দুপুরে তিনটার দিকে বিটিভি ছেড়ে বসে থাকতাম।
অনুষ্ঠানসূচি থেকে শুরু করে ত্রিপিটক পাঠ সবই দেখতাম।
বয়স্কদের স্কুল টাইপ একটা অনুষ্ঠান ছিলো। এক মহিলা এসে পড়াতেন, আর অনেক গুলো মানুষ মাটিতে বসে বসে পড়ত। কথা কথা বলতো, আপা আপা!
স্বা্স্থ্য তথ্যও দেখতাম। চালের গুড়া, সুজি মিশিয়ে বাচ্চাদের জন্য এক ধরনের খাবার বানানো দেখাতো। তারপর সেগুলো প্যাকেট করতো। মোমের আঁচ দিয়ে সে প্যাকেট বন্ধ করত। আমিও আমার কিছু দরকারী জিনিস পত্র এভাবে সংরক্ষণ করতে চেষ্টা করলাম, পারিনাই। :crying:
মঙ্গলবার দিন মিস্টার বিন দেখাতো। চরম মজা লাগতো।
রবিবার দিন একটা কার্টুন দেখাতো, “বানানা ইন পাজামা” এই টাইপ। আসলে পাপেটের মত কি যেন! আমি এটার আগামাথা কিছু বুঝতাম না। কার্টুন জিনিসটা আমি বুঝতে শুরু করি অনেক পরে, ক্লাস ৬-৭ এ।
এর আগে তেমন একটা চিনতাম না।
ক্যাপ্টেন প্লানেট দেখতাম। গডজিলা ভালো লাগতো না।
বিকালের দিকে এক সময় অক্টোপাস নিয়ে একটা সিরিজ দেখাতো। টান টান উত্তেজনাময় একটা জিনিস। তবে কখনোই পুরোটা দেখতে পারতাম না।
হুজুর এসে বাগড়া দিতো। হুজুরের কখনো পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা হয়নাই।
রাতের বেলা দারুন দারুন সব সিরিজ দিতো। শুক্রবার দিতো আলিফ লায়লা। কাঁথা-বালিশ নিয়ে দেখতে বসতাম। এতো ভয় লাগতো।
নাইটরাইডার দিতো, বুঝতাম না কিছু। রোবোকপ ভালো লাগতো।
রোবোকপের সময় কেয়া কসমেটিক্স এর এ্যাড দিতো। মৌ কক্সবাজারে দৌড় দিতো, এ টাইপ একটা দৃশ্য ছিলো।
……………..
Cinema:
ওমর সানী আর বাপ্পারাজরে সহ্য করতে পারতাম না।
জসিম ছিলো চরম। ছোট ভাইবোন যদি থাকতো এত কষ্ট করতো বলার মত না!
রাজ্জাকের ভাইবোন খালি বিশ্বাসঘাতকতা করতো।
রাজারাণী টাইপ মুভি তেমন ভালো লাগতো না।
স্বর্পরানী টাইপ কিছু থাকলে তো মেজাজ পুরা খারাপ। :haturi:
………………
ছায়াছন্দ দেখতাম, তবে খুবই অল্প!
জাফর ইকবাল আর ববিতার একটা গান দিতো।
“তুমি আমার জীবন…… আমি তোমার জীবন
দুজন দুজনার কত যে আপন কেউ জানে না
………………………….”
আমার অত্যন্ত পছন্দের গান।
লাল ফ্রক পড়ে মৌসুমীর নাচানানি ভালো লাগতো না।
আরেকটা গান দিতো,
“এখানে দুজনে, নির্জনে…….” পরের লাইন মনে নাই। সালমান শাহ সহ।
এইটাও ভালো লাগতো।
আমিও ভাবতাম একটা মেয়ে নিয়ে পালাই জঙ্গলে বাসা বেঁধে থাকবো।
…………
বইপড়া ভালোই লাগতো।
কমিকস খুব একটা কিনে পড়িনাই। ক্লাসের ছেলেদের কাছ থেকে নিয়ে পড়তাম।
চাচা চৌধুরীর একটা কমিকস কিনেছিলাম শুধু।
একটা বই ছিলো “অজানাকে জানতে হবে”। সাধারণ জ্ঞানের বই। বই মেলা থেকে কেনা।
ঐটা পড়তাম অনেক। কোন পাখি উড়তে পারেনা, কোন স্তন্যপায়ী প্রাণী ডিম পাড়ে, কোন জলপ্রপাত কত উঁচু এসব পড়তাম বসে বসে।
আরেকটা বই ছিলো মানচিত্র নিয়ে। ঐটাও পড়তাম। মানচিত্র খুলে পড়ে থাকতাম।
তিন গোয়েন্দা , মাসুদ রানা ভালো লাগতো কিন্তু একদম পাগল করা অবস্থা না।
জাফর ইকবালের বই তেমন একটা পড়ি নাই। ঈশপের গল্প পড়েছি। অনেকগুলা বুঝি নাই।
হুমায়ূন আহমেদ এর একটা বই ছিলো। ছোটদের সেরা গল্প। ঐটারও ২-১ টা গল্প বুঝি নাই।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এখন বুঝতে পারছি, ছোটবেলা থেকেই আমি গাধা টাইপ! ছোটদের গল্পও যে বুঝে না! তাকে কি বলা যায়! 😳
এসব ঘটনা মনে করতে গিয়ে অনেক কিছুই মনে পড়ে যায়। ভালোই লাগে।
ছোটবেলায় আমি ভাবতাম Sony channel টা শুধু Sony brand এর Telivision এই দেখা যায়… 🙄
মজা পেলাম। অনেক মিল পেলাম নিজের সাথে… হায়রে ছেলেবেলা… ফিরতে ইচ্ছা করে 🙁
আমিও হাবিজাবি সব দেখতাম বিটিভির।
স্বাস্থ্য তথ্য আর পুষ্টি তথ্য নামে দুইটা অনুষ্ঠান ছিল মনে হয়। একটার আপার নাম “স্বাস্থ্য আপা”, আরেকজন “পুষ্টি আপা”। 😛
“অজানাকে জানতে হবে” টাইপ বই আমি কক্ষণো পড়তাম না। জ্ঞানের বই বোরিং লাগতো।
বানান বানান বানান!
দরকারি, কী, ব্যথা, দারুণ, সর্পরানী, নাচানাচি, পড়ি নাই
ডিকশনারিতে নতুন করে যোগ করতে হবে বানান গুলো।
বাংলা একাডেমীর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না সময়ের অভাবে :thinking:
আমাদের বাসায় টিভি ছিল না, আব্বা কেনেন নাই।তাই শহরের মুক্তিযুদ্ধা সংসদের অফিসে যাইতাম টারজান দেখতে। সপ্তাহে দুই এক দিন পাশের বাসায় নাটক দেখতে আর মাসে একটা সিনেমা দেখতে যাওয়ার অনুমতি পাইতাম। খুব বেশী বাসায় যে টিভি ছিল তাও না, ৮০-৯০ এর দিকে । আপনার লিখা পড়ে এসব মনে পরে গেল ।
“অজানাকে জানতে হবে” টাইপ বই আমি কখনোই পছন্দ করিনা।
আপ্নে দেখি কুটিকাল থিকাই আঁতেল 8)
অ-আ পড়তে শিখবার আগেই যদ্দুর মনে পরে চাচা চৌধুরীর সব পড়া শ্যাষ !!! এরপরে বিল্লু, পিংকি আর লম্বু-মোটু !!! টিভি দেখতাম কম! মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড দেখতে হেব্বী লাগতো! রবোকপ ভাল লাগতো, আলিফ লায়লা হাচা কইতে ভালো লাগতোনা 😛 আলিফ লায়লার থীম সংটা মনে পরলে ভাবি, কী মারাত্মক সম্মোহনকারী একটা সুর ছিলো! কেহেরমান নামের এক জীন ছিলো আর ছিলো “আকরাম” নামের এক বিচ্ছা! এই আকরাম এর পরে প্লাস্টিকের খেলনাও বের হয়েছিলো!
৭-৮ এ উঠে শুরু করলাম তিন গোয়েন্দা ! হায়রে তিন গোয়েন্দা !! ঘুমানোর আগে, পরে, স্কুলে, বাসায়, খাটের উপরে, নিচে শুধু তিন গোয়েন্দা !
৯-১০ থেকে সম্ভবত সিরিয়াসলি শুরু করলাম হুমায়ূন আহমেদ। জাফর ইকবাল স্যারের বই কুট্টিকাল থেকেই পড়ি। আমি যখন ওয়ান কি টু-তে তখন উনার বই পড়ি, আমার সবচেয়ে ফেবারিটের একটা – “দুষ্টু ছেলের দল”। ৫-৬ এ পড়ি দীপু নাম্বার টু !
দুপুরে আমি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম, ইহা এক পুরানো পোস্টে উল্লখ করিয়াছি 😛
ছুডুবেলা ভালা পাই 🙁 দুনিয়াটা কতো রঙ্গীন ছিলো, কতো সুখের ছিলো!
“যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ” 🙁
😛 চাচা চৌধুরীর একটা বই পড়েছ মাত্র!!!!!!!!! স্মৃতিচারণ সবসময়ই আনন্দের 🙂
হাহা!
আমিও ভাবতাম একটা মেয়ে নিয়ে পালাই জঙ্গলে বাসা বেঁধে থাকবো।
…………
তাই না?
আমারটাও বলতে হবে দেখছি। তবে আমারটা বই কমিকে পূর্ণ ছিলো। ছিল দুষ্টুমি খেলাধূলায় ভরপুর!
ইউটিউবে দেখলাম পুরো বাংলা সিনেমা পাওয়া যায়!
জসিম, ববিতা এদের!
দেখে এত ভালো লাগলো!
কতদিন পর!
কোন বিজ্ঞাপন বিরতি ছাড়াই দেখতে পারবো ভেবে আর ভালো লাগেছে! 8)
আহ স্মৃতি! :guiter:
এগুলার সাথে সাথে সিন্দবাদ আর রবিনহুডও ভাল্লাগতো অনেক…
রবিনহুড :love:
হায়রে ছোটবেলা 🙁
দিন হতে দিন আসে দিন কঠিন,
মুবিন দীনহীন কোন পথে যাইতাম?
আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম……..
🙁
ও আল্লাহ , এতো দেখছি পুরাই আমার শৈশব !!!! :O চুরি করসেন কিল্লাই ?? তবে একটা জিনিস মিলে নাই , চাচা চৌধুরী অনেক পছন্দ ছিলো আমার । পিঙ্কি, বিল্লু , রমন , শ্রিমতী ঝিও কিনতাম শখ করে । টিফিনের দুই এক টাকা জমিয়ে জমিয়ে 🙂
ওরে আল্লাহ! হাসতে হাসতে শেষ।
ইয়াদ ছেলেটারে আসলেই তাড়াতাড়ি বিবাহ দিয়ে দেয়া লাগবে। নাইলে ছোটবেলার শখ পূরণ করতে কবে না জানি কাকে নিয়ে আবার জঙ্গলে দৌড় দেয়! 😛
আপু! দোয়া করবেন 🙂
অনেক অনেক দোয়া। আল্লাহ, ছেলেটার যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়। 😛