আসলে ওদের অভিভাবকদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা, আর তা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে ছোটদের উপর। এই ছোট্টবেলা থেকেই এক একজন হিংসুটে হয়ে বড় হচ্ছে। ভাল রেজাল্ট করবে, সফল হবে, তবে তা শুধু একা একাই হতে হবে, এমন মানসিকতা ওরা নিয়ে বড় হচ্ছে। অথচ ভাল যে একা একা হওয়া যায় না! ভাল হতে হলে, চারপাশের সবাইকে নিয়েই ভাল হতে হয়, ভাল থাকতে হয়, এটা ওদের কেউই শেখাচ্ছে না। 🙁
হুম কোচিং সেন্টার গুলোতে এইরকমই হয়।
তবে আমি কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে নই। আসল কথা ছাত্ররা কিছু শিখলো কিনা। অনেক কোচিং সেন্টারে দেখেছি একটা নির্দিষ্ট স্যারের ক্লাস করার জন্যই ছাত্ররা যায়। আর অন্যক্লাস গুলোতে গল্প করে।
আর প্রাইভেটের ব্যপারটা আলাদা। সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদের অতিরিক্ত চিন্তা থাকে যা থেকে উনারা প্রাইভেটে ভর্তি করান এবং একজনের সাথে অন্য সবাইও যোগ দেন।
আমার দৃষ্টিতে একটা ছাত্র ফাঁকিবাজি করুক, গল্প করুক আর যাই করুক সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সে কিছু শিখে বের হওয়াটাই আসল যাতে ভবিষ্যতে সে দেশকে কিছু দিতে পারে।
এমন ব্যাপারটা স্কুল/কলেজের বাইরে হওয়ার কথা না। আপত্তিটা এখানেই।
শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য স্কুল/কলেজ হল প্রথম এবং একমাত্র জায়গা। এর কোনো বিকল্প নেই এবং হওয়া উচিৎও নয়। আমি যতদূর জানি, এটা আইনসঙ্গতও নয়। কারন, কোনো ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে লাইসেন্স প্রয়োজন। যে সেবাগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়া উচিৎ সেই সেবাগুলো যদি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক বা কোনো ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে দিয়ে থাকে তবে তা একধরণের দুর্নীতি এবং বাণিজ্য।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, এইসব কোচিং সেন্টারগুলোর উদ্দেশ্য কিন্তু শিক্ষার প্রসার নয়। বরং, শিক্ষাকে ছকে বেঁধে ছাত্রদের কাছে কম করে উপস্থাপন এবং সেই সুযোগে ব্যবসা করা। এটা অবশ্যই একটা দুর্নীতি এবং ভয়ংকর ব্যাপার।
আমরা খুবই হুজুগে জাতি। আমরা স্রোতের বিপরীতে গা ভাসাতে ভয় পাই। আমরা সবই মানি, তবু তালগাছটা নিজের কাছেই রেখে দিতে চাই।
সহমত……