সমাজের যান্ত্রিকতায় যখন আমরা নিত্য পিষ্ট হই লালসা, হতাশা আর ফেলে আসা স্মৃতিকাতরতায়, তখনই খুঁজে ফিরি এক টুকরো নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা। একুশে বইমেলা ঠিক তেমনই এক স্বপ্নদ্রষ্টা শক্তির নাম, যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় সেই পুরনো ‘আমি’কে। ফেলে আসা জীবনের কথকতা আর নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার সেই বইমেলায় হাজারো বইয়ের ভিড়ে খুঁজে নিতে হয় নিজের কথা বলা বইটিকে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ‘সরব’ ব্লগের এই আয়োজন, ‘আয়নায় মুখোমুখি ব্লগার-লেখক’। লেখালেখি জীবনে ব্লগ থেকে বইতে পা রেখেছেন যারা, তাদের ভাবনার জগত পাঠকদের সামনে উপস্থাপনের ছোট্ট প্রয়াস।
অপেক্ষায় থাকুন নতুন বইয়ের, অপেক্ষায় থাকুন নতুন সাহিত্যিকের…
বইমেলা হোক সরব, প্রাণের উৎসবে!
১. নিজের সম্পর্কে কিছু বলবেন?
– নির্গুণ বলে গুণীজনকে ভীষণ পছন্দ। মানুষের ভালোবাসার ক্ষমতায় মুগ্ধ। মানুষের প্রতারণায় হই ঋদ্ধ। ঘৃণার উৎসে উৎসুক! বিশ্বাস করি, “মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।”
২. লেখালেখির সাথে সম্পর্কের শুরু হলো কী করে?
– সবাই কবি, এ সত্য বয়ান জানবার আগে, কবিতার ‘ক’ অস্তিত্ব অবর্তমান এরকম কবিতায় নিজস্ব দিনলিপির পাতা ভরিয়ে ফেলতাম! ২০০০-এ শুরু হলো পত্রিকার ফান ম্যাগাজিন-স্যাটায়ার ম্যাগাজিনে লেখা।
৩. কেন লিখেন? লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
– ভালোবাসার নারীর মতো, লেখালেখিটা আমার ভালোবাসার মমতা মোড়ানো ভালোলাগার জায়গা, তাই লিখি। সামাজিক যে অসঙ্গতিগুলো হৃদয়ের গহিনে গভীর ক্ষত তৈরি করে, সেই তীব্র বেদনাবোধ আর ক্ষোভগুলোকে কলমে তুলে আনতে লিখি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুধুই লিখে যাওয়া । লেখা দিয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া ।
৪. লেখালেখির ক্ষেত্রে কোন অনুপ্রেরণা আছে কি? কাউকে কি অনুসরণ করেন?
– পারিবারিক অনুপ্রেরণা নেই বললেই চলে। যেসব মুসলমান পরিবার সাহিত্য চর্চাটাকেও সন্তানের উচ্ছন্নে যাবার লক্ষণ বলে ভুল করেন, বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের তেমনই একটিতে আমার জন্ম । আমার পড়া সব ভালো লেখাই আমার লেখালেখির অনুপ্রেরণা।
লেখক যখন প্রথম লিখেন, ভঙ্গিটি শুরু হয় নিজের মতন করে। দিনে দিনে লেখক পরিপক্ব হন, বিভিন্ন বাঁক পরিবর্তনে লেখার ধারা এবং গুণগত মান পরিবর্তিত হয়। আমার লেখার সঙ্গে কেউ কেউ শহীদুল জহিরের মিল খুঁজে পান। বিনয়ের সঙ্গে জানাতে চাই, শহীদুল জহিরকে পাঠের আগেই লেখার এই ধরণটি আমি হঠাৎ রপ্ত করেছিলাম একটি গল্প তৈরির প্রক্রিয়াতে। গল্পটির নাম- ‘যখন একুশ শতকের আকাশে ফুটছিল ফসফরাস ফুল, সভ্য কুকুরটি তখন নিহত হয়েছিল!’ শহীদুল জহির হওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। তবু, আমাদের দেশে অনেকগুলো শহীদুল জহির জন্ম নিলে, কেউ কেউ শহীদুল জহিরকে ছাড়িয়ে গেলে, সোনার কাঠি রূপোর কাঠি নামের লেখকের কলম নিত্য সোনা ফলালে, লেখালেখি নামের চাষাবাদে বাম্পার ফলনের আনন্দে আমি আপ্লুত হবো!
৫. অনেকের ধারনা এখন অধিকাংশ লেখকের লেখা একই প্যাটার্নের হয়ে থাকে, নতুনত্ব খুব কম পাওয়া যায় – আপনি কি এর সাথে একমত?
– অনেকের লেখাই একই প্যাটার্নের। কিন্তু টিকে যাচ্ছে, টিকে থাকবে, নজর কাড়বে কেবল ব্যতিক্রমরা।
৬. নতুন লেখকদের বিষয়ে পাঠকদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
– উদার মনোভাব হওয়া উচিত। নতুন লেখককে পরখ করে, যাচাই করে দেখা উচিত। নইলে নতুনরা কীভাবে উঠে আসবে! আমাদের দেশে এক ঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান লেখক তৈরি হয়েছে। পাঠকরাই পারেন, তাদের বাঁচিয়ে রাখতে।
৭. একজন ব্লগারের কি তার প্রতি কোন দায়বদ্ধতা আছে? থাকলে কতটুকু? বাংলা ব্লগে দায়বদ্ধতার কী রকম ছাপ দেখতে পান?
– বিকল্প মিডিয়া হিসেবে ব্লগ ইতোমধ্যেই তীব্র ধী-শক্তি নিয়ে আলোচনায় উঠে আসতে পেরেছে। বিকল্প ধারার লেখক হিসেবেও ব্লগারেরা বেশ নাম করছেন। সহব্লগার লেখক বন্ধুর প্রতি ব্লগারের দায়টাকে আমি ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই দেখতে পছন্দ করবো। দুঃখজনকভাবে, সেই দায়িত্ববোধটুকু বাংলা ব্লগে অপ্রতুল। আশার কথা, দিনে দিনে ব্লগাররাও নিজেদের দিকে ফিরে চাইবার ফুরসৎ পাচ্ছেন। ২০১২ বইমেলাকে ঘিরে ব্লগগুলোতেও এই যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে, এই যে, ‘সরব’ ব্লগ ব্লগার লেখকদের প্রমোট করবার চমৎকার ধারণাটি চালু করলেন, এটিকে নিঃসন্দেহে বাংলা ব্লগের অগ্রগতির মানদণ্ডে বিচার করা যায়।
৮. ব্লগের ফিডব্যাক নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? সবসময় কি সঠিক মনে হয়?
– ব্লগে তাৎক্ষণিক ফিডব্যাক পাবার ব্যাপারটি দারুণ। লেখক-পাঠকের দূরত্ব ঘুচে যায়। ত্রুটিগুলোও উঠে আসে। তবে, ব্লগগুলোতেও এক ধরণের কোরাম সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। এক ধরণের ব্লগারেরা কেবল নির্দিষ্ট কোরামের ব্লগগুলোতেই ফিডব্যাক দিচ্ছেন। ফলে, অনেক ভালো লেখা যেমন মন্তব্য খরায় ভুগছে, অনেক হালকা লেখাও মন্তব্য বন্যায় ভাসছে।
৯. ব্লগ আসার পর মানুষ খুব বেশি ওয়েব-নির্ভর হয়ে গেছে, আগের মত বই কিনে পড়ে না – এ নিয়ে আপনার কী মতামত?
– সত্যিকার পাঠক অবশ্যই বই কিনে পড়বেন। মলাটবদ্ধ বই পাঠের আনন্দ ব্লগপাঠে পাওয়া সম্ভব না – এ কথায় সবাই একমত হবেন নিশ্চয়। ব্লগে দীর্ঘ লেখা পঠিত হবার অভিজ্ঞতা খুবই কম।
১০. আপনার নতুন প্রকাশিত বই সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
– ‘সোনামুখী সুঁইয়ে রূপোলী সুতো’ আমার দ্বিতীয় উপন্যাস । বইটিতে নতুনত্ব কিছু রয়েছে কি না, সে বিচারের ভার পাঠকের। তবে, সেটি জানার জন্য, মাত্র ৭৫টাকা খরচ করে বইটি পড়তে পাঠকের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে। সবাইকে ধন্যবাদ।
উপন্যাস: সোনামুখী সুঁইয়ে রূপোলী সুতো
প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান
প্রকাশনী: শুদ্ধস্বর
স্টল: ৪৪৪, ৪৪৫, ৪৪৬
মূল্য: ১০০(কমিশন বাদে ৭৫) টাকা
আন্তরিক অভিবাদন সরব পরিবারের সব সদস্যকে ।
ব্লগার লেখককে প্রমোট করবার এই ধারণাটি নতুন ।
এরকম নিত্য নতুন ধারণা নিয়ে আপনাদের অগ্রযাত্রা শুভ হোক ।
ভাইয়া আপনাকেও অভিনন্দন আপনার বইয়ের জন্য 🙂 খুবই ভাল লাগছে আমার পরিচিত একজন ব্লগারের বই আসছে 🙂 আপনি নিয়মিত লিখে যাবেন সেই কামনা 🙂
নিয়মিত লেখার চেষ্টা জারি আছে ।
বই পড়ে পাঠপ্রতিক্রিয়া দেবেন, প্লীজ ।
ধন্যবাদ, সুপ্তি ।
লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
(এই অংশটির উত্তর দেয়া হয়নি । )
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুধুই লিখে যাওয়া । লেখা দিয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া ।
দুঃখিত, শুদ্ধস্বরের স্টল নাম্বার বেখেয়ালে ভুল এসেছে ।
স্টল নাম্বার হবে, ৪৪৪, ৪৪৫, ৪৪৬
সাহিত্যিককে ধন্যবাদ দারুণ কিছু কথা শেয়ার করার জন্য! বইটি পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেল!! :clappinghands:
সরব পরিবারকেও অভিনন্দন দারুণ এই উদ্যোগের জন্য!! পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম!! :love:
সরব ব্লগের এই নতুন চিন্তাটি দারুণ কাজ করবে ভবিষ্যত ব্লগারদের জন্য ।
এই শুভ উদ্যোগের ফলে, খুব অল্প সংখ্যক ব্লগারও যদি সহব্লগারকে আপন ভেবে বই সংগ্রহ করেন, ভালো লাগা মন্দ লাগা জানান, তবেই সার্থকতা ।
আর হ্যাঁ, রাইয়্যান ভাইডি, নিজেকে সাহিত্যিকের কাতারে দাঁড় করাবার যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি । ভালো লেখার প্রয়াসটা জারি রয়েছে মাত্র !
সরবের এই উদ্যোগটা দারুণ লেগেছে। 😀
লেখকদের সাক্ষাৎকার মনোযোগ দিয়ে পড়ি, এটাও পড়লাম।
পড়লেন, তাই ধন্যবাদ ।
দুর্দান্ত লাগলো প্রথম পর্বটা। লেখকরা সবসময়ই একজন অন্যরকম! ভালো লাগলো একজন ব্লগারের বের হওয়া বইয়ের খবর পেয়ে! অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের……
ভাইডি, যিনি লেখেন তিনিই লেখক । সে অর্থে আমি লেখক হলেও, আদতে গুণী লেখক হয়ে উঠতে পারিনি । চেষ্টা জারি আছে ।
ধন্যবাদ, আপনার আন্তরিক প্রকাশের জন্য ।
শুভেচ্ছা রইলো 🙂
শুভেচ্ছা ।
শুভ কামনা ।
ব্লগার থেকে লেখক, এরকম চমৎকার একটা সিরিজ চালু করবার জন্য সরবকে ধন্যবাদ 🙂
আর, শিপন ভাই, আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা 🙂
এই চমৎকার ধারণাটির জন্য সাধুবাদ সরব ব্লগের প্রাপ্য ।
নিশম, আপনাদের শুভ কামনার ফুলগুলো শতমুখ হয়ে ফুটুক ।
সাক্ষাতকারটা দারুণ লাগলো। একজন ব্লগারের লেখক হিসেবে অভিজ্ঞতা মন কাড়ার মতন। আমিও লেখকের সাথে একমত — বইয়ের স্বাদ ব্লগপাঠে পাওয়া যায়না 🙂
বইমেলায় যাবো শীঘ্রই। বইটা কেনার আশা রাখছি…
(নোঙ্গর ছেঁড়া মানুষটির জন্যও কিন্তু প্রতিক্ষায় থাকে একটি বন্দর !)
বই পড়ে একটি কড়া সমালোচনা দেবেন, আশা করছি ।
কৃতজ্ঞতা ।
আপনার প্রশ্নোত্তরগুলো চমৎকার লাগল শিপন ভাই। আর আমি আপনার প্রথম বইটা কিনেই পড়ছি। ভালো লাগছে। আলসেমির কারণে রিভিউ লেখা হয় নাই।
এইবারও পড়ব। আশা করি এইবার আর অলসতা করব না!
প্রথম বইটি কী এবারের মেলা থেকে নিয়েছেন ?
ব্যাপার হলো, গতমেলাতে শেষ এক সপ্তাহ স্টলে কোন বই ছিলো না । প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার আবার স্টলে বই এসেছে । তার মানে তারা দ্বিতীয় মুদ্রণ করেছে, কিন্তু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি ।
যাই হোক, আপনার লেখার ভক্ত আমি । আপনার পাঠপ্রতিক্রিয়ার জন্য আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করবো ।
উদ্যোগটা ভালো হয়েছে।
ধন্যবাদ জনৈক (আপনি জনৈক আরাফাত নাতো?)!
থাকছেনতো আজকে আমার উপন্যাসের মোড়ক উন্মোচনে ?
বইটা পড়ার আগ্রহ জন্মে গেল ।
অনেকদিন পর অক্ষরকে পেয়ে ভালো লাগছে ।